২৩১/৩৬৫

লেখার তারিখঃ অক্টোবর ১৭, ২০১৫

গতকাল রাতে লেখা নোট। নেটওয়ার্ক ছিল না তাই আজকে পোস্ট করতাসি।

একটা ছোট রুমে গাদা গাদি করে শোয়ার ব্যাবস্থা করা হইসে ৮ জন এর। আমি অভ্যাস মত একেবারের কর্নার এর জায়গাটা দখল করসি। সুবিধা হইল আমার মাথার কাছে দুইটা সকেট। দুইটা তে মাল্টিপ্লাগ দিয়া মোট আট্টা ডিভাইস লাগানো হইসে। এর মধ্যে আমার ক্যামেরার ব্যাটারি আরর ফোন ও আছে। আমাদের ডিনার তৈরি হইতেসে এখন। তাই জেনারেটর চালু আছে। বন্ধ হইলেই সবার আত্মার চার্জ ছুইটা যাইবো।

আজকে দিন টা ভালই গেসে। এস ওলয়েজ, দা জার্নি ওয়াস মোর এক্সাইটিং দ্যান দা ডেস্টিনেশন। কারন এইখানে আইসা বুঝলাম সাজেক সাক্স। আই রিপিট সাজেক সাক্স। এত দূর এর পথ পারি দিয়া আইসা শুধু দেখা যাবে কিছু কৃত্তিমতা। পাহাড় এর ভিউ ইজ ওকে। কিন্তু ফুটপাথ অলা পাকা রাস্তায় দাড়ায়া বড় বড় ঘাস এর উপর দিয়া হেইজি পাহাড় এর লেয়ার দেখা জীবনে প্রথম পাহাড় দেখা মানুষের কাছে এক্সাইটিং হইতে পারে। আমার কাছে না।

তাই সাজেক নিয়া কোন গল্প করার আজকে এট লিস্ট আমি কোন ইন্টারেস্ট পাইতাসি না। কালকে ভোর এ উইঠা সবাই মেঘ আর সান রাইজ দেখতে যাওয়ার কথা। সেইটা হয়ত ভাল লাগ্লেও লাগতে পারে। কিন্তু আমি কেউকারাডং এর চুড়ায় রাত্রে থাক্সি, নাগোরকোট এও দুই রাত থাক্সি। এই কৃত্তিম পিকনিক স্পট এর অকৃত্তিম মেঘ আমার কত টা ভাল লাগবে বুঝতাসি না।

এর চেয়ে আসার পথে মজা হইসে বেশি। আমি আসছি একটা ৩৪ জন এর দল এর সাথে যার মধ্যে আমি বাদে তিন জন আমার কলিগ আর তাদের ফেমিলি আরো ২ জন। আর বাকি ২৯ জন রেই চিনি না। অপিরিচিয় সার্কেল এ আমি প্রথমেই কম্ফোরটেবল হইতে পারি না। সময় লাগে। এই সময়টা আমি চুপ চাপ মুচকি মুচকি হাইসা জবাব দেওয়া ছাড়া আর কিছু পারিও না।

আসার সময় আমাদের জন্য দুইটা চান্দের গাড়ি ভাড়া করা হইসে। আমি যে গাড়ি তে দেখলাম চাউলের বস্তা উঠসে সেই গাড়ীর ছাদে গিয়া বইলাম। বেশ হেলান দিয়া বসা যাবে। আর চাউলের বস্থা আমার পিঠ এর সাথে বেশ আরগোনমিকালি কমপেটিবল। একটু পরে সাথের লোকজন আইল। তারাও বেশ এক্সাইটেড উইঠা পাও ঝুলায়া বয়া পরল। ড্রাইভার আইসা সব গুলারে পা উপ্রে উঠাইতে বলল। সাম্নের কিছু দেখাই যাইতাসিল না ইনাদের পা এর জন্য।

গাড়ী ছাড়ার পর শুরু হইল আসল মজা। সব চেয়ে কোনায় যে বসছিল সে শহরের ভিতরে থাক্তেই চিল্লা চিল্লা লাগায় দিল। “আমার ডর করতাছে। আমি পইড়া যামু গা। আমি নিচে যামু”। আবার গাড়ী থামায়া তারে নিচে পাঠায়া আরেকজন রে উপরে আনা হইল।

ছাদে আমার পাশে যিনি বসছিলেন তিনি আরো ইন্টারেস্টিং। উনি আমার সাথে নন্সটপ আলাপ জমানর ট্রাই কইরা গেলেন কিন্তু লাভ হইল না। রাস্তায় এমন কোন জিনিশ নাই যা নিয়া উনি কথা বলে নাই। সব রোড সাইন উনি জোড়ে জোড়ে পইড়া শুনাইসে। হুমমম সামনে স্কুল, হুমমম বামে মোড়, হুমমম স্বাগতম দিঘিনালা উপজলা হুমম।

রাস্তার পাশে ছাগল শুইয়া ছিল। উনি সবাইরে ডাইকা বলসে এই গুলা থেইকা একটা নিয়া যাওয়া যায় কিনা, তাইলে বার বি কিউ করা যাইতো। রাস্তায় যখন আমরা ব্রেক নিতে থামসিলাম, তখন উনি সাথের এক লোকের পিচ্চি রে কোলে নিয়া হাটাহাটি করতেসিল আর গরু দেখায়া বলতাসিল “দেখ বাবু হরিণ, হরিণ”.

উনার সব চেয়ে ডেঞ্জেরাস কাজ ছিল, আর্মি কে কোয়েশ্চান করা। সব চান্দের গাড়ী কেই চেকপোস্ট এ থামতে হয়। আমাদের গাড়ীও থামসিল। উনি এক্সাইটমেন্ট এর চোটে গেসে আর্মির সাথে আলাপ করতে। আমারেও বলসিল, “চলেন ভাই, সেনাবাহিনীর সাথে আলাফ কইরা আসি” আমি সবিনিয় এ প্রত্বাখ্যান করসি।

উনি গিয়া হা কইরা আগে মিলিটারি দেক্সে। তারপর জিজ্ঞেশ করসে এইখানে মিলিটারি ক্যান দরকার। মিলিটারি সৈনিক টা রে বলসে ” আমরা বিভিন্ন অবইধ কাজ প্রতিরোধ করি”. সেই লোক জিজ্ঞেস করসে, ও বুঝসি তাইলে আপ্নারা এইকানে কি অবইদ কাজ করেন? আর্মির লোক যেই লুক দিল।

উনি একটু পর পর আমারে বলসে পিছের ছিনারি যাতে পুরাটা কিলিয়ার আসে অম্নে উনার কয়েকটা স্নেপ তুইলা দিতে। আর জিজ্ঞেস করসে আমার ক্যামেরা ডিজিটাল কিনা

২৩০/৩৬৫

লেখার তারিখঃ অক্টোবর ১৫, ২০১৫

আমি একটু পড়ে বাস এ উঠুম। রাত সাড়ে এগারোটায়। উইঠা ঘুমায় যামু। তাই আগেই নোট লিখা ফালাইতাসি। ঘুম থেইকা উইঠা দেখুম আইসা পরসি খাগড়াছড়ি।

তার পর নাস্তা উস্তা খায়া উইঠা বসুম চান্দের গাড়িতে। একবারে গিয়া নামুম দিঘি নালা। ওই খানে একটা ঝরনা আছে। ঝরনায় হাত মুখ ধুইয়া এরপর আবার রাস্তায়। আধা ঘন্টা পরে পৌছায় যামু সাজেক।

সাজেক এ লাঞ্চ করুম। গড়াগড়ি করুম। ক্যাম্পফায়ার করুম। ফানুষ উড়ামু। পাহাড়িগো সাথে “মর পরানং যেতো মাগে তারা লগে লগে” গান গামু। বারবিকিউ করুম। ভুড়িটা আকাশের লগে ঠ্যাক দিয়া ঘুমায় যামু।

পরের দিন সুর্য উঠার আগে হাইটা হাইটা যামুগা কাছের একটা পাড়ায়। যেখান থেইকা সুর্য উঠা দেখা যায়। পায়ের কাছে মেঘ জমা দেখা যায়। এইদিন আরো কিছু ঝরনা আর আলুটিলা গুহা মশাল হাতে নিয়া এইপার ওইপার করার প্ল্যান।

বিকালে নিউজিল্যান্ড পাড়া বইলা একটা গ্রাম নাকি আছে ওইটায় যামু। সন্ধ্যার পর খাগড়াছড়ি শহর এ ফিরা আইসা শহরে হাটাহাটি। একটা রেস্টুরেন্ট আছে। নাম “সিস্টেম”। এই “সিস্টেম” রেস্টুরেন্ট এ অথেন্টিক পাহাড়ি খাবার দাবার পাওয়া যায়। খায়া দায়া উইঠা পড়ুম আবার বাস এ। সকালে ঢাকা নাইমা ভদ্র ছেলের মত অফিসে ঢুইকা যাবো আর জোম্বিদের মত কাজ করব।

সাজেক এ সম্ভবত আমার ফোন এর নেটওয়ার্ক থাকবে না। তাই কাল হয়তো নোট পাব্লিশ করতে পারবো না। ফোনে লিখা রাখবো। নেটওয়ার্ক এর মধ্যে আসলে তারপর পাব্লিশ করবো।

২০১৪ তে এই সময় টায় গেসিলাম থাঞ্চি-রেমাক্রি-নাফাখুম। ২০১৩ তে রামু-বগালেক-কেওকারাডং-জাদিপাই। পাহাড় এর ডাক অগ্রাহ্য করা যায় না। একদিন এরুকুম কর্তে কর্তে এভারেস্ট এও যামুগা ইনশাল্লাহ।

দোয়া কইরেন যাতে ঠিক ঠাক মত ফেরত আস্তে পারি।

২২৯/৩৬৫

লেখার তারিখঃ অক্টোবর ১৫, ২০১৫

বুক রিভিউঃ আহমেদ ছফা’র ওঙ্কার The Om

আহমেদ ছফার ওঙ্কার The Om পড়ার পর পর ই এর রিভিউ লেখা সম্ভব হয় নি। কারণ সম্মোহন তখনো কাটেনি। বই পড়ে পাওয়া অনুভুতি টা তখনও পিয়ানোর তার এর মত কাপছিল বুকের ভেতর। এই অনুভুতিকে সংজ্ঞায়িত করা আমার মত ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র নাচিজ এর পক্ষে অনেক কঠিন ব্যাপার। এটাকে ঠিক দুঃখ বলা যাবে না আবার খুশিও বলা যাবে না। অনেক টা প্রিয় গান টা শেষ হবার পর যেমন আবার বাজাবো কি বাজাবো না অনুভুতি টা হয়, এটা ঠিক সে রকম। ভাল লাগা টা ধরে রাখতে ইচ্ছা হয়।

ওঙ্কার এর পটভূমি ১৯৬৯ এর গনঅভ্যূত্থান এর পূর্ব্বর্তী এবং মধ্যবর্তি সময় টা। আইয়ুব খান এর শাসন কালে এই দেশ এর রাজনৈতিক অবস্থার যেমন সময় এর সাথে পরিবর্তন হচ্ছিল তেমনি পরিবর্তন আসছিল একটা খুব সাধারন সনাতন বাঙ্গালির জীবনেও। এই উপন্যাস এ তার চোখ দিয়েই আমরা দেখতে পাই তার বাবার উত্থান এবং পতন, তার বড় হয়ে ওঠা, বিয়ে করা, শশুরের অনুগ্রহে বেচে থাকা যেখানে সাচ্ছল্য হয়তো ছিল কিন্তু সস্তি ছিল না। পড়তে পড়তে এই কেন্দ্রিয় চরিত্র যার কোন নাম লেখক দেন নি, তার সাথে নিজের একটা মিল খুজে পাই। মনে হয়, আমিও তো এমন কাপুরুষ ই। ঝামেলা দেখলে মনে মনে দৌড়ে পালাই। এক্টা সফল উপন্যাস এর এইটাও একটা বৈশিষ্ট্য বলে মনে করি। নিজের সাথে একটা চরিত্র এর মিল খুজে পাওয়া। আর সেটা যদি হয় কেন্দ্রীয় চরিত্র, তাহলে সেই উপন্যাস হয় কালজয়ী।

আমি প্রান পণে চেষ্টা করছি, রিভিউ লিখতে গিয়া যেন , কাহিনীর সব কিছু বলেই না দেই। কিন্তু খুব বেশি সফল হতে পারছি না বোধহয়। উপন্যাস টা শেষ হয় একটা মৃত্যু দিয়ে আর যে মারা যায় তার উচ্চারিত প্রথম এবং শেষ শব্দ ছিল “বাঙলা”। জাতীয় এক টা আন্দোলন যে সাধারন মানুষের মনো জগতে কত টা প্রভাব ফেলতে পারে তা এই উপন্যাস পড়লে বোঝা যায়। এখানে মেরুদন্ডহীন বাঙালি ও মিছিল দেখে ভাবতে বাধ্য হয়, এই জনস্রোতে মিশে যাওয়া উচিত, মিশে যেতে হয়। বাকশক্তিহীন মেয়েটিরও মনে হয় তারো যে স্লোগান দেয়া বাকি।

আহমেদ ছফার উপন্যাস এ সবচেয়ে যে জিনিষ টা ভাল লাগে তা হলো সংলাপ এর প্রতি জোর না দিয়ে শুধু শব্দের পর শব্দ সাজিয়ে যা ঘটছে তার সাথে পাঠক কে একাত্ব করে ফেলার ক্ষমতা। এই উপন্যাস এর অনেক জায়গা আছে যেখানে রসিকতা আছে কিন্তু সেটা সংলাপের বাহুল্যে জর্জরিত নয়। এই যুগের সাহিত্য হলে যা প্রায় অসম্ভব ছিল। পুরো উপন্যাস এর কোথাও নায়ক এবং নায়িকার কোন নাম নেই। তবু তাদের মধ্যে যে কেমিস্ট্রি তা অনুভব করতে এক্টুও কষ্ট হয় না। নায়ক যখন নায়িকা অবহেলা করে কিংবা কোন কোন রাতে লেখকের ভাষায় দুঃখী মেয়েটা “সারারাত একতাল কাদার মতো আমার শরীরের সঙ্গে লেগে রইল” হয়ে থাকে তখন বুকের ভেতর কেমন একটা হুহু শব্দ শুনতে পাই।

এই কাদা মাটির আস্তে আস্তে অর্থহীন বিপ্লবি স্থাপত্য হয়ে যাওয়া এবং তারপর নিজের অক্ষমতার আস্ফালনে গলে যেতে যেতে রক্ত হয়ে যাওয়া দেখতে দেখতে এই উপন্যাস শেষ হয়।

অনেক ছোট কলেবর এর একটা উপন্যাস। মাত্র ৫৯ পৃষ্ঠা। যারা আহমেদ ছফা পড়া শুরু করবেন ভাবছেন তাদের জন্য খুবি ভাল একটা স্টারটিং পয়েন্ট হতে পারে এই উপন্যাস।

আপাতত পড়ছি অতীন বন্দ্যোপাধ্যায় এর “নীলকন্ঠ পাখির খোঁজে”। এরপর আবার ফেরত আসব আহমেদ ছফা য়। “একজন আলি কেনানের উত্থান পতল” উপন্যাস এ।

২২৮/৩৬৫

লেখার তারিখঃ অক্টোবর ১৪, ২০১৫

অথচ গল্প টা অন্য রকম হতে পারতো। গল্পের মূল চরিত্র যখন আইল্যান্ডের মাঝখানে দাঁড়িয়ে ভাবতো, উহু, রাস্তা পার ই হবো না আর, এখানেই থাকবো সারাদিন, ঐ পারে আর নতুন কি, সবাই ই এক, তখন একটা আশাবাদী হাত এসে বলতেই পারতো, ধুর বোকা আমি তো আছি।

কখনোই গল্পটার মুল চরিত্র না হতে পারা সাইড নায়ক যখন নিজের লেখা গান গায়, “বিধি বলে পাগল মন রে আয় রে কাছে আয়, আমার কেন উদাস দুপুর ঝরের ই হাওয়ায়” তখন কিংবা এই দারুন দ্বন্দ নিয়ে থমকে থাকা এই মন এর ভেতরের সব গুলো দ্বীর্ঘশ্বাস খরচ করা শেষ, তখন এক জোড়া বড় বড় চোখ তাদের মত করে বলতেই পারত, ধুর গাধা আমি তো আছি।

একটা হিসাব কখনোই মেলে না। এই দুনিয়াটা আসলে কাদের? অনেক চালাক দের? বুদ্ধিমান দের? নাকি এই লিখে লিখে অযথাই আস্ফালন করা বোকাদের? দুনিয়া তে নিজের জায়গা টা কোথায় সেটা বুঝতে পারা খুব জরুরি আমি জানি। সবাই যখন নিজের জীবন যৌবন ইহকাল পরকাল কে গুছিয়ে এনে অন্যকে উপদেশ দেয়ার জায়গায় পৌছে যাচ্ছে তখনো আমি দৌড় এর স্টারটিং লাইন এ দাঁড়িয়ে ভাবছি, আচ্ছা সবাই এমন দৌড় দিল ক্যান? আবার তো ঘুরে আসবে এই খানেই। তাহলে দৌড়াবো ক্যান?

তবু একটা জিনিষ বুঝতে পারি, আমি খুবই বেমানান। সব জায়গা তেই বেমানান। এই “নট ফিটিং ইন” এর ব্যাপার টা এত ঘটছে আর এত ঘটছে যে যতই দিন যাচ্ছে ততই এই ধারনা বদ্ধমুল হচ্ছে যে এই পাজল টা আর মিলবে না। এক সময় ভাবতাম এই পৃথিবীতে সব চেয়ে ইম্পোরটেন্ট জিনিষ হলো দিন শেষে একজন ভাল মানুষ হওয়া। তাই সারাজীবন এর চেয়ে বেশি কিছু হওয়ার চেষ্টাও করি নাই আর। অর্ধেক জীবন যাওয়ার পর রিয়ালাইজেশন আসছে এখন যে শুধু ভাল মানুষ হলে হয় না আসলে। চালাক হতে হয়। নিজেকে এট্রেক্টিভ করতে হয়। নিজের ভাল টা খুব ভাল মত বুঝতে হয়। ভবিষ্যত পরিকল্পনা নিয়ে এগুতে হয়। সেই পরিকল্পনা কে বাস্তব এ কনভার্ট করতে এগ্রেসিভ হতে হয়। অনেক এম্বিশাস হতে হয়।

কিন্তু এতদিনে ভিতরের মুল মন টা তৈরি হয়ে গেছে আসলে। চেষ্টা করলেও এই কোর টা আর পালটানো সম্ভব না। তাই এই বিষয়ে সফল যারা তাদের ঠোট বাকানো, ভদ্রতা করে লুকানো হাসি দেখেই বাকি জীবন কাটায় দিতে হবে। কাউকে বোঝানোও যাবে না এই না হতে পারা, না হতে চাওয়া কিন্তু তবু দেখে দেখে কষ্ট লাগে ক্যান ব্যাপার টা। সব শুনে টুনে সবাই শেষে বলবে, তাহলে তুমিও ওদের মতো হউ, কেউ মানা তো করে নাই।

আমি কাউকে বোঝাতে পারবো না কোথাউ কিছু একটা গোলমাল এর কারনে সব ঠিক ঠাক চলছে না। আমি বলতে পারবো না, সব ঠিক ঠাক চললে আমিও অনেক বুঝদার হতাম। আমি ঠিক ঠাক মেনে নিতে পারতাম এই গল্পটার মুল চরিত্রই আমি না, কখনো ছিলামও না। যারা গল্পটা কে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে, যারা সামনের সারির লোক, এই গল্পটা তাদের নিয়েই আসলে। এই খানে আমি শুধুই একজন সাপোরটিং ক্যারেক্টার। গল্পের প্রয়োজনে আনা চরিত্র। আমার কাজ শুধু জন্মদিন এর দৃশ্যে স্যুট পরে গ্লাস হাতে আরো কিছু মানুষের সাথে মিশে আউট অফ ফোকাস হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা , ঘটনা যা ঘটাবার মুল চরিত্র রাই ঘটাচ্ছে, সবসময় ওরাই ঘটাবে।

এই অদ্ভুত গল্পটা অন্য রকম হলে আমার নিজেকে পৃথিবী নামক গ্রহের এলিয়েন মনে হতো না।

২২৭/৩৬৫

লেখার তারিখঃ অক্টোবর ১২, ২০১৫

আমি সাধারনত অফিসে যাই রিকশা দিয়া । কানে হেড ফুন ডা গুইজা দিয়া মাথা লারাইতে লারাইতে গিয়া বসুন্ধরার গেট এ নামি। তারপর হাইটা অফিসে যাই গিয়া। কিন্তু আজকে কি জানি হইসে। একটা রিকশাও যাইতে রাজি হইল না। মনে হয় জ্যাম এর কারনে। আমি যখন দেখলাম যে দেরি হয়া যাইতেসে , রিকশা পাইতাসিনা, তখন তুরাগ বাস এ উইঠা গেলাম একটা।

বাস এ সিট পাওয়ার প্রশ্নই আসে না তাই গেট এর কাছে দাডায় থাকলাম কোন মতে। বাস বসুন্ধরায় আসলে নামতে যাব, আমার সামনে একজন বুড়া মত লোক নামতেসিল। তাই আমি চেষ্টা করতেসিলাম পিছন থেইকা আসা ধাক্কা গুলা যত টা পারা যায় এবজোর্ব করতে।

নামার উপর উনি খুবি যত্ন নিয়া আমার দিকে না তাকায়া রাস্তার ওই পারের দিকে তাকাইতে তাকাইতে আমার হাত ধইরা হাটা দিল। আমি একটু অবাক হইসি আমার উচিত বুড়া চাচা রে পার করায়ে দেওয়া আর চাচা কিনা আমারে পার করায় দিতাসে। বাস ওলা গুলা কেমন শয়তান। থামাইসে রাস্তার মাঝখানে।

যাই হোক উনি আমাকে হাত ধইরা রাস্তা পার করলেন। তারপর ঘুইরা তাকাইতেই, বজ্রাহতের মত আমার দিকে তাকায় থাক্লেন। তারপর অনেক আবেগ গলায় নিয়া বললন, “আফনে ক্যাডা? জুএলের মা কই? “

আমি একটু ভ্যাবা চ্যাকা খায়া গেলাম। আমি বলতে নিসিলাম না মানে ইয়ে আংকেল ঈমানে কইতাছি আমি জুয়েলের মা রে জীবনে দেখিও নাই। আমি আর চাচা দুই জন দুই জন এর দিকে পৃথিবীর সবচেয়ে কনফিউজড লুক দিয়া আরো কিচুখন থাকতাম যদি না জুয়েলের মা আইসা চিল্লা চিল্লি লাগায়া দিত,

“ ওই জুয়েলের বাপ। এ কারে হাত ধইরা রাস্তা পার করসো তুমি? আমি তো আরো তুমারে বিসরাই। রাস্তার মদ্যে নামায় দিসে। কই আমারে একটু পার করবা তা না, এই ব্যাডার হাত ধইরা হাটা দিস”

আমার হাত রে ক্যান যে চাচার জুয়েলের মার হাত মনে হইল, এহনো বুঝতেই পারলাম না।

২২৬/৩৬৫

লেখার তারিখঃ অক্টোবর ১২, ২০১৫

ছোটদের ফটোগ্রাফি শিক্ষা ১০

আজকের লেখার পর টিউটোরিয়াল লেখা এক্টূ বিরতি দিমু। তারপর আবার টানা দশটা লিখা ফালামু ইনশাল্লাহ। কালকে থেইকা আবার আমার হাবি জাবি লেখা শুরু হবে।

এর আগের লেখায় কইসিলাম এর পর আলুচনা করুম লেন্স লইয়া। কিন্তু মনে হইতাসে লেন্স এর আগে ক্যামেরার ই আরেকটা জিনিষ বুঝন দরকার। সেইটা হইলো “মিটারিং”।

মিটারিং এ যাওনের আগে আরকবার মনে করায়া দেই যে ক্যামেরা কেমতে ফটুক তুলে। এই ফটুকটা দেহেন:

এইহানে দেখন যাইতাসে যে আলোর উৎস থেইকা আলো আইসা সাবজেক্টের উপর পরতাসে। সাবজেক্ট থেইকা আলো প্রতিফলন হইয়া আবার ক্যামেরায় আইতাসে। (ধইরা লন এই ক্যামেরা বাজারের সবচেয়ে নিম্নমানের চাংকি পান্ডে ব্র্যান্ড এর মুবাইলের ক্যামেরা। ) এহন ক্যামেরা এই “প্রতিফলিত আলো”র উপর নির্ভর কইরা ঠিক করতাসে ছবিডা কেরম হইবো। খেয়াল করেন সাবজেক্টের উপর আলো কতটুকু পরতাসে তার উপর কিন্তু ক্যামেরা কিসু করতাসে না, করতাসে কতটুক আলো সাব্জেক্ট এ বাড়ি খায়া বাইর হয়া আইসা ক্যামেরার উপর পরতাসে তার উপর।

আমরাছবি তুলার আগে ফোকাস করি, এই আলো টা মাপি, সেই অনুযায়ি এক্সপোজার ঠিক করি, তারপর ছবি তুলি। এই যে আলো মাপামাপির বিষয়ডা, এইডারে কয় মিটারিং। আর যেই যন্ত্র এই আলো মাপার কামডা করে তারে কয় লাইট মিটার। লাইট মিটার দুই কিসিমের আসে:

১) এক্সটার্নাল লাইট মিটার : হাতে ধইরা আলো মাপা যায় এরম একখান জিনিষ। উপরে ছবিটায় নীল বলটার উপরে ছবি আসে দেহেন। এইডা সরাসরি সাবজেক্টের উপর রাইখা কি পরিমান আলো সাবজেক্টের উপর আইতাসে তা মাপন যায়। একুরেসির হিসাবে এইডা সবচেয়ে ভালা তাই দামটাও সেইরাম। ভবিষ্যতে একখান কিনার ইচ্ছা রাখি। দুআ রাইখেন।

২) ইন ক্যামেরা লাইট মিটার: এইডা ক্যামেরার ভিতরে থাকে। আর এইডা মোটামুটি সব ডিজিটাল ক্যামেরার লগো ফিরি হিসাবে আসে। ভালা ছবি তুলতে হইলে এইডা কেমনে কাজ করে তা বুঝনটা খুব দরকার। তাই লন এট্টু এইডা লইয়া গপশপ করি।

একটু আগেই কইতাসিলাম যে ক্যামেরা প্রতিফলিত আলোর উপর নির্ভর কইরা ছবির এক্সপোজার (এক্সপোজার কি জিনিষ, আগের লেখা গুলায় কইসিলাম) ঠিক করে। কিন্তু সব জিনিষ থেইকা তো একি রকম আলো আসেনা তাইনা? আপনের সবুজ পেন্ট আর গুলাপি শার্ট পরা বন্ধুর ছবি তুলান সময় ক্যামেরা তো কনফিউজড হইয়া যাইবো যে, শার্ট এর থেইকা প্রতিফলিত আলোটারে স্ট্যানডার্ড ধরবো না প্যান্ট এর টা? না কি চিপা দিয়া উকি মারা লাল আন্ডিটারে ধরবো? 😀

এই ধরনের কনফিউশন থেইকা রেহাই পাওয়ার জন্য বিগ গ্যায়ানিরা ইন ক্যামেরা লাইট মিটার ডিজাইন করসে একটা বিশেষ রং থেইকা প্রতিফলিত আলোরে স্ট্যানডার্ড ধইরা। এই বিশেষ রংটা হইলো ১৮% গ্রে।

মানে উপরের রংটা ওয়ালা কোনো বোর্ড যদি সাবজেক্টের উপর ধরেন, তারপর ক্যামেরার এক্সপোজার (শাটর স্পিড, এপারচার, আই এস ও)ঠিক করেন, তারপর বোর্ডটা সরায়া ছবিটা তুলেন তাইলে সেইটা সবচেয়ে পারফেক্ট এক্সপোজারে ছবি তুলা হবে।

তার মানে হইলো ক্যামেরার লাইট মিটার আসলে কালার ব্লাইন্ড। সে সামনে যা দেখে তা আসলে সব ওই ১৮% গ্রে এর সাথে তুলনা কইরা দেখার চেষ্টা করে। এই জন্য যেই ছবিতে কালারের ভ্যারিয়েশন বেশি থাকে সেইখানে মিটারিং ভুল হয় সবচেয়ে বেশি। কারন ক্যামেরার মিটার ই তখন ভুল রিডিং দিতেসে সামনের যেই রংটা ১৮% গ্রে এর কাছাকাছি, তার উপর নির্ভর কইরা।

তাইলে ওখন কি করবেন? ২ টা কাম করতে পারেন। এক, সাথে একটা গ্রে কার্ড লইয়া ঘুরবেন। ছবি তুলনের আগে গ্রে কার্ডের এক্সপোজার নিয়া তারপর ছবি তুলবেন। মাগার খিয়াল রাইখেন, গ্রে কার্ড কইলাম দামি জিনিষ।

অথবা দুই, নিজের হাতের পাতার এক্সপোজার নিবেন। কারন, এশিয়ান হওয়ার সুবিধা হিসাবে আমাদের হাতের পাতা থেইকা প্রতিফলিত আলো প্রায় ১৮% গ্রে এর কাছাকাছি এক্সপোপার দেয়।

যাইকগা মিটারিং বিষয়টা কি তা যদি বুইঝা থাকেন তাইলে আহেন এইটার আরেকটু ভিতরে ঢুকি। আমগো ক্যামরা কয়েক রকম ভাবে মিটারিং করতে পারে। ছবির ধরনের উপর এই রকম গুলা নির্ভর করে। মানে আমি কইতে চাইতাসি যে আপনে যদি বুঝতে পারেন যে কোন ছবি তুলার সময় কোন মিটারিং ব্যবহার করবেন তাইলে ছবিটাও সেরম ভালা হইবো।

১) Evaluative Metering (ইভালুয়েটিভ মিটারিং): ক্যাননের Evaluative Metering অথবা নাইকনের Evaluative/Matrix Metering হইলো এই ক্যামেরা গুলার ডিফল্ট মিটারিং। এই ধরনের মিটারিং এ ক্যামেরা সামনের সিনটারে কয়েকটা জোন এ ভাগ কইরা প্রত্যেকটা জোনের আলো মাপে, তারপর সেইগুলা এনালাইসিস কইরা একটা রিডিং দেয় (মানে ক্যামেরায় দেখায় ছবি আন্ডার এক্সপোজড না ওভার এক্সপোজড হইবো) । এই মিটারিং এর সুবিধা হইলো, যহন আপনে শিউর না যে কোন মিটারিং ব্যবহার করবেন, তহন এইডা মাইরা দিবেন, কাম হইয়া যাইবো । আর অসুবিধা হইলো, ক্যামেরা ওভারওল আলোকিত একটা ছবি তুলে ফলে আলো ছায়ার খেলাটা ঠিক মতো খেলা যায় না। নিচের ছবিটা দেহেন, ইভালুয়েটিভ মিটারিং এ তুলা হইসে। কিন্তু মনে হইতাসে না যে কাঠের উপর আরেকটু ডিটেইল থাকলে ভালা হইতো?

২) Partial Metering/Spot Metering (পারশিয়াল মিটারিং আর স্পট মিটারিং): এই ধরনের মিটারিং এ ক্যামেরা ফ্রেমের একেবারে মাঝখান থেইকা রিডিং লয়। কিসু কিসু ক্যামেরায় ডাইনে/বামে/উপরে/নিচে কোন একটা ফোকাসিং পয়েন্ট সিলেক্ট কইরা দিলে সেই পয়েন্টের রিডিং লয়। যহন আপনের ফ্রেমের বিশেষ কোনো জায়গার আলো আপনে একদম ঠিক ঠাক দেখাইতে চান, বাকি জায়গা মুটামুটি হইলেই হইলো, তখন এইডা ইউজ করবেন। উপরের ছবিটাই পারশিয়াল মিটারিং দিয়া তুল্লে এরম হইবো:

আমি পারশিয়াল মিটারিং ইউজ করি পোর্টেইট তুলতে। তাইলে ব্যাক লাইট আমার সাবজেক্টের চেহারার এক্সপোজার রে কনফিউজড করতে পারে না। আর স্পট মিটারিং ইউজ করি যখন সিন এ শুধু একটা আলোকিত জায়গা থাকে। ধরেন মুমবাতির ছবি অথবা চান্দের ছবি।

Center-Weighted Average Metering (সেন্টার ওয়েটেড এভারেজ মিটারিং): এই ক্ষেত্রে ক্যামেরা ফ্রেমের মাঝখানের এক্সপোজার নেয়, তারে একটা ওয়েটেজ ভ্যালু দেয়, আবার সেন্টারের চারপাশের এক্সপোজার নেয়, একটা ওয়েটেজ ভ্যালু দেয় তয় প্রথমটার চেয়ে কম। এইবার এই গুলার একটার এভারেজ কইরা রিডিং দেয়। যখন সাবজেক্ট ফ্রেমের এক্কেরে মাঝখানে থাকে তহন এইডা সবচেয়ে ভালা কাম করে।

হফফফফফফফফফফফ…. বিশাল লেখা লিখলাম। এল্লা থামি।

২২৫/৩৬৫

লেখার তারিখঃ অক্টোবর ১১, ২০১৫

ছোটদের ফটোগ্রাফি শিক্ষা ৯

আগের দিন ফিল্ম আর ফিল্ম এর উপর বেজ কইরা ক্যামেরার প্রকারভেদ আলোচনা করসি। এইবার একটু ডিজিটাল যুগে প্রবেশ করি।

ডিজিটাল ক্যামেরার হাড্ডিগুড্ডি

ফিল্ম ক্যামেরার প্যাচালটা যদি বুইঝা থাকেন তাইলে ডিজিটাল ক্যামেরার কথাবার্তি গুলান এক্কেরে পানি ভাত মনে হইবো। সোজা হিসাব, ফ্লিমটার জায়গায় খালি একটা সেনসর চিন্তা করেন, ব্যস হইয়া গেল ডিজিটাল ক্যামেরা। তাইলে সেনসর জিনিষটা কি এইটা আগে বুইঝা লই।

সেনসরের আক্ষরিক অনুবাদ হইলো যা কিসু একটা সেন্স করে। এই “কিসু”টা যে কোন “কিসু” হইতে পারে। যেমন ধরেন, মোশন সেনসর নাড়াচাড়া সেন্স করতে পারে, হিট সেনসর গরম না ঠান্ডা হেইডা সেন্স করতে পারে। এইখানে যে সেনসর নিয়া আলাপ হইবো সেইটা হইলো “ইমেজ সেনসর” যেইটা আলো সেন্স করতে পারে। অবশ্য “ইমেজ সেনসর” শুধু আলো সেন্স কেইরা বইয়া থাকেনা, আলোটারে আবার ইলেকট্রিকাল সিগন্যালেও রুপান্তর করতে পারে।


“ইমেজ সেনসর” সাধারনত দুই ধরনের হয়। সি.সি.ডি (CCD = Charged Couple Device) আর সিমোস (CMOS = Complementary Metal Oxide Semiconductor)। নাম,গঠন যেইটাই হোক দুইটারি একই কাম। আলোরে ইলেকট্রিকাল সিগন্যাল বানানো। এরা “ক্যামনে কাজ করে” সেইটা বোঝনের চেয়ে “কি কাজ করে” সেইটার আইডিয়াটা দরকার বেশি । তাই বেশি থিউরিতে গেলাম না।


ধরেন একটা আয়তোক্ষেত্রে বাংলাদেশের সব রাজাকার গুলারে গাদাগাদি কইরা দাড়া করানো হইলো আর আপনে একটা গুলতি লইয়া এক একটারে নিশানা কইরা ঢিলা মারা শুরু করলেন। যার চান্দিতে ঢিলা লাগতাসে হে চিল্লান দিতাসে আর আপনের বন্ধু কেউ একজন ক্যাডায় চিল্লান দিলো হেইডা লিখা রাখতাসে ।


এখানে আপনে হইলেন আলোর উৎস, ঢিলা গুলান হইলো আলোর কনিকা ফটোন,রাজাকারগুলান হইলো ফটো সেনসিটিভ সেল, তাগোর চিল্লানোটা হইলো ইলেকট্রিকাল সিগন্যাল আর আপনের যেই বন্ধু ক্যাডায় ক্যাডায় চিল্লাইলো লিখ্খা রাখতাসে হে হইলো ইমেজ প্রসেসর।


ইমেজ প্রসেসরের কামের কুনো শেষ নাই। এই হালায় ইলেকট্রিকাল সিগন্যালগুলারে পিক্সেল ( পিক্সেল কি সেই বেপারে বিস্তারিত শেষে আসে) বানায়, মেমরিতে সেভ করে, ক্যামেরার মনিটরে দেহায় এমনকি অনুরোধের ফাপরে পইরা ছবি তে কিসু এফেক্টও দিয়া দেয় মাঝে সাঝে। ইমেজ প্রসেসর কতো শক্তিশালি তার উপর ক্যামেরার দামও অনেক নির্ভর করে। যদি আপনের ডিজিটাল ক্যামেরা বা ক্যামেরা ওয়ালা ফোনের ম্যানুয়ালটা কাসাকাসি থাকে তাইলে এটট্টু কষ্ট কইরা ২টা জিনিষ খুইজা বাইর করেন ওইখানে । এক, “সেনসর টাইপ” এ কি লেখা আসে? সিসিডি না সিমোস? আর দুই, “ইমেজ প্রসেসর টাইপ” এ কি লেখা আসে?



যাউকগা আগের লেখাটায় বলতেসিলাম ফ্লিমের কি কি সাইজ হয়। একই রকম ভাবে সেনসরেরও কয়েকরম সাইজ হয়। কি টাইপের ক্যামেরা সেইটার উপর নির্ভর করে সেইটাতে কি সেনসর ব্যবহার করা হইসে। মোবাইল ক্যামেরার ছবি বাসার ডিজিটাল ক্যামেরার মতো সুন্দর আসে না ক্যান?

শুধু মেগাপিক্সেল কম ওই জন্য না কিন্তু। মোবাইল ক্যামেরার ইমেজ সেনসর ছোট আর ডিজিটাল ক্যামেরার ইমেজ সেনসর বড়। আবার আইফোনে কিন্ত ইমেজ সেনসর অন্য মোবাইলের চেয়ে বড় তাই এইটাতে ছবি ভাল আসে।


ফিল্ম এস.এল.আরের কথা এর আগের লেখায় বলা হইসে। এইবার সেইটার ফ্লিমের যায়গায় একটা ইমেজ সেনসর কল্পনা করেন। হইয়া গেলো ডিজিটাল এস.এল.আর বা DSLR। এক এক DSLR এ এক একধরনের সেনসর ব্যবহার করা হয়। ইমেজ সেনসরের সাইজটা যদি একটা ৩৫ মিমি ফরমেট এর ফিল্মের সাইজের সমান (৩৫ মি.মি. বাই ২৪ মি.মি.)বা কাছাকাছি হয় তাইলে সেইটারে বলা হয় ফুল ফ্রেম সেনসর আর ক্যামেরাটারে বলে ফুল ফ্রেম DSLR।


কিন্তু কোন ক্যামেরার ইমেজ সেনসর যদি ফুল ফ্রেম সেনসর এর চেয়ে ছোট হয় তাইলে কি হইবো? তাইলে ফুল ফ্রেম সেনসরে যে ছবিটা পরতো, ছোট সেনসরে তার সেই একি ছবির চারপাশের বর্ডারের কাছ থেইকা কাইটা মাঝখানে যেট্টুক বাচে ততখানি পরবো। টিফিন বক্স যদি পাইরুটির চেয়ে ছুডু অয় তাইলে চারপাশ ফালাইয়া ঢুকাইতে হয় না? ওইরকম আরকি।


এই কাইটা ফেলনের ঘটনাডারে কয় ক্রপিং আর কোন সেনসর কতখানি কাটবো তারে কয় ক্রপ ফ্যাকটর। যেমন আমার ক্যামেরার ক্রপ ফ্যাকটর ১.৬ । এইটার মানে হইলো ফুল ফ্রেম সেনসরের চেয়ে আমার ক্যামেরার সেনসর ১.৬ গুন ছোট।



ক্যামেরার কিননের সময় (অথবা কিন্না ফালাইলে কিননের পরে) ক্যামেরার ক্রপ ফ্যাকটর জানাটা দরকারি। ফুল ফ্রেম ইমেজ সেনসরে ক্রপ সেনসরের তুলনায় কম নয়েজ আর বেশি ডিটেইল ছবি পাওয়া যায়। এই পার্থক্যটা খুব ভাল মতো বোঝা যায় কম আলোয় ছবি তুলতে গেলে। যেহেতু কম আলো সেহেতু আই.এস.ও বাড়াইতে হয়। যেহেতু আই.এস.ও বাড়াইতে হয় সেহেতু নয়েজ আসার প্রবনতা বাড়ে। ইমেজ সেনসর যত বড় হয় সেইটা এই নয়েজকে তত ভালভাবে হ্যান্ডেল করতে পারে।


যেইকারনে ফুল ফ্রেম ক্যামেরায় অনেক হাই আই.এস.ও যেমন ৬৪০০ এ ফটো তুললেও ক্ষেত্র বিশেষে ছবিতে নয়েজ আসে না। কিন্তু একি কাজটা যদি কোন পয়েন্ট এন্ড শুটে করতে যান তাইলে যতই হাই আই.এস.ও সাপোর্ট করুক মোটামুটি ২০০ এর উপরে গেলেই ছবিতে নয়েজ আসা শুরু করবো।

কয়েকটা ইমেজ সেনসরের নাম জাইনা রাখা ভাল। তাইলে পরে মিলায়া দেখতে পারবেন ম্যানুয়ালের সাথে (এইখানে বইলা রাখি ক্যামেরার ম্যানুয়াল পরাটা একটা ফরজ কাজ ) । ফুল ফ্রেম ইমেজ সেনসরের আলাদা কোন নাম নাই, এই নামেই পরিচিত। ক্রপ সেনসরের মধ্যে ক্যাননের প্রো লেভেলের গুলায় ব্যবহার হয় APS-H সেনসর ( ২৮.৭ মি.মি. বাই ১৯ মি.মি.) যেইটার ক্রপ ফ্যাকটর ১.৩। নাইকনের ক্রপ সেনসর ক্যামেরা গুলা শুরু হয় ক্রপ ফ্যাকটর ১.৫ থেইকা। সেনসরের নাম DX । ক্যাননের ক্রপ ফেকটর ১.৫ এর সেনসরের নাম APS-C। সনি আলফা সিরিজের কিসু ক্যামেরায় ১.৫ ক্রপ ফ্যাকটরের সেনসর ব্যবহার হয়। এই APS-C সেনসরের মধ্যে আরেকটা আসে যেগুলা ক্যাননের এন্ট্রি লেভেল ডি এস এল আরে ব্যবহার হয় । এইগুলার ক্রপ ফ্যাকটর ১.৬।


ডিজিটাল কমপ্যাক্ট ক্যামেরা যাকে আমরা বলি পয়েন্ট এন্ড শুট ক্যামারা বা ছোট ডিজিটাল ক্যামেরা, তার ক্রপ ফ্যাকটর শুরু হয় ৩ থেইকা, যেইটা ৭ পর্যন্ত যাইতে পারে। মোবাইলের ক্যামেরার ক্রপ ফ্যাকটর সাধারনত ১৪ থেইকা শুরু হয়।


ইমেজ সেনসর আর ক্রপ ফ্যাকটর নিয়া এতো কচকচানির উদ্দেশ্যটা যখন ক্যামেরার লেন্স নিয়া কথা কমু তখন বুঝা যাইবো। একই লেন্স, ক্রপ ফ্যাকটরের জন্য ভিন্ন ভিন্ন ক্যামেরায় ভিন্ন ভিন্ন আচরন করে।

এই তো গেল ৩৫ মি.মি ফরমেটের ডিজিটাল ক্যামেরার কথা। এ ছাড়া মিডিয়াম ফরমেটের ডিজিটাল ক্যামেরাও আসে যেইটার সেনসরের সাইজ ৩৬ বাই ৪৮ মি.মি এর মতো।


পিক্সেল আর মেগা পিক্সেল কি খায় না মাথায় দ্যায়?


ডিজিটাল ক্যামেরায় আরেকটা টার্ম খুব বেশি ব্যবহার করা হয় যেইটা হইলো পিক্সেল। পিকচার এলিমেন্ট বা সংক্ষেপে পিক্সেল হইলো ছবি বানানির ইট। ইমেজ সেনসর আলোরে ইলেকট্রনিক সিগন্যালে রুপান্তরের পর ইমেজ প্রসেসর পিক্সেলের পরে পিক্সেল সাজায়া ছবি টা বানায়। তয় ম্যাক্সিমাম কয়টা পিক্সেল ব্যবহার করতে পারবো সেইটা নির্ভর করবো সেনসরের সাইজের উপর ।

এখন আপনের ক্যামেরা যদি প্রসেসর রে কয় আব্বে ওই ! একটা ১০ মেগা পিক্সেলের ছবি বানা তো । তাইলে প্রসেসর মামায় সেনসরের সাহায্য লইয়া দৈর্ঘ্য বরাবর বসাইবো ৩৮৭২টা পিক্সেল আর প্রস্থ বরাবর বসাইবো প্রতি কলামে ২৫৯২টা পিক্সেল। তাইলে টোটাল পিক্সেল হইবো ৩৮৭২ গুন ২৫৯২ = ১০০৩৬২২৪টা পিক্সেল বা ১০ মেগাপিক্সেল।


তাইলে বুঝতেই পারতাসেন আপনের যেই ক্যামেরাই হোক চেষ্টা করবেন যদি মেমরি থাকে তাইলে অবশ্যই সবচেয়ে ম্যাক্সিমাম পসিবল মেগাপিক্সেলে ছবি তুলবেন।

আইজকা মনে হয় থামি এইখানে। বেশি হইয়া যাইতাসে ।

২২৪/৩৬৫

লেখার তারিখঃ অক্টোবর ১০, ২০১৫

ছোটদের ফটোগ্রাফি শিক্ষা ৮

গত লেখায় আমি ছবি তুলনের মিডিয়াম এর উপর নির্ভর কইরা ক্যামেরার প্রকারভেদ এবং ফিল্ম এর বিভিন্নতার উপর নির্ভর কইরা ক্যামেরার প্রকারভেদ পড়সি। আজকে আরেকটা প্রকারভেদ পড়ি আমরা।

ফ্লিম ক্যামেরায় ছবি তুলনের জন্য কি ধরনের টেকনলজি ব্যবহার করা হয় সেই ভিত্তিতে ক্যামেরারে কয়েকটা ভাগ করন যায় ( এতো কষ্ট না কইরা ক্যামেরারে তুইলা আছার মাইরাও কয়েকটা ভাগ করন যায়..খিক খিক..কুবুদ্ধির জন্য কতৃপক্ষ দায়ি নন..খিক খিক):

ভিউফাইন্ডার আর রেন্জ ফাইন্ডার ক্যামেরা:

ইটা ডিজিটাল ক্যামেরা আসনের আগে সবচেয়ে চাল্লু ক্যামেরা। খালি ফ্লিম ভরবেন, ফুটা (ভিউফাইন্ডার) দিয়া দেখবেন আর শাটার রিলিজ বাটন টিপ দিবেন । রেন্জ ফাইন্ডার ক্যামেরায় ভিউফাইন্ডারটা ঠিক লেন্সের উপর না হইয়া এট্টু সাইডে থাকে তাই ক্যামেরায় ভিউফাইন্ডারে যা দেহা যায় তার চেয়ে ফ্লিমে যা উঠবো তা এট্টু আলাদা। এইটারে কয় প‌্যারালাক্স ইরর এই ইরর দুর করনের উপায় রেন্জ ফাইন্ডারে থাকে। তয় সেইটা আরেক প‌্যাচাল।


ফিল্ম সিঙ্গেল লেন্স রিফ্লেক্স ক্যামেরা : সিঙ্গেল লেন্স রিফ্লেক্স বা এস.এল.আর ক্যামেরায় দুইটা প্রধান উপাদান হইলো একটা আয়না আর একটা প্রিজম। আয়নাটা থাকে ঠিক লেন্সের পিছনে আর ফ্লিমের সামনে। এই আয়নাটা সাবজেক্ট থেইকা আসা আলোটারে রিফ্লেক্ট করে উপরে বসানো প্রিজমটার দিকে। প্রিজমটা এই রিফ্লেট হওয়া আলোটারে কেচকি মাইরা পাডায়া দেয় ভিউফাইন্ডারের দিকে আর হেরপর আমরা দেখতে পাই। এখন শাটার রিলিজ বাটনে টিপ দিলে শাটারের লগে লগে আয়নাটাও লাফ দিয়া উপরে উইঠা যায় আর তহন ফ্লিমের উপরে আলো পরে আর ছবি উইঠা যায়। ব্যাপারটা অনেকটা এইরকম:

একটা ফিল্ম এস.এল.আর ক্যামেরায় নিচের হাড্ডি গুড্ডি গুলা থাকে:



ছবিটা তেমন জটিল না । দেখলে বুঝা যাওনের কথা কুনটা কি? তারপরও কিসু না বুঝলে জিগায়েন।

ফিল্ম টুইন লেন্স রিফ্লেক্স ক্যামেরা : টুইন লেন্স রিফ্লেক্স ক্যামেরা বা টি.এল.আর এক্কেরে এস.এল.আরের লাহানি কাজ করে তয় পার্থক্য হইলো এইটাতে লেন্স থাকে ২টা। একটা দিয়া ভিউফাইন্ডারে আলো যায় আর আরেকটা দিয়া ফিল্মে আলো যায়। এইটাতেও প‌্যারালাক্স ইরর আসে।




টি.এল.আর দেখতে এইরম:



ভিউ ক্যামেরা: ভিউ ক্যামেরায় ভিউফাইন্ডারটা থাকে ঠিক ফিল্মের পিছনে। লেন্স দিয়া যেই আলোটা ক্যামেরার ভিতরে আসে সেইটা সরাসরি ভিউফাইন্ডারে দেখা যায় তবে উল্টা। ফোকাসিংএর পর ফ্লিমটা লেন্স আর ভিউফাইন্ডারের মাঝখানে নিয়া আসা হয়। এখনো খুজলে গুলিস্থানে এই ধরনের ক্যামেরা দেখা যায় যেইটার প্রচলিত নাম বক্স ক্যামরা। ক্যামরাটার পিছনে একটা পর্দা লাগানো থাকে যাতে ওইদিক দিয়া আলো আইসা ফ্লিমে পরতে না পারে।



এই হইলো গিয়া ফ্লিম ক্যামেরার প‌্যাচালি। ডিজিটাল ফটোগ্রাফি বুঝতে হইলে এইগুলা আগে জানাটা জরুরি। আগামি পাঠে আশা রাখি ডিজিটাল ক্যামেরা আর লেন্স নিয়া কখা কইতে পারুম।

২২৩/৩৬৫

লেখার তারিখঃ অক্টোবর ০৮ , ২০১৫

ছোটদের ফটোগ্রাফি শিক্ষা ৭


ফটোগ্রাফির একটা বড় অংশ জুইরা আসে ক্যামেরা আর লেন্স। যদিও বলা হয় ফটো আসলে তৈরি হয় মাথায়, ক্যামেরায় না, তারপরও যেই বন্দুকটা দিয়া গুল্লি করবেন সেইটার ট্রিগারটা কই আসে ওইটাই যদি না জানেন তাইলে ক্যামনে চলবো কন?

দুনিয়ায় যত ক্যামেরা আসে তার সবটিরে আসলে অনেক গুলা ভাবে প্রকারভেদ করন যায়। যদি ছবি তুলনের মাধ্যমটা বা যার উপ্রে ছবি উঠে তা চিন্তা করেন তাইলে দুনিয়া তে ২ রকমের ক্যামেরা আসে:

১) ফিল্ম ক্যামেরা
২) ডিজিটাল ক্যামেরা

ফিল্ম ক্যামেরার প্রসঙ্গে যাওনরে আগে এট্টু ফিল্ম লইয়া কথা কইয়া লই। ফিল্ম এর ভাগ হইলো ৩টা:

১) স্মলফরম্যাটফিল্ম : এইটা সবচেয়ে বহুল ব্যবহৃত ফিল্ম টাইপ। জর্জ ইস্টম্যান ছিলেন এই ফরমেট এর ফিল্ম এর জনক। দুকানে ফিল্ম চাইলে যে ফিল্ম দেয় এটার সেই ফিল্ম। এইটার মাপ হইলো

৩৬ মিলিমিটার বাই ২৪ মিলিমিটার।

এইটার প্রচলিত নাম হইলো ৩৫ মি.মি ফ্লিম কারন বর্ডার বাদ দিলে এইটার ছবি তোলার প্রস্থের সাইজ ৩৫ মি.মি। এইটার আবার ৪ রকম আই.এস.ও তে পাওয়া যায়। আই.এস.ও হইলো ফ্লিম অথবা সেনসরের লাইট সেনসিটিভিটি। আই.এস.ও যত বেশি ফিল্ম তত তাড়াতাড়ি আলোর লগে বিক্রিয়া করবো। আই.এস.ও নিয়া আগের পোস্টে আলোচনা করসি মনে লয়, তাই আর বেশি কিসু কইলাম না। ৩৫ মি.মি ফিল্ম ৪ ধরনের আই.এস.ও তে পাওন যায়: ১০০,২০০,৪০০ আর ৮০০। আমার মনে আসে দুকানে ফিল্ম কিনতে গেলে ব্যাটায় হেভি ভাব নিয়া যিগাইতো ১০০ পাওয়ারের টা নিবেন না ২০০ পাওয়ারেরটা? তহন ভাবতাম নিমু যহন কম নিমু ক্যা , ২০০টাই দেন


) মিডিয়ামফরমেটফিল্ম: এইটা অনেকটা বড়লুকগো ফিল্ম, তাই আম জনতার মইদ্যে ব্যবহার কম। এইটার সাইজ হইলো গিয়া

৬ ইন্চি বাই ৬ ইন্চি।

মিডিয়াম ফরমেট আমাগো দেশে বেশি প্রচলিত না কিন্তু ফ্লিকারে খুজলে এরুম অনেক ফটোগ্রাফার বাইবেন যারা খালি মিডিয়াম ফরমেটেই ফটুক তুলে। বাংলাদেশে কিছু ফ্যশন স্টুডিও ফটোগ্রাফার এই ফর্মেটে তুলে বইলা শুনসি। এইটাতে ৩৫ মি.মি. এর চেয়ে ডিটেইল অনেক বেশি পাওন যায়


৩) লার্জফরমেটফিল্ম: এইটা আরো বড়লুকগো ফিল্ম। বিদেশের ব্ড় বড় ফ্যশন ম্যাগাজিনগুলান তাদের কাভার পেজে যে ফটু দেয় তার ৮০% ই এই ফরমেটে তুলা। এইটা সাইজ হইলো

৮ ইন্চি বাই ১০ ইন্চি

আর এইগুলান ৩৫ মি.মি এর মতোন রোল অবস্থায় পাওন যায় না বরং একটা একটা কইরা ক্যামেরায় লাগায়া ফটু তুলা লাগে।

যারা অর্ডে হেপবার্নের ফানি ফেস সিনামাটা দেখসেন তারা হয়তো খেয়াল করসেন সিনামাটার নায়ক একটা ভুমা সাইজের ক্যামেরা দিয়া ফটু তুলে, ওইটাই হইসে লার্জ ফরমেট ফিল্ম ক্যামেরা। এই ফিল্মে তোলা ছবির ডিটেইল দেখলে মাথা খারাপ হইয়া যায়।


আরো কিছু স্পেশাল টাইপের ফিল্ম আসে তয় সেগুলা ঠিক তেমন প্রচলিত না তাই এইখানে আর বল্লাম না।

ফিল্ম যেহেতু তিন রকম তাই ক্যামেরাও তিন রকম:

১) স্মলফরম্যাটফিল্মক্যামেরা

২) মিডিয়ামফরম্যাটফিল্মক্যামেরা

৩) লার্জফরম্যাটফিল্মক্যামেরা


ক্যামেরা নিয়া আরো অনেক প্যাচাল বাদ আসে। কিন্তু আজকের জন্য ইনফরমেশন ওভারলোড হয়া যাবে। আবার কালকের লেখায় ক্যামেরা এবং এর বেসিক কার্যপদ্ধতি নিয়া লিখব নে।

২২২/৩৬৫

লেখার তারিখঃ অক্টোবর ০৭ , ২০১৫

ছোটদের ফটোগ্রাফি শিক্ষা ৬

ফটোগ্রাফি তে দুইটা দিক আসে। একটা হইল এর টেকনিক্যাল(Technical ) দিক। যেইখানে ফটোগ্রাফির বেসিক, টেকনিক্স, কারিগরি ইত্যাদি ব্যাপার স্যাপার গুলা আছে। আরেকটা দিন হইল এর এসথেটিকস (Aesthetics) দিক। এসথেটিকস বাংলা করলে হয় নন্দনতত্ত্ব। আমরা আগের ৫ টা লেখায় অনেক টেকনিকাল ব্যাপার নিইয়া আলোচনা করসি। আজকে এক্টূ টাইম দেই অগুলারে মাথায় সিঙ্ক ইন করতে। আর আমরা এসথেটিকস নিয়া কথা কই।

একটা জিনিস সুন্দর লাগে, ক্যান সুন্দর লাগে। ক্যান একটা ছবি ভালল্লাগে ক্যান একটা ছবি ভাল্লাগে না। এই গুলাই নন্দনত্তত্ব। এই জিনিষ্টা মানুষ থেকে মানুষে চেঞ্জ হয়। আপনার কাছে যেইটা সুন্দর সেইটা আরেকজন এর কাছে হয় তো সাধারন। এইটা সব সময় ই ছিল , সব সময় ই থাকবে।

কিন্তু মাথায় রাখতে হবে ফটোগ্রাফি তে যত টা না আপনি কি দেখেন তার চেয়ে অনেক বেশি “দেখানো”। যেমন আকাশ ভর্তি অনন্ত নক্ষত্র মালা। দেইখা আপ্নের ভিত্রে কি জানি নইড়া চইড়া গেল। আপনি আপনার দুই মেগা পিক্সেল এর চাইনিজ মোবাইল বাইর কইরা আকাশের দিকে তাক কইরা ফ্ল্যাশ অন কইরা দিলেন টিপ। মোবাইল রে ধন্য কইরা ঘন কাল নয়েজ এ ভরপুর কালা পর্দা উঠলো একটা। আপনি নিচে লিখে দিলেন , আমার ছবি তে মিল্কি ওয়ে। ফটো টেকেন বাই মি। কপিরাইট বাই মি। ছবির কুনায় লিখলেন (c) কুদ্দুছ+জুলেখা ফটোগ্রাফি। তাইলে কি যা দেখলেন তা দেখানি হইল? আপনি যা ফিল করলেন তা ফিল করাইতে পারলেন ছবি দিয়া?

আমরা ফটোগ্রাফি টা সময় নিয়া আগ্রহ নিয়া শিখি এই কারনেই। যাতে আমার এসথেটিকস সেন্স আর আমার হাতের ক্যামেরার তোলা ছবির মধ্যে গ্যাপ টা যতটা পারা যায় কমায় আনা যায়। যাতে যা তুলতে চাইতেসি তা তুলতে পারি। যাতে যা দেখাইতে চাইতেসি তার তুলার জন্য কি করতে হবে সেইটা জানি, যাতে ক্যামেরার উপর , আলোর উপর আরো কন্ট্রোল আসে।

এই যে আমরা প্রতিদিন কতকিসু দেখি, এই দেখা জিনিষটা কি আসলে সবার একরকম? না । এক এক জন এক ভাবে একটা বিষয়রে দেখে, দেখতে পছন্দ করে । রাস্তার জ্যাম যখন আমরা বুঝাইতে চাই তাইলে যে ছবিটা আসে তা হইলো একটা এরিয়াল ভিউ, উপর থেইকা দেখা একটা লম্বা গাড়ি/রিকশা/বাসের সারি। আবার র্বষার ফুল বুঝাইতে চাইলে আমরা কিন্তু উপর থেইকা তোলা কদমগাছের ফটুক দেইনা, বরং অনেক কাছ থেইকা তোলা ২টা কদমফুলের ছবি দেই। কারন আমরা এমনেই দেখতে পছন্দ করি।

টেকনিকাল বেপার গুলার বাধা টা পার হয়া আসার পর আমাদের যেই দিক্টায় পুরা মনোযোগ দিতে হয় তা হইল ছবির কম্পোজিশন। মানে আমার ছবির ফ্রেমে যা যা আসে সেগুলারে আমি কিভাবে সাজামু সেই টা।

সুজা কইরা কইতে গেলে কম্পোজিশন মানে হইলো সাজানো। আপনার মনের চোখ যা দেখে সেইটা কিভাবে একটা ছবিতে দেখাইবেন আর সে জন্য ছবির উপাদান গুলারে কেমনে সাজাইবেন সেইটাই ফটোগ্রাফিতে কয় কম্পোজিশন। যেহেতু আপনার দেখার চেয়ে ক্যামেরা একটু ভিন্ন ভাবে দেখে, তাই কম্পোজিশনের টেকনিক গুলা জানা থাকলে, ক্যামেরারেও আপনার মতোই দেখাইতে পারবেন।

কম্পোজিশনের কয়েকটা নিয়ম নিয়া এখন কথা বলি । কিন্তু এই গুলাই শেষ না। এইগুলা হইসে কয়েকটা রং পেনসিল মাত্র, যে গুলা দিয়া ছবি বানানোর দায়িত্ব আপনার। আরও অনেক রং এর পেনসিল আসে যে গুলা যত ছবি দেখবেন, ছবি তুলবেন তত বুঝতে পারবেন। আমি আমার স্টুডেন্ট দের বলি, কম্পোজিশন এর কোন নিয়ম নাই শুধু কিছু এলিমেন্ট আছে। এগুলার এক বা একাধিক এলিমেন্ট ব্যাবহার কইরা আমরা একটা ছবি কম্পোজ করি।



১) ছবির সাবজেক্ট ঠিক করা

সিরিয়াসলি ছবি তুলার প্রথম প্রথম আমরা সবাই যেটা করি সেটা হইল একটা কিছু পছন্দ হইলেই সেটার সামনে ক্যামেরা নিয়াই ক্লিক। কিন্তু পরে ছবিটা দেখলে নিজের কাছেই আর ভাল্লাগেনা, মনে হ্য় এউটা ক্যান তুলসিলাম হুদাই…তাই সবার আগে দরকার একটু চিন্তা করা, আপনি ঠিক কি দেখাইতে চাইতেসেন ছবিতে? আমি নিজে যা করি তা হইসে, ছবি তোলার আগে যদি আমার মনে হয় আমি যেমনটা দেখাইতে চাইতেসি সেইটা আমার চোখে দেখা সম্ভব হইলেও ছবিতে আনা সম্ভব কি না? না হইলে আর তুলি না। কি দরকার? সব ছবি তুলতে হবে এমন তো কনো কথা নাই। নিজেরে এইটুক স্বাধীনতা উপভোগ করতে দিয়েন, নাইলে আমি অনেকেরে দেখসি অনেক তাড়াতাড়ি হতাশ হইয়া পরতে।

একটা উদাহারন দেই, ধরেন আপনি চান বিস্তির্ন পর্বতমালার ছবি তুলতে কিন্তু আপনার কাছে পুরাটা ফ্রেমে আনার মতো ক্যামেরা/লেন্স নাই, শুধু একটা পয়েন্ট এন্ড শুট অথবা মোবাইলের ক্যামেরা আছে। আপনি যদি হোটেলের সামনে থেকে সেই পর্বতমালার দিকে ক্যামেরা তাক করে শাটার টিপে দেন তাহলে যে ছবিটা উঠবে, সেইটার কি আসলেই কোন দরকার আছে আপনার? কি উঠবে সেই ছবিতে? হয়তো অনেক শার্প কিছু গাছপালা আর দুরে প্রায় দেখাই যায় না এমন কিছু একটা যেটাকে আপনাকে ফেসবুকে ট্যাগ কইরা বুঝায় দিতে হবে যে “ইহা পর্বত”।

আমার মুল পয়েন্টটা হইলো কি আসলে তুলতে চান (মানে ছবির সাবজেক্ট), সেইটা আগে ঠিক করেন তারপর দেখেন আপনার ক্যামেরা আদৌ সেইটা তোলার ক্ষমতা রাখে কিনা।

২) ফোকাল পয়েন্টকে একা করে দেন (Isolate the Focal Point)

কিছু কিছু ছবি তে এইটা বেশ কাজে দ্যায়। বিশেষ কইরা নতুন নতুন ফটোগ্রাফি শুরু করলে আমরা অনেক বেশি জুম ইন করি। যতই দিন যায় আমাদের ফ্রেম ওয়াইড হয় আস্তে আস্তে। কিন্তু টাইটেল পইড়াই গ্রুপ ছবি তে সবাইরে আলাদা করা শুরু কইরেন না।

ছবি তোলার সময়, সাবজেক্ট ঠিক করার পর চেষ্টা করেন সাবজেক্টটাকে ছবিতে সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ন কইরা তুলতে। সেইটা করতে হইলে আপনারে সাবজেক্টকে রাখতে হবে ফোকাল পয়েন্টে। জিগান ফোকাল পয়েন্ট কি? সহজ ভাষায় লেন্সের সামনের যেই পয়েন্ট থেইকা আলো আইসা লেন্সের পিছনে সবচেয়ে স্পষ্ট রিফ্লেকশন তৈরি করে সেই পয়েন্টটা।


ফোকাল পয়েন্টে যা থাকবো, সেইটা ছবিতে সবচেয়ে বেশি শার্প আসবো। আর আশেপাশের গুলা তাদের অবস্থান অনুসারে কম শার্প আসবো। অনেক সময় সাবজেক্টকে গুরুত্ব দেয়ার জন্য আশে পাশে বা সামনে পিছনে কিছু আনশার্প এলিমেন্ট রাইখা দেয়া হয়।

ছবিতে যদি অনেক বেশি ফোকাল পয়েন্ট থাকে তাইলেও অনেকে কনফিউজড হয় যে আসলে ছবিটাতে কি বুঝানো হইসে। তাই চেষ্টা করেন ছবিতে ফোকাল পয়েন্ট যতটা কম রাখা যায়…অবশ্য এই নিয়মটাও ভাঙা হয় কিছু কিছু ক্ষেত্রে, যেমন গ্রুপ ফটো আর ল্যান্ স্কেপ। যে পর্বতের ছবিটার কথা বল্লাম শুরু তে, সেইটার এমন ঝাপসা ফটো না তুইলা সুর্যাস্ত পর্যন্ত অপেক্ষা করেন, এরপর পাহারের একটা সিলুয়েট তুলেন, যেইটা যে কোন ক্যামেরায় সম্ভব।


৩) রুল অফ থার্ডস

এইটা অনেক বার শুনতে হবে আপনার ফটোগ্রাফি লাইফ এ। যে কিছুই পারে না, সেও রুল অফ থার্ড পারে। তাই এইটা আপ্নের জানা উচিত।

নতুন নতুন ছবি তোলার উৎসাহে অনেকেই খেয়াল করেনা যে ভিউফাইন্ডারে/ক্যামেরার স্ক্রিনে কি দেখা যাচ্ছে। রুল অফ থার্ডস এই সব ফটোতে ব্যালেন্স আনতে অনেক সাহায্য করে। যদিও ৩য় স্থানে লিখতেসি কিন্তু আমি মনে করি এইটা ফটোগ্রাফির অন্যতম মুল্যবান একটা কম্পোজিশন এলিমেন্ট।

এইটা মনে রাখাও অনেক সহজ। ছবির ফ্রেমে “#” এইরকম চারটা লাইনের একটা গ্রিড চিন্তা করেন। লাইন গুলা যেখানে ক্রস করে সেইগুলাকে বলে “গোল্ডেন সেকশন”। চেষ্টা করেন আপনার সাবজেক্টকে গোল্ডেন সেকশন ৪টার যে কোন একটাতে রাখতে।


আপনি যদি এই নিয়মগুলা মাথায় রাইখা কিছু ভাল ছবি দেখেন, দেখবেন ৭৫% ফটোগ্রাফার এই নিয়মটা অনুসরন কইরা ছবি তুলসে। প্র্যাকটিস করলে এই নিয়মটা অনেকটা ইনটুইশনের মতো মাথায় ঢুইকা যায়। এইটা ফলো করেন, দেখেন আপনার ছবির কোয়ালিটি ভাল হয় কি না।

আপাতত এইটুকুই থাক… কম্পোজিশন নিয়া আরো কথা বার্তা আছে। কিন্তু প্রথম কিস্তি এই পর্যন্তই। আমরা টেকনিক্যাল দিক দিয়া আরেকটু আগায় নেই। তারপর আবার কম্পোজিশন এর আলোচনায় ফেরত আসবো।