৩০৭/৩৬৫

লেখার তারিখঃ এপ্রিল ২২, ২০১৯, ৮:২৩ পি এম

কলম্বিয়ার শেষ মিশন । পর্ব ২

কলম্বিয়া ডিজ্যাস্টার এর টেকনিকাল কারন গুলোর পাশাপাশি যে বড় ধরনের কিছু প্রাতিষ্ঠানিক এবং ব্যাবস্থাপনামূলক কারন ও ছিল তার গভিরে ঢোকার আগে আমাদের NASA এবং নাসার পরিচালিত বিভিন্ন প্রজেক্ট ও কার্যক্রম এর ব্যাপারে কিছু ধারনা থাকা প্রয়োজন। তাই আমি আজকের লেখায় গল্পটা আরো পেছন থেকে বলা শুরু করছি যাতে আমরা ধাপে ধাপে পুরো ব্যপার টার ব্যাপ্তি অনুধাবন করতে পারি।

১৯৫৭ সালে সোভিয়েত রাশিয়া মহাকাশে স্পেস ইতিহাসের প্রথম স্যাটেলাইট স্পুটনিক প্রেরণ করে। এর জবাবে তার পরের বছরই অর্থাৎ ১৯৫৮ সালে আমেরিকার কংগ্রেস এবং প্রেসিডেন্ট আইসেনহাওয়ার গঠন করেন National Aeronautics and Space Administration বা যাকে আমরা NASA নাম এ চিনি। এ ব্যাপারে আমেরিকা যে প্রচন্ড রকম সিরিয়াস ছিল তার ধারনা পাওয়া যায় ১৯৬০ সালে প্রেসিডেন্ট এর বিজ্ঞান বিষয়ক পরামর্শক কমিটির রিপোর্ট এ। সেখানে বলা হয় “আমরা মহাকাশ জয়ের এক দৌড়ে নেমে পড়েছি। এই দৌড়ে কেউ কেউ ভাবছেন নতুন এবং রোমাঞ্চকর বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার এর কথা যা নিশ্চিত ভাবেই হতে যাচ্ছে। কেউ কেউ ভাবছেন পরিচিত যুদ্ধক্ষেত্রের সীমানা ছাড়িয়ে মানুষকে এমন জায়গায় নিয়ে যেতে যা এতদিন ছিল কল্পনাতীত”

প্রতিষ্ঠার প্রথম দুই যুগে নাসা বেশ কিছু বড় বড় প্রজেক্ট হাতে নিয়েছিল। এই প্রোগ্রাম গুলোর মধ্যে ছিল বিভিন্ন এরোনেটিক রিসার্চ প্রজেক্ট, চাঁদে বৈজ্ঞানিক গবেষনার জন্য প্রোব পাঠানো এবং দেশের সর্বপ্রথম মানুষবাহী মহাকাশযান প্রেরণ। এ সব কিছুই আমেরিকার মানুষ দারুণ আগ্রহ নিয়ে দেখছিল।

প্রতিষ্ঠার তিন বছর এর মাথায় ১৯৬১ সালের ৫ই মে, প্রথম আমেরিকান নাগরিক হিসাবে মহাকাশ ভ্রমণ করেন এলান শেপার্ড । এটি ছিল মারকারি ক্যাপসুল এ করে ১৫ মিনিট এর একটি সাবঅর্বিটাল মিশন। পরের পাঁচ বছরে আরো কিছু মারকারি এবং জেমিনি ক্যাপসুল মানুষের স্পেস ফ্লাইট এর সক্ষমতা পরীক্ষা করতে ব্যবহার হয়। একই সাথে পরীক্ষা চালানো হয় মহাকাশে মিলিত হওয়া কিংবা ডকিং এর মত স্পেস অপারেশন এর ও।

১৯৬১ সালে প্রেসিডেন্ট কেনেডি ঘোষনা দ্যান এই যুগ শেষ হওয়ার আগেই আমেরিকা চাঁদে এস্ট্রোনাট পাঠাবে। এই স্বপ্ন সত্য হয় এপোলো প্রোগ্রাম এর ১১ তম মিশন এ যখন ১৯৬৯ সাল এর ২০ শে জুলাই নীল আর্মস্ট্রং এবং বাজ অলড্রিন চাঁদের বুকে প্রথম মানুষ হিসাবে ইতিহাসের পাতায় জায়গা করে নেন। উচ্চারিত হয় আর্মস্ট্রং এর সেই বিখ্যাত উক্তি “মানুষের জন্য ছোট এক পদক্ষেপ, মানবজাতির জন্য বিরাট এক লাফ”

এপোলো প্রজেক্ট এর খরচ ছিল মারাত্বক বেশি। মারাত্মক শব্দ ব্যবহার করার কারণ হল ২৫.৬ বিলিয়ন ডলার শুধু টাকার অংকে বেশি সে জন্য নয়। ১৯৬৭ সালে লঞ্চ প্যাড এ একটি এপোলো ক্যাপ্সুল এ আগুন ধরে যায় এবং তিন জন এস্ট্রোনাট এর সবাই ঘটনাস্থলেই মৃত্যু বরণ করেন। এই ঘটনার পরে কংগ্রেস নিয়ম করে দ্যায় যে Aerospace Safety Advisory Panel নামে একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিষ্ঠান মহাকাশ এ মানুষ প্রেরণের সকল কার্যক্রম তদারকি করবে। নাসাও এই আদেশ মেনে তাদের সকল হিউম্যান স্পেস ফ্লাইট সেন্টারে অতিরিক্ত সেফটি অফিস স্থাপন করে।

২য় আরেকটি দূর্ঘটনা হতে নাসা প্রায় বেঁচে যায় এপোলো থারটিন মিশনে ১৯৭০ সালে যখন চাঁদের দিকে ধাবিত হওয়ার সময় তাদের প্রাইমারি অক্সিজেন ট্যাংক বার্স্ট করে। প্রথমে মিশন কন্ট্রোল এর লোকেরা ভেবেছিলেন হয়তো এপোলো থারটিন এর ইন্সট্রুমেন্ট কোন ভুল রিডিং দিচ্ছে। কিন্তু কিছুক্ষন পরেই বেতারে ভেসে আসে এস্ট্রোনোট জেমস লোভেল এর বার্তা “ হিউস্টন, উই হ্যাভ এ প্রব্লেম”। ফ্লাইট ডিরেক্টর জিন ক্রাঞ্জ দ্রুত তৎপর হন অবস্থার গভিরতা পরিমাপ করতে। তিনি পাগলের মত একটা সমাধান খুজতে থাকেন যেখানে মিশনের এস্ট্রোনাটদের আপাতত টিকে থাকার উপায় বের করা যায় এবং সাথে সাথে একটা টীম গঠন করতে থাকেন যারা বের করবে কিভাবে এস্ট্রোনাটদের কে নিরাপদে পৃথিবী তে ফিরিয়ে আনা যায়।

প্রথমেই ক্রাঞ্জ বের করেন এস্ট্রোনাটরা লুনার এক্সকারশন মডিউল এর ভেতর আপাতত আশ্রয় নিতে পারেন। এরপর তিনি একটি “টাইগার টীম” গঠন করেন যার সদস্য ছিল বিভিন্ন বিষয়ের এক্সপার্টরা। টাইগার টীম হলো একটি বিশেষায়িত টীম। যখন অরবিট এ থাকা কোন মিশন হঠাত বড় ধরনের কোন সমস্যার সম্মুখীন হয় তখন নাসা এবং ইউনাইটেড স্পেস এলায়েন্স এর ইঞ্জিনিয়ার দের প্রধান করে মিশন ইভালুএশন রুম (MER) ম্যানেজার এরকম টাইগার টীম গঠন করার ক্ষমতা রাখেন।

টাইগার টীম সেযাত্রা বিভিন্ন অভূতপূর্ব কিন্তু সরল সমাধান দিয়ে এপোলো থারটিন কে রক্ষা করে । এপোলো থারটিন এর এই দূর্ভাগ্যজনক যাত্রার কিছুদিন পরেই ১৯৭৫ সালে নাসা আগামী ছয় বছর এর জন্য মানুষবাহি মহাকাশ যাত্রা স্থগিত করে।

কিন্তু তাতে কি দূর্ঘটনা বন্ধ হয়েছিল? কলম্বিয়া ডিজেস্টার এর সময় কি টাইগার টীম এর মত কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয় নি? এসব প্রশ্নের উত্তর গুলো আমি ধীরে ধীরে সামনের পর্ব গুলোয় সামনে নিয়ে আসবো।

৩০৬/৩৬৫

লেখার তারিখঃ এপ্রিল ২১, ২০১৯, ৫:০৩ পি এম

কলম্বিয়ার শেষ মিশন । পর্ব – ১

যারা স্পেস শাটল সম্পর্কে একেবারেই কিছু জানেন না তাদের এই লেখাটা পড়ার আগে এই নোট টা পড়ে দেখার জন্য অনুরোধ করছি। তাতে অনেক টার্ম যেমন স্পেস শাটল কি, অরবিটার কি ইত্যাদি ক্লিয়ার হয়ে যাবে।

https://www.facebook.com/notes/faisal-akram-ether/%E0%A7%A8%E0%A7%AE%E0%A7%A9%E0%A7%A9%E0%A7%AC%E0%A7%AB/10153578332566270/

দুই হাজার তিন সালের ফেব্রুয়ারীর এক তারিখ। শনিবার এর সকাল। ১৬ দিন মহাশূন্যে নির্বিঘ্নে কাটানোর পর স্পেস শাটল কলম্বিয়া এর ৭ জন ক্রু মেম্বার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন পৃথিবীতে ফিরে আসার প্রায় শেষ ধাপ “রি এন্ট্রি” স্টেজ এর। সকাল ৮.১৫ তে (ইস্টার্ন স্ট্যান্ডার্ড টাইম) পাইলট উইলিয়াম ম্যাককুল এবং কমান্ডার রিক হাসবেন্ড তাদের স্পেস শাটল এর অরবিটারকে কয়েকটা রোল দেওয়ালেন অরবিটার এর ট্র্যাজেকটরি অর্থাৎ বক্রাকার গতিপথ কে স্লো করার জন্য। সকাল ৮.৪৫ মিনিটে অরবিটারটি প্যাসেফিক মহাসাগর এর উপর দিয়ে পৃথিবীর অ্যাটমোসফিয়ার এ প্রবেশ করলো। যেভাবে ধারনা করা হয়েছিল ঠিক সেভাবেই এটমোস্ফিয়ারিক গ্যাস এর কারনে অরবিটার এর ডানার সামনের ধারগুলো গরম হতে শুরু করে যা প্রায় ২৫০০ ডিগ্রি ফারেনহাইট অর্থাৎ ১৩৭১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস এ পৌছায়। নাসার এর চেয়েও আরো বেশি তাপমাত্রা উঠবে চিন্তা করেই স্পেস শাটল এর অরবিটার ডিজাইন করেছিল তাই এ পর্যন্ত অস্বাভাবিক কিছু ছিল না।

অরবিটার তার স্বাভাবিক গতিপথ অনুসারে নামতে নামতে আরো পূর্ব দিকে যেতে থাকে। কিন্তু বাম পাশের ডানার তাপমাত্রা পরিমাপের সেন্সরটা হঠাৎ চার্ট এর বাইরে একটা রিডিং আসার সংকেত দ্যায়। হিউসটন, টেক্সাস এর মিশন কন্ট্রোল এই অদ্ভুত রিডিং টা লক্ষ্য করে এবং সাথে সাথেই এই মিশন কমান্ডার হাসবেন্ড কে জানিয়ে দ্যায়। কমান্ডার হাসবেন্ড জবাবে কিছু একটা বলতে শুরু করেন কিন্তু তার কথা কাটা পরে যায়। সকাল ৮.৫৯ এ শাটল অরবিটার থেকে ২য় বার থেকে যোগাযোগ করা হয় কিন্তু শুধু “রজার…” পর্যন্ত বলার পর পরই মাঝপথে আবার যোগাযোগ কেটে যায়। মিশন কন্ট্রোল এবার শাটল এর বাকি সব সেনসর থেকে ফেইল করার সিগ্ন্যাল পেতে থাকে এবং সকাল ৯.০০ মিনিট এ রাডার থেকে স্পেস শাটল কলম্বিয়ার সকল সিগ্ন্যাল হারিয়ে যায়।

সকাল ৯ টা ১২ মিনিট এ মিশন কন্ট্রোল টীম এর একজন একটি ফোন কল রিসিভ করেন। যিনি ফোন করেছিলেন তিনি জানান যে টেলিভিশন এ স্পেস শাটল কলম্বিয়া টুকরো টুকরো হয়ে পৃথিবীতে পড়ার ভিডিও প্রচারিত হচ্ছে। নির্ধারিত প্রটোকল অনুসারে মিশন কন্ট্রোল টীম কন্ট্রোল রুম লক করে দ্যায় এবং সব মিশন সম্পর্কিত ডেটা আর্কাইভ করতে শুরু করে।

আগস্ট ২০০৩ এ Columbia Accident Investigation Board (CAIB) এই একসিডেন্ট এর কারণ সম্পর্কিত তাদের রিপোর্ট প্রকাশ করে। স্পেস শাটল কলম্বিয়া উৎক্ষেপণ এর পর পরই একটা ১৯ ইঞ্ছি লম্বা এবং ১১ ইঞ্ছি প্রস্থের ১.৭ পাউন্ড এর ইন্সুলেশন এর কাজে ব্যাবহৃত ফোম এর টুকরা এর অরবিটার এর বাম ডানায় আঘাত করে এবং সেখানে একটা বড় হোল তৈরি করে। অরবিটার যখন পৃথিবীতে ফেরত আসার জন্য রি এন্ট্রি করে তখন এই হোল দিয়ে প্রচন্ড গরম বাতাস অরবিটার এর ডানার ভেতর প্রবেশ করে। এতে ডানার ভেতরের স্ট্রাকচার ভেঙ্গে পরে যা প্রথমে বাম পাশের ডানা এবং এরপর পুরো অরবিটারটিকেই ভেঙ্গে ফেলে।

মজার জিনিষ হলো CAIB এর রিপোর্ট টেকনিকাল ইস্যুকে হাইলাইট করা হলেও আরেকটা অংশে এটাও হাইলাইট করা হয় কিভাবে নাসা এর ম্যানেজার দের বিভিন্ন কার্যকম এই একসিডেন্ট কে তরান্বিত করে। হাভার্ড বিজনেস রিভিউ এর ২০০৪ সাল এর এক প্রতিবেদন এর উপর ভিত্তি করে আমার লেখাটাও শুরু এখান থেকেই।

৩০৫/৩৬৫

লেখার তারিখঃ এপ্রিল ০৩, ২০১৯, ১১:৫১ পি এম

image
image

আমি একটা চাঁদ পাগল মানুষ। আমি একটা স্পেস পাগল মানুষ। আমি একটা প্লেন পাগল মানুষ। এগুলা আমার পেটে ভাত জুটায় না। কিন্তু এগুলা সম্পর্কে যা কিছু পাই আমি গোগ্রাসে গিলি। রাস্তার একটা কুকুর বা কাক যেভাবে ময়লা ঘাটে আমি সুযোগ পাইলে অইরকম ভাবে বই পত্র ইন্টারনেট ঘাটি। যদি মজাদার কিছু পাওয়া যায়। মাঝে মাঝে এত মজার জিনিষ পাই যে আবিষ্কার এর উত্তেজনায় কাপাকাপি অবস্থা হয়। আজকে এরকম একটা বিষয় নিয়া লিখতে ইচ্ছা হইল। আজকের লেখার বিষয় “The Fallen Astronaut” ।

চাঁদ এর বুকে মানুষ শুধু পায়ের ছাপ, গাড়ির চাক্কার ছাপ, লুনার মডিউল এর ছাপ ই রাইখা আসে নাই, এক টুকরা আর্ট ও রাইখা আসছে। “The Fallen Astronaut” হইল চাঁদ এর বুকে মানুষের রাইখা আসা একমাত্র পিস অফ আর্ট। ১৯৭১ সাল এর পহেলা আগস্ট, আমরা যখন আমাদের অস্তিত্বের যুদ্ধ মুক্তিযুদ্ধ নিয়া ব্যাস্ত, তখন হাজার হাজার মাইল দূরে এপোলো প্রোগ্রাম এর ৯ম মনুষ্যবাহী মিশন এপোলো-১৫ এর ক্রু রা চাঁদের বুকে রেখে দিল এলুমিনিয়াম এর তৈরী একটা ছোট ভাস্কর্য, যা বানানো হয়েছিল তখন পর্যন্ত মহাকাশ অভিযানে নিহত নভোচারী দের স্মৃতির উদ্দ্যেশে। এই ভাস্কর্য এর নাম ই হলো The Fallen Ausronaut । একই সাথে এপোলো-১৫ এর ক্রু রা একটা নাম ফলক ও রেখে আসেন যেখানে ৮ জন এস্ট্রোনট এবং ৬ জন কজমোনট (রাশিয়ার এস্ট্রোনট দের কজমোনট বলা হয়)এই মোট ১৪ জন এর নাম ছিল।

The Fallen Astronaut নিয়ে কিছু মজার কাহিনী আছে। এর আর্টিস্ট বেলজিয়ান পেইন্টার ও প্রিন্ট মেকার Paul Van Hoeydonck এর সাথে এপোলো-১৫ এর এস্ট্রোনট David Scott এর দেখা হয় একটা ডিনার পার্টি তে। সেখানেই তাদের মধ্যে কথা হয় স্কট এর একটা আইডিয়ার ব্যাপারে। স্কট ১৪ জন এর নাম সহ একটা নাম ফলক বানিয়েছিলেন চাঁদ এ নিয়ে যাওয়ার জন্য, এখন তার সাথে যোগ হলো পল এর ছোট মুর্তি টা। নাসার উপর মহল থেকে পারমিশন ম্যানেজ করে ফেললেন স্কট। আর এরপরই চাঁদে মানুষের একমাত্র শিল্প নিদর্শন The Fallen Astronaut চললো চাঁদ এর পথে।

অবশ্য অনেক পরে বেলজিয়ান এক সংবাদপত্র কে দেয়া সাক্ষাতকারে আর্টিস্ট পল বলেছিলেন যে তিনি জানতেন না তার বানানো মুর্তি ১৪ জন মৃত নভোচারীর স্মৃতির উদ্দেশ্যে বানানো হচ্ছে। তিনি এটাকে বানিয়েছিলেন পুরো মানবজাতির মহাকাশ যাত্রার প্রতীক হিসেবে। তিনি এটার রেপ্লিকা বানিজ্যিক ভাবে বিক্রিও করতে চেয়েছিলেন কিন্তু নাসার কঠোর হস্তক্ষেপে তা আর করা যায় নি। নাসা এই ব্যাপারে এতই সিক্রেসি মেইন্টেইন করেছিল যে মিশন শেষ হওয়ার পরে এক প্রেস কনফারেন্সে এই Fallen Astronaut এর কথা ঘোষণা করা হয়।

৩০৪/৩৬৫

লেখার তারিখঃ ডিসেম্বর ২৪, ২০১৮, ১১:৩৮ এ এম

৬৩ বছর আগের ঠিক এই দিন। ২৪ শে ডিসেম্বর ১৯৫৫। North American Aerospace Defense Command (NORAD) এর কোলোরাডো স্প্রিংস অফিসের লাল টেলিফোন টা হঠাত বেজে উঠলো (তখন অবশ্য এর নাম ছিল CONAD)। সেদিন দায়িত্বে ছিলেন কর্নেল হ্যারি শ্যুপ (Colonel Harry Shoup)। এত রাতে ইমারজেন্সি ছাড়া সাধারণত ফোন আসে না । ভুরু কুঁচকে ফোন টা উঠাতেই চমকে গেলেন। ফোন যার গলা শোনা গেল সে একান্তই বাচ্চা একটা ছেলে। খুব ভদ্র গলায় অনুরোধ করছে স্যান্টা ক্লজ কে একটু ফোন টা দেয়া যাবে কিনা। অথবা স্যান্টা এখন কোথায় আছে যদি কর্নেল তাকে অনুগ্রহ করে বলেন তাহলে সে বুঝতে পারতো তার বাসায় স্যান্টা কখন আসবে। কনফিউজ কর্নেল কিছু একটা বলে ফোন টা রাখতেই কিছুক্ষন পর আবার একটা বাচ্চা মেয়ের ফোন, একই রকম জিজ্ঞাসা। এভাবে বেশ কয়েকটা ফোন আসার পর তাদের বাবা মা এর সাথে কথা বলে জানা গেল আসল কাহিনি।

২৪শে ডিসেম্বর সিয়ার্স এর একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর একটা নিউজপেপার এ একটা বিজ্ঞাপন ছাপায়। সেখানে লেখা ছিল “হাই, আমি স্যান্টা বলছি, আমার সাথে কথা বলার জন্য ফোন কর এই নাম্বার এ”। দুর্ভাগ্য বশত যে নাম্বার টা ছাপার ভুলে ছাপা হয়ে যায় সেটা ছিল NORAD এর একটা নাম্বার এবং এভাবেই শুরু হয় NORAD এর ঐতিহ্যবাহি NORAD Tracks Santa প্রোগ্রাম এর।

কর্নেল হ্যারি শ্যুপ কিন্তু সেই রাতে বাচ্চাদের ধমক ধামক দিয়ে যাও যাও পড়তে বস বলেন নি। বরং তিনি তার সকল স্টাফ দের বসিয়ে দেন সব গুলো ফোন কল যাতে গুরুত্ব্যের সাথে জবাব দেয়া হয়। সেই রাতে কর্নেল এর এই অসামান্য উদ্যোগ NORAD পরিনত করে তাদের একটা ট্র্যাডিশন এ। গতবছর এর তথ্য মতে NORAD এর ভলেন্টিয়াররা দুইশ এরও বেশি এলাকা থেকে ঘন্টায় প্রায় ৪০ টা কল যা কিনা সবদিন মিলিয়ে প্রায় ৭০ হাজার ফোন কল এবং প্রায় ১২ হাজার ইমেইল এর জবাব দিয়ে থাকেন।

প্রতিবছর NORAD কর্মকর্তা, সাধারন মানুষ এমনকি সেলিব্রেটিরাও অংশ ন্যায় স্যান্টা কে করা ফোন কল এর উত্তর দেয়ার এই উৎসব এ। এর মধ্যে ২০১৬ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার স্ত্রী ফার্স্ট লেডি মিশেল ওবামাও ছিলেন ফোন এর পাশে থেকে স্যান্টা কোথায় এর উত্তর দেয়ার জন্য। কারন স্যান্টা কে বাচ্চারা ফোন করে একটা স্বপ্ন নিয়ে। ভাল থাকলে, ভাল কাজ করলে তার পুরষ্কার পাওয়া যাবে এই স্বপ্ন। আর স্বপ্ন কে বাঁচিয়ে রাখতে হয়।

সকল তথ্য সুত্রঃ

https://en.wikipedia.org/wiki/NORAD_Tracks_Santa

৩০৩/৩৬৫

লেখার তারিখঃ অক্টোবর ০৮, ২০১৮, ৩:৪৮ পি এম

আমরা ছেলেরা কখনোই বুঝবো না একটা মেয়ের তার নিজের বাবা মা এর পাশে দাঁড়ানোর মত স্বাভাবিক ব্যাপারও কত টা কঠিন করে রেখেছে আমাদের সমাজ ব্যবস্থা। আমরা ছেলেরা ক্যারিয়ার চিন্তা কিভাবে করি?

পড়ালেখা করবো,
পাশ করবো,
চাকরি করবো, ব্যবসা করবো,
ইনকাম হবে , সেখান থেকে কিছু টাকা জমাবো, সেই টাকা থেকে বাবা মা এর প্রয়োজনে পাশে দাড়াবো,

সিম্পল।

আর একটা মেয়ের জন্য এই রকম স্ট্রেইট লাইনে চিন্তা করাও হাস্যকর লাগবে তার কাছে।

পড়ালেখা করব – বিয়েটা করে ফেল,
পাশ করব – পাশ তো করসই, এখন বিয়ে কর,
চাকরি করব – আগে বিয়ে কর,
বিয়ে করার পর চাকরি করব – শশুরবাড়ি থেকে দিতেও পারে, নাও দিতে পারে।
ইনকাম করব – মেয়ে বলে অফিস ঠকাবে বেতন আর সুযোগ সুবিধায়।
বেতন পাব – ছেলে মেয়ের জন্য খরচ কর, জামাই এর একাই ইনকাম এ তো এই জামানায় চলে না তাই সংসারে খরচ কর, ভাই বোন দের আবদার, ফ্রেন্ড দের আবদার রক্ষা কর।

আর শুধু টাকা পয়সার চ্যালেঞ্জ না। পারিবারিক চ্যালেঞ্জ ও সীমাহীন। অপদার্থ বড়ভাই বাবা মা এর জন্য কিছু করতে পারবেনা আবার মেয়ে বলে তাকে জায়গা টা ছেড়েও দেবে না। পরিবার এর বাইরের সবাই ভেবেই নেবে ছেলেটাই সব করে, মেয়েটার আর কি, শশুর বাড়ি তেই তো জীবন এখন।

তারপরও কোন এক ম্যাজিক দিয়ে একটা মেয়ে কিছু কিছু করে জমায় তার বাবা মার জন্য। আমি জানি না কিভাবে পারে। আমার কাছে কেমন অবিশ্বাস্য লাগে। আমি শুধু আমার বড় বোন রে দেখসি। আম্মার যখন ক্যান্সার টা প্রথম ধরা পড়ল, আমার বোন তার সারাজীবন এর জমানো টাকা, গয়না সব বিক্রি করে ফেলসে, ২য় বার কিছু ভাবে নাই। আমি হইলে হয়তো ভাবতেই ভাবতেই চিকিতসার টাইম যাইতো গা। আমার বোন প্রথমেই ফাইনেন্সিয়াল ব্যাপার টা সল্ভ করসে, তারপর ক্যান্সার কে বলসে, আসো খেলি।

আমি তার ধারে কাছেও কিছু করতে পারি নাই। আমি আর আমার বাবা মা কাউকে কখনো সামর্থের অভাবে বিদেশ নিয়ে যাইতে পারি নাই। আর ও দুই জন কে অস্ট্রেলিয়া নিসে, চিকিতসার ব্যাবস্থা করসে যখন ওর তখন কোন চাকরি ও নাই। দুলাভাই ও আর ও মাত্র পি আর নিয়া গেসে, দুইটা ছোট ছোট মেয়ে সাথে। একটা নতুন দেশের সামান্য পি এইচ ডি স্টুডেন্ট। অস্ট্রেলিয়া তেই আম্মার ক্যান্সার টা প্রথম ধরা পরে। দেশে থাকলে আমি হয়তো একটা সাধারন হাসপাতালে দিন এর পর দিন দেখায় ই যাইতাম আর আম্মা এই অসুধ অই অসুধ খাইতে খাইতেই চলে যাইত।

আমার বাবা মা তাদের প্রথম সন্তান দিয়াই স্টান্ডার্ড টা এত হাই করে ফেলসে যে আমি সারাজীবন ট্রাই করলেও সেই স্ট্রান্ডার্ড মিট করতে পারবো না। আমার একসময় খুব রাগ লাগতো কিন্তু এখন আমি চাই, মন থেকে চাই, আমার বাবা আম্মাকে সবাই মমর আম্মা, মমর আব্বা হিসাবেই চিনুক।

৩০২/৩৬৫

লেখার তারিখঃ অক্টোবর ০২, ২০১৮, ৪:০৭ পি এম

আমার আম্মা মারা গেছেন আজ সাত দিন হলো। এক টানা কষ্ট টা এখন বদলে গেছে হঠাৎ হঠাৎ তীব্র কষ্টে। তখন বারান্দায় বা বাথরুমে চলে যেতে হয়। কেউ বোঝার চেষ্টা করলে বলি, অজু করতে গেসিলাম তাই মুখ ভিজা। সবার সামনে কান্দা কেমন একটা ব্যাপার না? বিশেষ করে অফিসে।

কেমন জানি বিশ্বাস হয় না যে আম্মা নাই। আম্মা তো অনেক থেকে অসুস্থ ছিল, সব রান্না বান্না আমার ছোটখালা যাকে আমি মা ডাকি উনিই করতো। মার রান্না খারাপ তা না, কিন্তু মনে হইত আম্মার মত তো না। মনে হইত, এই তো কয়দিন পর আম্মা একটু চলা ফেরা করতে পারলেই আবার রান্না করবে। কিন্তু আম্মার রান্না আর কোনদিনও খাওয়া হবে না, এইটা ভাবলে কেমন ফাকা লাগে ভিতর টা।

আম্মার লাশ যখন বাসার নিচে আনি তখন মাগরিব এর নামাজ শেষ হইসে মাত্র। আত্মীয় স্বজন রা আসছেন। বাসার পরিবেশ কান্নায় কান্নায় ভারী হয়ে গেসে। আমি নিতে পারতেসিলাম না। তিনতালা থেইকা নাইমা আম্মাকে রাখা এম্বুলেন্স এর পাশে চুপচাপ দাঁড়ায় ছিলাম। কিছু বড়লোক আত্মীয় আইসা অনেক বড়লোকি কথা শুনাইল। তখন এত অবাক লাগতেসিল। এগুলা বলার কি খুব দরকার ছিল তখনই। আমি ভাবসিলাম এগুলা নিয়া লিখব না। পরে ভাবলাম, এগুলা আমাকে মনে রাখতে হবে মানূষ চিনতে। আমাকে শুনতে হইসে,

– তোমাদের বাসার রাস্তা তো চিপা, আমার গাড়ি ঢুকে না, তাই বড় রাস্তায় রেখে আসছি। বড় গাড়ি তো, এই তো গত মাসেই কিনলাম
– ফ্রিজার ভ্যান পাও নাই, এম্বুলেন্স এ এসি ছেড়ে রাখসো যে? আমার শাশুড়ির জন্য তো ফ্রিজার ভ্যান এর ব্যাবস্থা করসিলাম। দাম টা বেশি পরে অবশ্য, কিন্তু ভাল জিনিষ।
– তোমাদের বাসা তিনতালায়? লিফট নাই কেন? ডাক্তার আমাকে বলসে সিড়ি না ভাংতে। গত মাসে সিংগাপুর থেকে দেখায় আসলাম।
– দাফন করবা কোথায়? তোমরা অবশ্য বনানী কবরস্থানে জায়গা পাবা না। আমার হাসবেন্ড আমাদের জন্য ওখানে বুকিং দিয়ে রাখসে। অনেক এক্সপেন্সিভ

আমার পৃথিবীটাকে এত নিষ্ঠুর মনে হইতেসিল তখন। কেন আমার অনেক টাকা নাই, কেন আমি আম্মাকে বিদেশ নিয়া গিয়া পৃথিবীর সবচেয়ে ভাল হাসপাতালে দেখাইতে পারি নাই এগুলা ভাবতে ভাবতে ছোট হয়ে ভাইঙ্গা যাইতেসিলাম নিজের ভিতর বার বার। আম্মাকে ফিস ফিস করে বলতেসিলাম, আম্মা মাফ করে দিয়েন আম্মা, কিছু করতে পারলাম না তোমার জন্য আম্মা।

তবু আমি ঠিক ছিলাম কারন আমার দেবদুত এর মত কিছু বন্ধু আছে যারা আম্মার খবর শোনার সাথে সাথে হাসপাতালে চলে আসছিল আর একদম দাফন পর্যন্ত সাথে ছিল। কিছু আল্লাহ প্রেরিত কাজিন আছেন, কিছু আত্মীয় আছেন যারা দাফন কোথায় হবে, গোসল কোথায় করানো হবে সব ম্যানেজ করে ফেলসেন। আমার আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানানোর ভাষা নাই।

আমার আম্মা যেখানেই যেতেন চারপাশে অনেক ভালবাসা ছড়ায় রাখতেন। এপলোর যখন যে নার্স, আয়া আসতো সবাইকে উনি নাম ধরে চিনতেন। সবার দেশের বাড়ি, বাসায় কে আছে, বাচ্চা ভাল আছে তো এইরকম খোজ খবর নিতেন। আমি আর আমার বোন মজা করে বলতাম আম্মা সবার সাথে ফ্রেন্ডশিপ করে ফেলতে পারে। একটা উদাহারন দেই।

আম্মার লাশ দেখতে আসে পাশের বাসা থেকে অনেকেই আসছিলেন। দেখে চলে যাওয়ার সময় একটা কাপল আর তাদের একটা ছোট মেয়ে আমার কাছে আসলো। ছেলেটা বলল আমার সাথেই নাকি পড়তো নটরডেম কলেজ এ, গ্রুপ সিক্স এই। আমার মনে নাই কিন্তু আমাকে ওর মনে আছে। ওর স্ত্রী আমাকে বলল, ভাইয়া আপনাদের বাসার বারান্দার ঠিক উলটা পাশের বারান্দা টা আমাদের বাসার। আপনার আম্মা প্রায় ই বারান্দা দিয়ে আমার মেয়েটার সাথে কথা বলতেন। আমার মেয়েটাও বারান্দায় আপনার আম্মা কে না দেখতে নানু নানু বলে ডাক্তো। একবার কয়েকদিন ও বারান্দায় যাচ্ছিল না দেখে আপনার আম্মা আমাদের বাসায় চলে আসছিলেন ওর কিছু হলো কিনা দেখতে। আমার মেয়েটার তখন জ্বর ছিল। আপনার আম্মা ঠিক ই বুঝতে পেরেছিলেন সেটা। আমার মেয়ে তার বারান্দা নানু কে কোনদিন ভুলবে না।

আরেকদিন আম্মার কবর জিয়ারত করে বাসাবো ফিরতেসি। বাসার সামনে নামার পর রিকশাওয়ালা জিজ্ঞেস করলো, আপনার আম্মা মারা গেছেন না? আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম, হ্যা, আপনে ক্যাম্নে জানেন? লোকটা বলল, আমি জানি। আমি জানাজাতেও ছিলাম। আপনার আম্মা আমাকে অনেক স্নেহ করতেন। এই যে লুংগীটা আর এই গেঞ্জিটা, আপনার আম্মার দেয়া। আমি থ হয়া দাড়ায়া থাকলাম, লোকটা রিকশা নিয়া চইলা গেল।

এই রকম ছিল আমার আম্মা। সহজ সরল, বোকা সোকা কিন্তু ভালবাসায় ভরপুর একজন মানুষ। আমার আম্মা বেচে থাকতে আমাদের শিখাইসেন কখনো কিছু নিয়া গর্ব না করতে, কারো সাথে উচা গলায় কথা না বলতে, কখনো সাক্সেস পাওয়ার পর আপ্লুত না হয়া পরের বারের জন্য প্রস্তুতি নিতে। আমি এখন ভাবি মারা যাবার আগেও আম্মা শিখায় গেছেন কিভাবে বড় বড় বিপদ মাথা ঠান্ডা রেখে মোকাবেলা করতে হয়। কিভাবে দিন এর পর দিন রোগ যন্ত্রনা সহ্য করে যা সামর্থ আছে সেই অনুযায়ী অসুখ টার বিরুদ্ধে হাল ছেড়ে না দিয়ে যুদ্ধ করতে হয়।

আল্লাহ আমার আম্মাকে যেখানেই রাখেন যেন ভাল রাখেন, শান্তিতে রাখেন। রাব্বির হামহুমা কা’মা, রাব্বাইয়ানি সাগিরা।

৩০১/৩৬৫

লেখার তারিখঃ মে ১০, ২০১৮, ৫:৫৪ পি এম

এই লেখাটা বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট নিয়ে। সরকারি মালিকানাধীন এবং জনগণের টাকায় বসানো প্রথম স্যাটেলাইট। আমি জানি অনেক বড় লেখা দেখলে আমাদের অনেকের লেখার আগ্রহ মরে যায়। ফেসবুক এর কল্যাণে আমরা এখন মাইক্রো কন্টেন্ট ছাড়া কিছু পড়তে চাই না। তাদের জন্য শুধু এই লেখার মূল কথা অংশ টা পড়লেই চলবে। ৩য় প্যারাগ্রাফ থেকে আমি যতটুকু সম্ভব খুঁটিনাটি বিষয় গুলো ডিটেইলে লেখার চেষ্টা করবো। লেখার সব তথ্য সূত্র লেখার শেষেই দেয়া আছে। আশা করছি আমি যে অসম্ভব আনন্দ নিয়ে বিষয় গুলো জেনেছি সেগুলো সহজ ভাবে লিখতে পারলে পাঠক ও সেই আনন্দের ভাগ পাবেন। আমি মহাকাশ বিজ্ঞানী নই। যা কিছু জেনেছি, বুঝেছি সব এই সম্পর্কে তীব্র আগ্রহ থেকেই। তাই যারা এই লেখাটাকে আরও তথ্য দিয়ে সম্বৃদ্ধ করতে আগ্রহী হবেন তারা অনুগ্রহ করে কমেন্ট এ বললে তা এই লেখার সাথে সশ্রদ্ধায় সংযোজিত করা হবে।

মূল কথাঃ

সব কিছু ঠিক থাকলে নতুন সম্ভাব্য সময় অনুযায়ী (স্পেস মিশনে এটাকে বলে New Estimated Time, NET) এই বছরে অর্থাৎ ২০১৮ এর মে এর ১১ তারিখ রাত ২ টা ১২ তে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রন কমিশন (Bangladesh Telecommunication Regulatory Commission – BTRC) এর মালিকানাধিন ৩.৫ মেট্রিক টন (৩৫০০ কেজি) ওজনের বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট টি বাংলাদেশের প্রথম জিওস্ট্যাশোনারি (Geo stationnary) যোগাযোগ উপগ্রহ হিসেবে ইলন মাস্ক (Elon Musk) এর স্পেস এক্স (SpaceX)কম্পানির একটি ফ্যালকন ৯ (Falcon 9) রকেট এর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের কেনেডি স্পেস সেন্টার এর লঞ্চ সাইট LC-39A থেকে যাত্রা শুরু করবে তার অরবিট (Orbit) এর দিকে। ২০১৫ সালের নভেম্বর এর ১১ তারিখে ওর্ডার করা এই স্যাটেলাইট টি তৈরি করেছেন ফ্রান্স-ইটালির কোম্পানি থেলেস আলেনিয়া (Thales Alenia )।টার্ন কি সিস্টেম এ প্রজেক্টটির প্রাইম কন্ট্রাক্টর থেলেস আলেনিয়া এর দায়িত্ব এর মধ্যে আছে ডিজাইন, প্রোডাকশন, টেস্টিং এবং অরবিট এ স্যাটেলাইটটি ডেলিভারি। এছাড়া থেলেস আলেনিয়া বাংলাদেশে দুইটি গ্রাউন্ড স্টেশন এ স্যাটেলাইট কন্ট্রোল এবং নেটওয়ার্ক অপারেশন সেন্টার নির্মান এবং পরিচালনা উপযোগী করার কাজও করবে। বাংলাদেশে গ্রাউন্ড স্টেশন টির সিভিল ওয়ার্ক্স এর কাজ পেয়েছে থেলাস এলানিয়ার বাংলাদেশের পার্টনার স্পেক্ট্রা ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড। ২৪৮ মিলিওন ইউ এস ডলার অর্থাৎ ১৯.৫১ বিলিয়ন টাকা মূল্যের বঙ্গবন্ধু-১ এর জিওস্টেশোনারি অক্ষাংশ (Longitude)হবে ১১১.৯ ডিগ্রি পূর্ব (119.1° East) । ১৬০০ মেগাহার্জ কেপাসিটির বঙ্গবন্ধু-১ এর ভেতর থাকছে মোট ৪০ টি ট্রান্সপন্ডার (Transponder) যার মধ্যে ২৬টি কে ইউ ব্যান্ড (Ku Band) ট্রান্সপন্ডার এবং ১৪টি সি ব্যান্ড (C Band) ট্রান্সপন্ডার। বঙ্গবন্ধু-১ এর কাভারেজ এরিয়া হবে বাংলাদেশ, বে অফ বেংগল, ভারত, নেপাল, ভুটান, শ্রীলংকা , ফিলিপিনস এবং ইন্দোনেশিয়া এবং এর লাইফ টাইম হবে ১৫ বছর।

বঙ্গবন্ধু-১ এর টাইমলাইনঃ

নভেম্বর ১১, ২০১৫ – আন্তর্জাতিক দরপত্র শেষে থেলেস এলেনিয়া এবং বিটিআরসি এর মধ্যে বঙ্গবন্ধু-১ বিষয়ক চুক্তি সম্পাদন

নভেম্বর, ২০১৬ – বঙ্গবন্ধু-১ এর ডিজাইন সম্পন্ন এবং বিশেষজ্ঞ কমিটির ডিজাইন রিভিউ শুরু
জানুয়ারি ১০, ২০১৭ – বঙ্গবন্ধু-১ এর ডিজাইন রিভিউ পাস

জানুয়ারি, ২০১৭ – প্রডাকশন ফেইজ এর শুরু। ফ্রান্স এর Toulouse এ কমিনিকেশন মডিউল এবং Cannes এ সার্ভিস মডিউল তৈরী শুরু ।

মার্চ, ২০১৭ – কমিনিকেশন মডিউল এবং সার্ভিস মডিউল একসাথে করা হয় এবং পূর্নাংগ স্যাটেলাইট এর নির্মান কাজ শুরু

মার্চ ২৮, ২০১৮ – Thales Alenia Space কোম্পানির ফ্রান্স এর Cannes প্ল্যান্ট থেকে যুক্ত্ররাষ্ট্রের কেপ কার্নিভাল এর উদ্দ্যেশ্যে যাত্রা শুরু।

মার্চ ২৯, ২০১৮ – যুক্তরাষ্ট্রের Boston এ যাত্রা বিরতি

মার্চ ৩০, ২০১৮ – বঙ্গবন্ধু-১ কে বহনকারি Antonov An-124 (Registration UR-82072) বিমান টি যুক্তরাষ্ট্রের Cape Carnival এ অবতরন। এখান থেকেই নিয়ে যাওয়া হয় লঞ্চ সাইট এ।

অরবিট (Orbit) কি?

অরবিট (Orbit) এর বাংলা কক্ষপথ। মহাশূন্যে একটা বস্তু তা সেটা প্রাকৃতিক হোক বা কৃত্তিম, যখন আরেকটা বস্তুর চারপাশে একটা স্পেসিফিক রাস্তা ফোলো করে স্পেসিফিক সময় ব্যয় করে বার বার ঘুরতে থাকে তখন সেই রাস্তাটাকে আমরা বলবো তার অরবিট (Orbit) আর পুরো রাস্তাটা ঘুরে আবার আগের জায়গায় আসতে তার যে সময় লাগে তাকে আমরা বলবো অরবিটাল পিরিয়ড (Orbital Period) । যেমন আমরা জানি সূর্যের চারপাশে পৃথিবী একটা অরবিট এ ঘুরছে। তাই পৃথিবীর অরবিটাল পিরিয়ড ১ বছর বা ৩৬৫ দিন। এভাবে সব গুলো গ্রহের অরবিট আছে, অরবিটাল পিরিয়ড আছে। গ্রহগুলোর যদি নিজস্ব উপগ্রহ থাকে যেমন পৃথিবীর আছে চাঁদ, সেগুলোও গ্রহ কে কেন্দ্র করে তাদের অরবিট এ ঘুরছে, তাদেরও অরবিটাল পিরিয়ড আছে, এক একটার এক এক অরবিটাল পিরিয়ড।উদাহরণ হিসাবে বলা যায়, চাঁদ এর অরবিটাল পিরিয়ড ২৭ দিন ৭ ঘন্টা ৪৩ মিনিট ১১.৫ সেকেন্ড।

প্রশ্ন হলো এই গ্রহ বা উপগ্রহ এত বাধ্য কেন যে অরবিট এ থাকে? কেন অরবিট থেকে উইইইই বলে বের হয়ে যায় না? উত্তর বুঝতে হলে মনে মনে একটা পরীক্ষা করতে হবে। ধরেন মাঠ এর মধ্যে একটা খুটি গাথলেন। এবার খুটির সাথে ১ মিটার লম্বা একটা দড়ি লাগালেন। দড়ি টা এমন ভাবে খুটী তে লাগানো যে টান টান করে খুটীর চারপাশে ঘুরলে খুটী তে পেচাবে না, বরং যেদিকে টানবেন সেদিকে ঘুরে যাবে। এবার একটা মোটকা দেখে ছাগল* এনে দড়ির আরেক মাথায় বাধলেন। ছাগল যদি আমার মত হয় তাহলে চুপচাপ বসে বসে পাতা চিবাবে আর যদি বিয়াদ্দপ হয় তাহলে প্রথম সুযোগেই দৌড় লাগাবে। কিন্তু দড়িটা যখন টান টান হয়ে যাবে তখন আর সোজা সরল রেখায় দৌড়াতে পারবে না । দড়ির টানের কারনে খুটির দিকে একটু বাকবে। কিন্তু ছাগল তো আমার মত না যে খুটির বশ্যতা স্বীকার করে নেবে। তাই সে যতক্ষন পারে সোজা দৌড়াতে চাবে আর খুটি তে বাধা থাকার কারনে তার দৌড়ানোর রাস্তা বার বার বাকবে।

একটু যদি চিন্তা করেন তাহলে ছাগলের উপর এইখানে দুইটা বল (Force) কাজ করছে। একটা হোল তার নিজের ফোর্স যা দিয়ে সে সোজা দৌড়াতে চাচ্ছে। আর ২য় হোলো দড়ির টান যার দিয়ে খুটি তাকে নিজের দিকে টানছে। এই দুই ফোর্স এর টানাটানি তে ছাগল বেচারার দৌড়ানোর রাস্তা সোজা না হয়ে হয়ে গেছে বৃত্তাকার। এইবার পরীক্ষার শেষ ধাপ চিন্তা করেন। মনে করেন পৃথিবী একটা খুটি আর তার পাশে ঘুরতে থাকে কৃত্তিম উপগ্রহ একটা ছাগল। মাধ্যাকর্ষন শক্তি হলো দড়ির টান আর কৃত্তিম উপগ্রহ কে রকেট এর মাধ্যমে দেয়া গতি হলো ছাগলের দৌড়ানোর চেষ্টা। যদি দড়ির টান বেশি হয় তাহলে উপগ্রহ পৃথিবী তে আছড়ে পড়বে আর যদি অনেক পাওয়ারফুল রকেট দিয়ে বুস্ট দেয়া যায় তাহলে সেই উপগ্রহ দড়ির টান বা মাধ্যাকর্ষন শক্তি কে জয় করে অরবিট ছেড়ে বেরিয়ে গিয়ে রউনা দিতে পারবে অসিম মহাশূন্যে। আর যদি এই দড়ির টান আর নিজের শক্তির টানাটানি তে যখন একটা সমান সমান অবস্থায় পৌছাবে তখনই তৈরী হবে অরবিট এর।

* নো ছাগল ওয়াজ হার্মড ডিউরিং দিস মেন্টাল এক্সপেরিমেন্ট।

আমরা এখন জানি যে মহাশূন্যে সকল অরবিট ইলিপ্স (ellipse) এর মত শেপ এর। অরবিট যদি গোল বৃত্তের মত শেপ এর হতো তাহলে অরবিট এর কেন্দ্র থেকে অরবিট এ থাকা স্যাটেলাইট এর দুরত্ব সবসময় সমান হতো। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেছে সব স্যাটেলাইট পৃথিবী চারপাশে ঘুরতে ঘুরতে কখনো পৃথিবী থেকে অনেক দূরে থাকে, আবার কখনো পৃথিবীর অনেক কাছে থাকে।স্যাটেলাইট অরবিট এ তাহলে আমরা দুইটা পয়েন্ট মার্ক করতে পারি। একটা পয়েন্ট এ স্যাটেলাইট টি পৃথিবী থেকে সবচেয়ে দূরে থাকে। এই পয়েন্ট টার নাম অ্যাপোজি (Apogee)। আর একটা পয়েন্টে স্যাটেলাইট টি পৃথিবী এর সবচেয়ে কাছে চলে আসে। এই পয়েন্ট টার নাম পেরিজি (Perigee)। পেরিজিতে মাধ্যাকর্ষন শক্তির টান সবচেয়ে বেশি থাকে।

পৃথিবীর নিজেরও কিন্তু সূর্যের চারিদিকে ঘোরার একটা অরবিট আছে। এই অরবিট এ যেখানে পৃথিবী সূর্য থেকে সব চেয়ে দূরে থাকে সেই পয়েন্টটা কে বলে পেরিহেলিওন (Perihelion)।

একটা স্যাটেলাইট পৃথিবীর সারফেস বা ভূপৃষ্ঠ থেকে কত উচুতে আছে তার মাপ টাকে বলে অরবিট অল্টিটিউড (Orbit Altitude) । এটা কিলোমিটার এ মাপা হয়। এই অরবিট অল্টিটিউড এর উপর নির্ভর করে কৃত্তিম উপগ্রহের অরবিট গুলো কে মূলত দুই ভাগে ভাগ করা যায়। এক হলো লো আর্থ অরবিট (Low Earth Orbit) বা সংক্ষেপে লিও (LEO) । আরেক হলো জিওসিংক্রোনাস আর্থ অরবিট (Geosynchronous Earth Orbit) বা সংক্ষেপে জিও (GEO)।

কেউ যদি ভূপৃষ্ঠ থেকে মোটামুটি ১০০ কিলোমিটার (৩ লক্ষ ২৮ হাজার ৮৪ ফিট) উপরে যায় তাকে বলা যায় মহাশূন্যের দ্বারপ্রান্তে পৌছে গেছে। এই ১০০ কিলোমিটার উপরের জায়গাটার একটা নাম ও আছে, কারমান লাইন (Kármán line) । কারমান লাইনে মাধ্যাকর্ষন শক্তির পরিমান বেশি এবং এটমোস্ফিয়ার গ্যাস এর ঘনত্ব ও অনেক বেশি । এইখানে স্যাটেলাইট রাখতে হলে যে পরিমান জ্বালানী খরচ হবে তার উপযোগী স্যাটেলাইট তৈরি এবং পরিচালনা করা লং টার্ম এর জন্য অসম্ভব একটা ব্যাপার। হয়তো যদি আমরা কোনদিন নবায়ন যোগ্য জ্বালানী তে আরো উন্নত হই তাহলে সম্ভব হবে। এই কারমান লাইনের যদি আরো উপরে যাওয়া যায় , ধরা যাক ২০০ কিলোমিটার তাহলে মাধ্যাকর্ষন এর টান আরো কমে যাবে এবং এখানে কোন স্যাটেলাইট কে যদি রকেট এর মাধ্যমে বুস্ট দেয়া যায় তাহলে স্যাটেলাইটটির পক্ষে মাধ্যাকর্ষন শক্তিকে কিছুটা অতিক্রম করে পৃথিবীর চারপাশে ঘুরতে থাকার মত অরবিট তৈরি করা সম্ভব। এই ২০০ কিলোমিটার থেকে ১২০০ কিলোমিটার অরবিটাল অল্টিটিউড মানে পৃথিবী পৃষ্ঠ থেকে ২০০ থেকে ১২০০ কিলোমিটার এর উচ্চতায় যে সব স্যাটেলাইট ঘুরছে তাদের কে আমরা বলি লিও স্যাটেলাইট বা Low Earth Orbit Satellite । LEO এর উদাহরণ খুব পরিচিত দুটো নাম দিয়ে দেয়া যায়। ইন্টারন্যাশনার স্পেস স্টেশন (International Space Station) LEO তে ঘুরছে। ব্র্যাক এর অন্বেশা LEO তে ঘুরছে।

LEO যেহেতু পৃথিবীর অনেক কাছাকাছি তাই এর চারপাশে ঘুরে আস্তেও এই অরবিট এর স্যাটেলাইট গুলোর খুব অল্প সময় যেমন গড়ে ৯০ মিনিট এর মত লাগে। ISS এর লাগে ৯২.৪৯ মিনিট। কাছাকাছি হওয়াতে সিগ্ন্যাল এর যাওয়া আসার সময় (Round Trip Time – RTT) ও কম লাগে । তাই এই অরবিট টা স্যাটেলাইট কমিউনিকেশন এ খুব ব্যবহার হয়। ইরিডিয়াম একটা কোম্পানি আছে। স্যাটেলাইট ফোন এর ব্যবসা করে। ওদের সব স্যাটেলাইট LEO তে।

বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট যাবে এই LEO এর আরো উপরের অরবিট এ। যার নাম জিওসিংক্রোনাস আর্থ অরবিট (Geosynchronous Earth Orbit) বা GEO।

জিওসিংক্রোনাস / জিওস্টেশনারী স্যাটেলাইট কি?

জিওসিংক্রোনাস স্যাটেলাইটঃ

ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৩৫৭৯০ কিলোমিটার উপড়ে থাকে। পুরো পৃথিবী কে ঘুরে আসতে সময় লাগে ১ দিন। কিন্তু পৃথিবী যেদিকে ঘুরছে মানে পশ্চিম থেকে পূর্বে , সেই বরাবর নাও ঘুরতে পারে। তাই পৃথিবী থেকে দেখলে এই ধরনের স্যাটেলাইট কে চলমান মনে হবে

জিওস্টেশনারী স্যাটেলাইটঃ

ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৩৫৭৯০ কিলোমিটার উপড়ে থাকে। পুরো পৃথিবী কে ঘুরে আসতে সময় লাগে ১ দিন। পৃথিবী যেদিকে ঘুরছে ঠিক সেই বরাবর ঘুরতে থাকে। একই গতিতে থাকার কারনে পৃথিবীর যে কোন একটি নির্দিষ্ট পয়েন্ট থেকে দেখলে মনে হতে পারে সেই পয়েন্ট এর উপর স্যাটেলাইট টি স্থীর হয়ে আছে। তাই এর নাম জিও (অরবিট এর নাম)স্টেশনারি।

ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় এর অন্বেশা এবং বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট এর মধ্যে পার্থক্য কি?

ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় এর অন্বেশা একটি কিউব স্যাটেলাইট। কিউব স্যাটেলাইট হলো খুবই ছোট আকারের (১০ সেমি x ১০ সেমি x ১০ সেমি) এবং হাল্কা (১.৩৩ কেজি) স্যাটেলাইট। কিউব স্যাটেলাইট স্থাপন করা হয় LEO অরবিট এ। LEO অরবিট কি তা উপরে আলোচনা করেছি একবার তাই আর বললাম না। ব্র্যাক এর অন্বেশা ৩রা জুন, ২০১৭ তে লঞ্ছ করা হয় Falcon 9 রকেট দিয়েই। ব্র্যাক এর অন্বেশা ছবি তুলতে পারে। এর মেমরি তে পৃথিবী থেকে ডাটা আপলোড এবং ডাউনলোড করা যায়। Kyushu Institute of Technology এর Birds-1 প্রোগ্রাম এর আন্ডারে এটি মহাকাশ এ প্রেরন করা হয়। এই প্রোগ্রাম টি হলো যে সব দেশের কখনো কোন স্যাটেলাইট ছিল না তাদের কেও মহাকাশে স্যাটেলাইট স্থাপনে সাহায্য করার একটি প্রজেক্ট। ব্র্যাক অন্বেশা এর গ্রাউন্ড স্টেশন আছে বাংলাদেশ এ ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় এর উপরে, থাইল্যান্ড এ এবং তাইওয়ান এ। এটির মূল্য ৪ কোটি ১৫ লাখ টাকা ।

অপর দিকে বঙ্গবন্ধু–১ একটি GEO অর্বিট এর স্যাটেলাইট এবং অন্বেশার থেকে আকার, ওজন এবং কর্ম ক্ষমতায় অনেক গুন বড় যার বর্ননা ইতমধ্যে উপরের লেখা গুলোয় আমি দিয়েছি।

বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট দিয়া আমাদের লাভ কি?

আমি খুব মোটা দাগ এর তিনটা লাভ এর কথা বলি।

১। মহাকাশ এ পদার্পন এর শুরু টা হচ্ছে সরকারি ভাবে। এরপর মহাকাশ আর বড়লোক দেশের জিনিষ বলে থাকলো না।


২। ধরেন একটা দেশি টিভি চ্যানেল ইন্দোনেশিয়া বা শ্রীলংকায় তার চ্যানেল দেখাইতে চায়। তাইলে তার কি করতে হবে। তার চ্যানেল এর সিগ্ন্যাল বিদেশি একটা স্যাটেলাইট এ আপ লিঙ্ক করতে হবে। বিদেশের কোন ক্যাবেল টিভি কম্পানি তার ডিশ এন্টেনা ব্যাবহার কইরা সেই সিগ্ন্যাল ডাউনলিংক কইরা নামাবে তারপর কেবল দিয়া ঘরে ঘরে দিবে। অথবা গ্রাহক নিজেই সেট টপ বক্স এবং ভিস্যাট বসায়া নামায় নিবে। এই আপলিঙ্ক এর জন্য টিভি চ্যানেল গুলার বর্তমানে বছরে ১২৫-১৩০ কোটি টাকা খরচ হয়। বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট এর সাথে আপলিঙ্ক করলে এই খরচ টা কম হবে। আর আরো বড় কথা হইল দেশের টাকা দেশের প্রতিষ্ঠান ই পাবে।

৩। আমাদের নিজশ্ব স্যাটেলাইট এক্সপার্ট তৈরি হবে। আমরা যখন মহাকাশ গবেষনা শুরু করব NASA কিংবা ইন্ডিয়ার মত নিজেদের রকেট থাকবে আমাদের, তখন এদের কাজে লাগবে। আমাদের শিশুরা এই স্বপ্ন টা দেখে বড় হতে পারবে। আমরা যখন ছোট বেলায় ইউরি গ্যগারিন, নীল আর্মস্ট্রং এর গল্প পড়সি, স্পুটনিক-১ এর ছবি দেইখা ওয়াও বলসি তখন কি চিন্তাও করতে পারসি কোনদিন যে আমাদেরও নিজেদের স্যাটেলাইট হবে।

আমি প্রচন্ড রকম দেশ পাগল মানুষ। আমার দেশের সব কিছু নিয়া গর্ব লাগে। আমার প্রিয় এয়ারলাইন্স বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। তাই আমার দেশের নিজেদের প্রথম স্যাটেলাইট নিয়া আমার উৎসাহের কোন সীমা পরিসীমা নাই। ঈদ ঈদ লাগতাসে। আমি যা কিছু পড়সি, জানসি তা সব ই এই ভাল লাগা থেইকা। ভুল ভাল কিছু থাকলে নিজ গুনে ক্ষমা করে দিয়েন আর কমেন্ট এ জানায়েন।

তথ্য সূত্র সমূহঃ

http://www.radio-electronics.com/info/satellite/satellite-orbits/satellites-orbit-definitions.php

https://www.thalesgroup.com/en/worldwide/space/news/bangabandhu-satellite-1-program-passes-success-critical-design-review

https://www.thalesgroup.com/en/worldwide/space/news/first-telecommunications-satellite-bangladesh-will-be-built-thales-alenia-space

https://www.thalesgroup.com/en/worldwide/space/press-release/thales-alenia-space-build-bangabandhu-telecommunication-satellite

https://searchmobilecomputing.techtarget.com/definition/geostationary-satellite

https://spaceflight101.com/events/falcon-9-bangabandhu-1/

https://en.wikipedia.org/wiki/Bangabandhu-1

http://www.spacex.com/missions

https://www.thalesgroup.com/en/worldwide/space/news/bangabandhu-satellite-1-cape-canaveral

http://www.radio-electronics.com/info/satellite/satellite-orbits/satellites-orbit-definitions.php

https://www.nasa.gov/audience/forstudents/5-8/features/nasa-knows/what-is-orbit-58.html

https://en.wikipedia.org/wiki/Moon

https://en.wikipedia.org/wiki/K%C3%A1rm%C3%A1n_line

https://en.wikipedia.org/wiki/CubeSat

https://en.wikipedia.org/wiki/BRAC_Onnesha

৩০০/৩৬৫

লেখার তারিখঃ মার্চ ৩, ২০১৮, ৩:৩৯ পি এম

বই এর রিভিউ
পদ্ম বলে, এসো – রাফিউজ্জামান সিফাত

আমার কোন উপন্যাস তখনি ভাল লাগে যখন আমি এর চরিত্র গুলো কে বুঝতে শুরু করি। সব চরিত্র যে বুঝতে হবে এমন না। কিন্তু পড়তে পড়তে চরিত্র গুলা যখন চেনা হয়ে যায়, যখন প্রত্যাশিত ডায়লগ বলে, অপ্রত্যাশিত কিছু করে বসে, তখন সেই উপন্যাস টা জমে যায়। বই রেখে উঠে পরা অসম্ভব হয়ে যায়। পদ্ম বলে এসো তে যখন আমার এই অনভূতি টা হয়েছে অনেক দিন পর। মনে হয়েছে চরিত্র গুলো আমার খুব পরিচিত কেউ, আসে পাশেরই মানুষ। যখন বই রেখে উঠে যেতে হয়েছে সমাজের ডাকে তখন নিজেকে মনে হয়েছে পদ্ম বলে, এসো তেই আছি এখনো। চারপাশে যা ঘটছে তা পদ্ম বলে, এসো এরই অন্য কোন ঘটনা। লেখক সিফাত এই ইলিউশনটা পাঠকের ভেতর ঢুকিয়ে দিতে সফল হয়েছেন।

ইলিউশন এমনি এমনি তৈরী হয় না। প্রথমে ভিক্টিম এর বিশ্বাস অর্জন করতে হয়, তারপর বাস্তবের সাথে পরাবাস্তব মিশাতে হয় ধীরে ধীরে। একসময় ভিক্টিম পার্থক্য করতে পারে না কোনটা বাস্তব না আর কোনটা মায়া। লেখক সিফাত এর পদ্ম বলে, এসো উপন্যাস এর প্রধানত তম বৈশিষ্ট্য এবং শক্তি হলো এর গল্প টা প্রচন্ড রকম আট পৌরে গল্প। এখানে বিত্তের ঝলক নেই, নায়োকোচিত বীরত্ব নেই, এমন কি কোন উচ্চমার্গিয় সারকাজম করে নিজেকে খুব ফানি বা উইটি প্রমান করার চেষ্টাও নেই। এখানে আছে নিউমার্কেট এর ভিড় এ অপু কে খোজা রেনু, আছে রাস্তার জ্যাম এ বিলাসবহুল গাড়িতে বসে থাকা দুর্নীতিবাজ রাশেদ , ছাদে বাতাবিলেবুর গাছ আছে, অসুস্থ লুতফার জন্য কিনে আনা রঙ্গিন ম্যাক্সি আছে। যে পাতা তেই যাই মনে হবে একটা মধ্যবিত্ত পরিবারে ঢুকে গেছি , যার আনন্দ বেদনা অভিমান গুলো আমার খুব চেনা।

লেখক সিফাত এর ২য় উপন্যাস “সুয়া উড়িলো উড়িলো জীবেরও জীবন” এর পটভূমি ছিল মফঃস্বল শহর আর এখানে একেবারেই রাজধানী শহর। তাই দৃশ্য গুলো মিলিয়ে নেয়া যায় সহজেই। তবে সেই উপন্যাস এর লেখক সিফাত কে যদি এই উপন্যাস এ খুজতে গেলে ধাক্কা খেতে হবে নিশ্চিত। বাস্তবের সাধাসিধে সিফাত কিভাবে উপন্যাস এ গল্পের প্রয়োজনে এত নির্দয় নিষ্ঠুর হয়ে গেলেন তা এক আশ্চর্য ব্যাপার।

আমি পড়তে পড়তে কখনো অপু হয়ে যাই। কখনো শাফকাত হব কিনা ভাবি। “জাগরন” বলে যে অরাজনৈতিক সংগঠন টির কথা আছে তা আমাকে প্রচন্ড ইন্সপায়ার করে এবং একই সাথে আফসোস করায়, আহা এরকম একটা সংগঠন যদি বাস্তবে থাকতো, অসম্ভব তো না। তখনই মনে হয় উপন্যাস হিসেবে পদ্ম বলে, এসো এর সফলতা টা এখানেই। শহুরে জীবনের বাস্তবতা কে পরাবাস্তব না বানিয়ে অতিবাস্তব পর্যায়ে নিয়ে যাওয়াতেই।

এবারের বই মেলা থেকে কিনেছিলাম বইটা। রকমারি তেও পাওয়া যায়ঃ
https://www.rokomari.com/book/156335/%E0%A6%AA%E0%A6%A6%E0%A7%8D%E0%A6%AE-%E0%A6%AC%E0%A6%B2%E0%A7%87,-%E0%A6%8F%E0%A6%B8%E0%A7%8B

২৯৯/৩৬৫

লেখার তারিখঃ সেপ্টেম্বর ১৫, ২০১৭, ১১:২৪ এ এম

ভুড়ি রে তুড়ি মাইরা বিদায় প্রকল্প, লগ ১

নিজের সাথে যুদ্ধে জয়ী হওয়াটা সহজ না। শতকরা পঁচাশি ভাগ মানুষ যখন যা চায় তা করতে পারে না তখন পারিপার্শিকতার দোহাই দিয়ে হার মেনে নেয়। যেমন কেউ চিন্তা করলো গিটার শিখবে। হুলুস্তুল করে সব কিনে আনলো। একস্টিক গিটার, ইলেক্ট্রিক গিটার, টিউনার, গিটার কেস, হাবি জাবি ইত্যাদি। গ্রামার, রিদম, লিড সব একসাথে শিখার চেষ্টা। কয়দিন বাজানোর পর দেখা গেল আঙ্গুল এর মাথায় ব্যাথা করে। তাই আস্তে আস্তে ছেড়ে দিল। নিজেকে বোঝালো আমার আংগুল ওস্তাদদের মত শক্ত না, আমাকে দিয়া হবে না, থাক। এই যে, হেরে গেলো কিন্তু।

আমি যখন ঠিক করলাম ভুড়ি কমাইতে হবে, আমার মনে হইল আগে কত অসংখ্য বার উদ্যোগ নিসি কিন্তু কিসু হয় নাই, এইবারও কি একই জিনিষ হবে? তারপর চিন্তা করলাম আগে কি ভুল করসি আর এখন কি ঠিক করবো। আমার মূল সমস্যা যেটা ছিল আমি সব একবারে শুরু করসিলাম। এক্সারসাইজ, হেলদি ফুড, জিম সব একসাথে। তাতে যেইটা হইল আমার শরীর ভাবলো একি রে বাবা, কই আইলাম, প্রত্যেকদিন এ কেমন অইত্যাসার। তাই সে বিদ্রোহ শুরু করল। জোশ এর চোটে কয়দিন কাটানোর পর যেখন দেখলাম খালি খিদা লাগে তখন আস্তে আস্তে হেলদি ফুড অনলি বেপার টা গেলো, নিজেরে বললাম, আরে না খাইলে জিম করার শক্তি পামু কইত্তে। অই এক হাফ কাচ্চি আর একটা ঠান্ডা কুক ল। তারপর মনে হইল জিম কইরা এনার্জি বেশি খরচ হইতাসে সকালে হাটার শক্তি পাই না, থাক। জিম এ গেলে এমনেও মাইন্সের মাসল দেইখা নিজের চর্বি লুকানির জায়গা পাই না লজ্জায়, থাক। হেলদি ফুড আর জিম গেল। তারপর একদিন সকালে মনে হইল , খালি হাটা হাটি কইরা কি আর ভুড়ি কমে। জিম করি না, হেলদি খাই না। খালি হাটাহাটি কইরা আর কি হইব, থাক। আরেকটু ঘুমাই। গেল সব।

এইবার তাই যা করতাসি, তা হইল শরীর রে অভ্যস্ত করতাসি। বাইচ্চা কালে আমরা যেমন ইস্কুল এ যাইতে ঘ্যান ঘ্যান করতাম, তারপর বড় হইলে নিজে নিজেই রেডি হয়া যাইতাম, এরকম। আমি শরীর রে শিখাইতাসি সপ্তাহে ৫ দিন ভোর এ উঠতে হবে, নামাজের পর এক ঘন্টা হাটতে বা দৌড়াইতে হবে। তা রোদ ই থাকুক আর বৃষ্টি। মোটামুটি রুটীন এর মধ্যে আসছে বেপারটা। এই মাস টা লাগবে পুরাপুরি ভুলতে যে আমি এর আগে জীবনে সকালে হাটাহাটি করি নাই।

আমি কিন্তু এখন ১০০% ডায়েট এ চইলা যাই নাই। সব ই খাইতাসি, তয় কার্ব আর সুগার এর ইনটেক কমায় দিসি। ভাত, খিচুড়ি, পুলাও খাওয়ার সময় ভাতের চামচ এর এক চামচ খাই আর বাকি টাইম বোল এর দিকে পাপি আইজ কইরা তাকায় থাকি। কোক জাতীয় সোডা খাওয়া বাদ দিসি ৯৮% ক্ষেত্রে। কফি খাই, তয় আস্তে আস্তে ব্ল্যাক এর দিকে যাইতাসি। আগে গ্যালন গ্যালন মোকা খাইতাম, এহম লাতে উইথ ওয়ান সুগার খাই, এরপর কেপাচিনো তে যামু, তারপর আল্টিমেটলি এমিরাকানো উইথ নো সুগার।

এই মাস টা তাই আমার স্টেমিনা অর্জন এর মাস। আগস্ট এ ওজন ছিল ১০০ কেজি। এখন ৯৬ কেজি। আগামি মাস এ ফুড হেবিট এর প্রতি নজর দিমু। অবশ্যই ডায়েটেশিয়ান এর সাথে পরামর্শ কইরা তারপরে। আমি জানি আই উইল গেট দেয়ার। শুধু তাড়াহুরা করলে আর সব একবারে করতে চাইলে বেশি দূর যাইতে পারুম না।

২৯৮/৩৬৫

লেখার তারিখঃ জানুয়ারি ১২, ২০১৭, ২:৩৪ পিএম

দা ব্যাটেল অফ বয়রা ( মুক্তিযুদ্ধের প্রথম আকাশ যুদ্ধ ), পর্ব ৪

২২শে নভেম্বর, ১৯৭১। ভোরের সূর্য ধীরে ধীরে আলোকিত করছিল দমদম বিমানবন্দর কে যেখানে 22 Squadron এলার্ট অবস্থায় ছিল জরুরী অবস্থার জন্য। যে কোন সময় আস্তে পারে ডাক, বেজে উঠতে পারে স্ক্র্যাম্বেল করার এলার্ম বেল। সকাল ৮ টার দিকে তাই ঘটে যায়, সকালের স্নিগ্ধ নিস্তব্ধতা ভেঙ্গে বেজে উঠে স্ক্র্যাম্বেল এলার্ট এর বেল। পাকি এয়ারফোর্স (আমি জীবনেও পাক বাহিনী বলব না, পাকি/পাইক্যা বলব, তবু আমাদের যেভাবে শিখানো হইসে স্কুল এ সেইরকম পাক বাহিনী বলব না) এসে পরেছে বয়রায় মুক্তিবাহিনী কে সাহায্যের জন্য অগ্রসররত ইন্ডিয়ান সেনাদের উপর হামলার জন্য। এক মূহুর্ত ও নষ্ট না করে আকাশে উঠে যায় ইন্ডিয়ান এয়ারফোর্স এর চারটি Gnat বিমান।

চারটি বিমান “ফরমেশন ফ্লাইং” করে ধাবমান হয় বয়রার আকাশের দিকে। ফরমেশন ফ্লাইং হলো দুই বা ততোধিক বিমান এর একসাথে উড়ে যাওয়া যেখানে একজন ফরমেশন লিডার থাকে আর বাকি রা তার কমান্ড অনুসারে ফরমেশন এ থেকে ফ্লাই করে অথবা ফরমেশন ভেঙ্গে শত্রু বিমান কে আক্রমন করতে ছুটে যায়। ফরমেশন লিডার এর অনুমুতি না নিয়ে শত্রু বিমান কে আক্রমন করতে যাওয়া কোন কোন ক্ষেত্রে অপরাধ হিসাবে গন্য হয়। ফরমেশন ফ্লাইং করলে ফুয়েলও কম খরচ হয়। “ড্র্যাগ কমে, লিফট বারে, ফুয়েল তাই কম খরচ হয়” এই সব আলোচনায় গেলে এখন এরোডাইনামিক্স এর কথা বার্তা বলতে হবে। তাই আপাতত মূল লেখায় থাকার চেষ্টা করি।

ইন্ডিয়ান এয়ারফোর্স এর যেই চারটি বিমান এর ফরমেশন ধাবিত হচ্ছিল বয়রার দিকে তার কমান্ডিং অফিসার বা CO ছিলেন Wing Commander Sikand, যার অধীনে ছিলেন Flying Officer Don Lazarus, Flight Lieutenant Roy Massey এবং Flight Lieutenant M.A Ganapathy.

এদিকে পাকিস্তান এয়ারফোর্স এরও চারটি Sabre বিমান ধাবিত হচ্ছিল বয়রার অদ্যরে গরীবপুর এর দিকে। তেজগাঁও বিমান বন্দর থেকে ছেড়ে আসা 14 Squadron এর চারটি বিমান এর ফরমেশন এর লিডার ছিল Squadron Leader Dilawar Hussain.

কোন রকম বাধা ছাড়াই তারা গরীবপুর এর ইন্ডিয়ান আর্মি এর অবস্থান গুলোতে আক্রমন করে। এই আক্রমন এ গরীবপুর এর কাছের জালাঙ্গি নদীর উপর একটি ফেরি ধ্বংস হয় এবং কিছু লোকজন আহত হয়।

যদিও ব্যারাকপুর এর 254 Signal Unit থেকে ইন্ডিয়ান এয়ারফোর্স এর Gnat গুলোকে যশোর এরিয়ার উপর দিয়ে উড়ে যেতে বলা হয়েছিল কিন্তু তারা পাকিস্তান এয়ারফোর্স এর Sabre গুলোর কোন দেখা না পেয়ে আবার দমদম বিমানবন্দর এ ফিরে যান।

রুটিন মাফিক পাকিস্তান এয়ারফোর্স সেদিন দুপুরে আবারো একটি মিশন চালায়। ইন্ডিয়ান এয়ার ডিফেন্স কোন্ট্রল রাডার এ Sabre গুলোর আগ্রাসন ধরাও পরে। দমদম বিমানবন্দরে স্ক্র্যাম্বেল এলার্ম বাজার কিছুক্ষন এর মধ্যেই Wing Commander Sikand এবং তার সংগী আগের তিনজন পাইলট টেক অফ করেন।

এবার যখন রাডার কন্ট্রোল এর দিক নির্দেশনা অনুযায়ী Gnat গুলো যুদ্ধ এলাকায় পৌছায় তখন Flight Lieutenant Ganapathy ঘোলাটে আকাশেও একটি Sabre বিমান খুজে পান এবং Sabre টিকে আক্রমন করার জন্য রেডিও ফ্রিকুএন্সিতে ফরমেশন লিডার এবং কমান্ডার Sikand এর অনুমুতি চান।কিন্তু কোন এক রহস্যজনক কারনে Sikand নিরব থাকেন। Ganapathy কয়েকবার চেষ্টা করেও Sikand এর সাথে যোগাযোগ করতে ব্যার্থ হন। Sabre গুলোর লোকেশন এর ব্যাপারে রাডার কন্ট্রোলার থেকে বার বার বলা হলেও Sikand কোন রকম জবাব বা আক্রমন করা থেকে বিরত থাকেন।

মাটিতে Sabre গুলোর আক্রমন এর শিকার ইন্ডিয়ান আর্মি থেকেও ইন্ডিয়ান এয়ারফোর্স এর Gnat গুলোর সাথে যোগাযোগ এর চেষ্টা করা হয়। এই সময় ইন্ডিয়ান আর্মির 4 Sikh Battalion এর সাথে Forward Air Controller হিসাবে ছিলেন Flying Officer S.Y. Savur । Forward Air Controller হলো এয়ারফোর্স এর একজন গ্রাউন্ড প্রতিনিধি যিনি বিমান আক্রমন এর সময় মাটি থেকে বিমান কে টার্গেট আইডেন্টিফাই করতে সাহায্য করেন। Flying Officer S.Y.Savur তার VHF রেডিও থেকে ডেস্পারেট ভাবে চেষ্টা করে যান Gnat গুলোকে Sabre গুলোর দিকে ডিরেকশন দিয়ে নিয়ে যাওয়ার। কিন্ত তারা শুধু দেখতে পান Gnat গুলো Sabre গুলোকে আক্রমন এর কোন উদ্যোগ ই নিলনা। ইন্ডিয়ার আর্মি এর মধ্যেও হতাশা ছড়িয়ে পরে। তারা আর কাউকে না পেয়ে Flying Officer Savur এর উপর তাদের যত ক্ষোভ সব ঝাড়া শুরু করে।

দুপুরের ব্যার্থ ফ্লাইং শেষে দম দম বিমান বন্দর এ ফিরে যাওয়ার পর Gnat গুলোর সুযোগ পেয়েও আক্রমন না করার কারন অনুসন্ধান করা হয়। দেখা যায় কমান্ডার Sikand তার রেডিও তে কারো কল ই রিসিভ করতে পারছিলেন না। যিনি প্রথম Sabre বিমান দেখে আক্রমন এর অনুমুতি চাইছিলেন সেই Ganapathy এতে এতই হতাশ এবং কমান্ডার Sikand এর উপর রাগান্বিত ছিলেন যে তাকে শান্ত করতে Flight Lieutenant Roy Massey কে অনেক কষ্ট করতে হয়েছিল। অবস্থা দেখে সকাল এবং দুপুর এর Scramble এর অধিনায়ক Sikand সেদিনকার মত আর ফ্লাই না করার সিদ্ধান্ত নেন। তার স্থলাভিষিক্ত হন Flying Officer Soars । মনে আছে আগের পর্বে Soars এর কথা বলেছিলাম ? যিনি দম দম এ এসেছিলেন রিপ্লেসমেন্ট Gnat এর পাইলট হিসাবে, আর এতদিন ছিলেন স্ট্যান্ডবাই পাইলট হিসাবে।

সিদ্ধান্ত হয় সেদিন মানে ২২শে নভেম্বর, ১৯৭১ এর বিকেলে যদি আরো কোন Scramble হয় তাহলে তার নেতৃত্ব দেবেন Massey এবং তার তার No.2 থাকবেন Soars । Scramble এর ২য় সেকশন এর নেতৃত্ব দেবেন Ganapathy এবং তার উইংম্যান হিসাবে থাকবেন Lazarus.

আগামী পর্বেই ইনশাল্লাহ আমরা Battle of Boyra এর মূল বিমান যুদ্ধের ডিটেইল বর্ননায় ঢুকে যাবো আর দেখবো Massey, Soars, Ganapathy এবং Lazarus এর সাথে বিমান যুদ্ধে কিভাবে পাকি এয়ারফোর্স এর