লেখার তারিখঃ এপ্রিল ১৮, ২০১৫ । ৯.৪৩ পি.এম
আজকে ৫০ তম পোস্ট। যখন শুরু করসিলাম ভাবিও নাই ১০ টা পোস্ট ও লিখতে পারুম। কেমনে কেমনে জানি ৫০ টা লেখা হয়া গেসে। এই ৫০তম লেখাটা তাই লিখতে চাই মুক্তিযুদ্ধ নিয়া। টু বি স্পেসিফিক , মুক্তিযুদ্ধের আগে এই দেশে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর প্রস্তুতি নিয়া।
আমাদের মুক্তিযুদ্ধ কুনো আতকা ঘটনা না। এমন না যে ১৯৭১ এর ২৫ শে মার্চ এর রাইতে পাকিস্তানি জেনারেল খাদিম হোসেন রাজার মনে হইসিল, নাহ শইল্ডা জুইত লাগতাসে না। ড্রাইভার ! ট্যাংক বাইর কর। গ্যাস ভরা আসে তো? রাজারবাগ পুলিশ লাইন আর ঢাকা ইনুভারসিটি যাবো।
যুদ্ধ যে একটা হবে এইটা বোঝা যাইতাসিল অনেক আগে থেইকা। আর পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর লুকজন সেইটার জন্য প্রস্তুতিও নেয়া শুরু করসিল আগেই। এই গল্পটা একটু আগে থেইকা শুরু করি তাইলে বুঝতে সুবিধা হবে।
১৯৬৯ সালের ২৫ শে মার্চ গন অভ্যুথানের মাধ্যমে ফিল্ড মার্শাল আউউব খান কে সরাইয়া দিয়া পাকিস্তান এর কমান্ডার ইন চিফ হিসাবে ক্ষমতায় আসেন জেনারেন ইয়াহিয়া খান। এই সময় গন আন্দোলন দমনে পূর্ব পাকিস্তানে সেনাবাহিনীর অন্যান্য ইউনিট এর সাথে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট এর ব্যাটেলিয়ান গুলো কেও (জানা ভাল যে একটা ব্যাটেলিয়ান এ ৩০০ থেকে ৮০০ সৈন্য থাকে।) নিয়োগ দেয়া হয়।
এই দেশে অবাঙ্গালী সৈন্যরা যেমনে জনগণের উপরে ঝাপায়া পরসিল তখন, বাঙ্গালি সৈন্য রা তা করে নাই । তারা ডাইরেক্ট অর্ডার অমান্য কইরা বাঙ্গালিদের উপর গুলি চালানো থেইকা বিরত থাকে। ১৯৬৯ এর বিহারি-বাংগালি দাঙ্গা দমনেও বাঙ্গালী সৈন্যদের নিয়োগ করা হয়। পাকিস্তানি সামরিক লিডার রা তখন রিপোর্ট করে যে এইখানেও সৈন্য রা বাঙ্গালি দের পক্ষ ন্যায়।
এই দুই ঘটনায় আর অসংখ্য গোয়েন্দা রিপোর্ট এর ভিত্তিতে সামরিক নীতিনিরধারক রা বুঝতে পারেন যে গেঞ্জাম যদি একটা লাগে পূর্ব পাকিস্তান এর বাঙ্গালি সৈন্য রা পাকিস্তানি সৈন্য গোরে পিডায়া ফাডায়া লাইবো। তাই এগোরে চোখে চোখে রাখনের ডিসিশান সেই ১৯৬৯ সালেই নেওয়া হয়া যায়।
১৯৬৯ সালে জেনারেল ইয়াহিয়া ক্ষমতায় আসলেন । এই মিচকা চালাক লুক টা ভাবলেন এখন জনগণ যেমনে হট হয়া রইসে তাতে আমিও যদি আইয়ুব খান এর মত ভাব ধরি তৈলে আমারেও লাত্তি মাইরা বাইর কইরা দিবে। তার চেয়ে মহান হউনের ভাব সাব লই। তিনি ২৮শে জুলাই ১৯৬৯ রেডিও তে দেওয়া এক ভাষণে পাকিস্তান সেনাবাহিনী তে বাঙ্গালি দের বর্তমান সংখ্যা দ্বিগুণ করার ঘোষণা দিলেন।
তিনি ভাবসিলেন আমরা ব্যাক্কল। তিনি ভাবসিলেন তার ঘোষণায় ওই মাই ঘোট ডাবল অফার ভাইবা বাংলার ঘরে ঘরে তার পোস্টার লাগাইয়া তার সামনে সেলফি তুলা হবে। কিনতু আমরা জানতাম , পাকিস্তান এর মোট জনসংখ্যার অনুপাতে আমরা ছিলাম ৫৬%। যদি ইয়াহিয়া খান এর কথা মত সেনাবাহিনী তে এই দেশের মানুষের পারটিসিপেশন ডাবল ও করা হয় তবুও তা দাঁড়ায় মাত্র ১৫%। ৫৬% এর দেশ থিকা সৈন্য হইব ১৫%। আমরারে কি পাগলে পাইসে যে খুশি হমু?
আমরা খুশি হই নাই। কিন্তু এই সব সৈন্য লারাচারায় সব চেয়ে বেশি ভয় পায় যে কুতুব, সেই আম্রেকিরার মনে হইল, উহু ঘটনার তো সুবিধার লাগতাসে না। ব্যাপারটাতে আমার নাক গলাইয়া দেখতেই হবে। ওই সময় আমেরিকার দূতাবাস এ কোন মিলিটারি এটাশে ছিল না। তারাতারি কইরা তখন কার বাংলাদেশে আমেরিকার কন্সাল জেনারেল আরচার কে ব্লাড এর অনুরোধে ইসলামামাবাদ থিকা বিমান বাহিনীর কর্নেল রবার্ট নোলান কে ঢাকায় পাঠানো হয়।
এই যে কন্সাল জেনারেল, আরচার কে ব্লাড (Archer K. Blood) উনি একটা বই লিখসিলেন পরে। যেইটা ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড থেইকা ২০০২ সালে প্রকাশিত হয় ( ইউ পি এর শো রুম আমার সুভাস্তুর বাসার উলটা পাশে :D) । বইটার নাম The Cruel Birth of Bangladesh – Memories of an Americans Diplomat। উনার কাজ কারবার পইড়া আমার মনে হইসে উনি ডেফিনেটলি এক জন প্লেন স্পটার ছিলেন। অথবা প্লেন স্পটিং এর দুর্দান্ত সুবিধা গুলা উনি জানতেন। উনি আমেরিকায় পাকিস্তান এর ট্রুপ মুভমেন্ট এর উপর যেই রিপোর্ট পাঠান সেইখানে লেখা আসে যে এই টার অধিকাংশরই ভিত্তি হইল তেজগাঁও বিমানবন্দরে প্লেন স্পটিং কইরা পাওয়া। প্লেন স্পটার হিসাবে হেবি প্রাউড লাগসে এইটা পড়তে পাইরা 🙂
উনি এই বই তে লিখসেন যে এই সময় ঢাকায় পাকিস্তান এয়ার ফোরস এর একটা ফাইটার স্কোয়াড্রন ছিল। এই স্কোয়াড্রন এ ১৬ টা F-86 বিমান ছিল। (F-86 বিমান এয়ার ফোরস এর জাদুঘরে আসে আই ডি বি এর উলটা পাশে। আমি হাত দিয়া ধইরা দেখসি। )
মনে আসে? আগের একটা লেখায় একটা বিমান ছিনতাই এর কথা লিখসিলাম যেইটার কিনা মুক্তিযুদ্ধের মোড় ঘুরাইতে বিশাল অবদান ছিল? উনি সেইটার কথাও লিখসেন বইটা তে। উনি লিখসেন, বেশির ভাগ ট্রুপ মুভমেন্ট হইতেসিল জাহাজ দিয়া, সমুদ্র পথে। শুধু অফিসার এবং গুরুত্ব পূর্ণ ব্যাক্তিদের আকাশ পথে পাঠানো হইত। করাচী থেইকা চিটাগাং পোর্ট এ জাহাজ আস্তে লাগতো ৭ থেইকা ৮ দিন। উনি আমেরিকায় রিপোর্ট পাঠাইসেন, যদি ভবিষ্যৎ এ বড় ধরনের সৈন্য ট্রান্সফার হয় অথবা ভারি সামরিক যানবাহন পাকিস্তান থেকে এই দেশে পাঠাইতে হয় তাইলে সেইটা সমুদ্র পথেই হবে।
আরচার কে ব্লাড উনার বই তে লিখসেন, লম্বা রুট এর কারনে পাকিস্তান এয়ার ফোরস এবং পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ার লাইন্স (PIA) এর সৈন্য ট্রান্সপোর্ট করতে ব্যাপক অসুবিধা হইতাসিল। ওই যে বিমান ছিনতাই টার কথা বলসিলাম, তার কাড়নে ভারত তো তাদের উপর দিয়া সব সামরিক আর বেসামরিক বিমান চলাচল বন্ধ কইরা দিসিল। তাই পাকিস্তানি সব বিমান রে ঘুইরা আস্তে হইত শ্রীলঙ্কা হয়া। ভারতের উপ্রে দিয়া আইলে তাদের পারি দিতে হইতও মাত্র ১০০০ নটিকাল মাইল। কিন্তু এরুম ঘুরতি পথে আহনের কারণে তাদের পারি দিতে হইত ১২৬০০ নটিকাল মাইল।
এই টা পড়তে পড়তে আমি ভাবলাম আইচ্ছা তাইলে একটু তখনকার পাকিস্তান এয়ার ফোরস এর ট্রান্সপোর্ট প্লেন কয়ডা আসিল একটু দেখা যাক। প্লাস PIA এর তখনকার ফ্লীট টাও। কারণ যদি লাগে পাকিস্তান তার সব ট্রান্সপোর্ট প্লেন আর PIA এর প্লেন লাগায় দিবো এই দেশে সৈন্য পাঠাইতে।
আমি যা তথ্য যোগার করসি তাতে দেখা যায় ১৯৭১ সালে পাকিস্তান এয়ার ফোরস এর ট্রান্সপোর্ট প্লেন হিসাবে C-130B বিমান ছিল ৫ টা, C-130E (C-130B এর এক্সটেন্ডেড রেঞ্জ ভার্শন ) বিমান ছিল ১টা। C-130 বিমান এর পক্ষে কলম্বো তে রিফুয়েল না কইরা পাকিস্তান থেইকা ঢাকায় আসা পসিবল ছিল না। একটা C130-B /C130-E তে সৈন্য নিতে পারে ৯২ জন।
অন্যদিকে পাকিস্তান যদি PIA এর বিমান দিয়া সৈন্য আননের চিন্তা করে তাইলে তখন PIA এর লঙ রেঞ্জ ফ্লীট এ ছিল সাত টা Boeing 707 আর ৪ টা Boeing 720B বিমান। একটা Boeing 707 এ যাত্রী ন্যায় ২০২ জন আর Boeing 720B তে ১১২ জন।
এখন যদি ক্যালকুলেটর দিয়া হিসাব করি তৈলে দেখা যাইব, পাকিস্তান সব ট্রান্সপোর্ট বিমান আর PIA এর সব লঙ রেঞ্জ বিমান কইরা যদি এই দেশে সৈন্য পাঠাইতে চায় তাইলে ৭৫% বিমান যান্ত্রিক গোলযোগ ছাড়া থাকবো ধইরা নিলেও প্রায় ২০০০ জন সৈন্য পার ট্রিপ এ আসতে পারে। এই সংখ্যা টা পরের ট্রিপ গুলায় কমবে কারণ বিমান এর মেইন্ট্যানেন্স এর ব্যাপার আসে।
আবার ফিরা আসি আরচার কে ব্লাড এর বই তে। উনি ওইখানে লিখসেন যে ফেব্রুয়ারি ১ থেইকা মার্চ এর ৩ পর্যন্ত মোট ১৪ টা জাহাজ ( ১০ টা কারগো জাহাজ, তিনটা কারগো+প্যাসেঞ্জার জাহাজ, একটা প্যাসেঞ্জার জাহাজ) করাচী থেইকা পূর্ব পাকিস্তান এ আসে। এগুলা দিয়া মূলত সৈন্য আর সাঁজোয়া যানবাহন ই আনা হয়।
লেখাটা শেষ করি আরচার কে ব্লাড যে একজন প্লেন স্পটার ছিলেন তার প্রমান দিয়া। নিচের অংশ টা সরাসরি উনার বই থেইকা তুইলা দিলাম,
“Because of all was going on in Dacca , we at the Consulate General were unable to develop much by way of solid information on troop movements by sea to Chittagong. We could, however, vouch for a sudden influx of troops by air through the Dacca Airport. On Severel occasions I personally watched as about one hundred young men debarked from a PIA aircraft. They were dressed identically in short sleeved white shirts and Chino trousers, and after having been lined up, were marched away very smartly. As March wore on, the number of such flights increased markedly.”