১২৫/৩৬৫

লেখার তারিখঃ জুলাই ২, ২০১৫ । ৯.৫৯ পি.এম

আজকে বাসাবো আসছি। বাসাবো আসলে অনেক মজা হয়। খাওয়া খাইদ্য নিয়া চিন্তাই করা লাগে না। টেবিল এ গিয়া বসলেই অটো খাবার দাবার আস্তে থাকে। আর সকাল বেলা ঘুম থেইকা উইঠা দাঁত মাইজা ফেরত আসলেই দেখি অটো বিছানা গুছানো হয়া গেসে। কি ম্যাজিক।

বৃহস্পতিবার সকাল থেইকা মনে হইতে থাকে কখন অফিস ছুটি হবে, কখন বাসায় যাবো। বৃহস্পতিবার আসলে বাবা আর আম্মা আলাদা আলাদা কইরা ফোন দ্যায়। আমার মাঝে মাঝে মনে হয় বলি, একজন রে তো বলসি যে আসতাসি, আবার ফোন ক্যান। তারপর মনে হয়, হুর, পাগল নাকি আমি। এই জিনিশ কয়জন এ পায়?

প্রথমে বাবা ফোন করে। কি খবর?শরীর ভাল? অফিসে? আজকে আসবা? আচ্ছা আইসা পইরো তাড়াতাড়ি। আমার বাবা জীবনেও আমারে সরাসরি কোন ধমক দিতে পারে নাই। এক সাথে খাইতে বসলে আমি যখন সবজি খাই না, তখন ধমকানির বদলে অন্য দিকে তাকায় ভাব বাচ্যে কথা বলে, সবজি খাইলেই তো হয়, সবজি খাওয়া তো ভাল, কত ভিটামিন। আর আম্মা তখন আইসা বলে, খাইবো না মানে? গলায় পারা দিয়া খাওয়ামু।

বাবা ফোন করার এক ঘণ্টা পরে আম্মা ফোন করে। আস্তাসো? না আম্মা, এখন তো অফিসে। আচ্ছা আসো, আসো। এগুলা ভাল্লাগে অনেক। প্রায়ই আমি যাই না, যাইতে পারি না। তখন আবার বাবা অভিমান করে। তুমি যে বলসিলা সোম্বারদিন আসবা? আসলা না যে? শরীর খারাপ? আম্মা শুধু জিজ্ঞেস করে আজকে আসবা? না আম্মা কাজ আছে। আচ্ছা। কালকে আসবা?

এই আরেকটা জিনিশ আমাদের বাসায়। বাবা আম্মা কেউই কোনদিন জিজ্ঞেস করে নাই, আমার মন খারাপ কিনা? হয়তো আমাদের মধ্যে দূরত্ব বেশি ওই জন্য জিজ্ঞেস করতে সংকোচ করে কিনা আমি জানি না । কিন্তু উনাদের কাছে আমার ঘরের এক কোনে মটকা মাইরা পইরা থাকার মানে, হয় আমার শরীর খারাপ, নাইলে আমার খিদা লাগসে। মন খারাপ, সেইটা কি জিনিশ আবার? ছোট মাইনসের আবার মন খারাপ কি?

যাই হোক। আম্মা বাবা তো। ওরা এতই দিসে আমাকে আর আমি এত খালি নিয়াই গেসি যে আমার নিজেকে একটা কুলাঙ্গার সন্তান লাগে। আমার উপর ওদের এক্সপেকটেশন এর শেষ নাই। আর আমিও তার বেশিরভাগটাই পুরন করতে পারি নাই। ক্যান পারি নাই তাও ওদের ব্যাখ্যা কইরা বলতে পারি নাই কোনদিন। এইসব নিয়া খোলাখুলি কখনো আলাপও হয় না। আর হবেও না।

আমার বাবা মার খুব আক্ষেপ আমি তাদের আদর্শ ছেলে না। সেই কাজ আগেই পালন কইরা গেসে আমার বড় ভইন। আসলেই কইরা গেসে। ফাইজলামি না। তাই তাদের সব গর্ব বইন রে নিয়াই। সে মেয়ে হইয়াও যা কইরা গেসে আমি ছেলে হয়া সেগুলা করি নাই। আমি আসি আরকি পিছে দিয়া। জংলি ব্ল্যাকশিপ অফ দা ফ্যামিলি।

আমার বাপ এর খুব আক্ষেপ, আমি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পরি না। উনি উনার তাবলীগের সাথী ভাই দের কাছে এইটা নিয়া খুবি শরমিন্দা থাকে। এই চাহিদা পুরন করসে আমার খালাতো ভাই। পুরাই হুজুর। তাবলীগে যায়, নামাজ পরে, ইসলামি তরিকায় চলে। বাপ আমারে বলসে তার মত হইতে। এখনো হইতে পারি নাই।

কালকে আমার জন্মদিন। আমার ইথার নামটা রাখসিল আম্মা। আর ফয়সাল আকরাম অংশ টা বাবা। আজকে আমি যা কিছু, সবই আমার বাবা আম্মার অবদান। আর আমি যা কিছু না, সবই আমার নিজের কারণে। আমি তো ভাবতেই পারি হয়তো একদিন আমারে নিয়া গর্বিত হইতে পারার মত কিছু খুইজা পাবে ওরা। ততদিন না হয় আমার খিদাই লাগুক আর শরীর খারাপ ই হোক।

১২৪/৩৬৫

লেখার তারিখঃ জুলাই ১, ২০১৫ । ১০.৫১ পি.এম

আমার বিদেশ ভাল্লাগে না। আই মিন, ইয়া বেড়াইতে যাওয়া ইজ ওকে। কিন্তু বিদেশ গিয়া থাকতে হইব, জীবন যাপন করতে হইব এই রকম ভাবলে কেমন জানি আতঙ্ক লাগে। আমি একলা একলা থাকতে পারি না তা না। একা একা সব কাজ ও করতে পারি। কিন্তু বিদেশ এ গিয়া থাকার কথা যদি ভাবি তাইলেই ডর লাগতে থাকে। মনে হয় একটা চৌরাস্তার মাঝখানে দাড়ায় দাঁড়ায় আম্মু আম্মু বইলা কান্দুম আর সবাই আঙ্গুল উঁচা কইরা আমারে দেখায় দেহায় হাসবো।

আমার অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী ভইন দা পেইন কেঙ্গারু খামারি মইম্যা আমারে ক্রমাগত পেইন দিয়াই যাইতাসে যাওনের লাইগা আর আমি না কইরাই যাইতাসি। আমার অফিসের বেশিরভাগ লুকজন এক পাও অস্ট্রেলিয়ায়, এক পাও কানাডায় দিয়া বইসা আসে। সবারই বেশ একটা এস্কেপ প্ল্যান আছে। আর ব্যাঙ্ক ভর্তি টেকাটুকা। আমার কিছুই নাই। যেদিন অফিস থিকা লাত্তি মাইরা বাইর কইরা দিব ওই দিন মনে হয় চিন্তা করা শুরু করুম, হুমম , হয়াতস নাও।

বিদেশে বেড়াইতে যাওয়া নিয়া আমার কোন আপত্তি নাই। কিন্তু একবারে তল্পি তল্পা লয়া ছেটেল হউনের লাইগা যাওউন টা কেমন জানি লাগে। আরেকটা দেশ রে নিজের দেশ কেমনে মনে করুম। জীবনেও পারুম না। বেড়াইতে যাওয়ার ইচ্ছা আসে অনেক জায়গায়। যেমুন ওয়াশিংটন ডিসি যাইতাম চাই। স্মিথসোনিয়ান এয়ার এন্ড স্পেস মিউজিয়াম। আহা। তারপর মোহাবি ডেজারট এর প্লেন এর গ্রেভিয়ারড টা। উহ। সেইন্ট মারটিন বিমান বন্দর তো দি হেভেন ফর প্লেন স্পটার, ওই খানেও যাইতে ইচ্ছা করে। আরও কই কই জানি যাওয়ার কথা ভাবি। কিন্তু ওই পর্যন্তই।

আমি জীবনে বিদেশ গেসি মাত্র দুইবার। একবার গেসি সিঙ্গাপুর আর আরেকবার কলকাতা। এই শেষ। সিংগাপুর দেখনের অভিজ্ঞতা ছিল অদ্ভুত। যার সাথে গেসি উনি একজন মুরব্বি স্থানীয় মানুষ। উনার উপরে কথা বলার সাহস ছিল না আমার। ভোরবেলা গিয়া নামসি, হোটেলে ব্যাগ রাইখা হাসপাতালে গেসি। সন্ধ্যা বেলা হাসপাতাল থেইকা হোটেল এ ফিরার পর উনারে বলসি, আপনি থাকেন আমি একটু আশ পাশ টা দেইখা আসি। উনি বলসে বাইরে গিয়া কি করবা , অচেনা জায়গা, ঘুমায় থাকো। আমি জি আচ্ছা বইলা ঘুমায় গেসি। পরের দিন আবার ভোর থেইকা সন্ধ্যা পর্যন্ত হাসপাতালে। সন্ধ্যা বেলায় হোটেল এ ফিরা ভাবসি, যাক আজকে তো দেখতে পারুম, সিংগাপুর। উনি বলসেন, আর থাইকা কি হবে, কাজ তো শেষ, চল দেশে জাইগা। আমি জি আচ্ছা বইলা উনার পিছে পিছে এয়ারপোর্ট এ আইসা প্লেনে এ উইঠা দেশে আইসা পরসি। খুব বেড়ানি হইসে।

দ্বিতীয় বার বিদেশ গেসি অফিসের পয়সায়। কলকাতা। যাওয়ার আগে ভাবসি, আহা কলকাতার অলিতে গলিতে ঘুইরা বেড়াবো। কিন্তু অফিসের যেই কাজ লয়া গেসি ওই কাজ শুরু হইত সকালে আর শেষ হইত সন্ধ্যায়। তখন ফিরা আইসা বাইর হইলে দেখতাম সব বন্ধ হয়া যাইতাসে একটা একটা কইরা। ধুরও ছাতা বলা ছাড়া আর কিছু করার ছিল না। এক সপ্তাহ পর এমনেই গেল আর কিছু তো ভাল্লাগে না। খাওয়া অসহ্য লাগে, রাস্তা অসহ্য লাগে। এক বেটির ফটো তুলতে গেসি একদিন, বেডি কয়, নো ফটো , নো ফটো। ওই বেডিরেও অসহ্য লাগসে এর পর থিকা। দেশ থেইকা অফিসের এক বস ফোন দিসে, কি ফয়সাল, কাজ হইতাসে, আরো এক সপ্তাহ এক্সটেন্ড কইরা দেই তোমাদের থাকা? আমি পারলে কাইন্দা দেই ফোন এর মধ্যে। কুন দরকার নাই এক্সটেনশন এর। সকালে উইঠা আয়া পরসি দেশে।

আমি খেয়াল করসি লোকজন কোনমতে একবার বিদেশ গেলে সারাজীবন ধইরা ওই যাওনের রেফারেন্স টানে। ইফতারি খাইতে বসলে বছরের পর বছরের একি গল্প, আমি যখন সৌদি আরব ছিলাম তখন দেখসি ব্লা ব্লা ব্লা কিংবা আরে তোমরা কি পিঁজা পিঁজা কর খালি, সেইবার যখন ইটলি গেলাম, সেইটা ছিল আসল পিজা… এরম আলাপ করতেই থাকে ক্লান্তিবিহিন। আমি চুপ চাপ শুনি। কখনো কাউরে কইনা এই আলাপ আগে আরো একশ বার শুনসি।

এই খানে কাউরে জাজ করতাসি না আমি। ভাল খারাপ ও বলতাসি না। মানুষ জন পারে। আমি পারি না। পারবো কিনা কোনদিন জানিও না। আমার বিদেশ গেলে দেশের মানুষ গুলার কথা চিন্তা কইরা হমানে কান্দা আইতে থাকে আর দেশে থাকতে বিদেশ যাওয়া মানুষ গুলার কথা চিন্তা কইরা হমানে কান্দা আইতে থাকে।

হমানে কান্দা আহন বন্ধ করা দরকার। এক টা পিচ্চি “মা আ আহ” বইলা ডাক দিলেও আমার চৌকখে পানি আহে। আই হেভ এ ওয়াটারিং পব্লেম। কি আজিব সমস্যা। এতু ইমুশুন আহে কইততে।

১২৩/৩৬৫

লেখার তারিখঃ জুন ৩০, ২০১৫ । ৯.২৫ পি.এম

এর থেকে তো সহজ ছিল ভোর দেখা। সারা রাত জেগে থেকে পরে, ভোর আসতো সব ভাল আর আলো নিয়ে। ঘুমিয়ে যাওয়ার আগে ভাবা যেত, পরাজিত হয়ে ঘুমাতে যাচ্ছি না আজ।

অথচ এখন শুধু দিন শুরু আর শেষ হয় অন্ধকারে। সারাদিন বেসরকারি বাতাসের নিচে বসে আঙ্গুল নড়ে চরে যায় কিছু অক্ষরের উপর। তাতেই বেতন হয়। তাতেই ভাত হয়। তাতেই বেনিয়া মালিক আয় করে অর্থ অনেক। আর কবির জীবনের অর্থ মুছে যায় ক্রমশ। কবি কে চেনে না তারা। দেখাইনি আমি। চেনে এক আঙ্গুল চালানো যন্ত্রমানব কে শুধু। ফরমায়েশ এর পর ফরমায়েশ আসে। আর কবির উপরে মুখোশ চাপানো যন্ত্রমানব এর গতি বেড়ে যায় আঙ্গুলের। আরো কিছু অক্ষর, আরো কিছু বাক্য আর সংখ্যা যোগ হয় বেনিয়ার ভাণ্ডারে।

অথচ এই অক্ষর বিক্রি হবার কথা ছিল না। এই চোখ আটকে থাকার কথা ছিল না এক তরিত তাড়িত দূরদর্শন এ। দূর থেকে নিকটে চলে এসেও জীবন দর্শন কে যা করে দ্যায় আর দূর।

কি হতো যদি না হতাম স্বেচ্ছা গোলাম? যন্ত্রে নয়, না হয় কলমেই লেখা হতো। হয়তো বা মাস শেষে পেন্সিলেও। তবু তো লেখা হত অমর কাব্য কোন। কাগজের পাতা থেকে উঠে এসে সেই বিনামূল্য তবু অমূল্য বাক্য বসে যেত হৃদয়ে হৃদয়ে। মানুষ ভাবত এতো আমারই বাক্য, আমারই স্লোগান। এই বার তবে মুঠো হাতে প্রতিবাদ হোক। শেষ হতে হবে শাসনের যুগ। মাথা উঁচু করে বলা হতো হয়তো, আমার মালিক তুমি না মহাজন। আমার মালিক আমি। এই দ্যাখ লিখে গেছে আমাদের কবি। তোমাদের পক্ষের কবি কই?

তাই আমাকে আমি তবু মরে যেতে দেই নি। আমার সময় কে ওরা কিনে নিলেও আমার সত্তা কে কিনতে পারে নি। এখনো দিনের শুরু তে আর শেষে আশ্রয় খুঁজে নেয়া হয় কবিতা তেই। পাবলো নেরুদা আর জীবনানন্দ মাথার কাছে বসে থাকে কখনো হাতে তুলে নেব বলে। যখন ক্ষমতার আস্ফালন দেখি, অর্থের নির্লজ্জ প্রদর্শনী দেখি, “তুমিও তো আলাদা নউ কিছু” “তুমি অত আলাদা নউ কিছু” বলে চেনা প্রতিফলনের উপহাস করা দেখি, মনে মনে এখনো মন্ত্র পড়ি ভাল থাকার,

শুধু সাগর ভাল লাগে নি বলে

তীরে ছুটে এসেছিল ঢেউ

আমি এই ভীর এর নই তো কেউ

আমি এই ভীর এর নই তো কেউ

১২২/৩৬৫

লেখার তারিখঃ জুন ২৯, ২০১৫ । ১১.১৪ পি.এম

বৌমা থেকে বৈমানিক

 

[ এই লেখা টা যখন লিখছি তখনো সাগরে নিখোঁজ পাইলট তাহমিদ কে খুঁজে পাওয়া যায় নি। আজকের মত রেস্কিউ অপারেশন শেষ, কালকে আবার খোজা হবে ]

 

আমি একটা সিরিজ লেখা শুরু করসিলাম। “উড়তে শেখা”। বাংলা ভাষায় (টু বি স্পেসিফিক আমার মত কইরা লেখা ভাষায়) এভিয়েশন এর ইতিহাস। চার পর্ব পর্যন্ত লিখসি। আরো লেখার ইচ্ছা আসে সামনে। আপাতত পড়ালেখা চলতাসে। ওই খানে ম্যারি এলিজাবেথ থিবল নামে এক জন নারীর কথা বলসিলাম। পৃথিবীর প্রথম নারী যিনি উড়েছিলেন, বেলুনের সাহায্যে।  দুই তিন দিন ধইরা মনে হইতেসিল, পৃথিবী তো অনেক বড় ডোমেইন, আচ্ছা এই দেশে কে উড়েছিল প্রথম? কিংবা আরেকটু বড় স্কেল এ যদি যাই, এই উপমহাদেশে কে উড়েছিল প্রথম?

 

সেইটা নিয়া পড়তে গিয়া যা মনি মুক্তা পাইসি, তারই একটা মনি মুক্তা বা “একজন” মুক্তা আজকের লেখার অনুপ্রেরণা।

 

আজ একটা ডানাবাদি মেয়ের গল্প বলি। তার নাম সারলা ঠাকরাল (মতি)। উনি ভারতীয় উপমহাদেশ এর প্রথম মহিলা পাইলট । তার জন্ম হয় ১৯১৪ সালে। মাত্র ১৬ বছর বয়সে বিয়ে হয় পি.ডি.শর্মা নামে একজন এর সাথে। পি.ডি.শর্মার বাবা তার বৌমা সারলা কে অন্য সবার মত দেখেন নাই। তাদের পরিবারে অলরেডি ৯ জন পাইলট ছিল। তিনি ভাবলেন, আমার বৌমা চার দেয়ালের মধ্যে বন্দি থাকবে না। আমার বৌমা হবে সুপার বৌমা। আমার বৌমা, বৈমানিক হবে। পি.ডি.শর্মার বাবা অর্থাৎ সারলার শ্বশুর সারলা কে ফ্লাইং স্কুল এ ভর্তি করে দিলেন।

 

১৯৩৬ সাল। লাহোর এয়ারপোর্ট। লাহোর ফ্লাইং ক্লাব এর একটা Gypsy Moth বিমান এর চাকা স্পর্শ করলো রানওয়ে। পাইলট লাইসেন্স পাবার সর্বশেষ ধাপ Solo Flying শেষ করে নেমে এলেন একজন বৈমানিক। চোখে মুখে তার আকাশ জয়ের আনন্দ। পরনে শাড়ি, ব্লাউজ, হাতে চুড়ি, গলায় মঙ্গলসূত্র আর মাথায় এভিয়েশন সানগ্লাস আর ক্যাপ। হাসি হাসি লজ্জা লজ্জা মুখে প্রিয় Gypsy Moth এর সামনে হেলান দিয়ে পোজ দিলেন সামনের বক্স ক্যামেরা নিয়ে দাঁড়ানো ফটোগ্রাফার এর সামনে। ইতিহাসবন্দি হল ভারতীয় উপমহাদেশ এর প্রথম মহিলা পাইলট, সারলা ঠাকরাল। তার বয়স তখন ২১ বছর বয়স আর তার ছোট্ট চার বছর বয়সের মেয়ে আছে, মাকে নিয়ে যার গর্বের শেষ ছিল না।

 

 

সারলা ঠাকরাল তারপর আরো ফ্লাইং চালিয়ে যান এবং Gypsy Moth এ ১০০০ ঘণ্টার ফ্লাইং আওয়ার সম্পন্ন করেন যে কারণে তাকে ‘গ্রুপ A’ লাইসেন্স দেয়া হয়। গ্রুপ A লাইসেন্স এখনকার দিনের প্রাইভেট পাইলট লাইসেন্স (পি পি এল) এর সমতুল্য একটি লাইসেন্স। তিনি ছিলেন প্রথম ভারতীয় যিনি এয়ার মেইল পাইলট লাইসেন্স পেয়েছিলেন এবং তিনি করাচী আর লাহোর এর মধ্যে নিয়মিত ফ্লাই করতেন।

 

১৯৩৯ সাল। সারলা ঠাকরাল চেয়েছিলেন কমার্শিয়াল পাইলট হইতে। তার জন্য তার দরকার ছিল “গ্রুপ B”  লাইসেন্স। তিনি তাই ভারতের যোধপুরে কমার্শিয়াল পাইলট ট্রেইনিং ও শুরু করেন। কিন্তু ২য় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয় বলে ইংরেজ সরকার সকল সিভিল ট্রেইনিং স্থগিত ঘোষণা করে। ফলে উনার কমার্শিয়াল পাইলট হওয়ার স্বপ্ন ও আপাতত স্থগিত হয়া যায়।

 

ভাগ্য এমনি খারাপ, এই বছরই সারলা ঠাকরাল এর স্বামী পি.ডি.শর্মা এক দুর্ঘটনায় মারা যান। শোকাহত সারলা তার কমার্শিয়াল পাইলট হবার স্বপ্ন পরিত্যাগ করেন আর যোধপুর থেকে ফিরে যান লাহোরে। সেখানে তিনি Mayo School of Art এ জয়েন করেন, আর বাঙ্গালি চিত্রকলায় প্রশিক্ষণ নেয়া শুরু করেন। এই স্কুল থেকে তিনি ডিপ্লোমা ইন ফাইন আর্টস নিয়ে বের হন।

 

দেশ ভাগ এর পর সারলা ঠাকরাল দিল্লী তে চলে আসেন তার দুই কন্যা সহ। তিনি ছিলেন “আরয সমাজ” Arya Samaj নামে একটি হিন্দু রিফরম মুভমেন্ট এর অনুসারী। এই সমাজ বলে, হিন্দু মেয়েদের ২য় বিয়ে সম্ভব। সারলা ঠাকরাল ১৯৪৮ সালে পি পি ঠাকরাল কে বিয়ে করেন। আঁকা আঁকির পাশাপাশি তিনি পোশাক এবং কস্টিউম জুয়েলারি ডিজাইনিং শুরু করেন। টানা ২০ বছর তার ডিজাইন করা শাড়ি, ড্রেস এবং গহনা ভারতের বাজারে বিস্তার করে ছিল।

 

২০০৯ সালের ১৫ই  মার্চ সারলা ঠাকরাল মারা যান।

 

বাংলাদেশ থেকেও এরকম আরো অনেক ডানাবাদি মেয়ে উঠে আসুক। পুরন হোক তাদের আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন ।  ( সাথে আমারে এট্টু পেলেন এর পিছনে উঠায়েন আরকি :p )

১২১/৩৬৫

লেখার তারিখঃ জুন ২৮, ২০১৫ । ১০.৪২ পি.এম

ইফতারির পর চোখ মুখ ঠেইল্লা যেই ঝিমানিটা আশে তার সাথে একমাত্র প্রেম এ পরার ই তুলনা করা যাইতে পারে। আমি ঝিমাইতে চাইনা তবু ঝিমাইতে হয়। তখন সিনেমা খাওয়া দাওয়া জরুরি কাজ কিছুই ঝিমানি থেইকা আটকাইতে পারে না। মনে হয় খালি ঝিমাই আর ঝিমাই।

ভাললাগা থেকে ভালবাসার মত ঝিমানি থেকে ঘুমানি যে কখন আইসা পরে বলতেই পারি না। জানতে পারি সকল সর্বনাশ ঘইটা যাওয়ার পর। আই মিন ঘুম ভাঙ্গার পর আরকি।

এরুকুম ই এক ঘুমের মধ্যে পরসি। ঘুম এর মধ্যে মনে হইতাসিল আহা নোট তো লেখা শেষ, ঘুমাই ঘুমাই। তারপর আতকা মনে হইল, ওহ না, এত ছোট বেলায় ঘুমের মধ্যে হিসু পাইলে কল্পনায় বাথরুমে যাওয়ার মত অবস্থা হইসে। নোট তো আসলে লিখি নাই। তাই এক চোখ রে ঘুম এ আরেক চোখ রে জাগ্না অবস্থায় রাইখা এই নোট লিখিতে বসিয়াছি। খুব গুরুত্বপূর্ণ নোট। দেশ ও জাতিকে উদ্ধার কইরা ছাড়বেই এমন শপথ করসে টাইপ নোট। এই নোট এতই গভীর যে আমি যে কি লিখতাসি আন্দা গুন্দা, তা একমাত্র আমার আঙ্গুল ই জানে। আঙ্গুল যা লিখতাসে আর চোখ যা পরতাসে সেই সব সিগন্যাল মস্তিষ্ক পর্যন্ত পৌঁছানোর আগেই বাষ্প হয়া যাইতাসে।

আমি ঘুমাইয়াই থাকতাম যদি না আমার বাড়িওয়ালার কেয়ার টেকার মিস্টার ইলিয়াছ আমারে ১৯ বার কল না দিত। এই লোক এর স্বভাব হইল এই লোক মাস এর শেষ হইলেই আমারে ফোন দিবে আর স্লামালিকুম স্যার বইলা চুপ কইরা থাকবে। আর কুন কথা না। কেমন আসেন, ভাড়া ডা কি আজকে দিবেন, এগুলা কিচ্ছু না। খালি এক মহান স্লামালিকুম স্যার এর মধ্যে নিহিত থাকে জগতের সকল রহস্য। আর আমারে সেই কিশোরীর অব্যাক্ত প্রেম নিবেদন এর মত স্লামালিকুম স্যার থেইকা বুইঝা নিতে হয় যে ভাড়া দেওনের টাইম হইসে। প্রত্যেক বার একি রুটিন। প্রথমে ফোন , তারপর স্লাআআ মালিকুম স্যার। তার পর চুপ চাপ। তারপর আজকে আসবেন ভাড়া নিতে? তারপর ফোস ফোস শাস এর আওয়াজ। তারপর আচ্ছা ঠিকাসে আইসেন রাত্রে বেলা। তারপর আবার স্লাআআমালিকুম স্যার বইলা রাইখা দেওয়া। ব্যাপারটা এত ক্রিপি। ভাবতেও গিভস মি চিলস।

যাই হোক, আজকের দিন টা একটা স্যাড স্যাড দিন তাই যতটা পারি ঘুমাইয়া কাটাইতে ট্রাই করতাসি। সকাল বেলা অফিসে যাওয়ার সময় রিকশা পাইতে খুব অসুবিধা হইসে। কেউ যাইতে রাজি হইতাসিল না। শেষ মেষ বলা শুরু করসি, মামা যাবেন? কক্সবাজার ? চলেন না মামা। ভাড়া বারায় দিব। চলেন না? খুব মজা হবে। চলেন চলেন।

১২০/৩৬৫

লেখার তারিখঃ জুন ২৭, ২০১৫ । ১১.৫২ পি.এম

আজকে সারাদিন এ ফেসবুক এ ইস্যু ছিল দুইটা। এক , আমেরিকার সব গুলা স্টেট এ এল,জি,বি,টি কমিউনিটির মধ্যে বিবাহ বৈধ ঘোষণা কইরা আইন আর দুই, নাসের এর বোনের সাথে ছবি তে মানুষ জন এর উলটা পালটা কমেন্ট আর শেষ মেষ নাসের এর সেই ছবি রিমুভ করা এবং বলা যে ডোন্ট ফলো মি।

আমি চেষ্টা করি সব ধরনের ইস্যু কে এরায়া যাইতে। যদিও সব সময় সম্ভব হয় না। আমিও মানুষ, আমিও ক্যারিড এওয়ে হই। এর কারন আমার মনে হয় ইস্যু গভীরতা বোঝার জ্ঞ্যান আমার নাই। অথবা আমার মন্তব্য বুঝনের গভীরতা ইস্যু তৈরি কারির নাই। তাই চুপ থাকি। ইস্যুর দিকে পিঠ দিয়া ঘুমায় যাই।

আজকের গুলাও এরায়াই যাইতাম। কিন্তু দুই দিন এর চিটাগাং সফর এর পর হঠাত ফ্রি হয়া গিয়া আমি সুপার বোরড। তার উপর সব শনিবার রাতে “কালকে অফিস” ভাইবা যেই ডিপ্রেশন টা কাজ করে তার একটা এফেক্ট তো পরেই। আমার মনে হয়, নাহ আমারো কিছু বলার আছে, মূল্যবান মতামত আছে।

এই দুইটা ইস্যুতে আমার চিন্তা ভাবনা অশিক্ষিত সমাজ বিজ্ঞানী টাইপ এর । আমেরিকায় কি লিগাল হইল না হইল তা নিয়া আমি শুইনা আমোদিত হইতে পারি। খবর টা শেয়ার পর্যন্ত দেওয়াটাই আমাদের ফেসবুকিও অভ্যাস ছিল। কালকে অন্য ইস্যু আসলে এইটা মানুষ ভুইলাও যাইত। কিন্তু এই খান থেইকাও যে বিজনেস করা সম্ভব তা কি পুঁজিবাদী ব্রেইন ছাইরা দিবে? সবাই দেখলো এইখানে একটা পজিটিভ মার্কেটিং এর চান্স আসে। 9Gag তার লোগো পালটায় রঙ ধনু দিল, Facebook তার ইউজার দের ছবির উপর একটা রংধনু লেয়ার বসানোর ফিলটার টুল ছারলো।

এর পর ব্যাপার টা ব্রাজিল আর্জেন্টিনার খেলার মত হয়া গেল। যে যেইটা সাপোর্ট করে বা কোন টাই সাপোর্ট করে না তাদের সন্দেহ হইল, অন্যরা কি তার মত বুঝদার? এক টা পপুলার স্ট্যাটাস এর টাইপ দাঁড়ায় গেল এইরকম যে “তোমরা যারা রংধনু মার্কা ছবি দিচ্ছ, তারা কি বুইঝা দিচ্ছ?”

এই খানে স্ট্যাটাস দাতা দুইটা জিনিশ বুঝান। এক, তিনি ব্যাপারটা জানেন এবং তার কাছে ব্যাপার টা কি জিজ্ঞেস করলে তার কাছে লিঙ্ক রেডি আছে তিনি সাথে সাথেই দিয়া দিবেন। আর দুই, তিনি রঙধনু মার্কা ছবি দেন নাই এবং কেউ যাতে তারে না ভাবে যে তিনি যুগ এর সাথে তাল মিলায় চলতাসেন না তাই তিনি জানাইলেন যে তিনিও সামথিং এমাঙ দা নাথিংস।

আম্রিকায় এল,জি,বি,টি রা বিয়া কইরা সুখে শান্তি তে বসবাস করলেও আমাদের কিছু না, অরা রাইতে উইঠা ঝগড়া করলেও আমাদের কিছু না। আমরা শুধু সাপোর্ট জানাইতে পারি বা না জানাইতে পারি। কিন্তু নিজের মত এর ভিন্ন মত প্রকাশকারি রে দ্বীন এর রাস্তায় আনা আমার পবিত্র দায়িত্ব মনে কইরা ফতোয়াবাজি করতে পারি না। সেইটা আরেক জন এর স্বাধীনতার বরখেলাপ হয়।

২য় ইস্যু ছিল নাসের এর সাথে উনার বোন এর ছবি তে লোকজন এর কমেন্ট। এই টা আমার মনে হয় যত দিন যাবে, মোবাইল কোম্পানি গুলা যত বেশি ইন্টারনেট এর বাইরে থাকা লোক গুলা কে আইনা ইন্টারনেট এ ছাইরা দিয়া বলবে দ্যাখ কত মজা, তত দিন এইটা বাড়তেই থাকবে।

কই আমি বা আপনে তো এগুলা করি না গিয়া অন্যের ছবির নিচে। তাইলে ওরা ক্যান করে? কারন ওরা মনে করে ইটস ওকে টু ডু দিস স্টাফ। ওদের কমেন্ট করার সাথে সাথে কেউ ডিলেট কইরা দ্যায় নাই। যে ৪ নাম্বার কমেন্ট টা করসে সে দেখসে যে ১,২,৩ নাম্বার এর অরা তার চেয়েও খারাপ কথা বইলা গেসে, অগুলা জলজল করতাসে , মুছা হয় নাই। আর তার ফ্রেন্ড লিস্টে ফ্রেন্ড ই আসে হয়তো ৪ জন। যারা ঠিক মত নিজের নাম ই লিখতে পারে না। সে যদি এখন অশ্লীল কিছু বলেও তার তো সামাজিক কোন বাধা নাই। দিল কইরা। তারপর ৫ নাম্বার জন আইসা দেখল, বাহ, এইখানে তো ভালাই চলতাসে। দেই একটা কমেন্ট ছুঁইরা।

সেম জিনিষ টা ইভ টিজিং এর ক্ষেত্রেও হয়। প্রথম একজন শুরু করে, দ্যাখে যে কেউ বাধা দিতাসে না, তখনা আরো করে, সাথের লোকজন ও সেইটা দেইখা শুরু হয়া যায়। ক্রিয়েট হয় মব এর।

এই গুলা কে প্রথমেই থামায় দিতে হবে। কমেন্ট চোখে পরা মাত্রই দরকার হইলে স্ক্রিনশট রাইখা মুইছা দিতে হবে। তারপর তারে পাঠাইয়া বলতে হবে, এই বার করসস ছাইরা দিলাম, এর পরের বার পাবলিক লি দেখানো হবে। একজন সেলিব্রেটির পক্ষে এইটা করা টা কঠিন, তার এত এত টাইম নাই। কিন্তু তার সব ফ্যান তো খারাপ না। তাদের যদি দায়িত্ব দেয়া হয় জিনিষটা দেখভাল করার তাইলে এই সব কমেন্ট করা লোকজন পালায়া কুল পাবে?

আমাদের অনেক লোক কম্পিটার ব্যাবহার এর আগেই মোবাইলে ফেসবুক ব্যাবহার এর সুযোগ পাইতাসে এইটা আমাদের মাথায় রাখতে হবে। এরা আশে পাশে দেইখাই শিখবে। এরা অনেকে জানেও না যে যা করতাসে সেইটা দৃশটি কটু। এদের মুরাদ টাক্লা বইলা একটা কিউট ইমেজ দেওয়ায় যায় কিন্তু তাতে সংশোধন তো হয় না।

শিখাইতে হবে এদের। দরকার হইলে হাতে ধইরা শিখাইতে হবে। গত ফেব্রুয়ারির বই মেলায় একটা লোক তার মোবাইলে একটা স্টল এর সেলস গার্ল দের ছবি তুলতাসিল। অনেক সাহস কইরা জিনিষটার প্রতিবাদ করসিলাম। মেয়েগুলাও চিল্লা চিল্লি কইরা লোক জমায় ফেলসিল তাই সাহস পাইসিলাম, নাইলে আমার এত সাহস নাই। মাইর দিতে আসছিল পাবলিক, আমি শুধু লোকটারে শান্ত গলায় বলসি, মোবাইল টা দ্যান। তারপর তার পুরা গ্যালারি আর মেমরি কার্ড ডিলিট কইরা দিয়া আবার ফেরত দিয়া দিসি।

খালি গালা গালি কইরা দায়িত্ব শেষ করলে হবে না। যারা নাসের আর নাসের এর বোন রে উলটা পালটা বলসে তাদের নাম ধইরা খুইজা বাইর কইরা একশন নিতে হবে। সেইটা ভারচুয়াল জগত এই হোক আর বাস্তব জগতেই হোক।

১১৯/৩৬৫

লেখার তারিখঃ জুন ২৬, ২০১৫ । ১১.৩৮ পি.এম

দিন টা শেষ হওয়ার আর তিরিশ মিনিট বাকি। বেটারির চারজ বাকি ১০%। কিন্তু আমাগো চারজ এখনো অনেক বাকি তাই আমরা এখনো বাইরে।

এই নোট লিখতাসি সিডাগাং বয়া। আজকে ভোরে আসছি। আর আসার পর থিকা খালি মুজা আর মুজা। আমি আর ফেরদুস “বাতিঘর” গেসিলাম। ৫ টা বই কিন্সি। আমরা আরং এ গেসিলাম। দুই জন দুইডা পাঞ্জাবি কিঞ্চি। বাসায় আইসা ফেরদুস এর ভাগ্নি রা আমার চুল আচ্রায়া বেন্ড পরায়া দিসে। অই বেন্ড পইরা ফেরদুস আর লরার বাঘ দান পোগ্রাম এ গেসি। অই খানে অরা বাদ ইফতার আংটি বদল করসে আর আমি খায়া দুরবিক্ষ লাগায়া দিসি বাসায়। আমারে বিয়ায় দাওয়াত দিবে কিনা বিবেচনাধীন আসে এখন। বাসায় আইসা রাইত সারে দশটা বাজে আবার বাইর হইসি কারন লোরা আর তার সুন্দ্রি (আহেম) ভইনেরা বাইর হইসে ঘুত্তে। লোরার দুলাভাই এর এক্টা ছোট কফি শপ আসে সিডাং এ, নাম “হাংগার গেমস”।

অইটায় লেমোনেড, কফি আর হট চক্লেট খাইতে খাইতে আরেক দফা বাঘ দান হইসে। কারন এর আগে ফেরদুস রে আংটি পরাইসে লোরার বাপ এ। আর লোরা রে ফেরদুস এর মায়ে। তাই আমি কইসিলাম, কংগ্রেটস ফেরদুস, ইউ আর অফিসিয়ালি এংগেজড টু লোরার বাপ নাউ :p

কাইল্কা সকাল সারে সাতটায় আবার পেলেন এ উইট্টা ঢাকা শহর আয়া পরুম 😀 😀 খুশি লাগতাসে।

১১৮/৩৬৫

লেখার তারিখঃ জুন ২৫, ২০১৫ । ৮.৩৩ পি.এম

আমি আগামিকাইল সিডাং যাইতাছি। উপলক্ষ্য, আমার ভেশট ফেনড ফেরদুইচ্চা আর লোরা এর বাঘদান দি এঙ্গেজমেন। লেট মি টেল সাম্থিং এবাউট দিস টু। ফেরদুইচ্চা আর আমি গো এ লঙ ওয়ে ব্যাক।

একটা ছেলে ছিল যে আমার পাঠশালায় বেসিক থেইকা ডিপ্লোমা পর্যন্ত ক্লাস মেট আসিল আর হারাক্ষন কইত, আরে আপনে পারবেন, এত হতাশ হয়েন না… দ্যাটস ফেরদৌস। যারে দেইখা দেইখা ফটো তুলা শিখসি… দ্যাটস ফেরদৌস। একটা ছেলে ছিল যার বাসায় রাত কাটাইলে আমি অর গেঞ্জি আর হাপ্পেন পিন্দা ঘুমাইতাম আর সকাল বেলা জিনিষ গুলা এতই পছন্দ হইত যে হেডি নিজের মনে কইরা পিন্দা বাসায় আয়া পরতাম… দ্যাটস ফেরদৌস। আরেকটা ছেলে ছিল যে আমি মিরপুরের কোন ওয়েডিং কাভার করতে করতে রাইত হয়া গেলে আমারে সেন্টার এর সামনে থিকা নিতে আসতো রিকশা দিয়া… দ্যাটস ফেরদৌস। আর একটা ছেলে ছিল যার বাসায় গেলে আমারে রাইন্ধা খাওয়াইত… দ্যাটস ফেরদৌস। জীবনের একটা বিরাট ট্রাজেডি ফেস করতে আমি, আমার বাপ গেসিলাম সাথে একটা ছেলেরেই নিসিলাম আমার পাশে থাকার জন্য… দ্যাটস ফেরদৌস। ছিনতাই কারী যখন আমার ক্যামেরা সহ ব্যাগ টান দিয়া নিয়া গেল আর আমি রিকশা থেইকা পইরা হাত পাও ছিল্লা মিল্লা ফালাইলাম, একটা ছেলে মিরপুর থেইকা সুভাস্তু আইসা আমারে এপোলো হাসপাতালে নিয়া গেসিল বিকজ আই ওয়াজ টু স্কেয়ারড অফ দা রোড… দ্যাটস ফেরদৌস।

আর লোরা হইল একটা হ্যাপি ক্রেজি গার্ল নেক্সট ডোর। কত্ত খিউট, মারাত্তক ক্রিয়েটিভ, পেশায় আরকিটেকছারখার। ফেরদৌস এর “উউউ একটা ওয়ান পয়েন্ট ফোর লেন্স” বইলা দউর দেওয়া ট্রেন এর বগিটারে টান দিয়া লাইন এ আনতে পারে খালি লোরাই। লোরা একটা মানুষ না। লোরা হইল একটা ছদ্মবেশী দক্ষিনা বাতাস। লোরার আশে পাশে থাকলে আমার শান্তি লাগে।

একবার বসুন্ধরার গেট এর কাছে যেই কাচা বাজার টা আসে ওই খানে আইসা এই দুই জন আমারে ফোন দিসে, “ইথার ভাইইই, আমরা আসছি, একটু আসেন”। আমি তখন বসুন্ধরায় থাকি। আমি সরল মনে চইলা গেসি দেখা করতে। এই দুইজন এত্ত গুলা মানুষের সামনে আমারে… আমারে… আমারে… ইথার ভাআআআই বইলা দৌড় দিয়া আইসা পায়ে ধইরা সালাম করল !!!! আর বলল, আপনে না থাকলে আমাদের দেখা হইত না। তাই আমরা আপনেরে সালাম করব বইলা ঠিক করসি। কি যে অবস্থা। লুকজন তাকায় রইসে। এক বুয়া যাইতাসিল মুরগি হাতে নিয়া, উনি ভাবসে আমি কি না কি পীর কামেলদার। চান্সে উনিও কইততে আয়া সালাম করা শুরু করসে আমারে। আর বলসে “দুয়া কইরেন মামা, গরীব মানুষ”। কি যে একটা বেকায়াদা অবস্থা…

এই দুই জন চুম্মাটুশ মানুষের আগামীকাল সিডাং শহরে বাঘ দান অনুষ্ঠান হবে। দা ওয়ে আই ইম্যাজিন ইট ইজ লাইক, এরা একটা বিরাট বাঘ নিয়া একে অন্য রে দিবে । আই নেভার আন্ডারস্ট্যান্ড দা এজেন্ডা অফ এঙ্গেজমেন্ট এনিওয়ে। আমার কাছে এইডা মুনে লয়, এইডা বিয়ার লাইগা তুম্রে বুকিং দিলাম টাইপ কিছু একটা।

আমি খুবি এক্সাইটেড সিডাং যাউয়া নিয়া। উত্তেজনায় রাইতে ঘুমাইতারুম না অবস্থ্যা। যাগো বিয়া তাগো খবর নাই, পাড়াপড়শির ইনসমনিয়া অবস্থা একটা। সিডাং গেলে “বাতিঘর” দুকান টা তে যাইতে হবে। কি সুন্দর একটা বই দোকান, আহা। আর জামা কাপুর নেওন ব্যাগ গুছানি ইত্যাদির কুন ঝামেলাই নাই। খালি ব্যাগ এ কেমরাটা ভইরা যামুগা, রাইতে ফেরদুইচ্ছার লুঙ্গি পিন্দা ঘুমায় থাকুম, (অবশ্য ওকে বঞ্চিত করে নয় 😛 স্পেয়ার লুঙ্গিটা আরকি)।

আর দা জার্নি বাই পেলেন, আহা হাউ ক্যান আই নট বি এক্সাইটেড। কোন একটা জায়গায় যদি আমার যাওয়ার কথা থাকে আর ওই জায়াগায় ট্রান্সপোর্ট চুজ করার অপশন আমার হাতে থাকে আর যদি দেয়ার ইজ আ এয়ারপোর্ট… আমি অবশ্যই অবশ্যই প্লেন দিয়া যাবো। এয়ারপোর্ট এ ঢুইকা প্লেন এ উঠবো ভাবতেই আমার ডিজনিল্যান্ড এ যামু, ফুচকা খামু টাইপ ফিলিংস হইতাসে।

আমি কারিব ভাই এর সাথে আলুচনা কইরা এমনে টিকেট কাটসি যাতে যাওনের সময় এক কিসিমের পেলেন ( বাংলাদেশ বিমান Dash-8 Q400) আর আসনের সময় আরেক কিসিমের পেলেন (বাংলাদেশ বিমান Boeing 777-200) এ উঠতে পারি।

বাংলাদেশ ছাড়া আর কুন দেশে এই ৪০ মিনিট ফ্লাইং এর জন্য Boeing 777-200 এ উঠার সুযোগ পাওন যাইব না। কারিব ভাই আমারে বইলাও দিসে, কুন কুন সিট এ বসলে ভালু ভিউ পাওয়া যাবে। Dash-8 আর Boeing-772 এর সিটিং লে আউট খুইলা বইসা, প্লেন স্পটার গো ফোরাম ঘাইটা প্ল্যানিং করার টাইম টা কত এক্সাইটেড ছিল। উনি আমারে শিখাইয়াও দিসে কেমনে প্লেন স্পটার গো মতন ট্রিপ রিপোর্ট লিখতে হয়। ট্রাই করুম এক্টা সন্দর দেইখা ট্রিপ রিপোর্ট লিখনের।

এর জন্য কারিব্বাই রে উনেক উনেক থ্যাংকস। আমি অবশ্যই পেলেন থিকা বিমান এর ছাপ মারা যা যা পারি দুইটা কইরা চুরি কইরা নিয়া আসবো আপনের জন্য, তারপর আধা আধা বখরা, মু হা হা।

১১৭/৩৬৫

লেখার তারিখঃ জুন ২৪, ২০১৫ । ১০.১৯ পি.এম

একটা সময় ছিল যখন যেই ফেসবুক এ ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট দিতো, একসেপ্ট দিতাম। ঠিক আই ডি, ফেক আইডি, “কিউট শয়তান”, “এঞ্জেল সোটো পরি”, “ মন টা ভাল না” “স্ক্রু ড্রাইভার” ইত্যাদি যত রিকোয়েস্ট আসতো, সব আমার ফ্রেন্ড ছিল। কাউরে নিরাশ করতাম না।
এরম করতে করতে ফ্রেন্ড লিস্ট পাঁচ হাজার পুরা হয়া গেল। আর কাউরে একসেপ্ট করতে পারি না। তখন ফেসবুক এর উপরে অনেক মেজাজ খারাপ হইসিল, আরে আমার পাক হাগার প্রেন্দ থাকবে না পাঁচ টা ফ্রেন্ড থাকবে সেইটা ডিসাইড করার তুই ক্যা রে ফেসবুক?
তারপর হঠাত একদিন সাডেন রিয়ালাইজেশন হইল, এত্তু প্রেন্দ দিয়া আমি কি করিব? গায় মাখিয়া বসিয়া থাকিব যাতে ফরশা হই? এদের মধ্যে অর্ধেক এরও বেশি আছেন যাগো লগে জীবনে একবারও কথা হয় নাই। তাইলে এর লগে আমার কিয়ের প্রেন্দ শিপ?
কিন্তু কারে ডিলিত করুম আর কারে রাখুম? সে এক মহান চিন্তা ভাবনা। প্রথমে আমার সব আইডি ডি একটিভেট করা ফ্রেন্ড রে আনফেন করা শুরু কলাম। কিন্তু সেইটাও অনেক সময় লাগতাসিল। ফ্রেন্ড লিস্ট ধইরা ধইরা স্ক্রল কইরা যাওয়া লাগতো, কার প্রোফাইল ছবি ওই আকাশি রঙ এর বেডা ডা। নামের উপর ক্লিক কইরা বুঝতাম আসে না পলাইছে।
কিন্তু এইটাও অনেক সময় সাপেক্ষ ব্যাপার আর আমার মত আকাইম্মার কাছে সময় এর মূল্য অনেক বেশি। তাই একটা সুজা পদ্ধতি বাইর করলাম। এখন পতিদিন এই কাজ করি।
আজকে যাদের জন্মদিন তাদের লিস্ট বাইর করি । তারপর তাদের প্রোফাইল এ ঢুইকা দেখি এর লগে লাস্ট কবে কথা কইসি বা আদৌ কথা কইসি কিনা। যদি দেখি যে এর লগে আমার জীবনেও কথা হয় নাই বা লাস্ট কথা হইসে ২০১২ তে। তারপর আর কোন কথা বলার রেকর্ড নাই। তাইলে আনফ্রেন্ড।

এই ভাবে ফ্রেন্ড লিস্ট কমানো কর্মসূচির আউতায় ভালই কমতাসে ফ্রেন্ড এর সংখ্যা। আমার খালি এখন একটা কোন মতে এক্সিউজ লাগে ডিলিট করতে লিস্ট থেইকা। ডিলিট করতেও আরাম লাগে।

রেডিও মুন্না/বাশের কেল্লা/ ফেক ছবি শেয়ার এ দিসে? আনফ্রেন্ড।
হুদাই ট্যাগ মারসে ছবি তে? আনফ্রেন্ড
আমারে ওইদিন একটা পিচ্চি পোলা কইল, আপনার থেইকা আমার ফ্রেন্ড এর সংখ্যা বেশি। আনফ্রেন্ড।
ধান ক্ষেত এর চিপায় জনৈক মরদ পোলা “আমে আর আমের বন্দ” পোষ্ট দিসে? এরে লিস্ট রাইখা আমি কি সুয়াব কামাই করিব? আনফেন্ড।

দেখা যাক কদ্দিন চালাইতে পারি এইটা। দরকার নাই আমার অজানা ফ্রেন্ড এর। আমি এই ফেক সেন্স অফ পপুলারিটি চাই না।

১১৬/৩৬৫

লেখার তারিখঃ জুন ২৩, ২০১৫ । ১১.১৪ পি.এম

অইভ্যা রে নিয়া আরো কিছু কাহিনী মনে পরসে। আমি আর অভি যহন বাসাবো থেইকা কলেজে যাই তখন হে বেশ তাগরা জুয়ান ভোঁটকা আসিল। পাঠার মত শইল। হেরে আসে পাশে রাখলে বুলি টাইপ পুলাপান আমার কাছে আসনের সাহস পাইত না।

কিন্তু শইল্ডা এত্ত বড় হইলে কি হইব, হালায় আসিল একটা ভিতুর ডিম। আমাদের বাসার সামনে তখন বিরাট ঝিল। ঝিল এর এই পারে বাসাবো , ওই পারে গোরান। একবার গোরান এ কি জানি হইসে, পোলাপান পটকা ফুটাইতাসে অর সামথিং, আমি বারান্দায় গেসি দেখতে। হঠাত শুনি অভির চিৎকার, ওই ইথাইরা , কি করস তুইইই, তারাতারি ভিতরে আয়। ওই পারে গুলা গুলি হইতাসে। গুলি লাগবো গুলি।

আমি কইলাম, আব্বে তোর কি মাথা মুতা খারাপ হইসে? গুলি হইতাসে গাংগের ওই পার। আর এই পারে তুই ডরাস? দারা তামশা দেইখা লই। কিন্তু বেপারটা অইভ্যার পছন্দ হইল না। ওই পালোয়ান পাঠা বারান্দায় আইসা আমারে লিটারেলি কোলে উঠাইয়া ঘরে নিয়া ফ্লোর এর সাথে চাইপ্যাঁ ধইরা রাখলো। কারন যদি গোরান থেইকা গুলি বাইচান্স বাসাবোর বাসার পাঁচ তালায় আইসা পরে?

উপরে দিয়া খুব ভাল মানুষ দেখা গেলেও অইভ্যা আসিল বিরাট বদ এর বদ। মেয়েদের প্রতি তার লোলুপ দৃষ্টি এর কোন কমতি ছিল না। এমনকি ক্লাস এর নতুন আগত ইংরাজি শিক্ষিকা ও তার কু দৃষ্টি থেইকা রক্ষা পায় নাই।

আমি একবার আমাদের ক্লাস বাঙ্ক মাইরা অইভ্যা দের ক্লাস এ গেসি। অদের ইংলিশ এর ক্লাস নিতে একটা নতুন ম্যাডাম নাকি আসছে উনারে দেখতে। আমি যখন ভক্তি শ্রদধায় পরিপূর্ণ দৃষ্টি তে সেই গ্যাং পিপাসু থুক্কু জ্ঞান পিপাসু মহীয়সী নারি কে দেখছিলাম্, তখন বদ অইভ্যা হালায় গলার নিচে লুলদানি পইরা তার বিখ্যাত জুলু জুলু লুক দিতাসিল।

মেডাম নাম ডাকার জন্য এক খানা কলম চাইল। আর বালক দিগের মধ্যে রাগবি খেলার ন্যায় হুড়াহুড়ি পরিয়া গেল। সেই ব্যপক রয়েল রাম্বল এ কে জয়ী হইসিল আজ আর স্মরণে নাই, কিনতু তার পরে যা ঘটসিল তা এখনো মনের ডিম লাইট জালানো অন্ধকার ঘর এ মোবাইলে দেখা শিক্ষামূলক ভিডুর মত জল জল করে।

নাম ডাকা শেষ হওয়ার পর ম্যাডাম সরল মনে যার কলম তাকে ফেরত দিতে চাইল। জিগ্যেস করল, “এই কে দিয়েছিলো কলম? Whose pen is it” আর যায় কই। পরবি পর অভির সামনে। অইভ্যা হালায় ম্যাডাম এর হাত থেইকা ছো মাইরা কলম খানা কাইরা নিয়া রুম ফাটাইয়া ছিতখার করিয়া উঠিল,

“এএএএএই এই পেনটি কার? এই পেনটি কার? ম্যডাম জানতে চাইসে এই পেনটি কাআআর? হাত তুল , এই পেনটি কার হাত তুল”

রুম ভর্তি হাত তুলা দেখিয়া সেই দিন “আমরা শক্তি আমরা বদ, আমরা ছাত্র বদ” গানটাই মনে পরিয়া গিয়াছিল।