১৩০/৩৬৫

লেখার তারিখঃ জুলাই ৭, ২০১৫ । ১০.৪৫ পি.এম

 

নামাজ পড়া নিয়া ইশকুল লাইফের দুইটা ঘটনার কথা বলি। আফটার ইফতারি যেই হ্যাং হওয়া পিরিয়ড টা যায় ওই সময় ঝিমাইতে ঝিমাইতে মনে হইসে হঠাত । এখন না লিখা রাখলে ভুইলা যামু গা পরে।

মতিঝিল আইডিয়াল ইশকুলে পড়ার সময় আমাদের যোহর এর নামাজ ইশকুলে পরতে হইত। দুপুর ১ টা বাজে হইত টিফিন+নামাজ পিরিয়ড। দশ মিনিট টিফিনের জন্য আর পঞ্চাশ মিনিট নামাজের জন্য। নামাজে যাওয়া সবার জন্য বাধ্যতামূলক ছিল। এক জন অনেক কড়া স্যার ছিল যিনি কিনা রেন্ডমলি কোণ কোন দিন নামাজের সময় সব ক্লাসরুমে গিয়া গিয়া এমনকি বাত্রুমে গিয়া গিয়া চেক করত কেউ ফাকি মারার জন্য ক্লাস এ থাইকা গেসে কিনা। কাউরে পাইরে তার খবর ছিল। সারা স্কুল জানতো যে এই পোলা আজকে নামাজে যায় নাই। পিটানি তো খাইতই। রইদের মধ্যে মাঠে নীল ডাউন করায়া রাখতো। আমরা সবাই নামাজ থিকা ফিরতাম আর করুন চোখে ( তখন আসলে করুন চোখ আসিল না, হে হে ধরা খাইসে টাইপ চোখ আসিল) তাকায় থাকতাম।

আমরা তখন মাত্র ক্লাস ফোর এ উঠসি। ডে শিফট এ আইসা অনেক থতমত অবস্থা। বড় ভাই দের গরুর মত মাইর খাইতে দেইখা পুরাই আতঙ্কে থাকতাম কুন সময় না জানি মাইর খাই । এমন এক টাইম এ একদিন নামাজ এ গেসি। আমাদের মধ্যে একজন যায় নাই। কপাল এমন ই ওই দিন ই ওই স্যার সার্চ করতে আইসে রুম। ও ভয়ে বেঞ্চ এর নিচে মাথা দিয়া লুকাইসিল। কিন্তু মোটূর পাসা যে বাইর হয়া রইসে পুরাটাই ওই টা খেয়াল করে নাই। স্যার আইসা ওরে প্যান্ট ধইরা টাইন্যা বাইর করসে।

বেচারা ভয়ে আধমরা। স্যার ওর অবস্থা দেইখা মারে নাই। কিছুখন ধমক ধামক দিসে তারপর ওরে হেদায়েত করা শুরু করসে। নামাজের ফজিলত, নামাজ না পরার শাস্তি ইত্যাদি নিয়া এক ঘণ্টা ধইরা বিশাল লেকচার। তারপর শেষ মেশ বলসে ঠিকাসে তাইলে কালকে থেইকা ইনশাল্লাহ তুই সময় মত নামাজে যাবি। মোটু এতক্ষণ ভয়ে সিটকায় আসিল। যখন বুঝসে স্যার এর যাওয়ার টাইম হইসে, আস্তে কইরা মিন মিন কইরা বলসে, “কিন্তু স্যার…… আমি তো হিন্দু” ।

২য় ঘটনা হইসে নামাজ থেইকা ফেরার সময় একদিন। যোহর এর চার রাকাত ফরয নামাজের পর দুই রাকাত সুন্নত নামাজ থাকে। আর এই সুন্নত নামাজ থেইকাই পোলাপান এর মধ্যে প্রতিযোগিতা শুরু হইত কে কত তারাতারি নামাজ শেষ কইরা দৌড় দিয়া ক্লাস এ আস্তে পারবে। ততক্ষণে স্যার রাও একটু রিলেক্সড হইত যে নামাজ তো শেষ ই, আর কি? কিন্তু আমাদের তো তখন সব কিছু তেই দৌড় দেওয়ার অভ্যাস। ওই দুই রাকাত নামাজ শেষ হইতে দেরি হইলে মসজিদের গেট এ বিশাল কিউ এর পিছে দাঁড়াইতে হবে। তাই যত তারাতারি নামাজ শেষ কইরা দৌর দেওয়া যায় তত বেশি আগে আগে ক্লাস এ পৌঁছানর সম্ভাবিলিটি বারে আরকি। নট দ্যাট আমরা ক্লাস কে খুব ভালবাসতাম। ইট ওয়াজ অল এবাউট আমার পাশের পোলা জাতে আমার আগে না যাইতে পারে। তাই দৌর দৌড়।

ক্লাস নাইন এ পড়ার সময় আমাদের ক্লাস এর একটা পোলা ছিল যে অলওয়েজ ফাস্ট হইত। ক্লাস এর ফারস্ট না। নামাজ থিকা দৌড় দিয়া ক্লাস এ আসনের বেলায় ফার্স্ট। মনে রাখতে হবে যে আমাগো সময় ক্লাস নাইন এর পোলাপাইন এখন কার ক্লাস নাইন এর পোলাপান এর মত অলরেডি লাভ, সেক্স নিয়া অভিজ্ঞতা সম্পন্ন পোলাপান ছিল না। আমরা লেম ছিলাম আর ঐটাই আমাদের ওয়ে অফ হেভিং ফান ছিল।

যাই হোক ওই পোলার নামাজ পরা ছিল একটা দেখার মত জিনিষ।মনে হইত কেউ একজন ফাস্ট ফরোয়ার্ড বাটন টিপ দিয়া দিসে। ঠুস ঠাস ঠুস আর নামাজ শেষ । এরপর দৌড় দিয়া ক্লাস এ। আমার একদিন খুব ইচ্ছা হইল, আমার ব্যাপারটা কি জানতেই হইব। ওরে গিয়া কইলাম, দোস্ত, তুই এত তারাতারি নামাজ পরস কেমনে? রহস্যটা কি?

দোস্ত আমারে হাসি মুখে কইল, বীজ গণিত পরছত? আমি কইলাম পরছিত। দোস্ত জিগাইল, ধরি x, y, z এগুলা পরছত? আমি পুরাই লস্ট। জিগাইতে আইলাম নামাজ এর কথা। হে দেখি অঙ্ক শিখায়। মুখে কইলাম, হ পরছিত। ক্যারে?

দোস্ত কইল, হুন, আমি নামাজে দাঁড়াইয়া কই x y. তারপর রুকু সিজদা শেষ কইরা আবার উইঠা কই x, z. তারপর রুকু সিজদা দিয়া বইসা কই A B C. তারপর সালাম ফিরাইয়া দৌর দেই। তারপর ক্লাস এ আয়া কই, হে আল্লাহ, x মানে সুরা ফাতিহা, y মানে কুল হু আল্লাহ। A মানে আত্তা হিয়াতু, C মানে দুয়া মাসুরা। তুমি তো সব বুঝই আল্লাহ। এইটাও একটু বুইঝাঁ নিও।

আল্লাহ মাফ করুক। ওই দোস্ত এর লগে এখন আর যুগাযুগ নাই। হে এহনো এমনে নামাজ পরে কিনা কে জানে।

১২৯/৩৬৫

লেখার তারিখঃ জুলাই ৬, ২০১৫ । ১১.০৬ পি.এম

 

রমজান মাসের কেলেন্ডার এ দশ দিন দশ দিন কইরা ভাগ করা থাকে দেখসি। রহমতের দশ দিন, নাজাত এর দশ দিন এমন। কিন্তু যেই টা উল্লেখ থাকে না সেইটা হইল পনেরো রোজার পর শুরু হয় তারাহুরার ১৫ দিন।

এই সময় সবার হঠাত মনে হয় কাম সারসে রুজা তো শেষ হয়া যাইতাসে, কিছু তো খাইলাম ই না ঠিক মত। শুরু হয় ইফতার এর দাওয়াত পাওয়ার হিড়িক। ইফতার এ কাভার করতে না পারলে সেহরি দিয়া ব্যাকআপ দেওয়া। আজকে অমুক গ্রুপ এর দাওয়াত তো কালকে অমুক এর বাসায় দাওয়াত। আমার যেমন এই পুরা সপ্তাডা যাইবো দাওয়াত এ আর দাওয়াত এ। আমার দাওয়াত পাইলে ভাল্লাগে। যে কোন ব্যাচেলর এর ই ভালাল্গে। এক বেলা খাওয়ার চিন্তা দূর হয়। ইয়েই।

আবার এই সময় আইসা সবার মনে হইসে, আর তো বেশি দিন নাই, ঈদ আয়া পরসে। কিছুই তো কিনলাম না এখনো। আয় হায়। পেনিক , পেনিক। টু দা শপিং সেন্টারস, রবিন। সবাই মিলা দৌড়াইতে থাকা মার্কেট গুলার দিকে। ফলাফল শহর জুইরা তীব্র যানজট। এই অবস্থা ঈদ পর্যন্ত থাকবে। লেট এভ্রিওয়ান নো যে আমাদের আজকে থেইকা সব জাইয়গায় পৌছাইতে দেরি হবে। ফিরা আস্তেও দেরি হবে। চুরি ছিনতাই বাড়বে। সি এন জি রিকশা ওয়ালারা অবিশ্বাস্য ভাড়া চাবে। তবু আমরা হাসি মুখে অপেখখা করব ঈদ মুবারক এর।

ঈদ আসলে ভাবব ও আচ্ছা, আজকে ঈদ? এখন কি করুম? নাচুম? আমার মনে হয়, রমযান আর ঈদ রে আমরা একটা ওভার রেটেড জিনিষ বানায় ফেলসি। ঈদ মানে খুশি, ঈদ মানে আনন্দ এই বেপারটা কেমন একটা এক্সট্রা প্রেশার ক্রিয়েট করে মন এর উপর। ঈদ মানে সারাদিন ঘুম, ঈদ মানে বিরক্তিকর ব্যাপার, ঈদ মানে সবার উপর হুদাই একটা খরচের প্রেশার এই ধরনের গান টান বাজারে আসা দরকার।

নিজেরে একটা গ্রাম্পি ওল্ড ম্যান মনে হইতাসে। ঈদ আর রামাদান এর স্পিরিট টা ঠিক নিতে পারতাসি না ভিতরে।

আমি রেডিসন থিকা বাসায় ফিরা ঘুমায় গেসিলাম। একটু আগে উঠসি। আবার ঘুমায় যাবো। মাঝখানের এই থমকে থাকা সময় টায় কি নিয়া নোট লিখবো এইটা নিয়া প্যানিক করতাসিলাম। তারপর নিজেরে বুঝাইসি দ্যাখ ইথার, ইটস নট এ শো ইউ আর ডুইং হেয়ার। ইটস লাইক একটা কলম আর একটা কাগজ নিয়া বইসা থাকা। কাগজে একটা কবিতাও লেখা হইতে পারে, কাগজে কলম দিয়া ঘসা ঘসি কইরা কলম এর নিব চালু করার মত দাগাদাগি ও হইতে পারে ।

১২৮/৩৬৫

লেখার তারিখঃ জুলাই ৫, ২০১৫ । ১০.৫১ পি.এম

 

পাঠশালায় পড়ার সময় ডকুমেন্টরি ফটোগ্রাফি ক্লাস এ আমাকে সুমন ভাই একটা এসাইন্মেন্ট দিসিলেন। বিষয় “কনজিউমারিজম”। এই বিষয়ে একটা লেখা জমা দিতে হবে যে কনজিউমারিজম বলতে আমি কি বুঝি আর বারো টা ছবির একটা ফটো এসে জমা দিতে হবে যা দেইখা বুঝা যাবে ও আচ্ছা আচ্ছা বুঝতে পারসি ফটোগ্রাফার কি বুঝসে কনজিউমারিজম নিয়া।

আমি জীবনে ওই প্রথম বার Consumerism শব্দটা শুনি। কি আজিব শব্দ রে বাবা । মনে হয় ঢং কইরা কাস্টমার রে কনজিউমার কইতাসে আর লগে একটা ইজম লাগায় দিসে বেপারটা রে আরো কডিন বানানির লাইগা। ক্যান এইডারে নাম কনজিউমারিজম? ক্যান কাস্টমারিজম না? ব্যাপার টা আসলে কি? এইডা তো আগে বুঝতে হইব। নাইলে লিখুম কি। আর ভিজুয়াল চিন্তা করুম কি। আর ছবি তুলুম কি।

টেনশন এ আমার যা হয়, আমি ডিপ্রেসড হয়া গেলাম। ফেরদৌস অনেক বুঝায় সুঝায় লাইন এ রাখলো। অন্য সবার থেইকা আমার পাঠশালার লাইফ টা একটু আলাদা ছিল। সবাই রাতের বেলা চিন্তা করত, দিনের বেলা ছবি তুলত। আমি ৫টা পর্যন্ত অফিস কইরা পাঠশালায় দৌড়াইতাম সপ্তাহে ৩ দিন। রাত ১০ টা পর্যন্ত ক্লাস কইরা আবার ফেরত আইতাম বাসাবো নাইলে বসুন্ধরা। বাকি ৩ দিন অফিসের পর ছবি তুলতে বাইর হইতাম সন্ধ্যা বেলা। একটা Canon 450D ক্যামেরা আর একটা 18-55 লেন্স। তাও আবার 18 mm এ টেপ মাইরা আটকানো। কারন এসাইন্মেন্ট এর নিয়ম ছিল সব ছবি একটা ফোকাল লেংথ এ তুলতে হবে। আমি 18 mm বাইছা নিসিলাম। ISO 800 এর বেশি তূলা মানে সুইসাইড করা। তাই হাত অনেক স্টেবল কইরা তুলতে হইত ফটো। আল্লাহর রহমতে অই প্র্যাকটিস টার কারণে এখন আমার হাত 1/10 পর্যন্ত স্টেবল থাকে। অবশ্য আরো কিছু টেকনিক আছে হাত স্টেবল করার। কিন্তু সেইটা অন্য ডিসকাশন। কনজিউমারিজম এ ফেরত আসি।

এসাইন্মেন্ট এর ডিপ্রেশন কাটাইতে রিসার্চ এর কোন বিকল্প নাই। তাই কনজিউমারিজম নিয়া রিসার্চ শুরু করলাম। পড়তে পড়তে মাথা মুথা গিট্টু লাইগা গেল। এই একটা কনসেপ্ট এর যে কত রকম এর সংজ্ঞা আছে। থ্যাঙ্ক গড যে সুমন ভাই এসাইন্মেন্ট দিসিল যে কনজিউমারিজম বলতে আমি কি বুঝি? নট ডেফিনেশন কি বলে।

কনজিউমারিজম বলতে আমি যেইটা বুঝসি সেইটা হইল মানুষের চাহিদা কে পুঁজি কইরা মানুষের অজান্তেই মানুষ কে উচ্চ মাত্রায় ভোগ এর দিকে নিয়া যাওয়ার নাম কনজিউমারিজম। এইখানে মানুষ মনে করে তার জীবন যাত্রার উন্নতির জন্য তার এইটা লাগবেই। যেমন কনজিউমারিজম আমাদের শিখায় খালি দুধ খাইলে হইব না, দুধ এর শক্তি বাড়াইতে হরলিক্স খাইতে হইব (যদিও আমার মনে হইসে, গরুরে হরলিক্স খাওয়ায় দিলেই তো হয়)। তারপর আবার এল সি ডি টিভি ই যেখানে আমরা ঠিক মত ভোগ কইরা শেষ করতে পারি নাই সেখানে এল ই ডি , থ্রিডি, ইন্টারনেট ওয়ালা টিভি আইসা পরসে। দ্যাটস কনজিউমারিজম। কনজিউমারিজম এ জীবন ধারণের জন্য অত্যাবশ্যক না এরকম অনেক জিনিষ আমাদের মাথায় এমন ভাবে ঢুকায় দেওয়া হয় যে আমাদের মনে হয় এইটা ছাড়া আমরা এতদিন কেমনে থাকসি?

কনজিউমারিজম এর শুরু টা হইসিল আসলে অন্য রকম ভাবে। পুঁজিবাদ বা ক্যাপিটালিজম এর মুল কথা হইল, যেমনেই হউক, লাভ করতে হইব আর বেশি কইরা করতে হইব। এই লাভ বারানির জন্য যা যা করন দরকার সব করতে হইব। সাবান দিয়াই আমাদের চলতাসিল, হঠাত আইলও হালাল সাবান আর মার্কেট এ তোলপাড় পইড়া গেল। কালা হউনের আফসুস এর পুঁজি কইরা আমাদের দেখানো হইল কিরিম মাইখা লুকজন ফরসা হয়া যাইতাসে, বডি স্প্রে মাইখা মাইয়া পটাইয়া লাইতাসে, এই ডিটারজেন্ট মাইখা কাপড় ধুইলে ডাস্টবিন এ থাকলেও শইল্লে গন্ধ হয় না ইত্যাদি ইত্যাদি।

পুঁজিবাদী সমাজ দেখলো তার যদি কনজিউমার রে দেখায় তারা কনজিউমার এর খুব কেয়ার করে, তাগো চিন্তায় ওগো রাইতে ঘুম ই হয়না, তাইলে কনজিউমার রা তাদের আরো বেশি ট্রাস্ট করবে। আর ওয়ান্স ইউ উইন দা ট্রাস্ট, অদের যা ইচ্ছা গিলানো যায়। তাই এই সব কোম্পানির প্রত্যক্ষ মদদে শুরু হইল কনজিউমারিজম মুভমেন্ট। ভোঁটকা অধিকার থুক্কু ভোক্তা অধিকার, আই এস ও স্ট্যান্ডার্ড এ প্রস্তুতক্রত মালালাল, ডেন্টাল এসোসিয়েশন দারা স্বীকৃত এই সব ভককর চককর। কনজিউমার রা ভাবল উই আর ইন সেফ হ্যান্ড আর তাদের কনজামশন এর পরিমাণ বারলো আর কনজিউমারিজম এর সংজ্ঞাই পালটাইয়া হয়া গেল the selfish and frivolous collecting of products [সংজ্ঞার সূত্রঃ https://en.wikipedia.org/wiki/Consumerism]

১২৭/৩৬৫

লেখার তারিখঃ জুলাই ৪, ২০১৫ । ১১.৫৫ পি.এম

 

আমার একটা বড় নোট লেখার কথা ছিল। কিন্তু গত দুই ঘন্টা ধইরা আমাদের কারেন্ট নাই আর কখন আসবে তাও জানিনা। তাই মোবাইলেই নোট লেখা শুরু করসি।

আজকে আমরা একটা কাজ করসি। আজকে আমরা ভইন দা পেইন কেংগারু খামারি মইম্যা রে ঈদ পাঠাইসি পেকেট কইরা। আম্মা কয়দিন ধইরা ভাগ্নি গুলার জন্য মেচিং মেচিং জামা কিন্সে, দুলাভাই এর জন্য পাঞ্জাবি কিন্সে, মইম্যার জন্য পাপুশ, প্লাস্টিকের বাটিবুটি, টেবিল ক্লথ, পরদার কাপর কিন্সে। এইসব হাবি জাবি নিয়া আমরা গুলশান গেসিলাম ডি এইচ এল এর অফিসে। আমার কাসে ডি এইচ এল এর অপিশ ভাল্লাগসে। ইয়াব্বড় একটা ছবি আসে, পেলেন অলা। কত গুলা বোয়িং সেভেন ফাইভ সেভেন দাড়ায়া আসে।

মজা হইসে আম্রা ডি এইচ এল অফিসে গেসি সপরিবারে। আমি, বাবা,আম্মা আর বড়মামা। দুই সি এন জি ভরতি কইরা গেসি। বাড়ির মেয়ের দেশের বাইরে প্রথম ঈদ। আর তার জন্য পাঠানো হইতাসে ঈদ এর জামা। এইটা তো এক্টা উৎসব এর ব্যাপার। ডি এইচ এল এর লোক্টা হেভি মজা পাইসে এরম দলবল নিয়া গেসি দেইখা। আর যেখানে আমার আম্মা আছে সেইখানে ফ্রেন্ডশীপ আছে।

আমার আম্মা যেইখানেই যায় ফ্রেন্ড বানায় ফালায়। এই যে বাসাবো থেইকা সি এন জি দিয়া গুলশান ১ অফিস গেলাম, ওই অফিস টা বন্ধ থাকায় আবার গুলশান ২ অফিস গেলাম, তারপর টেক্সি দিয়া বাসাবো আইসা পড়লাম, এইটুক এর মধ্যে উনি সি এন জি অলা, ডি এইচ এল এর দুই অফিসের সিকিউরিটি গার্ড, মেনেজার এবং টেক্সি ক্যাব অলার সাথে বিশাল খাতির কইরা ফালাইসেন। সবাইকে বাবা কি নাম তোমার, বাসা কই, দেশের বাড়ি কই, কয় ভাই বোন, ঈদ কই করবা জিজ্ঞেস করা শেষ। আর উনি ডি এইচ এল এর ম্যানেজার রে জিজ্ঞেস করসে ডি এইচ এল এর পুরা ফরম কি? ম্যানেজার বলাতে আমি জীবনে প্রথম বার এর মত জানতে পারসি, DHL are the initials of the company’s founders Adrian Dalsey, Larry Hillblom and Robert Lynn.

এই মহিলা আনবিলিভেবল। আমি চাই উনার উপর রাগ করতে অনেক। কিন্তু দিন শেষে সারাজীবন মনে হয় আমিই ভুল, উনি ঠিক। আমার এই রকম দুর্বল মন এর অধিকারি হউনের পিছনে উনার বিশাল অবদান আছে। বেরাইতে আসা শয়তান পুলাপান যখন আমার কমিক্স ছিরত আর খেলনা দুই টুক্রা করতো তখন আমি আম্মার দিকে তাকাইতাম। এক্টা ইশারা পাইলেই অগোরে পারামু ফ্লোর এ ফালায়া। কিন্তু আম্মা বলত, থাক ওরা বেরাইতে আসছে। গজ গজ করতে মনে মনে ভাবতাম, খারা, তগো বাসায় যামু না? তখন সব কিছুর পরতিশোধ লমু।

অবশেষে আসতো সেই প্রতিক্ষিত মুহুরত। অদের বাসায় যাইতাম বেরাইতে। যখন টারগেট সেট কইরা ঝাপায় পরতে যামু অদের খেলনার উপর, ঠিক তখনি আমার ইন্টেনশন বুঝতে পাইরা দৈববাণী এর মত আম্মাবানী হইত, ” না ইথার, আমরা বেড়াইতে আসছি”.

এ কেমুন ইনঝাস্টিস 🙁

 

১২৬/৩৬৫

লেখার তারিখঃ জুলাই ৩, ২০১৫ । ১০.৪৩ পি.এম

 

জন্মদিন ব্যাপারটা কেমন অদ্ভুত না? আজকে এত মানুষের উইশ পাইসি, এএএততত মানুষের উইশ পাইসি যে আমি ঠিক জানি না আমি সবার পোস্ট এর রিপ্লাই দিতে পারবো কিনা। কিন্তু আমার ইচ্ছা আমি সবাইকে জবাব দিব। একটা মানুষ তার টাইম থেইকা একটা আলাদা টাইম বাইর কইরা আমারে উইশ করসে। উইশ করার সময়টা সে ভাবসে আমার কথা। এইটা আমার কাছে অনেক বড় একটা ব্যাপার। তার কিছুটাও তারে ফেরত দিতে না পারলে আমার কেমন অপরাধী অপরাধী লাগতাসে।

আজকে দিন টা ভাল গেসে। আলহামদুলিল্লাহ। এক মাস আগে থেইকা ঠিক হইসিল যে ডেমিয়েন থরন ওরফে তামিম্বাই সারপ্রাইজ দিতে ঢাকা আইসা পর্বে আজকে। আর কেউ জানতো না। খালি আমি আর ফায়েক জানতাম। আমরা উনারে আনতে গেসিলাম এয়ারপোর্ট এ। এয়ারপোর্ট এ পৌছায় দেখি আমাদের হাতে দুই ঘণ্টার মত টাইম আসে। তাই আমরা সময় কাটাইতে উত্তরা গেসিলাম। জর্জেস ক্যাফে দেহি বন্ধ। তাই বিনস এন্ড এরোমা তে গেসিলাম। ওই খানে বইসি , ফায়েক বিভিন্ন “জিনিষ” দেখতাসে এমন সময় হঠাত দেখি ওয়েটার পেলেট এ কইরা দুইডা ব্লু বেরি চিজ কেক লয়া আসল। হেইডাতে আবার মুম্বাতি লাগানি। দুইডা মরদ পোলা রাইত বারোটা বাজে কফি শপ এ কিউট দেখতে চিজ কেক এ মুম্বাতি লাগাইয়া জন্মদিন পালন করতাসে, আবার জার জন্মদিন সে লজ্জ্যায় মুচরা মুচড়ি করতাছে, ব্যাপারটা এত এলজিবিটি । আমরা দুই জন ই নিজ নিজ মোবাইলে মনোযোগ দিয়া চিজ কেক আর মোকা খাইয়া দউর দিলাম এয়ারপোর্ট এ।

এয়ারপোরট এ তেমন উল্ল্যেখযোগ্য কিছু হয় নাই। একসেপ্ট আমরা একটা নাদুস নুদুস ফ্লাফি কালা বিড়াল দেখসি। আমি ওর কাছে বইসা অনেক খন চুক চুক কইরা ডাকসি কিন্তু আমারে বেশি পাত্তা পুত্তা দ্যায় নাই। একটু পরে তামিম ভাই ল্যান্ড করসে আর কাচের মধ্যে দিয়া দুউউর এ উনারে দেখতে পায়া আমাগো আহ্লাদ এর সীমা আসিল না। আমার হাত নারানি, পাও নারানি, আর ফায়েক আরো যা যা নাড়াইতে পারে সব নাড়াইয়া তামিম্বাই এর দৃষ্টি আকর্ষণ করা গেল। উনার সাইজ দেইখা খাইশটমস এর লুকজন বেশি কিছু করতে সাহস পায় নাই। তাই তাড়াতাড়ি বাইর হয়া আয়া পরসে। আর আইতেই জাব্রা জাব্রি।

উনারে লওয়া উনার বাসায় আইলাম। তখন সেহরির টাইম। ভাবি ঘুমাইতাসিল। তামিম্বাই গিয়া ডাকসে আর ভাবি উইঠা একবার উনারে দেইখা ও আচ্ছা মুখ কইরা আবার ঘুমায় গেসে। আমরা তো হতাশ। এত প্ল্যান আর এই রিয়েকশন। হতাশ মুখে বাইরে আইসি রুম এর। এমন সময় ভাবি দৌড়াইতে দৌড়াইতে আইসা তামিম ভাই এর দিকে হা কইরা তাকায় রইসে। তুমি সত্যি আসছো? সত্যি? আর কি কান্না টা শুরু করলো তখন। আহা। খাইতে বইসাও উনার কান্না আস্তাসিল আর সারপ্রাইজ এর কথা মনে কইরা আবার হাইসা দিতাসিল।

এর চেয়ে সুন্দর ভাবে একটা জন্মদিন শুরু হইতে পারে? আমি ভাবসিলাম এই টাই শেষ। কিন্তু আল্লাহ ভাবসে অন্য কিছু। সেহরি খাইয়া ঘুমায় টুমায় উঠসি সাড়ে নয়টার দিকে। দেখি পিপলস রেডিও এর এক আর জে ভাই নক দিসে। বলে ভাই, একটু রেডিও টা ছাড়বেন। আমি সিউর বইলা ছাড়লাম, আর তব্দা খাইয়া গেলাম। উনি তখন শো করতাসিল আর আমার সম্পর্কে প্রায় পাঁচ মিনিট এর একটা বক্তিতা দিয়া আমারে ডেডিকেট কইরা একটা গান ছাড়ল, “যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে”। ব্যাপক চমকাইসি।

আরেকটু পরে আইসা টিয়ারা উইশ করল। তামিম ভাই উকুলেলে নিয়া আসলো। আমরা অল্প একটু গান বাজনা করলাম। তারপর বাসাবো আইসা পরসি। আর এই লেখার সময় যেখানে অর্ধেক শুইয়া আসি, সেই একি জায়গায় ইফতারির সময় টা বাদে কাটায় দিসি দিনের বাকিটা।

ফেসবুকে, মোবাইলে টেক্সট কইরা, ফোন কইরা যারা উইশ করসেন তাদের প্রতি অনেক কৃতজ্ঞতা আমারে মনে করার জন্য। সবাই এত ভাল ভাল কথা লিখসেন যে এখন ভয় লাগে হোয়াট ইফ আই ক্যান্ট মিট অল দ্বিজ একসপেক্টেশান্স? হোয়াট ইফ ওয়ান ফাইন মর্নিং সবাই রিয়ালাইজ করে ইটস অল ফেক? আমি আসলে তেমন কিছু পারি না।

তারপর মনে হইসে, হুর, এরা সবাই আমারে যেমনে কোন কারণ ছাড়াই ভালবাসতে পারসে, আমিও যতদিন বাইচা আসি সবাইকে মন থেইকা ভালবাইসা যামু। এই জিনিষ টা আমি খুব ভাল পারি।