লেখার তারিখঃ জুলাই ৭, ২০১৫ । ১০.৪৫ পি.এম
নামাজ পড়া নিয়া ইশকুল লাইফের দুইটা ঘটনার কথা বলি। আফটার ইফতারি যেই হ্যাং হওয়া পিরিয়ড টা যায় ওই সময় ঝিমাইতে ঝিমাইতে মনে হইসে হঠাত । এখন না লিখা রাখলে ভুইলা যামু গা পরে।
মতিঝিল আইডিয়াল ইশকুলে পড়ার সময় আমাদের যোহর এর নামাজ ইশকুলে পরতে হইত। দুপুর ১ টা বাজে হইত টিফিন+নামাজ পিরিয়ড। দশ মিনিট টিফিনের জন্য আর পঞ্চাশ মিনিট নামাজের জন্য। নামাজে যাওয়া সবার জন্য বাধ্যতামূলক ছিল। এক জন অনেক কড়া স্যার ছিল যিনি কিনা রেন্ডমলি কোণ কোন দিন নামাজের সময় সব ক্লাসরুমে গিয়া গিয়া এমনকি বাত্রুমে গিয়া গিয়া চেক করত কেউ ফাকি মারার জন্য ক্লাস এ থাইকা গেসে কিনা। কাউরে পাইরে তার খবর ছিল। সারা স্কুল জানতো যে এই পোলা আজকে নামাজে যায় নাই। পিটানি তো খাইতই। রইদের মধ্যে মাঠে নীল ডাউন করায়া রাখতো। আমরা সবাই নামাজ থিকা ফিরতাম আর করুন চোখে ( তখন আসলে করুন চোখ আসিল না, হে হে ধরা খাইসে টাইপ চোখ আসিল) তাকায় থাকতাম।
আমরা তখন মাত্র ক্লাস ফোর এ উঠসি। ডে শিফট এ আইসা অনেক থতমত অবস্থা। বড় ভাই দের গরুর মত মাইর খাইতে দেইখা পুরাই আতঙ্কে থাকতাম কুন সময় না জানি মাইর খাই । এমন এক টাইম এ একদিন নামাজ এ গেসি। আমাদের মধ্যে একজন যায় নাই। কপাল এমন ই ওই দিন ই ওই স্যার সার্চ করতে আইসে রুম। ও ভয়ে বেঞ্চ এর নিচে মাথা দিয়া লুকাইসিল। কিন্তু মোটূর পাসা যে বাইর হয়া রইসে পুরাটাই ওই টা খেয়াল করে নাই। স্যার আইসা ওরে প্যান্ট ধইরা টাইন্যা বাইর করসে।
বেচারা ভয়ে আধমরা। স্যার ওর অবস্থা দেইখা মারে নাই। কিছুখন ধমক ধামক দিসে তারপর ওরে হেদায়েত করা শুরু করসে। নামাজের ফজিলত, নামাজ না পরার শাস্তি ইত্যাদি নিয়া এক ঘণ্টা ধইরা বিশাল লেকচার। তারপর শেষ মেশ বলসে ঠিকাসে তাইলে কালকে থেইকা ইনশাল্লাহ তুই সময় মত নামাজে যাবি। মোটু এতক্ষণ ভয়ে সিটকায় আসিল। যখন বুঝসে স্যার এর যাওয়ার টাইম হইসে, আস্তে কইরা মিন মিন কইরা বলসে, “কিন্তু স্যার…… আমি তো হিন্দু” ।
২য় ঘটনা হইসে নামাজ থেইকা ফেরার সময় একদিন। যোহর এর চার রাকাত ফরয নামাজের পর দুই রাকাত সুন্নত নামাজ থাকে। আর এই সুন্নত নামাজ থেইকাই পোলাপান এর মধ্যে প্রতিযোগিতা শুরু হইত কে কত তারাতারি নামাজ শেষ কইরা দৌড় দিয়া ক্লাস এ আস্তে পারবে। ততক্ষণে স্যার রাও একটু রিলেক্সড হইত যে নামাজ তো শেষ ই, আর কি? কিন্তু আমাদের তো তখন সব কিছু তেই দৌড় দেওয়ার অভ্যাস। ওই দুই রাকাত নামাজ শেষ হইতে দেরি হইলে মসজিদের গেট এ বিশাল কিউ এর পিছে দাঁড়াইতে হবে। তাই যত তারাতারি নামাজ শেষ কইরা দৌর দেওয়া যায় তত বেশি আগে আগে ক্লাস এ পৌঁছানর সম্ভাবিলিটি বারে আরকি। নট দ্যাট আমরা ক্লাস কে খুব ভালবাসতাম। ইট ওয়াজ অল এবাউট আমার পাশের পোলা জাতে আমার আগে না যাইতে পারে। তাই দৌর দৌড়।
ক্লাস নাইন এ পড়ার সময় আমাদের ক্লাস এর একটা পোলা ছিল যে অলওয়েজ ফাস্ট হইত। ক্লাস এর ফারস্ট না। নামাজ থিকা দৌড় দিয়া ক্লাস এ আসনের বেলায় ফার্স্ট। মনে রাখতে হবে যে আমাগো সময় ক্লাস নাইন এর পোলাপাইন এখন কার ক্লাস নাইন এর পোলাপান এর মত অলরেডি লাভ, সেক্স নিয়া অভিজ্ঞতা সম্পন্ন পোলাপান ছিল না। আমরা লেম ছিলাম আর ঐটাই আমাদের ওয়ে অফ হেভিং ফান ছিল।
যাই হোক ওই পোলার নামাজ পরা ছিল একটা দেখার মত জিনিষ।মনে হইত কেউ একজন ফাস্ট ফরোয়ার্ড বাটন টিপ দিয়া দিসে। ঠুস ঠাস ঠুস আর নামাজ শেষ । এরপর দৌড় দিয়া ক্লাস এ। আমার একদিন খুব ইচ্ছা হইল, আমার ব্যাপারটা কি জানতেই হইব। ওরে গিয়া কইলাম, দোস্ত, তুই এত তারাতারি নামাজ পরস কেমনে? রহস্যটা কি?
দোস্ত আমারে হাসি মুখে কইল, বীজ গণিত পরছত? আমি কইলাম পরছিত। দোস্ত জিগাইল, ধরি x, y, z এগুলা পরছত? আমি পুরাই লস্ট। জিগাইতে আইলাম নামাজ এর কথা। হে দেখি অঙ্ক শিখায়। মুখে কইলাম, হ পরছিত। ক্যারে?
দোস্ত কইল, হুন, আমি নামাজে দাঁড়াইয়া কই x y. তারপর রুকু সিজদা শেষ কইরা আবার উইঠা কই x, z. তারপর রুকু সিজদা দিয়া বইসা কই A B C. তারপর সালাম ফিরাইয়া দৌর দেই। তারপর ক্লাস এ আয়া কই, হে আল্লাহ, x মানে সুরা ফাতিহা, y মানে কুল হু আল্লাহ। A মানে আত্তা হিয়াতু, C মানে দুয়া মাসুরা। তুমি তো সব বুঝই আল্লাহ। এইটাও একটু বুইঝাঁ নিও।
আল্লাহ মাফ করুক। ওই দোস্ত এর লগে এখন আর যুগাযুগ নাই। হে এহনো এমনে নামাজ পরে কিনা কে জানে।