২৮১/৩৬৫

লেখার তারিখঃ এপ্রিল ২, ২০১৬, ০৯:০৮ এ এম

বুক রিভিউঃ Prelude to Foundation by Isaac Asimov

দুই টা বই টা পড়া শেষ করসি গত ফেব্রুয়ারি মাসে। কিন্তু রিভিউ লেখা হয় নাই বইলা GoodReads এ ডান দিতে পারতাসিলাম না। কিরম একটা অস্বস্তি মূলক অনুভুতি। তাই এই ধাক্কায় দুই দিনে দুইটা রিভিউ লিখখা সব কিলিয়ার কইরা লামু।

প্রিলুড টু ফাউন্ডেশন আমার পরা আইসাক আসিমভ এর প্রথম বই। অনেক দিন থেইকাই মাথায় ছিল যে আসিমভ এর কালজয়ী ফাউন্ডেশন সিরিজ টা পরন লাগব। কিন্তু যুইত করতে পারতাসিলাম না, কেম্নে শুরু করুম, কুন্টা আগে কুন্টা পরে। সমাধান দিল গুডরিডস, টরেন্ট আর মাই পকেট বুক এপ। প্রথমে এই লিঙ্ক https://www.goodreads.com/series/43939-foundation-chronological-order এ গিয়া বাইর করলাম পুরা সিকোয়েন্স টা। তারপর বই গুলা টরেন্ট থেইকা নামায় ফেললাম। এখন মাই পকেট বুক এপ দিয়া পড়তাসি একটা একটা কইরা। “মাই পকেট বুক” এন্ড্রয়েড এর জন্য একটা অসাধারন ই বুক রিডিং সফটয়ার। এইটা দিয়াই অফিসে নাস্তা আর লাঞ্চ টাইম এ একটু একটু কইরা পইড়া পাঠক মন রে বাঁচায় রাখসি।

Prelude to Foundation আইসাক আসিমভ এর ফাউন্ডেশন সিরিজ এর প্রথম বই। এইটা একটা সাইন্স ফিকশন এবং যে সময় এ এইটা লেখা হইসে (১৯৮৮) সে সময়ের তুলনায় অনেক অনেক আধুনিক একটা বই। ৪৬৪ পৃষ্ঠার এই বিশাল বই এ মুল চরিত্রের সাথে সাথে লেখক পাঠকদের কে নিয়া যান এক জগত থেইকা অন্য জগতে। কারন মুল চরিত্র হ্যারি স্যাল্ডন এক জগত থেইকা আরেক জগতে পালায় বেড়াইতাসিল আত্মরক্ষার্তে। বইটা এত ডিটেইল এ লেখা যে আমার একটু পর পর অবাক হইতাসিলাম যে আসিমভ কি আসলেই লেখক নাকি বিজ্ঞানী?

ট্র্যান্টর। অগনিত গ্রহ, ৪০ বিলিয়ন লোক, কল্পনার বাইরে সব টেকনোলজি আর অদ্ভুত সব জাতি নিয়া তৈরি এক মহাজাগতিক সাম্রাজ্য ট্র্যান্টর। এই সাম্রাজ্যের সম্রাট ক্লিয়ন ১। তিনি জানতে পারেন গণিতবিদ দের এক সম্মেলন এ হ্যারি সেল্ডন নাম এর একজন অখ্যাত গনিতবিদ একটি পেপার পাব্লিশ করেছেন যার মুল প্রতিপাদ্য বিষয় “গানিতিক ফর্মুলার মাধ্যমে ভবিষ্যত বলা সম্ভব”। তিনি এই বিদ্যার নাম দিয়েছেন সাইকোহিস্টরি।

সাইকোহিস্টরির কথা শুইনা সম্রাটের মাথা মুতা খারাপ হয়া গেল। তিনি তার ডাইন হাত এতো ডেমজেল কে ডাইকা কইলেন যেম্নেই হউক এই জিনিষ আমার লাগব। এই জিনিষ পাইলে আর কেউ আমার লগে টাল্টি বাল্টি করতে সাহস পাইব না। হ্যারি স্যল্ডন রে খবর দেও। আমি ওর লগে কথা কমু। কিন্তু হ্যারি স্যাল্ডন ত সম্রাট এর প্রাসাদে আইসা বিশাল টাশকি খায়া গেল। হে যতই বুঝায় যে মহারাজ আমার এই টা এখন থিওরি পর্যায়ে আসে প্র্যাক্টিকাল স্টেজ এ যায় নাই, ততই সম্রাট এর জিদ উটে। সম্রাট তারে থ্রেট দ্যায়, দ্যাহো, এই সব ভুগি চুগি আমারে বুঝায়ো না। বাসায় যাও, চিন্তা কর আর তারপর ক্যাম্নে আমি ভবিষ্যৎ দেখতে পারুম হেইডা কউ, নাইলে তুমার খবর আসে।

হ্যারি সেল্ডন এমুন ডরান ডরাইল যে যখন রাস্তায় পরিচিত হওয়া “চেটার হামিন” এক ব্যাডায় যহন তারে প্রস্তাব দিল লউ ভাইগা যাই, হ্যারি সেল্ডন রাজি হয়া গেল। পুরা বইডা এই হ্যারি সেল্ডন আর তার নায়িকা “ডরস ভেনাবিলি” এর দৌড়াদৌড়ি দিয়াই ভরপুর। সংক্ষেপে বলতে গেলে চেটার হামিন অনেক কষ্ট কইরা সেল্ডন আর ডরস রে একটা জায়গায় সেট করে। সেল্ডন তার ছোক ছোক স্বভাব দিয়া একটা কিছু পেচ লাগায়। তারপর হামিন আইসা তাগোরে উধধার কইরা আরেক গ্রহে দিয়া আহে। সেই গ্রহে আবার পেস পুস লাগে। এম্নেই পুরা বই শেষ। তয় এক্কেরে শেষে গিয়া একটা বিশাল চমক আসে। যা আমি আইলশা লুকজন যারা বই না পইড়া রিভিউ দিয়া শর্টকাট মারতে চায়, তাগো স্বার্থে কমুনা।

এই বই এ আমারে সবচেয়ে যেইটা মুগ্ধ করসে তা হইসে টেকনলজি গুলা যে আন্সে সেগুলা ১৯৮৮ সালে কেউ নাম শুন্সে বইলা মনে হয় না। অনেক গুলা টেকনোলজি এখন এক্সিস্ট করে আর অনেক গুলা টেকনোলজি একদম রিসেন্টলি গবেষনা শুরু হইসে। যেমন একটার কথা কই। এই বই এর শুরুর দিকে হ্যারি সেল্ডন আর চেটার হামিন এক জায়গা থেইকা দূর এর আরেক জায়গায় যাওয়ার জন্য এক ধরনের টানেল ব্যবহার করে। আমরা যারা রিয়েল আইরন ম্যান “ইলন মাস্ক” রে ফলো করি তারা জানি যে উনি “HyperLoop” নামে একটা কম্পানি খুলসেন যারা সেম টাইপ এর একটা টেকনলজি নিয়া আসতাসেন।

আমি ফাউন্ডেশন সিরিজ এর সেকেন্ড বই Forward the Foundation পড়তাসি এখন। আর আমার উপদেশ হইল ফাউন্ডেশন সিরিজ পুড়াটা কেউ পড়তে চাইলে অবশ্যই সিকোয়েন্স মাইনা পড়া উচিত।

২৮০/৩৬৫

লেখার তারিখঃ এপ্রিল ১, ২০১৬, ১১:৫৬ এ এম

আমি অনেক আইলশা হয়া গেসি। না থুক্কু। কারে কি বুঝাই। আমি ত শুরু থেইকাই আইলশা। নতুন কইরা কি আর হমু। তবে হ্যা লেভেল আপ হইসে বলা যাইতে পারে। দিন দিন আমি অনেক পরিশ্রমি (!) আইলশা হয়া যাইতাসি। আইলসামি করতেও যে কত পরিশ্রম করা লাগে এইটা একমাত্র খান্দানি আইলশা রাই বুঝবো। কত কথা, কত খোটা, কত রিস্ক নেওয়া লাগে আইলশামি করতে তা যদি এক্টিব সমাজ বুঝতো।

যাউকগা। আমি আবার নিয়মিত নোট লিখব বইলা মন-অস্থির করসি। একটা ঝামেলা ছিল সময় বাইর করা। সেইটা আপাতত সল্ভ হইসে। চিন্তা কইরা নোট লেখার একটা টাইম বাইর করা গেসে। আমি চিন্তা কইরা দেখলাম, আমার সপ্তাহের রবি থেইকা বৃহস্পতিবার এর রুটিন হইল, আমি সকালে উইঠা ফজরের নামাজ পইরা একটা দেড় ঘন্টার ঘুম দেই। তারপর উইঠা জোম্বির মত অপিশ যাই। অপিশেই যোহর, আসর, মাগ্রিব পরি। তারপর বাসায় আইসা ভাত রান্দি, এশা পরি, খায়া দায়া ভুড়ি ডা দেয়ালের লগে ঠেক দিয়া উফফ, নো টাইম ইন লাইফ ফর এনিথিং ভাবতে ভাবতে ঘুমাই পরি। আর শুক্র শনি আমি বাসাবো আহি, আর বিছানায় গইরাই আর গইরাই। মাঝে মাঝে উইঠা নামাজ পরি, খাই, অ এর লগে দেখা করি, তারপর আবার গড়া গড়ি। নোট নুট লেখার টাইম কই এর মধ্যে।

কিন্তু না। উপায় থাকিলেই ইচ্ছা হয়। আমি অনেক চিন্তা ভাবনা করা শুরু করলাম। তারপর ঘুমায়া গেলাম (ইয়ে মানে চিন্তা ভাবনা ইজ হার্ড ওয়ার্ক ইউ নো)। ঘুম থেইকা উইঠা আমার মনে হইল , আইচ্চা এই যে ফজর এর পর সকাল ৬ টা থেইকা ৭ টা এই টাইম টা না ঘুমায়া যুদি নুত লেখা, আঁকা আকি পেক্টিস, পিয়ানো পেক্টিস ইত্যাদি কাজে আত্ম নিয়গ করি তইলেই ত হয়। এমনি তে অই ঘুম টা খারাপ । উঠলে অনেক জোম্বি জোম্বি লাগে আর অফিস ক্যান এখনো ভুমিকম্পে ভাইঙ্গা যাইতাসে না কামনা করাও তো ঠিক না। আর তা ছাড়া এই টাইম টা সাত দিন এর জন্যই কমন। এই সময়টাই তাই ভেশট টাইম নিজেকে দেওয়ার।

লাইফ এ একটা বড় চেঞ্জ আশ্চে এর মধ্যে। ফেব্রুয়ারির ১৮ তারিখ থেইকা আমি নামাজ পরা শুরু করসি পাচ ওয়াক্ত। এইটা এক দিন এ হয় নাই। প্রথম এক সপ্তাহ আমি শুধু ফযর এর নামাজ টা পরসি। তারপরের সপ্তাহ টা ফজর এবং যোহর। তারপরের সপ্তাহ ফজর, যোহর, আসর। তারপরের সপ্তাহ ফজর, যোহর, আসর, মাগরিব। তারপরের সপ্তাহ ফজর, যোহর, আসর, মাগরিব, এশা। এখন পাচ ওয়াক্ত পরি। এখন এক ওয়াক্ত নামাজ বাদ গেলে কেমন যানি লাগে। বড় কোন অপরাধ কইরা ফালাইসি টাইপ অনুভুতি।

এই রকম ভাবে নামাজ এর অভ্যাস করাটা কোন শরিয়ত সম্মত উপায় না আমি জানি। কিন্তু আমি আমার সিস্টেম চিনি। আমি জানি যে আমি যদি একবারেই পাচ ওয়াক্ত শুরু কইরা দিতাম তাইলে আমার কাছে কঠিন লাগতো আর আমি কন্টিনিউ করতে পারতাম না। তাই আমি আস্তে আস্তে নিজের সিস্টেম এর মধ্যে নিয়া আসছি নামাজ টারে।

রাশা আমারে জিজ্ঞেস করসিল আমার নামাজ পড়ার পিছনে মটিভেশন কি? অ বলসে পরতে? আমি ওরে বলসি, দ্যাখ, আমি চিন্তা কইরা দেখলাম, আল্লাহ তো আমাদের কথা সব সময় ই শুন্তাসেন। আমাদের কাজ কর্ম দেখতাসেন। আমাদের দোয়া ও কিছু কিছু কবুল করতাসেন। তাইলে হোয়াই নামাজ? তারপর আমি ভাবলাম সব কিছুর একটা প্রপার চ্যানেল আছে। নাইলে ব্যাপারটা বিশৃঙ্খলা ছাড়া আর কিছু হয় না। নামাজ আমার কাছে সেই চ্যানেল টা লাগে। তাই আমি নামাজ পরি। যাতে আল্লাহর প্রতি আমার আনুগত্য আমি সেই প্রসেস এর মধ্যে দিয়া গিয়া বুঝাইতে পারি।

যেমন রাশা একজন শিক্ষক। সে নৃ ত্ত্ব (এনথ্রোপলজি) পড়ায়। কিন্তু সে কি রাস্তায় দাড়ায়া সবাইরে নৃ তত্ব পড়ায়। বা যে একজন ছাত্র যে নৃ ত্ত্ব সম্পর্কে জানতে চায়, সে তো ইন্টারনেট ঘাইটাও জানতে পারে। কিন্তু তাতে কি তার শিক্ষা টা সম্পুর্ন হয়। তাকে একটা শ্রেনীকক্ষে যাইতে হয়, শুনতে হয়, শিখতে হয়, শিখার পর পরীক্ষা দিতে হয় নিজের জন্য এবং সবাইকে জানানোর জন্য যে সে নিজে কিছু শিখসে এবং তার শিক্ষা টারে আরেকজন স্বীকৃতি দিসে তারে একটা সারটিফিকেট দিয়া। ইন্টারনেট ঘাইটা যে শিখলো তার জানা মিথ্যা না, কিন্তু পরিপুর্ন ও না।

এই রকম অনেক ভালমানুষ আছে যারা নামাজ পরে না। তাদের ভাল কাজ গুলা অর্থহীন না, কিন্তু নামাজ পড়লে আল্লাহর সাথে তার একটা প্রপার চ্যানেল হইল তার ভাল কাজ গুলা জানানোর। তার আকাঙ্ক্ষা গুলা জানানোর। তার আক্ষেপ গুলা জানানোর।

কিছু মানুষ নিজের স্বার্থেই ইসলাম কে অনেক আলাদা কিছু, অনেক এক্সট্রিম কিছু, অনেক লাইফস্টাইল চেঞ্জিং কিছু বইলা রিপ্রেজেন্ট করে। এইটাই মূল কারন আমাদের ইসলাম কে জীবনের থেইকা আলাদা কিছু মনে কইরা নিয়া এই ধারনা জন্মানোর যে, “ইসলাম পালন করতে হইলে আমার জীবনের অনেক কিছু চেঞ্জ কইরা ফালাইতে হবে, যা কিনা কষ্টকর”। কিন্তু দরকার তো নাই এইভাবে ভাবার। অন্যভাবেও ভাবা যায়। আমি কোন আলেম ওলামা না। তারা তাদের মত কইরা ভাবসেন। আমার জ্ঞ্যান কম। আমি আমার মত কইরা ভাবি। সহজ কইরা। সরল কইরা।

আমি আমার মত স্পিড এ ইসলাম কে আমার সিস্টেম এর মধ্যে ঢুকাবো। আমি শুরু তেই বলসি, আমি অনেক আইলশা। আমি তারাহুরা করতে পারি না কিছু তে। অনেকে রেডিক্যালি, রাতারাতি চেঞ্জ কইরা ফালাইসে জীবনকে, আমি সেরকম পারবো না। আমি আস্তে আস্তে যাবো।

শেষ সীমানায় হয়ত সবার শেষে পৌছাবো, কিন্তু পৌছাব এইটা জানি।

২৭৯/৩৬৫

লেখার তারিখঃ ফেব্রুয়ারী ২১, ২০১৬, ১২ঃ৩৭ এ এম

মাতৃভাষার প্রতি ভালবাসা জিনিশ টা আমার কাছে খুব সিম্পল লাগে। আমার মা যে ভাষায় কথা বলে আমি সে ভাষা কে ভালবাসি। এই টুক ই। কিন্তু এই টুক শুধু একটা স্ট্যাটাস বা একটা বিশেষ দিন এর মধ্যে আটকায় রাখার মত ছোট না। এর ব্যাপ্তি টা বিশাল। এত বিশাল যে ক্ষুদ্রমনা তার পক্ষে এই অনুভূতিটা ধারন করা সম্ভব না।

জীবনে যদি সত্যিকার এর প্রেম ভালবাসা কইরা থাকেন কেউ তাইলে হয়তো বুঝবেন আমি কোন লাইনে কথা বলতাসি। যাকে ভালবাসেন তাকে শুধু চোইদ্দবার ভালবাসি বলাটাই ভালবাসা না। তাকে একদিন এর জন্য স্পেশাল ফিল করানো মানেই ভালবাসার সিলেবাস শেষ না। তাকে প্রতিনিয়ত বুঝাইতে হবে যে, না তুমি সব চেয়ে আগে, তুমি সবার চেয়ে বেশি জরুরি। এইবার একটু মাতৃভাষা কে এইভাবে ভালবাসি কিনা ভাবি।

ধরেন আপনার মা গান করেন। শুদ্ধ বাংলা গান। পাসের বাসার আন্টিও গান করেন। হিন্দি সিনেমার গান। আপনি সারাক্ষন বাসায় আইসা পাশের বাসার আন্টির গান এর প্রশংসা করেন। আপনার মার গান থামায়া সেই আন্টির গান জোরে জোরে বাজান। পারিবারিক অনুষ্ঠানে আপনার মা কে দেন একটা গান গাইতে আর তার পরের ৯ টা গান ওই আন্টির। জিনিষ্টা কেমন হচ্ছে তাইলে? আপনার মা কি করবে জানেন? আপনার মুখের দিকে তাকায়া সব মাইনা নিবে আর আস্তে আস্তে হয়তো গান ই ছাইড়া দিবে।

আমাদের বাংলা এর সাথে কিন্তু সেম কাজ টাই হচ্ছে। শুরুতে শুধু গান, সিনেমা ছিল। এখন বিজ্ঞাপন আর কার্টুন এও আমরা পাশের বাসার আন্টির গান কেই ফুল ভলিয়ুম দিয়ে রাখসি।

আমার হিন্দি ভাষার প্রতি কোন ব্যাক্তিগত দুশমনি নাই। এইটাও বিদেশি কোন মায়ের ভাষা। কিন্তু ভারতের কালচারের একটা ডমিনেটিং দিক আছে যেটা তারা তাদের মিডিয়া আধিপাত্য কে ব্যবহার কইরা খুব ভাল মত আমাদের ব্রেইন এ সরাসরি ইঞ্জেক্ট করতে পারে। আমি সেই জন্য সচেতন ভাবে হিন্দি গান কে এড়ায়া চলি।

আমার রেডিও তে প্রতি তিনটা গান এর একটা হিন্দি হইলে মেজাজ খারাপ হয়। গায়ে হলুদ এ হিন্দি গান শুনলে মেজাজ খারাপ হয়। পিক্নিক এ হিন্দি গান বাজাইতে বাজাইতে যাওয়া বাস এর দিকে ঢিল মারতে ইচ্ছা করে।

আমরা নিজেদের গান কেও আমরা নষ্ট করতেসি যাতে হিন্দি রা বাজার পায়। সচিন্দেব বর্মন এর নাম না শুনা স্বাভাবিক এমন বয়সের পিচ্চি মেয়েটা রেডিও তে এসেমেস দিয়ে বলে “ফুয়াদের নিটোল পায়ে” গান্টা ছাড়েন। রুদ্র মহাম্মদ শহিদুল্লার ভাল আছি ভাল থেকো হয়ে যায় “কনার ভিতরে বাহিরে”। ঐদিন সোনারগায়ে লোকশিল্প ম্যালা তে গেসিলাম। দেখি জয়নুল যাদুঘর এর পাশে একটা পিক্নিক পার্টি কে জায়গা দেয়া হইসে। তারা কানা ফাটা স্পিকার ফাটা আওয়াজ এ “পিনক লিপ্স” নামক গানের সাথে এক স্বল্পবষনা মহিলার নাচানাচি জুলু জুলু চোখে উপভোগ করতেসিল। দোয়া করসিলাম আল্লাহ আমার হাত অনেক লম্বা বানায় দাও নাইলে আমারে অক্টোপাস বানায়া দাও যাতে সব গুলারে আট হাত পা দিয়া থাব্রাইতে পারি

মাতৃভাষা দিবস পালনের আগে নিজের মাতৃভাষা কে ঠিক ঠাক সম্মান্টা দেয়ার ব্যবস্থা করি।

২৭৮/৩৬৫

লেখার তারিখঃ ফেব্রুয়ারী ১২, ২০১৬, ১২ঃ৪২ এ এম

বুক রিভিউঃ “যে প্রহরে নেই আমি”

এই মাত্র পড়া শেষ করলাম রাসয়াত রহমান ওরফে জিকো ভাই এর ৫ম বই “যে প্রহরে নেই আমি”। এই উপন্যাস টি এইবার মানে ২০১৬ বই মেলায় আদী প্রকাশন (স্টল নম্বর ৫০০) থেকে প্রকাশিত হইসে। বইটা শেষ করতে আমার চারদিন লাগসে যদিও বইটা মাত্র ১১১ পৃষ্ঠার।

এর একটা কারণ হইতে পারে আমি একজন স্লো রিডার। আর আরেকটা কারন হইতে পারে বইটা এই ভাবে পইড়াই পুরাপুরি স্বাদ টা নেয়া সম্ভব। এক নিঃশ্বাসে পুরাডা পইড়া লাইলাম, এক দম এ সব বুইঝা লাইলাম ক্যাটাগরির বই এইটা না। এই বই পড়তে হবে নিয়মিত বিরতি তে। প্রত্যেক্টা অধ্যায় এর পর অন্তত পাচ মিনিটের একটা বিরতি নিতে হবে। টানা পইড়া গেলে এই বইটা ঠিক উপভোগ করা যাবে না।

এই বই এ মুক্তিযুদ্ধ এর কথা আছে। কিন্তু এই টা মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক একটি ইতিহাসের বই না। এর ভিত্তি অনেকগুলা । এই বই এর ভিত্তি পারিবারিক বন্ধন, এই বই এর ভিত্তি মুক্ত চিন্তা, এই বই এর ভিত্তি নিজের সীমাবদ্ধতাকে ছাড়িয়ে যাওয়া। এই উপন্যাস ইতিবাচকতা কে সেলিব্রেট করে। ভাল দের সাথে ভাল হয়, খারাপ রা শেষ এ গিয়ে ভালর রাস্তায় চলে আসে।

এর চরিত্রগুলো শুরু তে আমাদের সাথে যেভাবে পরিচয় করিয়ে দেন লেখক শেষ হতে হতে তারা আর শুধু তারা থাকেন না, আকাশের তারা দের মত কিছু একটা হয়ে যান। গৃহবধু নায়লা সারা বাংলাদেশের গৃহবন্দি, পরিবারবন্দি নারীদের সিম্বল হিসাবে আমাদের কাছে ইন্ট্রোডিউসড হলেও তার শেষ টা কিন্তু আমেরিকায় তুষার পাত কে পিছনে রেখে সেলফি তে।

২য় মূল চরিত্র রাজু নদীর পারে হারিয়ে যাওয়া দিয়ে আমাদের কাছে আসলেও শেষ দৃশ্যে তাকে দেখা যায় সফলতার অশ্রুসিক্ত অবস্থা তে। এভাবে প্রত্যেটা চরিত্র কে যদি আলাদা আলাদা ভাবে দেখা যায় , তাহলে দেখা যাবে , পৃষ্ঠা পরিক্রমায় যা কিছু অশুভ এসেছিল, তারা কাউকে শেষ পর্যন্ত জিততে দেন নি লেখক।

শেষ পর্যন্ত এই চারদিন এর জন্য “যে প্রহরে নেই আমি” একটি উপভোগ্য বই ছিল। লেখকের এর আগের সবগুলো বই ই আমার পড়ার সৌভাগ্য হইসে। আগের গুলোর চেয়ে এই বই এ লেখকের তীক্ষ্ণ রস বোধের ছোয়া খুব কম পাওয়া যায়, যেটা তার কিছু কিছু ভক্ত এবং পাঠক কে মন খারাপ করাবে মনে করি। আশা করছি এই মন্দা জিকো ভাই আমাদের আগামি বই এর মাধ্যমে পুষিয়ে দেবেন।

২৭৭/৩৬৫

লেখার তারিখঃ জানুয়ারী ২৯, ২০১৬, ৭ঃ০১ পি এম

বুক রিভিউ: 11/23/63 by Stephen King

অবশেষে শেষ করলাম Stephen King এর ৮৪৯ পৃষ্ঠার বিশা আ আ আ ল বই 11/22/63। এই বইটা পড়া শুরু করি নভেম্বর ২০১৫ তে আর শেষ করলাম আইসা আজকে। আমি যে কত স্লো রিডার তা নিয়া আমার আফসুস এর শেষ নাই।

ভালই লাগসে পড়তে। এইটারে একটা Romantic Sci-Fi উপন্যাস বলা যাইতে পারে। সময় পরিভ্রমন বা Time Travel এর উপর ভিত্তি কইরা লেখা এই বই এর মূল চরিত্র ভাইজান অতিতে গিয়া আমেরিকার ইতিহাসের একটি আলোচিত ঘটনা চেঞ্জ করার চেষ্টা করেন। এই বই জুইড়াই আসে তার এই চেষ্টার পটভূমি, প্ল্যানিং, চেষ্টাকালিন সময়ে তার আতকা এক হট আপার প্রেম এ পইড়া যাওয়া, তারপর আপা রে নিয়া চিপায় গিয়া ইটিশ পিটিশ,বিভিন্ন বড়দের ছিন ছিনারি, তারপর মূল ঘটনার আগে দিয়া অনেক পেস পুস লাগা, আবার পেস ছুটা, দিবসে যে ধন হারায়েছি- আমি পেয়েছি আধারো রাতে টাইপ ব্যাপার স্যাপার ঘটা এই সব ই আসে আরকি।

আমি এই বইরে পাঁচ এর মদ্যে ৪ দিমু। মাঝে মাঝে কিছু ভাল এনালজি নিয়া আসছেন যেগুলা প্রায়ই জটিল বিষয় গুলারে বুঝতে হেল্প করসে। এই বই এর একজায়গায় আসে এয়ারফোর্স ওয়ান লাভফিল্ড এয়ারপোর্ট এ ল্যান্ড করলো। বোয়িং ৭০৭ টা আস্তে আস্তে টার্মিনাল এর সামনে দাড়াইল। আমি পড়া থামায়া গুগল করলাম এবং দেখলাম আসলেই একটা বোয়িং ৭০৭ এয়ারফোর্স ওয়ান ছিল। শুধু তাই না, এইটা ছিল বিশ্বের প্রথম প্রেসিডেনশিয়াল জেট বিমান।

পড়া শেষ হওয়ার পর আমি বইটা নিয়া একটু হাল্কা পাতলা ঘাটাঘাটি করলাম। আমি জানসি যে স্টিফেন কিং এই বইটা লেখার কথা ভাবসিলেন ১৯৭৩ সালে। কিন্তু পর্যাপ্ত রিসার্চ না থাকায় তিনি তখন বইটা লেখেন নাই। রিসার্চ শেষ কইরা লিখসেন আইসা ২০১১ তে। আই ওয়ান্ডার আমাদের দেশের বেশিরভাগ নতুন লেখক কতটুক করে এই কাজ টা। তাদের রিসার্চ টাইম মানে কি শুধু একবইমেলা থেইকা পরের টার আগ পর্যন্ত?

এই লেখকের আর কুনো বই আমি এর আগে পড়ি নাই। তয় পড়নের ইচ্ছা রাখি। আমি হুন্সি উনি অনেক পপুলার থ্রিলার সাই ফাই সাহিত্যক। এই বছর আমি নিজের উপর একটা বুক চেলেঞ্জ নিসি অন্তত ১২ টা বই পড়ার। মানে মাসে ১ টা।

এইটা ছিল আমার বুক অফ জানুয়ারি। ফেব্রুয়ারির জন্য কোনটা শুরু করবো এখনো জানিনা।

২৭৬/৩৬৫

লেখার তারিখঃ জানুয়ারী ২৪, ২০১৬, ৬ঃ৩১ পি এম

“পালকি” চড়ে “অরুণ আলো” আসে
দিনান্তে “আকাশ প্রদীপ” জ্বলে,
“রাঙা প্রভাত” ছড়িয়ে পড়ে হেসে
মা, মাটি আর মানুষ ভালবেসে,
নীলাকাশে “মেঘদূত” ঋজুরেখা আঁকে
“ময়ূরপঙ্খী” নোঙর ফেলে অস্তাচলের বাঁকে

এই কবিতাটা বাংলাদেশ বিমানের প্রত্যেক্টা বিমান (যেগুলা নিজের টাকায় কেনা, লিজ নেওয়া না) সেগুলার ভিতর গোল্ড প্লেট এর উপর বসানো হইসে। আমি ইনভারটেড কমার ভিতর যে নাম গুলা লিখসি সেগুলা বাংলাদেশ বিমান এর এক একটা এয়ারক্র্যাফট এর নাম। মজার জিনিশ হইল এই সিকোয়েন্স এই বিমান গুলার কমিশনিং হইসে ফ্লিট এ।

এইখানে নাম, রেজিস্ট্রেশন নাম্বার আর ফ্লিট জয়েন করার মাস এবং বছর দিয়া দিলাম। এই সব গুলা ব্র্যান্ড নিউ এয়ারক্রাফট। সেকেন্ড হ্যান্ড না। বিমান আরো ৪ টা Boeing 777-300ER, ২ টা বোয়িং 737-800 আর ৪ টা Boeing 787 Dreamliner ওর্ডার করসে বোয়িং এর কাছে যেগুলা ২০১৯ এবং ২০২০ এ ফ্লিট এ যোগ হবে।

“পালকি”
S2-AFO
Boeing 777-300ER
October 2011

“অরুণ আলো”
S2-AFP
Boeing 777-300ER
November 2011

“আকাশ প্রদীপ”
S2-AHM
Boeing 777-300ER
February 2014

“রাঙা প্রভাত”
S2-AHN
Boeing 777-300ER
March 2014

“মেঘদূত”
S2-AHO
Boeing 737-800
November 2015

“ময়ূরপঙ্খী”
S2-AHV
Boeing 737-800
December 2015

এত কিছু লেখার এক্টাই কারন। আজকে আমার কানে আসছে একজন বলতেসিল, “বাংলাদেশ বিমান এ যামু না। বাংলাদেশ বিমান এর আছে কি? ভাঙ্গাচুরা কয়ডা বিমান” কথাটা ঠাশ কইরা আমার গায়ে চড় এর মত লাগসে। আমি অই অপরিচিত লোক রে বলসি, আপনার কথা টা ঠিক না। আপনি ভুল তথ্য ছড়াইতেসেন। ভুল তথ্য ছড়ানো একটা অপরাধ এর সমান কাজ।

বিমান রে নিয়া কেউ কিছু বললে আমার খুব গায়ে লাগে। নিজের দেশের এয়ারলাইন্স নিয়াই যদি আমরা এমন করি, তাইলে ক্যাম্নে হবে। বুঝলাম অনেক সমস্যা আছে, কিন্তু তাই বইলা হাল ছাইড়া দিয়া বদনাম করলে তো কিছু সমাধান হবে না। জিনিষ টাকে নিজের বইলা মনে করতে হবে। তাইলেই আমার দায়িত্ব টুক আমি পালন করতে পারব ঠিক মত।

নিজের দেশের এয়ারলাইন্স সম্পর্কে জানেন। বাংলাদেশ বিমান এর জন্য ভালবাসা।

২৭৫/৩৬৫

লেখার তারিখঃ জানুয়ারী ৭, ২০১৬, ১০ঃ৫৮ পি এম

“কল-রেডী” । খুব পরিচিত একটা নাম। বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষনেও আমরা এই “কল-রেডী” দেখি।

১৯৪৮ সালে সূত্রাপুরের দুই ভাই হরিপদ ঘোষ ও দয়াল ঘোষ মিলে একটি দোকান চালু করেন। নাম আরজু লাইট হাউস। লাইট হাউস নাম হলেও লাইটের পাশাপাশি গ্রামোফোনও ভাড়া দেওয়া হতো। বিয়ে-শাদিতে লাইটের সঙ্গে গ্রামোফোনও ভাড়া নিত লোকজন। দোকানটি পরিচিত হয়ে ওঠে অল্প দিনেই। চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় ভারত থেকে কয়েকটি মাইক নিয়ে আসেন দুই ভাই। তাতেও কুলাচ্ছিল না। হরিপদ ঘোষ মাইকের কারিকরি জানতেন। যন্ত্রপাতি কিনে এনে নিজে কয়েকটি হ্যান্ডমাইক তৈরি করেন।

১৯৪৮ সালে দেশ ভাগের পর থেকেই পূর্ব পাকিস্তানে আন্দোলন দানা বাঁধতে শুরু করে। আন্দোলনের নেতা-কর্মীরা মাইক ভাড়া নিতে শুরু করেন আরজু লাইট হাউস থেকে। চাহিদা বাড়তে থাকে দিনে দিনে। তাই তাইওয়ান, জাপান, চীন থেকে আনা হয় মাইক। তবে মাইকের মূল অংশ মানে ইউনিট বেশি আনা হতো বাইরে থেকে। এরপর নিজের দোকানের কারিগর দিয়ে হরিপদ ঘোষ তৈরি করিয়ে নিতেন হর্নসহ বাকি অংশ।

বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের পর থেকে সভা-সমাবেশ বেড়ে যায়। এ ছাড়া সামাজিক আর ধর্মীয় অনুষ্ঠানেও মাইক ভাড়া যাচ্ছিল। তাই মাইক দিয়ে নাম দেওয়ার ভাবনা করলেন দুই ভাই। অবশেষে দয়াল ঘোষ নামটি ঠিক করেন-কল-রেডী। কারণ বললেন, মানুষ তো কাজের জন্যই আমাদের কাছ থেকে মাইক ভাড়া নেয়। তারা কল করলে আমরা যেন রেডি থাকি। এক কথায়, কল করলেই রেডী। সে থেকে কল-রেডী।

ভালো সেবা দেওয়ার সুনাম থাকায় যেকোনো সভা-সমাবেশ ও বড় বড় অনুষ্ঠানে ডাক পড়তে থাকে কল-রেডীর। ১৯৫৪ সালে কল-রেডীর কর্মী ছিল ২০ জন। সভা-সমাবেশ সুনামের সঙ্গেই সম্পন্ন করতেন হরিপদ ও দয়াল ঘোষ। মাঝেমধ্যে তাঁদের ছোট দুই ভাই গোপাল ঘোষ ও কানাই ঘোষও সাহায্য করতেন। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ১৯৬৬ সালের ৬ দফা আন্দোলন, ১৯৬৯ সালের গণ-অভ্যুত্থান এবং ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনের সভা-সমাবেশেও যোগ দিয়েছে কল-রেডী। কল-রেডীর মাইক্রোফোনের সামনে দাঁড়িয়ে ভাষণ দিয়েছেন পূর্ব পাকিস্তানের বাঘা বাঘা নেতা।

বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চ ভাষণের মাইক্রোফোন হলো কল-রেডী। হাটে-মাঠে-ঘাটে সব জায়গায় তখন স্বাধিকারের চেতনায় ফুঁসছে মানুষ। সত্তরের নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুকে সারা দেশের মানুষ ভোট দিয়েছে। কিন্তু পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী ক্ষমতা হস্তান্তর করে না। দফায় দফায় মিটিং করেও হচ্ছে না সুরাহা। চলে এলো মার্চ। কল-রেডীর মালিক হরিপদ ঘোষ ও দয়াল ঘোষকে ধানমণ্ডির বাসায় ডেকে পাঠালেন বঙ্গবন্ধু। নির্দেশ দিলেন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে [তৎকালীন রেসকোর্স ময়দান] মাইক লাগাতে। কাজে নেমে পড়েন হরিপদ ও দয়াল ঘোষ। তখন রেসকোর্সে মাইক লাগানো সোজা ছিল না-শাসকগোষ্ঠীর চোখ ছিল সদা সতর্ক। রাতের অন্ধকারে লুকিয়ে লুকিয়ে মাইক লাগাতে লাগলেন দুই ভাই। ৭ই মার্চের বাকি আর তিন দিন। মাইক লাগিয়ে কাপড় দিয়ে ঢেকে দিলেন হরিপদ আর দয়াল ঘোষ। কিছু বাড়তি মাইক বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় মজুদ রাখেন যেন সমাবেশের দিন তাৎক্ষণিকভাবে লাগিয়ে নিতে পারেন। তিন দিন ধরে ৩০ জন কর্মী নিয়ে বাঁশ, খুঁটি গাঁথার কাজ করেন ঘোষেরা। তারপর সেই দিনটি আসে-৭ই মার্চ। কবি গিয়ে দাঁড়ান জনতার মঞ্চে। কল-রেডী’তে উচ্চা্রিত হলো ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। জয় বাংলা।’

বঙ্গবন্ধুর ভাষণকালে যেন কোনো যান্ত্রিক ত্রুটি না হয়, সে জন্য নিজে উপস্থিত থাকার পাশাপাশি একজন সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ার নিয়োগ দিয়েছিলেন হরিপদ ঘোষ। অতিরিক্ত তিনটি মাইক্রোফোন সঙ্গে রেখেছিলেন দয়াল ঘোষ।

এত বড় একটি সমাবেশে মাইক সার্ভিস দিয়ে কত টাকা পারিশ্রমিক নিয়েছিল কল-রেডী? জানতে চাইলে হরিপদ ঘোষের ছেলে কল-রেডীর বর্তমান পরিচালক সাগর ঘোষ জানান, সেই সময় পারিশ্রমিকের কথা চিন্তা করার সুযোগ বাবা ও জ্যাঠা মশাইয়ের ছিল না। বঙ্গবন্ধু নির্দেশ দিয়েছেন সেটাই বড় কথা। আর তা ছাড়া দেশের পরিস্থিতি তখন সবাই কম-বেশি জানতেন। আর বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে বাবা-কাকার ভালো সম্পর্ক থাকার কারণে বাবা শুধু খরচটাই নিতেন। আরো বললেন, ‘সেদিন সেই সমাবেশে আমার বাবার হাতে তৈরি অনেক হ্যান্ড মাইক ব্যবহৃত হয়েছিল।’

৭ই মার্চ রেসকোর্স ময়দানে দাঁড়িয়ে কল-রেডীর যে মাইক্রোফোনে বঙ্গবন্ধু তাঁর ঐতিহাসিক ভাষণ দিয়েছিলেন সেই মাইক্রোফোন, মাইক্রোফোনের স্ট্যান্ড আজও আছে কল-রেডীর কাছে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর আর অন্য কেউ সেই মাইক্রোফোনের সামনে দাঁড়িয়ে ভাষণ দেননি। এরপর বঙ্গবন্ধু ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি দেশে ফিরে আবারও কল-রেডীর মাইক্রোফোনের সামনে দাঁড়িয়ে ভাষণ দিয়েছিলেন।

দেশ-বিদেশের অনেক বিখ্যাত মানুষ কল-রেডীর মাইক্রোফোনের সামনে দাঁড়িয়ে ভাষণ দিয়েছেন। হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, এ কে ফজলুল হক, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জিয়াউর রহমান, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, শেখ হাসিনাসহ আরো অনেকে আছেন এই তালিকায়।

বিদেশের নেতাদের মধ্যে আছেন ভারতের ইন্দিরা গান্ধী। ১৯৭২ সালে বাংলাদেশে এসে তাঁর জন্য গড়া ইন্দিরা মঞ্চে দাঁড়িয়ে কল-রেডীর মাইক্রোফোনে ভাষণ দিয়েছিলেন তিনি। এরপর ১৯৯৬ সালে ইয়াসির আরাফাত, নেলসন ম্যান্ডেলা কল-রেডীর মাইক্রোফোনে ভাষণ দেন।

আমেরিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন, ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারি বাজপেয়িও কল-রেডীতে কথা বলেছেন। এর বাইরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি সমাবর্তনে মাইক সার্ভিস দেয় কল-রেডী।

১৯৮১ সালে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পর থেকে এখন পর্যন্ত শেখ হাসিনার প্রায় প্রতিটি সভা-সমাবেশে মাইক সার্ভিস দিয়েছে কল-রেডী।

কল-রেডী আছে আগের জায়গায়। পুরান ঢাকার লক্ষ্মীবাজার, বয়স হলো ৬৭।”

২৭৪/৩৬৫

লেখার তারিখঃ ডিসেম্বর ৩১, ২০১৫, ৮ঃ০৩ পি এম

২০১৪ টা প্রচন্ড খারাপ গেসিল। সব দিক থেইকা সব দরজা বন্ধ হয়া গেসিল । অফিসে বস এর সাথে সম্পর্ক খারাপ হয়া গেসিল। ক্যামেরা গিয়ার সব ছিন্তাই হয়া গেসিল। প্রচন্ড ডিপ্রেশন এ পড়সিলাম কিন্তু কাউকে বলতে পারতেসিলাম না। সব কিছু থেইকা পালায়া বেড়াইতাসিলাম। শেষে ২০১৪ এর এই দিন এ সেলুনে গিয়া চুল দাড়ি কাইটা একদম ছোট ছোট কইরা ফালাইসিলাম। কারন মনে হইতাসিল দেয়ালে পিঠ যখন ঠেইকাই গেসে , ঠিকাসে, তাইলে এখন সামনে আগাই। প্রিয় ডিপ্রেশন, লেটস ড্যান্স।

খারাপ সময় পার করার জন্য কিছু নিজস্ব তরিকা থাকে সবার। আমার তরিকা হইল ব্যাস্ত হয়া যাওয়া, নতুন কিছু শুরু করা, বন্ধু দিয়ে চারপাশে দেয়াল তৈরি কইরা রাখা। আমি অফিসের কাজে মনোযোগ বাড়াইলাম, উকুলেলে কিন্না শিখা শুরু করলাম আর আমি চরম অসামাজিক হইলেও আমার বন্ধু রা আমারে ছাইড়া যায় নাই। তাই সব কোলবালিশ এর মত (রুপক অর্থে মিন করসি, ফিজিকাল রিসেম্বলেস কাকতালীয় মাত্র) ফ্লাফি বন্ধু দের দিয়া চারপাশ ঘিরা ফালাইলাম। আইডেন্টিফাই করলাম ঠিক কোন কোন সময় ডিপ্রেশন এটাক করে। ওই সময় গুলায় বন্ধু গো কাছে গিয়া বয়া থাকতাম।

ডিপ্রেশন থেইকা উইঠা আসার সময় টা স্মুথ ছিল না। যখনি একটু ভাল থাকা শুরু করসি তখনি আবার ধাক্কা আসছে একটা। আমার একটা বিড়াল ছিল। পৃথিবীর সবচেয়ে লক্ষী বিড়াল। নাম ছিল অরু। ও মইরা গেল একদিন। সে দিন সারাদিন অফিস করসি। একটু পর পর কাইন্দা আসছি ওয়াশ্রুম এ গিয়া। অফিসের কেউ বুঝে নাই কি যাইতাসে আমার উপর দিয়া। তার পর পর ই এই নোট লেখা শুরু করসিলাম। লিখতে লিখতে মাঝে মাঝে অফিসের ইমোশন উইঠা আসছে নোট এ। সেইটা নিয়াও বস এর সাথে কেচাল লাগসে। উনারে বুঝাইতে পারি নাই যে আমার আসলে ভিতরের বাস্প সব রিলিজ করার আর জায়গা ছিল না কোন এই নোট ছাড়া।

বন্ধুরা পরামর্শ দিসিল আই শুড স্টারট ডেটিং এগেইন। ট্রাই করসিও। কিন্তু যুইত হইতাসিল না কোথাউ ই। সুর এর সাথে লিরিক্স টা ঠিক বস্তেসিল না কোথাও। আমার অনেক কে না বলে দিতে হইতেসিল। আমি অনেকের কাছে অপ্রিয় হয়ে যাইতেসিলাম।

তারপরও মনে হইসে, না এইটাই সব না। এখানেই সব শেষ না। তাই হাল ছাড়ি নাই। ভালবাসার উপর বিশ্বাস হারাই নাই। অ এর সাথে যখন প্রথম দেখা করতে গেলাম , রাশা কে বলসিলাম দোস্ত, আমার মনে হয় এইখানেও আমার কোন আশা নাই। কই অ (উপরে তাকানি) কই আমি (নিচে তাকানি)। রাশা সেদিন হাসছিল। কিন্তু কেম্নে কেম্নে জানি এই আউলা ঝাউলা বাউলা কাউলা ছেলেটারে অ ভালবাসা দিয়া ভরায় ফেললো। আমি প্রথমে ওরে না কইরা দিসিলাম। ডায়লগ দিয়া বলসিলাম, দেখো, আমার লাইফ অনেক উলটা পালটা , আমি এই ছেড়া বেড়া লাইফে তোমারে জড়াইতে চাই না। অ চুপ চাপ মাথা নাইরা মাইনা নিয়া চইলা গেসিল।

অভিমান করতে করতে আমার চামড়া অনেক মোডা হয়া গেসে। তাই আমার রিয়ালাইজ করতে টাইম লাগসিল। কিন্তু কয়েকটা দিন পরে রিয়ালাইজ করলাম অ রে না বলা মানে অ রে সারাজীবন এর জন্য হারানো। অ রে না বলা মানে অ রে অন্য কারো সাথে দেখা। অ এর মত কাউরে না বলা মানে আমি পৃথিবীর সব চেয়ে গাধা গাধাটার চেয়েও গাধা, Asser than the Assest of all the Asses।

তাই এক সন্ধ্যায় অফিসের পরে দৌড়াইতে দৌড়াইতে অ র কাছে গেলাম। গিয়া বললাম, আমি হয়তো এখনি তোমাকে তোমার মত সমান সমান ভালবাসতে পারুম না ।কিন্তু আমারে একটু সময় দাও, রাশা আমারে নাম দিসে ধুলা পড়া বই। সেই বই এর উপরের ধুলা গুলা শইরা যাইতে দাও, আমি অনেক সুন্দর কইরা ভালবাসুম, ইনশাল্লাহ। অ কিছুক্ষণ চুপ চাপ জরজেস ক্যাফে এর আরনল্ড পামার এ চুমুক দিল। তারপর তার ড্রাম রোল হাসি (যে হাসি শুনলে অনেক উচাত্তে সারকাস এর কেউ লাফ দেওয়ার আগে যে ড্রাম্রোল হয় সেই রকম ড্রাম রোল হইতে থাকে আমার ভিত্রে) দিয়া বলল, ফূহ, দিলাম ফু , ধুলা উড়ুক। তার আগে বল, এই কয়টা দিন আমারে এত্ত কষ্টে রাখসো ক্যান…হাউ হাউ হাউ হাউ ( আরো কিছু ধমক ধামক কল্পনা কইরা নেন)। আমি মনে মনে বললাম, কি রে ডিপ্রেশন, মুড়ী শেষ? না আরো দিমু?

এরপর থেইকা সব ঠিক হওয়া শুরু করসে। আজকে ২০১৫ এর শেষ দিনে আমার একটা রুপকথার মত অ আছে, একটা ভুতের মত অস্থির ক্যাস্পার দি ক্যাট আছে, বস এর সাথে আমার সম্পর্ক আগের চেয়েও ভাল আর আমি এই বছর একটা নতুন বাদ্যযন্ত্র শিখসি (উকুলেলে বাজাইতে পারি) । ২০১৪ যা যা কাইরা নিসিল ২০১৫ তার চেয়েও অনেক বেশি কিছু ফেরত দিসে।

আল্লাহ, ধন্যবাদ। তোমার প্ল্যান না বুঝলেও, প্ল্যানার এর উপর যাতে আস্থা না হারাই, সেই তৌফিক দিও।

২৭৩/৩৬৫

লেখার তারিখঃ ডিসেম্বর ৩০, ২০১৫, ১২ঃ১৬ এ এম

আমার একটা জিনিষ নিয়া খুব টেনশন হইতাসে কয়দিন ধইরা। আমি অনেক ভাইবাও কোন কুল কিনারা করতে পারতাসি না। জিনিষ টা হইল, আমি কিভাবে আমার সন্তান কে অন্যের সুখে সুখি হইতে শিখাবো? এই একটা জিনিষ, খালি এই একটা জিনিষ যদি সবাই সবার সন্তান দের শিখায় যাইতে পারতো। তাইলে যে ঘরে বাইরে কি পরিবর্তন টা আসতো তা ভাবতেই গায়ে কাটা দ্যায়। কিন্তু আমি জানি না আমাদের রক্তে রক্তে যেভাবে এই জিনিষ টা ঢুকায় দেয়া হইসে এবং ঢুইকা গেসে সেইটা কিভাবে পালটায় ফেলা সম্ভব?


একটু চিন্তা করলে পাওয়া যায়, শুরু টা হয় অনেক ছোট থাক্তেই। বড় বোনের হাতে কিছু একটা দেখলেই ছোট বোন টা টান দিয়া নিয়া ন্যায়। ছোট বোনের হাত থেইকা বড় বোন টা কিছু নিলে ছোট টা কাইন্দা আকুল হয়। আমরা আহা কি কিউট দৃষ্টি নিয়া তাকায় তাকায় দেখি। বড় টা ছোট থেইকাই শিখা যায়, ছোট টার জন্য তারে সেক্রিফাইস করতে হবে। সে হয় তো আরেকজন এর জন্য সুখি হওয়ার প্রথম লেসন টা এইখানেই পায় কিন্তু সাথে সাথে আরেকটা মানুষ কিন্তু শিখলো যে আরেকজন এর থেইকা যেম্নেই হোক জিনিষ কাইরা নিয়া হইলেও তার সুখি হইতে হবে। অন্যের দুঃখ দেখার টাইম নাই, আমার সুখি হইতে হবে, ব্যাস ! এত কিছু তো আর অইটুক বাচ্চা বুঝে না। তার অখন্ডনীয় লজিক হইল, ওর আসে, আমার কেন নাই, আমার থাকতে হবে, ইফ পাইলাম দেন কিছুক্ষন নাইরা চাইরা একটু পরে ইন্টারেস্ট শেষ, এলস যদি না পাইলাম, তাইলে ইনিশিয়েট অপারেশন বিকট শব্দে ভ্যা করা ।

আরেক্টূ বড় হইলে শুরু হয় কম্পারিজন। দেখ অমুক ভাবির পোলায় ফারস্ট হইসে তুই কেন দুই নাম্বার কম পাইসত? আমি যদি আমার পোলা রে মিষ্টি খাওয়াই আর আরেক পোলা ফারস্ট হইসে সেই খুশিতে খুশি হইতে কই, তাইলে কি সবাই আমার দিকে ভুরু কুচকায় তাকাইবো না? আমি জানি এই চিন্তা টা স্বাভাবিক না এবং এই চিন্তা যারা করে তাদের আমরা পাগল-ছাগল এর গোত্রে দ্রুত জাজমেন্ট কইরা ফালায় দেই। কিন্তু এইভাবেই কি শুরু হয় না? এভাবেই কি আমরা ভাবতে শিখি না, সে কেন পাবে? আমি কেন পাব না? এর এফেক্ট টা কি আমরা বড় হইলে দেখি না?


একটু ফারস্ট ফরোয়া্রড করি। এই ভাবে বড় হয়া যে চাকরি তে ঢুক্লো, সে কি রাতারাতি তার চিন্তা ধারা পাল্টায়ে অন্যের সাফল্যে খুশি হইতে পারবে? তার মাথায় থাকবে উপরে উঠতে হবে যেম্নেই হোক । উপরে উঠার এম্বিশন নিয়া আমার কোনোই সমস্যা নাই কিন্তু “যেম্নেই হোক” পার্ট টা তে সমস্যা আ্ছে। আমি আমার নিজের অফিসে একজন খাটি অসৎ লোক কে চিনি। উনি অনেক ধার্মিক। পাচ ওয়াক্ত নামাজ পরেন। কিন্তু উনি প্রতি দুইটা বাক্যে একটা মিথ্যা কথা বলেন। মিথ্যা বইলা ধরা খান না যে তা না। কিন্তু তাতেও তার মধ্যে কোন বিকার আসে না। ইনাকে আমি জিজ্ঞেস করসিলাম আচ্ছা আপনি এই যে এত কিছু করেন, না হয় একটা প্রোমোশন ই পাইবেন, কিন্তু এই যে লোক গুলার মনে যে কষ্ট দিতাসেন এই ভাবে, সেইটার কি কোন দাম নাই আপনার কাছে? উনার উত্তর টা ছিল , এই গুলা আমি আমার পরিবার কে একটা বেটার লাইফ দেয়ার জন্য করতেসি।


দিস ইস স্কেয়ারি। রিয়েলি স্কেয়ারি । আর আমার দ্বিতীয় টেনশন এর জন্ম হয় এই সব কথা থেইকাই। আমি ভাবতে থাকি , আমরা যখন সৎ হই তখন আমাদের কোন কারন লাগে না। শীত বস্ত্র দান করসো ক্যান? এমনি ভাল লাগে তাই। রক্ত দান করস ক্যান? ফিলস গুড তাই। তুমি যে পাশের কলিগ কে হেল্প করলা, তোমার কি স্বার্থ এ টাতে? কোন স্বার্থ নাই, তার বিপদে পরা দেখতে খারাপ লাগতেসিল তাই। এগুলা কোন লজিকের মধ্যে পরে না। তাই ক্যেন আপ্নে সৎ হইলেন? এইটার কোন উত্তর সৎ মানুষ দিতে পারেনা। কিন্তু একজন অসৎ লোক কে জিজ্ঞেস করেন, তার এক্সকিউজের অভাব নাই। পরিবারের জন্য করসি, নিজে বাচার জন্য করসি, একটু করলে কিছু হয় না, সবাই তো করতাসে তাই করসি। এরা এমন একটা পর্যায়ে পৌছায় গেসে যেখানে তারা নিজেরাও জানে না তাদের আসলে টাকার এবং সম্মানের দরকার টা বেশি? না লোভ টা বেশি?

তারা খুব বলে আরে ভাই জান বাচান ফরয। আমার খুব জানতে ইচ্ছা করে এইটা কোন হাদিস বা কোরআন এর কোন আয়াত এ আছে ? আর বলতে ইচ্ছা করে, বুঝলাম জান বাচানো ফরয কিন্তু আপনি কি শিউর এই খানে নিজের জান এর কথা বলা হইসে? হোয়াট ইফ, পুরা বাক্যটা ছিল “অন্যের জান বাচানো ফরজ” অথবা “অন্যের সুখে সুখি হও” আর আমরা যারা ছোট বেলা থেইকা অন্যের সুখে সুখি হওয়া শিখি নাই , তারা কখন জানি “অন্যের” কথা টারেই আমাদের ময়লা হাত দিয়া ঘইসা উঠায় দিসি?

২৭২/৩৬৫

লেখার তারিখঃ ডিসেম্বর ২৯, ২০১৫, ১২ঃ১৩ এ এম

অনেকদিন পর ধুলা ঝাইরা নোট লিখতে বসলাম। আমি অনেক ব্যাস্ত ছিলাম অফিস নিয়া। একটা বড় কাজ আসছিল এই বৃহস্পতি বার এর আগের বৃহস্পতিবার । ওই দিন অফিস থেইকা বাইর হইসি ১১ টায়। পরের শুক্র শনি কাজ করসি ১০ টা থেইকা রাত আট টা। তার পর সারা সপ্তায় কাজ করসি প্রত্যেকদিন রাত ৮ টা/৯ টা পর্যন্ত। শেষে এই শনিবার কাজ করসি রাত ১১ টা পর্যন্ত তারপর গিয়া শেষ হইসে। বাসায় আসার পর ঘুমায়া যাওয়া ছাড়া আর কিছু করার শক্তি থাক্তো না গায়ে।

আমার ইউনিভারসিটি পাস দিসি ৯ বছর হইসে আর চাকরীর অভিজ্ঞতা ১১ বছর। কারন থার্ড ইয়ার এ পড়ার সময় থেইকাই বাসা থেইকা টেকা টুকা নেওয়া অফ কইরা দিসিলাম। এইটা শো অফ করার জন্য লিখি নাই। এখন যেই কথা বার্তা গুলা লিখবো তা বলার আগে নিজের ক্রেডিবিলিটির ভিত্তি প্রস্থর স্থাপন করলাম। এখন যা কমু তাইলে তা মানুষ বুঝব যে হাওয়া থেইকা কইতাসি না। যে কোন জায়গায় নিজের প্রডাক্ট খাওয়াইতে হইলে আগে ক্রেডিবিলিটি টা এস্টিব্লিশ করা খুব জরুরি। যেমন একজন যদি অনেক ফটোশপ এ মেনুপুলেশন করা ছবি প্রকাশ করতে থাকে, তাইলে সে কোনদিন কোণ পোস্ট প্রসেস ছাড়া সুন্দর ছবি দিলেও মানুষ কইব “এহ ফটোশপ”।

যাউক গা, কামের কথায় আহি। চাকরির ক্ষেত্রে আমি দেখসি যে যখন একটা বড় কাজ আসে তখন সব জায়গায় কিছু কমন টাইপ এর মানুষ দেখা যায়। কাজ টা হয়তো প্রত্যেক ক্ষেত্রে আলাদা কিন্তু মানুষ গুলা এই টাইপ এর মধ্যেই পইড়া যায়। আসেন এই টাইপ গুলা রে চিন্না রাখি। তাইলে দো জাহানে (বাসা জাহান আর অফিস জাহান) অশেষ ফায়দা হবে।

দি ল্যাডারস, দি বসেস আর দি লিডারস

ল্যাডারস হইল এরা উপরের বস রে খুশি করার লাইগা বিভিন্ন অসম্ভব জিনিষ এ রাজি হয়া আসে আর মনে মনে ভাবে আরে পোলাপান আসে না এত্তডি, এডি আর কি কাম করে, হারাদিন তো বয়াই থাকে, এদের দিয়া সব করায় লামু। তার চোখে তার টিম মেম্বার রা মানুষ না, তার নিজের উপরে ওঠার সিড়ি মাত্র। সিড়ি তো কেউ কোলে নিয়া উপরে উঠে না। তাই টিম মেম্বার রে পারা দিয়া উপরে উঠতে এদের কোন গায়েই লাগে না।

বসেস হইল, বড় কাজ টা কেম্নে হইব, কি হইব এদের ডিটেইল কোন আইডিয়া নাই। ভাসা ভাসা ধারনা আসে। এরা শুধু হুকুম করতে পারে, প্লিজ ডু দা নিডফুল বইলা মেইল করতে পারে আর মাঝে মাঝে উইকেন্ড এ আইসা কি কাজ টাজ হচ্ছে তো? কর কর কাজ কর… এই টাইপ কথা বার্তা বলতে পারে।

লিডারস হইল যারা বড় কাজ টা আসার পর প্রথমে মনে মনে এক দফা ল্যাডারস আর বসেস দের গাইল্লায়। তারপর মনে মনে ছক কইরা ফেলে এম্নে এম্নে করলে এত দিন এর মধ্যেই কাজটা শেষ করা সমভব। তারপর নিজে হাতে হাতে কালি কুলি মাখায়া কাজ এ নাইমা যায়। এরা বলেনা, “কি ! এত গুলা বাকি? শেষ কর কর, কেম্নে করবা আমি কি জানি না, করতে হবে” এরা বলে “ওয়াও এত গুলা করসো। বাহ। আরেক্টূ করলেই তো শেষ”

দা হিংসুইট্টাজ

এদের কিছুই ভাল্লাগে না। আপনি কেন ভাল কাজ করসেন তা নিয়া এদের কমপ্লেইন আসে। কেন আপনার কাজের একটা অংশ তারা করসে তবু তাদের এপ্রিসিয়েট করা হয় নাই এই নিয়া এদের কমপ্লেইন আসে। চাকরি করতে দেখবেন এত আজিব রকমের ইমেচিউরড লোকজন এর দেখা পাবেন যে আপ্নার মনে হয়, এই লোক এই খানে চাকরি করে কেম্নে, ওরে নিসে কিডা।

দা কচ্ছপ্স

এরা কাজের ভলিউম টা দেখে তারপর চুপ চাপ নিজের মত কইরা কাজ শুরু করে। ল্যাডারস, বসেস আর লিডারস দের ফল আপ এর অত্যাচারে যদিও এদের গতি অনেক স্লো যায় কিন্তু এরা নিজের মত কইরা কাজ করে, কাজ শেষ করে আর তার পরপরি হিংশুইট্টাদের রোষানলে পতিত হয়।

আরো টাইপ্স আসে তবে এগুলাই বেশ বেসিক টাইপ্স। কালকে অফিস আসে। যাইঘুমাইগা।