উড়তে শেখা ১
উড়তে শেখার ইচ্ছা মাইন্সের কবে থিকা হইল তা খুজতে গেলে দ্যাহা যাইব, মানুষ যেদিন থেইকা কল্পনা করতে শিখসে সেদিন থেইকাই মাইন্সের মনে হইসে, আহা এই যে পক্ষিডা উইড়া গেল মাতার উপ্রে দিয়া, এরুম যদি আম্মো উড়তে পাড়তাম তাইলে কি তামশাডাই না হইত। এই কল্পনার পিসে মানুষ দোউড়াইসে, আছাড় খাইসে, হাড্ডি গুড্ডি ভাংসে, মারা গেসে। কিন্তু তারপরো চেষ্টা কইরা গেসে। এত হাজার বছর পর, আমরা সেই সবগুলা মানুষের ক্রমাগত চেষ্টার ফসল আমাদের মাথার উপ্রে দিয়া উইড়া যাইতে দেখি আর মনে মনে ভাবি “ও পেলেন যায়? অইডা আর এত দেহার কি আসে, ওইডা তো সুইচ টিপ মারলেই উড়ে”।
কিন্তু হাজার হাজার বাধা রে পারা পুরা দিয়া আগায়া গিয়া উড়তে শিখতে সেই পেলেন পাগলা মানুষ গুলার যে কত অছাম একটা জারনির মধ্যে দিয়া যাইতে হইসে, তা খুজতে গিয়া এই লেখকের মনে হইসে , বাহ ব্যপক ইন্সপাইরেশন এর খনি পাইয়া গেলাম তো । এই মজা একা একা পাওন ঠিক না। আর এই লেখক আরো আবিষ্কার করসেন, বাংলা ভাষায় “হিস্টোরি অফ এভিয়েশন” এর উপ্রে কোন লেখা পাওয়া খুবি কডিন। তাই উনি “হুটেলের খায়া জঙ্গলের মহিষ তাড়ানি প্রকল্প” হাতে নিসেন। বাংলায় প্রথম “উড়তে শেখার ইতিহাস” লেখার উদ্যোগ নিসেন। যার প্রথম কিস্তি এইটা। সব গুলা তথ্য সূত্র লেখার শেষে দেওয়া আছে।
যাউকগা পেলেন রানওয়ে ছাইড়া আদারে বাদারে গেসেগা, তাই আবার রানওয়েতে ফেরত আহি। পৃথিবীর সব হিস্টোরি অফ ফ্লাইয়িং এর লেখায়, সিনেমায়, বই এ উড়তে শেখার কথা বলতে গেলেই একটা গ্রিক মিথোলজির কথা আসে। তাই আহেন আমরাও আর একি যাত্রায় পৃথক পথে না গিয়া অইডা কি জাইন্না লই আগে। কাহিনিডা হইল ইকারাস (Icarus ) এর কাহিনি ।
খ্রিস্টপূর্ব ১৭০০ সালের দিকে এক দেশে আসিল এক ইকারাস। তাইনের বাফের নাম ডেডালাস। তাইন গো বাড়ী গ্রীস দেশের ক্রেট শহরে। ডেডালাইস আসিলাইন কারিগর। তাইন একবার মুম দিয়া পাখির পালক জুরা লাগায়া লাগায়া নিজের আর ইকারাস এর লাইগা দুই জোড়া পাংখা বানাইলেন। এক জোড়া ইকারাস রে দিয়া কইলেন, এই ল পাংখা, হেপি ভাড্ডে। আয় আমরা এক চক্কর উইড়া আহি। আমার পিসে পিসে নাক বরাবর উড়তে থাক। তয় খবরদার সূর্যের বেশি কাসে যাইস না কইলাম। তইলে খবর আসে।
কিন্তু বিয়াদ্দপ ইকারাস উড়া উড়ি শুরু করনের লগে লগে বাপের কথা ভুইল্লা গেল। জোশের চোটে বাপের পিসে পিসে না গিয়া আরো উচায় উইড়া বেশি পাট দেহাইতে গেল। সূর্যের বেশি কাসাকাসি উড়নের কারনে তার পাঙ্খার মোম গেল গইল্যা। আর ইকারাস পপাত কইরে ধরনিতলে পইড়া গেল। পুরাই অয়ান পিস মেড, কারিগর ডেড অবস্থা।
ল্যুভ মিউজিয়াম এ “দা ফল অফ ইকারাস”
আমি ধর্মগ্রন্থে খুজার ট্রাই করসিলাম উড়তে শেখার বেপারে কি লেখা আসে। কোরআন শরিফে উড়তে শেখার ব্যাপারে কি বলা আছে আমি জানি না। তাই না জাইনা কিছু লিখতে চাই না। এখনো জানার চেশটায় আসি। জানতে পারলে অবশ্যই এইখানে যোগ কইরা দিমু। তবে খ্রিস্টপূর্ব ১০০০ সালের দিকে লিখিত হিন্দু বেদ পুরানে “পুষ্পক রথ ভিমানাস” ওরফে “বিমান” বইলা এক ধরনের ফ্লাইং মেশিন এর উল্যেখ পাওয়া যায়।
সময় বয়া যাইতে থাকে। খ্রিস্টপূর্ব ৫০০ সালের দিকে চাইনিজ রা প্রথম ঘুড়ির ব্যাবহার শুরু করে আর খ্রিস্টপূর্ব ২০০ সালের আইসা তারা আরো এক ধাপ আগায়া আবিষ্কার করে ফানুষ। তখন অইটার নাম ছিল “স্কাই ল্যান্টারন”। এইটাই মানুষের তৈরি প্রথম হট এয়ার বেলুন বইলা ধইরা নেওয়া যায়। বেলুন সম্পর্কে আমরা আরো জানতে পারব এই লেখার ২য় পর্বে। ততক্ষন আল্লায় আমারে আর আপ্নেরে বাচায়া রাখুক।
রোমের ইতিহাসেও কিছু উড়তে শেখার কাহিনীর খোজ পাওয়া যায়। রোম এর সম্রাট তখন নিরো। সময়কাল খ্রিস্টাব্দ ৬০ সাল। উনার দরবারে একবার এক ব্ল্যাক আরট জাদুকর “সাইমন দা ম্যাজিশিয়ান” আইসা বললেন উনি লেভিটেশন বিদ্যা চর্চা করেন আর উনি উড়তে পারেন। নিরো কইলেন তা বেশ তো, দেহি তো কিরুম উড়তে পারো? ওই জাদুকর উইঠ্যা গেলেন প্রাসাদের ছাদে। পুরা রোম এর লুকজন জড় হইসে প্রথম উড়তে পারা মানুষ দেখার লাইগা। সম্রাট ইশারা করতেই জাদুকর লাফ দিলেন ছাদ থিকা। আর চারপাশে তালির বন্যা বয়া গেল কারন উনি সফলতার সাথে ঠাশ কইরা মাটিতে আইসা পরসেন লাইক এ স্টোন । মারা গেলেন সাইমন দ্যা ম্যাজিশিয়ান।
পেইন্টিং টার নাম “দ্যা ডেথ অফ সাইমন”
৮৭৫ সালে স্পেন এর একজন মুসলমান কবি আব্বাস ইবনে ফিরনাস পাংখা লাগায়া গ্লাইড করনের প্রায় সফল চেস্টা করেন। যদিও তার ফ্লাইট সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারসি খুবি কম। শুধু এইটুকু জানতে পারসি যে উনি পালক দিয়া পাখা বানাইসিলেন, এবং বেশ কিছুদুর গ্লাইড ও করসিলেন। তিনি এই চেস্টার পর মারা যান্নাই কিন্তু মেরুদন্ডে ব্যাপক ইঞ্জুরি খাইসিলেন।
উড়তে শিখনের এই দৌড়ে পিসায়া আসিল না ইংল্যান্ড ও। ১১শ শতকের ইতিহাসে মামসবারি (Malmesbury) বইলা একটা জায়গায় এইরকম ই এক ইতিহাসের সন্ধ্যান পাওন যায়। এই হানে এলমার নামে এক পাদ্রি আসিলেন। ইনি উপড়ে যে ইকারাস আর ডেডালাস এর গল্প ডা কয়া আইলাম সেইটা মন প্রান দিয়া বিশ্বাস করতেন। উনি ঠিক করলেন, নাহ, উড়তে হইব, কি আসে দুনিয়ায়, হুয়াট ইজ আরথ। উনি নিজের দুই হাতে দুইডা হাতে বানানি পাংখা লাগাইলেন। তারপর উইঠা গেলেন মামসবেরি এবির একেবারে চুড়ায়। হা কইরা থাকা বাকি সব মঙ্ক দের সামনে ঈশ্বরের নাম কইরা দিলেন লাফ। কিন্তু আপচুশ। মাটিতে আছ্রায়া পড়লেন তিনি। পা দুইটা ভাইঙ্গা গেল আর সারা জীবনের লাইগা পঙ্গু হয়া গেলেন। কিন্তু তার এই লাফ দেওয়া কি ব্যার্থ হইসিল? আমি বলব, না। কারণ উনি তার ফ্লাইট এনালাইসিস এ লিখা গেসেন, “আমার ব্যার্থতার কারণ, আমি একটা লেজ লাগাতে ভুলে গিয়েছিলাম”। এই “ল্যাঞ্জা” যে কত দরকারি বিষয় সেইটা আমরা আস্তে আস্তে নিজেরাই দেখতে পারব, সাম্নের লেখা গুলা তে।
এলমার দি ফ্লাইং মঙ্কঃ
১২শ শতকে ইংল্যান্ডের ফিলোসফার রজার বেকন প্রথম উদ্যোগ নেন এই উড়নের ব্যাপারটা রে বৈজ্ঞানিক উপায়ে এপ্রোচ করনের। তিনিই প্রথম অরনিহপ্টার (Ornihopter) কনসেপ্ট এর বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা লিখা যান। অরনিহপ্টার হইল এমুন এক যন্ত্র যা পাখির মত পাখা নারায়া উড়তে পারে। এই অরনিহপ্টার এ মানুষ থাকতে পারে আবার নাও থাকতে পারে। রজার বেকন কয়া গেসেন “এক জুড়া পাংখা আর এত্ত গুলা আত্মবিশ্বাস উড়নের লাইগা যথেষ্ট না। তার সাথে দরকার আরো কোন শক্তি।” কিন্তু ওই সময়ের চার্চ তার এই ধারনারে ঈশ্বর বিরোধি বইলা মনে করসিল আর তারে গৃহবন্দি কইরা রাখার আদেশ দিসিল।
রজার বেকন এর স্ট্যাচুঃ
১৪শ শতকে
রেনেসা শুরু হইলে আর্ট এবং বিজ্ঞানে মানবজাতি অনেক নতুন নতুন সৃষ্টি দেখতে পায়। এই সময়ের অন্যতম লিজেন্ড লিয়োনার্দ ডা ভিঞ্চি, উড়তে শেখার এই মহা যাত্রায় সামিল হন আর অনেক গুলা কাজ কইরা যান যা মানুষ কে অনেক দূর আগায়া নিয়া যায় । লিয়োনার্দ এই সময়ে ডিজাইন করেন অরনিহপ্টার (এইডা কি খায় না মাথায় দ্যায় তা উপ্রের প্যারায় লেহা আসে, লাগ্লে আবার পইড়া লন ইট্টূ), হেলিকপ্টার এবং প্যারাশুট। এ ছাড়া তার স্টাডি নোট এ মেকানিকাল উইং আর বাতাসের ফ্লো সম্পর্কে তার পড়াশুনার স্কেচ এবং লেখা পাওয়া যায়। উনার ছাত্ররা প্রায় ই চাইত তার আঁকা ফ্লাইং মেশিন গুলা বানায়া উড়াইতে। কিন্তু উনি বারবার বইলা গেসেন “এখনও না। মানুষ এখনও পাখির মত গতিতে এই ফ্লাইং মেশিন এর পাখা নারাইতে পারবে না, তার জন্য মানুষের দরকার হবে আরো শক্তিশালি মেশিন এর”। কি বুঝলেন? উনি কিন্তু মোটরাইজড ফ্লাইট এর একটা আভাস দিয়া গেসেন সেই আমলেই। বিরাট কাবিল লুক আসিলাইন, উফফ।
লিয়োনার্দ ডা ভিঞ্চি এর ডিজাইন করা অরনিহপ্টার
১৬৮০ সালে ইটালির বিজ্ঞানি জিওভানি আলফ্রান্সো বরেলি, যারে কিনা Biomechanics এর বাপ বলা হয়, মানুষের হাত এর সাথে পাখির পাংখার একটা তুলনামুলক গবেষনা প্রকাশ করেন। ওই খানে তিনি বলেন যে মাইন্সের হাতের মাছল পাওয়ার দিয়া পাখির পাংখার সম্পরিমান নারানি জীবনেও সম্ভব না। পাখির পাঙ্খার শক্তি তার নিজের ওজনের চেয়ে ১০ হাজার গুন বেশি।
বরেলির এই আবিষ্কার দুনিয়া জুইরা মাইন্সের পাংখা লাগায়া উড়নের চেষ্টা অনেক খানি ই কমায়া দিল আর বাইচা গেল আরও অনেক গুলা প্রান।
এরপরের ইতিহাস মানুষের বাতাসের চেয়ে হাল্কা যান আবিষ্কার এর ইতিহাস। বেলুন, ফ্লাইং শিপ এর ইতিহাস। সেই বেলুন যাত্রার উড়তে শেখা নিয়া ২য় পর্বে ছবি সহ বিস্তারিত থাকবে। আশা করি এই লেখা গুলা পইড়া আপ্নেও ঠিক অতটাই মজা পাইতাসেন যতটা আমি এইগুলা নিয়া লিখতে পাইরা পাইতাসি। লেখা সম্পর্কে যে কোন মতামত পড়ের লেখা গুলা রে আরো ভাল করতে আমারে সাহায্য করবে।
এতক্ষণ কষ্ট কইরা পড়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ। শুভ নববর্ষ।
তথ্য সূত্রঃ
ইকারাস
http://en.wikipedia.org/wiki/Icarus
স্কাই ল্যান্টারন
http://en.wikipedia.org/wiki/Sky_lantern
সাইমন দা ম্যাজিশিয়ান
http://en.wikipedia.org/wiki/Simon_Magus
আব্বাস ইবনে ফিরনাস
http://en.wikipedia.org/wiki/Abbas_Ibn_Firnas
এলমার
http://en.wikipedia.org/wiki/Eilmer_of_Malmesbury
রজার বেকন
http://en.wikipedia.org/wiki/Roger_Bacon
অরনিহপ্টার
http://en.wikipedia.org/wiki/Ornithopter
লিয়োনার্দ ডা ভিঞ্চির ফ্লাইং মেশিন
http://www.flyingmachines.org/davi.html
জিওভানি আলফ্রান্সো বরেলি