৩০৬/৩৬৫

লেখার তারিখঃ এপ্রিল ২১, ২০১৯, ৫:০৩ পি এম

কলম্বিয়ার শেষ মিশন । পর্ব – ১

যারা স্পেস শাটল সম্পর্কে একেবারেই কিছু জানেন না তাদের এই লেখাটা পড়ার আগে এই নোট টা পড়ে দেখার জন্য অনুরোধ করছি। তাতে অনেক টার্ম যেমন স্পেস শাটল কি, অরবিটার কি ইত্যাদি ক্লিয়ার হয়ে যাবে।

https://www.facebook.com/notes/faisal-akram-ether/%E0%A7%A8%E0%A7%AE%E0%A7%A9%E0%A7%A9%E0%A7%AC%E0%A7%AB/10153578332566270/

দুই হাজার তিন সালের ফেব্রুয়ারীর এক তারিখ। শনিবার এর সকাল। ১৬ দিন মহাশূন্যে নির্বিঘ্নে কাটানোর পর স্পেস শাটল কলম্বিয়া এর ৭ জন ক্রু মেম্বার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন পৃথিবীতে ফিরে আসার প্রায় শেষ ধাপ “রি এন্ট্রি” স্টেজ এর। সকাল ৮.১৫ তে (ইস্টার্ন স্ট্যান্ডার্ড টাইম) পাইলট উইলিয়াম ম্যাককুল এবং কমান্ডার রিক হাসবেন্ড তাদের স্পেস শাটল এর অরবিটারকে কয়েকটা রোল দেওয়ালেন অরবিটার এর ট্র্যাজেকটরি অর্থাৎ বক্রাকার গতিপথ কে স্লো করার জন্য। সকাল ৮.৪৫ মিনিটে অরবিটারটি প্যাসেফিক মহাসাগর এর উপর দিয়ে পৃথিবীর অ্যাটমোসফিয়ার এ প্রবেশ করলো। যেভাবে ধারনা করা হয়েছিল ঠিক সেভাবেই এটমোস্ফিয়ারিক গ্যাস এর কারনে অরবিটার এর ডানার সামনের ধারগুলো গরম হতে শুরু করে যা প্রায় ২৫০০ ডিগ্রি ফারেনহাইট অর্থাৎ ১৩৭১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস এ পৌছায়। নাসার এর চেয়েও আরো বেশি তাপমাত্রা উঠবে চিন্তা করেই স্পেস শাটল এর অরবিটার ডিজাইন করেছিল তাই এ পর্যন্ত অস্বাভাবিক কিছু ছিল না।

অরবিটার তার স্বাভাবিক গতিপথ অনুসারে নামতে নামতে আরো পূর্ব দিকে যেতে থাকে। কিন্তু বাম পাশের ডানার তাপমাত্রা পরিমাপের সেন্সরটা হঠাৎ চার্ট এর বাইরে একটা রিডিং আসার সংকেত দ্যায়। হিউসটন, টেক্সাস এর মিশন কন্ট্রোল এই অদ্ভুত রিডিং টা লক্ষ্য করে এবং সাথে সাথেই এই মিশন কমান্ডার হাসবেন্ড কে জানিয়ে দ্যায়। কমান্ডার হাসবেন্ড জবাবে কিছু একটা বলতে শুরু করেন কিন্তু তার কথা কাটা পরে যায়। সকাল ৮.৫৯ এ শাটল অরবিটার থেকে ২য় বার থেকে যোগাযোগ করা হয় কিন্তু শুধু “রজার…” পর্যন্ত বলার পর পরই মাঝপথে আবার যোগাযোগ কেটে যায়। মিশন কন্ট্রোল এবার শাটল এর বাকি সব সেনসর থেকে ফেইল করার সিগ্ন্যাল পেতে থাকে এবং সকাল ৯.০০ মিনিট এ রাডার থেকে স্পেস শাটল কলম্বিয়ার সকল সিগ্ন্যাল হারিয়ে যায়।

সকাল ৯ টা ১২ মিনিট এ মিশন কন্ট্রোল টীম এর একজন একটি ফোন কল রিসিভ করেন। যিনি ফোন করেছিলেন তিনি জানান যে টেলিভিশন এ স্পেস শাটল কলম্বিয়া টুকরো টুকরো হয়ে পৃথিবীতে পড়ার ভিডিও প্রচারিত হচ্ছে। নির্ধারিত প্রটোকল অনুসারে মিশন কন্ট্রোল টীম কন্ট্রোল রুম লক করে দ্যায় এবং সব মিশন সম্পর্কিত ডেটা আর্কাইভ করতে শুরু করে।

আগস্ট ২০০৩ এ Columbia Accident Investigation Board (CAIB) এই একসিডেন্ট এর কারণ সম্পর্কিত তাদের রিপোর্ট প্রকাশ করে। স্পেস শাটল কলম্বিয়া উৎক্ষেপণ এর পর পরই একটা ১৯ ইঞ্ছি লম্বা এবং ১১ ইঞ্ছি প্রস্থের ১.৭ পাউন্ড এর ইন্সুলেশন এর কাজে ব্যাবহৃত ফোম এর টুকরা এর অরবিটার এর বাম ডানায় আঘাত করে এবং সেখানে একটা বড় হোল তৈরি করে। অরবিটার যখন পৃথিবীতে ফেরত আসার জন্য রি এন্ট্রি করে তখন এই হোল দিয়ে প্রচন্ড গরম বাতাস অরবিটার এর ডানার ভেতর প্রবেশ করে। এতে ডানার ভেতরের স্ট্রাকচার ভেঙ্গে পরে যা প্রথমে বাম পাশের ডানা এবং এরপর পুরো অরবিটারটিকেই ভেঙ্গে ফেলে।

মজার জিনিষ হলো CAIB এর রিপোর্ট টেকনিকাল ইস্যুকে হাইলাইট করা হলেও আরেকটা অংশে এটাও হাইলাইট করা হয় কিভাবে নাসা এর ম্যানেজার দের বিভিন্ন কার্যকম এই একসিডেন্ট কে তরান্বিত করে। হাভার্ড বিজনেস রিভিউ এর ২০০৪ সাল এর এক প্রতিবেদন এর উপর ভিত্তি করে আমার লেখাটাও শুরু এখান থেকেই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *