লেখার তারিখঃ মার্চ ৩, ২০১৮, ৩:৩৯ পি এম
বই এর রিভিউ
পদ্ম বলে, এসো – রাফিউজ্জামান সিফাত
আমার কোন উপন্যাস তখনি ভাল লাগে যখন আমি এর চরিত্র গুলো কে বুঝতে শুরু করি। সব চরিত্র যে বুঝতে হবে এমন না। কিন্তু পড়তে পড়তে চরিত্র গুলা যখন চেনা হয়ে যায়, যখন প্রত্যাশিত ডায়লগ বলে, অপ্রত্যাশিত কিছু করে বসে, তখন সেই উপন্যাস টা জমে যায়। বই রেখে উঠে পরা অসম্ভব হয়ে যায়। পদ্ম বলে এসো তে যখন আমার এই অনভূতি টা হয়েছে অনেক দিন পর। মনে হয়েছে চরিত্র গুলো আমার খুব পরিচিত কেউ, আসে পাশেরই মানুষ। যখন বই রেখে উঠে যেতে হয়েছে সমাজের ডাকে তখন নিজেকে মনে হয়েছে পদ্ম বলে, এসো তেই আছি এখনো। চারপাশে যা ঘটছে তা পদ্ম বলে, এসো এরই অন্য কোন ঘটনা। লেখক সিফাত এই ইলিউশনটা পাঠকের ভেতর ঢুকিয়ে দিতে সফল হয়েছেন।
ইলিউশন এমনি এমনি তৈরী হয় না। প্রথমে ভিক্টিম এর বিশ্বাস অর্জন করতে হয়, তারপর বাস্তবের সাথে পরাবাস্তব মিশাতে হয় ধীরে ধীরে। একসময় ভিক্টিম পার্থক্য করতে পারে না কোনটা বাস্তব না আর কোনটা মায়া। লেখক সিফাত এর পদ্ম বলে, এসো উপন্যাস এর প্রধানত তম বৈশিষ্ট্য এবং শক্তি হলো এর গল্প টা প্রচন্ড রকম আট পৌরে গল্প। এখানে বিত্তের ঝলক নেই, নায়োকোচিত বীরত্ব নেই, এমন কি কোন উচ্চমার্গিয় সারকাজম করে নিজেকে খুব ফানি বা উইটি প্রমান করার চেষ্টাও নেই। এখানে আছে নিউমার্কেট এর ভিড় এ অপু কে খোজা রেনু, আছে রাস্তার জ্যাম এ বিলাসবহুল গাড়িতে বসে থাকা দুর্নীতিবাজ রাশেদ , ছাদে বাতাবিলেবুর গাছ আছে, অসুস্থ লুতফার জন্য কিনে আনা রঙ্গিন ম্যাক্সি আছে। যে পাতা তেই যাই মনে হবে একটা মধ্যবিত্ত পরিবারে ঢুকে গেছি , যার আনন্দ বেদনা অভিমান গুলো আমার খুব চেনা।
লেখক সিফাত এর ২য় উপন্যাস “সুয়া উড়িলো উড়িলো জীবেরও জীবন” এর পটভূমি ছিল মফঃস্বল শহর আর এখানে একেবারেই রাজধানী শহর। তাই দৃশ্য গুলো মিলিয়ে নেয়া যায় সহজেই। তবে সেই উপন্যাস এর লেখক সিফাত কে যদি এই উপন্যাস এ খুজতে গেলে ধাক্কা খেতে হবে নিশ্চিত। বাস্তবের সাধাসিধে সিফাত কিভাবে উপন্যাস এ গল্পের প্রয়োজনে এত নির্দয় নিষ্ঠুর হয়ে গেলেন তা এক আশ্চর্য ব্যাপার।
আমি পড়তে পড়তে কখনো অপু হয়ে যাই। কখনো শাফকাত হব কিনা ভাবি। “জাগরন” বলে যে অরাজনৈতিক সংগঠন টির কথা আছে তা আমাকে প্রচন্ড ইন্সপায়ার করে এবং একই সাথে আফসোস করায়, আহা এরকম একটা সংগঠন যদি বাস্তবে থাকতো, অসম্ভব তো না। তখনই মনে হয় উপন্যাস হিসেবে পদ্ম বলে, এসো এর সফলতা টা এখানেই। শহুরে জীবনের বাস্তবতা কে পরাবাস্তব না বানিয়ে অতিবাস্তব পর্যায়ে নিয়ে যাওয়াতেই।
এবারের বই মেলা থেকে কিনেছিলাম বইটা। রকমারি তেও পাওয়া যায়ঃ
https://www.rokomari.com/book/156335/%E0%A6%AA%E0%A6%A6%E0%A7%8D%E0%A6%AE-%E0%A6%AC%E0%A6%B2%E0%A7%87,-%E0%A6%8F%E0%A6%B8%E0%A7%8B