লেখার তারিখঃ এপ্রিল ১০, ২০১৬, ০৬:৫০ এ এম
[Spoiler Alert : সিনেমা এখনো না দেখে থাকলে/ দেখার প্ল্যান থাকলে, না পড়াই ভাল]
আমরা কালকে “কৃষ্ণপক্ষ” দেখতে গেসিলাম। যমুনা ফিউচার পার্কের হলে শনিবার দুপুর ২.৩৫ এর শো। ১.৩০ এ যখন কাউন্টার এর সামনে আসলাম দেখলাম প্রায় ফাকা কাউন্টার আর ওইপারে এক কোনায় কয়েকজন বিরস বদনে বইসা আসে। কারন কোন এক কারনে বেটমেন বনাম সুপারমেন এর শো ক্যান্সেল হইসে। অনেক লুকজন টিকিট ফেরত দিয়া গালাগালি করতে করতে ফেরত যাইতাসে।
ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করলাম, “ভাই, কৃষ্ণপক্ষ এর টিকেট?”। সে বিরক্ত কন্ঠে জবাব দিল, “এখন দিতেসি না, পরে আসেন।”
ভয়ে আর জিগাই নাই। নিচে এট্টু ঘুরাঘুরি কইরা এপেক্স জুতার দুকানের সেল এ দুই জোড়া জুতা কিন্না যখন উপরে আইলাম তহন বাজে ২ টা। আবার বুকে সাহস নিয়া জিগাইলাম “বাইয়া, টিকেট?” এই বার কাজ হইল। আর উনাদের মন খারাপের কারন ও বুঝা গেল।
উনি জানাইলো কোন এক কারনে যমুনা ফিউচার পার্ক এর এসি কাজ করতাসে না ঠিকমত। আমি জিগাইলাম একবারেই কি এসি নাই? উনি জানাইল, “স্যার আছে, তয় এসির পাওয়ার কম”। আমি ভাব্লাম জিগামু তইলে নন এসির টিকিট দ্যান। ডরে আর জিগাইনাই। দুই পিস টিকিট কিন্না অ রে বগল দাবা কইরা সিনেমা হলের দরজার কাসে আইসা দাড়াইলাম।
আইসা দেখি বেটমেন বনাম সুপারমেন এর বিশাল কাট আউট লাগাইসে। আমি ভাব্লাম বিদেশি সিনেমার লাইগা এত আর কৃষ্ণপক্ষ এর তো একটা পোস্টার ও চোখে পরল না ঠিক মত। যাউকগা ইনফ্রাস্ট্রাকচার এর অভাব আর অসহযোগিতার এর লাইগা এই দেশের সিনেমারে কবে কে ঠেকায়া রাখতে পারসে। লাগবো না এসি, দিল ঠান্ডা হইলেই হইল।
ঢুক্লাম সময় এর অনেক আগেই। পুরা হলে আমরা ছাড়া আর চার পাচ জন ছিল। যার মধ্যে দুই জন লাইট নিভা মাত্র চুম্মা চাটি তে এতই ব্যস্ত ছিল যে জাতীয় সংগীত এর সময়ও উইঠা দাঁড়ায় নাই। কিছু কই নাই। থাকগা সিনেমা দেখতে আসছি, অমানুষ মানুষ করতে তো আসি নাই।
শুরু হইল সিনেমা। একটা ছোট গ্রাম্য বিয়ার অনুষ্ঠান এর সিন দিয়া। আমি প্রতিটা সিন খুব মনোযোগ দিয়া দেখসি। মারুফ ভাই আমাদের ডাইরেক্টর এর ছোট খাট হিন্টস গুলা ধরতে শিখাইসিলেন। অগুলা খুজার ট্রাই করসি। বিরতি বা ইন্টারমিশনটা খুব পার্ফেক্ট টাইম এ ছিল। অ এর “এরপর কি হইল, বল না, ও কি মরে গেসে, ও কি মরে গেসে” শুইনা বুঝতে পারসি যে সিনেমার ডিরেক্টর গল্প টা বলতে পারাতে সফল।
নায়ক রিয়াজের অভিনয় নিয়া ত বলার কিছু নাই। স্বাভাবিক অভিনয় ছিল। কিন্তু নায়িকা মাহিয়া মাহি ডুবাইসেন। উনি যতখন ফটোগ্রাফ হয়া ছিলেন আই মিন মুখ বন্ধ কইরা ছিলেন ততখন ভালই লাগতাসিল সিনেমাটোগ্রাফার এর মুন্সিয়ানার কারনে। কিন্তু মুখ খুল্লেই বা হাত পা নাড়ানো লাগে এমন কিছু সিন আসলেই উনাকে খুবি স্টিফ লাগসে আমার কাছে। পাশে থেইকা অ জিজ্ঞেস করসিল “আর কোন নাইকা ছিল না দুনিয়ায়?”
আমি অ রে খুব ভাব সাব নিয়া বুঝাইলাম, “দেখ, কমার্শিয়াল সিনেমা তে একটা আই ক্যান্ডি লাগে। নাইলে লোকজন ত রিয়াজের স্যান্ডো গেঞ্জি পরা বডি দেখতে আসবে না। আসবে মাহির নাম শুইনা। আর একটা বৃষ্টি ভেজা গান ও আসে”। গান টা অশ্লিল লাগে নাই অবশ্য। ভালই ছিল গান এর দৃশ্যায়ন গুলা।
পার্শ্ব চরিত্র গুলার মধ্যে নায়িকার বাবার অভিনয় ভাল লাগে নাই। পুলিশের এক্স আইজি এর এমন করুন কিন্তু রাগি ভাব ভংগি মানায় নাই। যদিও তার স্ক্রিন টাইম ও কম। নায়কের দুলাভাই চরিত্রটা একটা ডার্ক টাইপ এর চরিত্র। রেসিসম কইরা বলতাসি না। যিনি করসেন সেই আজাদ আবুল কালাম ও ডার্ক, চরিত্রটাও ডার্ক। উনার অভিনয় ভাল ছিল। নায়ক এর বন্ধুবান্ধব রাও অতি অভিনয় বা ভাড়ামি করেন নাই, তাই ছন্দপতন ঘটে নাই কোথাউ।
পরিচালক হিসাবে শাওন এর প্রথম ছবি বইলাই হয়ত তিনি কিছুটা সেফ খেলতে চাইসেন। হিউমার কম রাখসেন কিন্তু যেটূকু রাখসেন তা বেশ subtle। আর থিম এর দিক থেইকা সিনেমাটাই যেহেতু ডার্ক, তাই হিউমার বেশি না থাকাতেই ভাল হইসে। অনেক মনে রাখার মত বা উচ্চ মার্গিয় সিম্বলিক কোন দৃশ্য না থাকলেও যা ছিল তাতেই অনেক যত্নের ছাপ খেয়াল করা গেছে। কিছু ডিটেইল এর প্রতি লক্ষ্য রাখলে ভাল হইত আরো। যেমন একটা গানের দৃশ্যে একজন কে দুই হাত দিয়ে মুঠি করে ধরে হারমোনিকা বাজাতে দেখা গেসে আর আমার খুত খুতা চোখে মনে হইসে, কিন্তু হারমোনিকা তো এভাবে বাজায় না। আবার অন্যদিক এ অফিসের দৃশ্যে দুলাভাই হুদাই ল্যাপটপ এ এম এস ওয়ার্ড খুইলা কাজ করার ভান করেননাই। স্ক্রিন এ আউটলুক মেইল ক্লায়েন্ট খোলা ছিল। আমি খেয়াল করসি।
নায়িকার বড় বোন এর চরিত্রে মৌটুসি বিশ্বাস অনবদ্য অভিনয় করেছেন। মাঝে মাঝে মনে হইতেসিল এই মেয়েটা এত জামাই পাগল ক্যান, বিরক্তিকর। তখন বুঝসি উনি চরিত্রটার রুপদানে সফল। ফেরদৌস এর একটা ছোট ভুমিকা আছে, নায়িকার বিয়ের প্রার্থি হিসাবে একটি বেইল নাই চরিত্রে। উনি উনার এজ ইউজুয়াল কারিশমা দিয়া তাতে ভালই উত্রায় গেসেন।
তবে সব কিছু ছাড়ায় গেসে নায়কের বড় বোন এর চরিত্রে তানিয়া আহমেদ এর অভিনয়। পুরা সিনেমাটাকে উনি মোটামুটি একাই টেনে অনেক উপড়ে নিয়ে গেছেন যদিও পোস্টার এর কোথাউ তার উপস্থিতি তেমন ভাবে নাই। শাওন তার সিক্রেট উইপেন কে এমন ভাবে ব্যবহার করেছেন যে তানিয়া যে সকল দৃশ্যে ছিলেন পর্দায় চোখ যেন সুপার গ্লু দিয়ে আটকানো ছিল। অনেক দৃশ্যেই একটা সংলাপ ও না বলে শুধু ফেসিয়াল এক্সপ্রেশন দিয়ে, চোখ দিয়ে এত টা ঘৃনা, এতটা দুঃখ, এত টা অসহায়ত্ব ফুটিয়ে তোলা যায় তা তানিয়ার অভিনয় কে না দেখলে বোঝা যাবে না। পুরা সিনেমায় যদি একজন মাত্র অভিনেতাও দর্শকের মনে ছাপ ফেলতে পারেন তা হচ্ছেন তানিয়া।
শেষ দৃশ্য টা হলে বসে খুব বেশি নাটকিয়তা মনে হইসিল। আই সি ইউ এর ডাক্তার কে নায়িকা বললো “আমি কি নায়কের সাথে একটু একা থাকতে পারি?” আর ডাক্তার বের হয়ে গেল? আর হস্পিটাল এর রুম এ এত ধুপধুয়া আসলো কইত্থে? এও কি বাস্তবে সম্ভব। কিন্তু এত ঘন্টা পরে এসে মনে হইতাসে, না ঠিক ই আসে।
আমার অপরিপক্ক মন সিনেমার অন্তর্নিহিত অর্থের চেয়ে লিটারেল মিনিং বেশি খুজতেসিল। তাই শেষ দৃশ্যটা তখন বুঝি নাই। এখন বুঝসি।
আসলেই তো এইটা একটা জীবন মৃত্যুর মাঝখানের সেই রহস্যময় জায়গাটার একটা দৃশ্যায়ন ছিল। এইখানে এইরকম কুয়াশা কুয়াশা ভাব তো থাক্তেই পারে। হেলথ মনিটরিং ইকিইউপমেন্ট গুলা বন্ধ দেখানোটাও হয়তো ইচ্ছে করেই ছিল। এই দৃশ্যের পরে নায়িকা হয়তো একা হয়ে যাবে, তার পৃথিবী ধোয়াটে হয়ে যাবে। বাইরের এবং ভিতরের আর পর্দার সাম্নের সব গুলা মানুষের জীবনে হয়তো নেমে আসবে এক গভীর “কৃষ্ণপক্ষ”।