২৮৫/৩৬৫

লেখার তারিখঃ এপ্রিল ৬ ২০১৬, ১১:৩৯ পি এম

রাগ করা আসলে খুব সহজ। খুউউব ই সহজ। এক্সপেক্টেশন অনুযায়ী কিছু একটা হয় নাই, রাগ করে ফেললাম। কেউ আমার ভুল ধরায় দিসে, কত্ত বড় সাহস, রাগ করে ফেললাম। দেশের কোন সমস্যা সমাধান হইতাসে না, সরকারি সব কাজ খারাপ, বিরোধী দল এর সব কাজ খারাপ, সবাই চোর-বাটপার-ধান্দাবাজ, রাগ করে ফেললাম। পেপারে কোটি কোটি টাকা লুটপাট, দুর্নীতি করার খবর, আমার তো লাখ লাখ টাকাও নাই, ক্যান নাই, রাগ করে ফেললাম।

রাগ জিনিষ টা এমন যে এর হাতে আত্মসমর্পন কইরা দিলে এ আস্তে আস্তে পুরা মন এর দখল তো ন্যায় ই, পুরা শরীর এরও দখল নিয়া ন্যায়। পরে এক্সপেলেনেশন দিতে হয়, সরি, রাগের মাথায় হুশ ছিল না। যে লোক টা ফ্লোর এ একটা পিপড়া দেখলেও সাইড এ পা ফেলে সেই দেখা যায় রাগ উঠলে আরেকজন রে থাবর দিয়া গালে দাগ কইরা ফেলসে। আর রাগের মাথায় মানুষ কি কি করে তা আমরা সবাই সিনেমা, টিভি, বাস্তব জীবনে দেখসি তাই আর ওই দিকে না যাই। হাত মুঠি করা, দাত কিড়মিড় করা, ফোশ ফোশ কইরা শ্বাস ফালানি, মিন মিন করা মেয়েটার গলার ভয়েস এর হঠাত ভলিউম আপ হয়া যাওয়া, এগুলা খেয়াল করলেও বুঝা যায় যে রাগ শরীরের দখল নিয়ে নিসে। তখন “রেগে গেলেন তো হেরে গেলেন” মার্কা কথা বার্তা বুঝাইতে গেলে উলটা “বুঝাতে গেলেন তো মাইর খেলেন” সিচুয়েশন হয়া যাইতে পারে।

কঠিন কাজ টা হইল, রাগ হইলেও রাগ কে নিজের মন আর শরীর এর দখল নিতে না দেওয়া। এইটা আজকে ওয়াদা কইরা, কালকে থেইকাই হয়া যাবে না। কিংবা মাথায় নিদ্রা কুসুম, নিদ্রা হাফ বয়েল্ড ইত্যাদি মাখলেও হবে না। জিনিষ টারে নিজের সিস্টেম এ আনতে হবে সময় নিয়া। না রাগ হওয়া চর্চা করতে হবে। তবে সবার প্রথম স্টেপ হইল, নিজের কাছে নিজেরে স্বীকার করতে হবে যে, ইয়েস, আই হার্ট পিপল হয়েন আই এম এংরি। “ভালইসে রাগ করসি” এই এটিচিউড এর মানে হইল সেই মানুষটা মনবিজ্ঞান এর ভাষায় “ডিনায়াল” স্টেজ এ আসে। এই স্টেজ এ আটকায় গেলে সামনে আগানো যাবে না।

আরেকটা জিনিষ আমরা চর্চা করি তা হইল রাগ চেনেলাইজ করা। মানে একজন এর কাসে বকা খায়া আরেকজন এর উপর সেই রাগ টা ঢাইলা দেওয়া। যেহেতু আমি এই কাজ টা কোনদিন করি নাই তাই আমি ভাল জানি না এই সময় তারা কি ভাবে। কিন্তু আমার মনে হয়, ইনারা চিন্তা করে এই ভাবে, আমি বকা খাইসি, আমি রিগ্রেট ফিল করতাসি, যতখন না আরেকজন রেও আমি এই রিগ্রেট ফিলিংস টা না করামু ততখন সে বুঝবে না আমি কিসের মধ্যে দিয়া যাইতেসি। তাই তারেও আমার মিসারেবল ফিল করাইতে হবে। ব্যাপার টা এমন যে কেউ আমার গায়ে আইসা আগুন লাগায় দিয়া গেল, আমি তারপর কয়েকজন এর গায়ে আগুন লাগায়া দিয়া দাঁড়ায় দাঁড়ায় পুড়লাম আর তাদের দিকে তাকায় তাকায় বল্লাম, দ্যাখ শালারা, দ্যাখ পুড়তে কেমন লাগে দ্যাখ।

আগুন ছড়াইতে দেওয়া যাবে না। নিজে পুড়তে হবে। যে মন থেকে ঠিক হইতে চায় সে আপ্নারে পুড়তে দেখলে নিজেই সতর্ক হয়া যাবে। বাংলাদেশে রাগ জিনিষ টাকে খুব সমীহ করা হয়। ওরে ঘাটাইও না, ওর রাগ বেশি। আমি সারাজীবন শুনতে শুনতে বড় হইসি, লোকজন রে ঝাড়ির উপর না রাখলে কাজ হয় না। হয়তো আসলেও হয় না কোন কোন ক্ষেত্রে কিন্তু ইট ডাজ নট হ্যাভ টু বি দিস ওয়ে। কাজ হয় না কারন আমাদের অভ্যাস ঝাড়ি খাওয়ার পরে সিরিয়াস হওয়া। এই অভ্যাস পালটাইতে হবে।

রাগ যে হয় তাকে সবাই ভয় পায়। কিন্তু একজন এর ভয় এর পাত্র হয়া কি লাভ? একজন আমাকে ভয় পায়া একটা কাজ করল, আর একজন আমার প্রতি তার শ্রদ্ধাবোধ থেইকা কাজ করলো। দুইটার আউটপুট হয়তো আপাতত সেম হবে, কিন্তু দুইদিন পর যে আমার রাগ কে ভয় পায়া কাজটা করলো তার কাজ হবে যতটুকু করতে বলা হইসে ততটুকুই। আর যে শ্রদ্ধা বোধ আর ভালবাসা থেইকা করলো সে ভাববে এই খানে আর কি নতুন ভ্যালু এডিশন করা যায়, আর নতুন কি করা যায় এই কাজ টার সাথে ।

এই খানে বলে রাখি, আমি কোন মনবিজ্ঞান এর থিউরি থেইকা এই সব বলতাসি না। আমি শুধু চিন্তা করতাসি আমি কিভাবে রাগ নিয়ন্ত্রন এ রাখি, তাতে আমার কি লাভ হয় আর সেগুলাই লিখতাসি। আমি রাগ হই, প্রচুর রাগ হই, কিন্তু আমাকে শেষ কবে কেউ রাগতে দেখসে কেউ মনে করতে পারবে না। আমার মনে হয় ইটস অল এবাউট, রাগ কে কত টা ঘৃনা করি আমি আর কতটা বিশ্বাস করি যে এ রিয়েকশন ডাজ নট সল্ভ এনিথিং, বাট পেশেন্স ডু।

রাগ আর জিদ কে একসাথে মিলায় ফেললে হবে না। আমার ভাল করার জিদ থাকতে পারে, আমার কিছু পাওয়ার জন্য জিদ চেপে যাইতে পারে। দ্যাটস নরমাল দ্যাটস কল্ড ডিটারমিনেশন। কিন্তু এংগার, এই ডিটারমিনেশন এর রাস্তা থেইকা অনেক দূরে নিয়া যায়।

অনেক রকম মেমে দেখি ইন্টারনেট এ, ফেসবুকে যার সামারি হইল, রাগী মানুষ গুলা আসলে ভাল মানুষ হয়, আর না-রাগী মানুষ গুলা হয় মিচকা শয়তান। তারপর ড্যাশ দিয়া হুমায়ুন আহমেদ লিখে দিলেই হয়া গেল কাজ। সবাই আহা উহু, শেয়ার শেয়ার, এক্কেরে মনের কথা ইত্যাদি বলা শুরু করে । এগুলা রাগি মানুষের রাগ কে জাস্টিফাই করার বাহানা ছাড়া আর কিছু না। স্মোকিং এর ছবি অনেক গ্ল্যামারাস কইরা তোলাই যায়, কিন্তু দ্যাট ডাজনট মিন যে স্মোকিং ইজ গুড, তাই না?

আমার বরং রাগি মানুষ গুলার উপর করুনা হয়। আহারে কত দুর্বল মানুষ গুলা। নিজের উপর কোনো নিয়ন্ত্রন ই নাই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *