লেখার তারিখঃ ডিসেম্বর ৩১, ২০১৫, ৮ঃ০৩ পি এম
২০১৪ টা প্রচন্ড খারাপ গেসিল। সব দিক থেইকা সব দরজা বন্ধ হয়া গেসিল । অফিসে বস এর সাথে সম্পর্ক খারাপ হয়া গেসিল। ক্যামেরা গিয়ার সব ছিন্তাই হয়া গেসিল। প্রচন্ড ডিপ্রেশন এ পড়সিলাম কিন্তু কাউকে বলতে পারতেসিলাম না। সব কিছু থেইকা পালায়া বেড়াইতাসিলাম। শেষে ২০১৪ এর এই দিন এ সেলুনে গিয়া চুল দাড়ি কাইটা একদম ছোট ছোট কইরা ফালাইসিলাম। কারন মনে হইতাসিল দেয়ালে পিঠ যখন ঠেইকাই গেসে , ঠিকাসে, তাইলে এখন সামনে আগাই। প্রিয় ডিপ্রেশন, লেটস ড্যান্স।
খারাপ সময় পার করার জন্য কিছু নিজস্ব তরিকা থাকে সবার। আমার তরিকা হইল ব্যাস্ত হয়া যাওয়া, নতুন কিছু শুরু করা, বন্ধু দিয়ে চারপাশে দেয়াল তৈরি কইরা রাখা। আমি অফিসের কাজে মনোযোগ বাড়াইলাম, উকুলেলে কিন্না শিখা শুরু করলাম আর আমি চরম অসামাজিক হইলেও আমার বন্ধু রা আমারে ছাইড়া যায় নাই। তাই সব কোলবালিশ এর মত (রুপক অর্থে মিন করসি, ফিজিকাল রিসেম্বলেস কাকতালীয় মাত্র) ফ্লাফি বন্ধু দের দিয়া চারপাশ ঘিরা ফালাইলাম। আইডেন্টিফাই করলাম ঠিক কোন কোন সময় ডিপ্রেশন এটাক করে। ওই সময় গুলায় বন্ধু গো কাছে গিয়া বয়া থাকতাম।
ডিপ্রেশন থেইকা উইঠা আসার সময় টা স্মুথ ছিল না। যখনি একটু ভাল থাকা শুরু করসি তখনি আবার ধাক্কা আসছে একটা। আমার একটা বিড়াল ছিল। পৃথিবীর সবচেয়ে লক্ষী বিড়াল। নাম ছিল অরু। ও মইরা গেল একদিন। সে দিন সারাদিন অফিস করসি। একটু পর পর কাইন্দা আসছি ওয়াশ্রুম এ গিয়া। অফিসের কেউ বুঝে নাই কি যাইতাসে আমার উপর দিয়া। তার পর পর ই এই নোট লেখা শুরু করসিলাম। লিখতে লিখতে মাঝে মাঝে অফিসের ইমোশন উইঠা আসছে নোট এ। সেইটা নিয়াও বস এর সাথে কেচাল লাগসে। উনারে বুঝাইতে পারি নাই যে আমার আসলে ভিতরের বাস্প সব রিলিজ করার আর জায়গা ছিল না কোন এই নোট ছাড়া।
বন্ধুরা পরামর্শ দিসিল আই শুড স্টারট ডেটিং এগেইন। ট্রাই করসিও। কিন্তু যুইত হইতাসিল না কোথাউ ই। সুর এর সাথে লিরিক্স টা ঠিক বস্তেসিল না কোথাও। আমার অনেক কে না বলে দিতে হইতেসিল। আমি অনেকের কাছে অপ্রিয় হয়ে যাইতেসিলাম।
তারপরও মনে হইসে, না এইটাই সব না। এখানেই সব শেষ না। তাই হাল ছাড়ি নাই। ভালবাসার উপর বিশ্বাস হারাই নাই। অ এর সাথে যখন প্রথম দেখা করতে গেলাম , রাশা কে বলসিলাম দোস্ত, আমার মনে হয় এইখানেও আমার কোন আশা নাই। কই অ (উপরে তাকানি) কই আমি (নিচে তাকানি)। রাশা সেদিন হাসছিল। কিন্তু কেম্নে কেম্নে জানি এই আউলা ঝাউলা বাউলা কাউলা ছেলেটারে অ ভালবাসা দিয়া ভরায় ফেললো। আমি প্রথমে ওরে না কইরা দিসিলাম। ডায়লগ দিয়া বলসিলাম, দেখো, আমার লাইফ অনেক উলটা পালটা , আমি এই ছেড়া বেড়া লাইফে তোমারে জড়াইতে চাই না। অ চুপ চাপ মাথা নাইরা মাইনা নিয়া চইলা গেসিল।
অভিমান করতে করতে আমার চামড়া অনেক মোডা হয়া গেসে। তাই আমার রিয়ালাইজ করতে টাইম লাগসিল। কিন্তু কয়েকটা দিন পরে রিয়ালাইজ করলাম অ রে না বলা মানে অ রে সারাজীবন এর জন্য হারানো। অ রে না বলা মানে অ রে অন্য কারো সাথে দেখা। অ এর মত কাউরে না বলা মানে আমি পৃথিবীর সব চেয়ে গাধা গাধাটার চেয়েও গাধা, Asser than the Assest of all the Asses।
তাই এক সন্ধ্যায় অফিসের পরে দৌড়াইতে দৌড়াইতে অ র কাছে গেলাম। গিয়া বললাম, আমি হয়তো এখনি তোমাকে তোমার মত সমান সমান ভালবাসতে পারুম না ।কিন্তু আমারে একটু সময় দাও, রাশা আমারে নাম দিসে ধুলা পড়া বই। সেই বই এর উপরের ধুলা গুলা শইরা যাইতে দাও, আমি অনেক সুন্দর কইরা ভালবাসুম, ইনশাল্লাহ। অ কিছুক্ষণ চুপ চাপ জরজেস ক্যাফে এর আরনল্ড পামার এ চুমুক দিল। তারপর তার ড্রাম রোল হাসি (যে হাসি শুনলে অনেক উচাত্তে সারকাস এর কেউ লাফ দেওয়ার আগে যে ড্রাম্রোল হয় সেই রকম ড্রাম রোল হইতে থাকে আমার ভিত্রে) দিয়া বলল, ফূহ, দিলাম ফু , ধুলা উড়ুক। তার আগে বল, এই কয়টা দিন আমারে এত্ত কষ্টে রাখসো ক্যান…হাউ হাউ হাউ হাউ ( আরো কিছু ধমক ধামক কল্পনা কইরা নেন)। আমি মনে মনে বললাম, কি রে ডিপ্রেশন, মুড়ী শেষ? না আরো দিমু?
এরপর থেইকা সব ঠিক হওয়া শুরু করসে। আজকে ২০১৫ এর শেষ দিনে আমার একটা রুপকথার মত অ আছে, একটা ভুতের মত অস্থির ক্যাস্পার দি ক্যাট আছে, বস এর সাথে আমার সম্পর্ক আগের চেয়েও ভাল আর আমি এই বছর একটা নতুন বাদ্যযন্ত্র শিখসি (উকুলেলে বাজাইতে পারি) । ২০১৪ যা যা কাইরা নিসিল ২০১৫ তার চেয়েও অনেক বেশি কিছু ফেরত দিসে।
আল্লাহ, ধন্যবাদ। তোমার প্ল্যান না বুঝলেও, প্ল্যানার এর উপর যাতে আস্থা না হারাই, সেই তৌফিক দিও।