লেখার তারিখঃ নভেম্বর ১১, ২০১৫, ১২.১৭ এ এম
***মুজিব ব্যাটারী-বাংলাদেশের প্রথম আর্টিলারী ইউনিট***
মুজিব ব্যাটারির নাম আমি প্রথম শুনি জ্যাজ কন্সার্ট এ গিয়া। কি অদ্ভুত ব্যাপার। আমার বয়স এখন ৩৩। এই ৩৩ বছরে কেউ আমারে “মুজিব ব্যাটারি” শব্দ টা পর্যন্ত বলে নাই। ঠিক যেমন কেউ বলে নাই মুক্তিযুদ্ধে আমাদের একটা এয়ার ফোর্স ও ছিল। তিনটা বিমান এর খাটি বাংলাদেশি এয়ার ফোর্স ইউনিট, যারা আকাশ পথে মুক্তিযুদ্ধ করসে। যাদের নাম ছিল “কিলো ফ্লাইট”। “কিলো ফ্লাইট” নিয়া এর আগে লিখসি অনেক গুলা নোট।
যাই হোক, মুজিব ব্যাটারির কাহিনী বলি। জ্যাজ ফেস্টিভাল হইতাসিল আর্মি মিউজিয়াম এ। গেট খুলবে ৬ টায়, আমি আর অ ৫ টায় গিয়া বইসা আসি উৎসাহের চোটে। এদিক সেদিক হাটা হাটি করতে করতে মিউজিয়াম এর বিল্ডিং এর দিকে গেলাম। দেখি উপরে লেখা “মুজিব-ব্যাটারি কর্নার”। আমি ভাবলাম, ব্যাটারি আবার দেখনের কি আসে। আমি যে কত বেকুব তা একটু পরেই বুঝতে পারলাম। ওই দিন খালি দেইখা আসছি। আজকে গুগল কইরা যা পাইলাম তা এইখানে তুইলা দিলাম।
আমার মত কেউ যদি প্রথম বার এর মত মুজিব ব্যাটারি সম্পর্কে এই লেখা পইড়া জানতে পারে তাইলেই এই লেখা স্বার্থক হইসে বইলা মনে করুম।
রনাঙ্গনের বিধাতা বলা হয় আর্টিলারী বা ভারী অস্ত্র সম্বলিত ইউনিটকে। মুক্তিযুদ্ধের মত একটি ফুল ফেজ যুদ্ধে আর্টিলারীর প্রয়োজনীয়তা ছিল আপরিসীম।তাই ১৯৭১ সালের ২২ জুলাই ৬টি কামান নিয়ে ভারতের কোনাবান অঞ্চলে প্রথম প্রতিষ্ঠা লাভ করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর আর্টিলারি ইউনিট – মুজিব ব্যাটারি।
১৯৭১ সালের জুলাই মাসের মাঝামাঝি এই কামান মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে আসে। ৯ আগস্ট ২ নম্বর সেক্টর কমান্ডার মেজর খালেদ মোশাররফ সর্বাধিনায়ক জেনারেল ওসমানীকে এই কামান ব্যবহারের বিষয়ে চিঠি লেখেন।
বিডি/০০২২/জি স্মারক নম্বরের ওই চিঠিতে মেজর খালেদ মোশাররফ জেনারেল ওসমানীকে লেখেন,
“আমাদের ছেলেরা ৩ দশমিক ৭ ইঞ্চি মাউন্টেন গানের দায়িত্ব বুঝে নিয়েছে। ১০ আগস্ট এই কামান উদ্বোধনের দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। আমি এর নাম দিয়েছি ‘মুজিব ব্যাটারি’। আমি ইতিমধ্যে এই কামান তত্ত্বাবধানের জন্য দুজন অফিসারকে নিযুক্ত করেছি। ১০ আগস্ট থেকে সম্পূর্ণ আমাদের তত্ত্বাবধানে, আমাদের অফিসার ও সৈনিকদের দ্বারা এই ব্যাটারি পরিচালিত হবে।”
যে দুজন অফিসার এই কামান তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব পান, তারা হলেন ক্যাপ্টেন আব্দুল আজিজ পাশা ও সেকেন্ড লেফটেনেন্ট কাইয়ূম।
জন্মের মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যেই মুজিব ব্যাটারীর কামান গর্জে ওঠে এবং সাফল্যজনকভাবে রণাঙ্গনে শত্রুকে ধ্বংস করার কাজে নিয়োজিত হয়। মুক্তিযুদ্ধকালে এ ইউনিটটি কাইয়ুমপুর, কসবা, সালদানদী, আখাউড়া, নাজিরহাট ইত্যাদি উলেস্নখযোগ্য যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে লক্ষ্যভেদী ফায়ারের মাধ্যমে মুক্তিবাহিনীর বিজয়কে ত্বরান্বিত করে।
সেই ৬টি কামানের মধ্যে ৩ ফুট ৭ ইঞ্চি লম্বা ‘মুজিব ব্যাটারি’ নামের ২টি কামানকে পুনরায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে উপহার হিসেবে হস্তান্তর করেছে ভারতীয় সেনাবাহিনী গত ২১ জুন ২০১১ সালে।
মুজিব ব্যাটারির কামান গুলো দেখা যাবে, বিজয় সরনীর কোনায় যে আর্মি মিউজিয়াম টা আছে সেটার গেট দিয়ে ভিতরে ঢুক্লে মাঠ এর ওই পারে একটা দো তালা বিল্ডিং আছে। এই বিল্ডিং এর নিচ তালায় ডান পাশেই আছে “মুজিব ব্যাটারি” কর্নার যেখানে “মুজিব ব্যাটারি” এর ব্যবহার করা কিছু কামান।
আমি এক্টা কামান এর মুখে হাত দিয়া হুদাই দাঁড়ায় ছিলাম কিছুক্ষণ। এক মিলিটারি লুক আইসা ভুরু কুচকায় লুক দিতে নিসিল আমি তারাতারি ডরে আয়া পরসি। এই কামান পাকি মারসে, এই কামান মুক্তিযুদ্ধ দেখসে, কি দুর্দান্ত ব্যাপার স্যাপার। এই যাদুঘর এ প্রবেশ ফি নাই। ফ্রি। সবার একবার হইলেও দেইখা আসা উচিত।