২৩৮/৩৬৫

লেখার তারিখঃ অক্টোবর ২৩, ২০১৫

প্রিয় পেইন্টিং পরিচিতি – ২

আজ সারাদিন আমি এই পেইন্টিং টার সৌন্দর্যে ডুবে ছিলাম। সকালে ঘুম থেকে উঠেই মনে হলো, এত সুন্দর একটা দিন, আমার সুন্দর কিছুতে ডুবে যেতে হবে এক্ষুনি। অ তো কাছে ছিল না , তাই ডুব দিলাম চুমু তে। চুমু মানে The Kiss. এই পেইন্টিং টার নাম । আর্টিস্ট এর নাম Gustav Klimt। আর এই সেই পেইন্টিং :

এটার প্রচন্ড হাই রেজুলিউশন ভার্শন দেখা যাবে নিচের লিঙ্ক এ। আমি সকালের চা খেতে খেতে জুম ইন করে প্রতিটা বর্গ ইঞ্চি খুটিয়ে খুটিয়ে দেখেছি আর এক সময় মনে হচ্ছিল ভাল লাগা বাড়তে বাড়তে কেমন ঘোর এর জগতে চলে যাচ্ছি।

পেইন্টিং টার ব্যবচ্ছ্যেদ শুরু করি এর ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে।

ছবির ঠিক মাঝখানে যে যুগলটিকে দেখা যাচ্ছে তার চারপাশে যে সোনালি-কালো অংশ তা তৈরি করতে Klimt সত্যিকার এর স্বর্ণের পাতা বা Gold Leaf ব্যবহার করেছেন। অস্ট্রিয়ার ভিয়েনার শিল্পী Klimt । ১৯০৮ থেকে ১৯০৯ সাল এর মধ্যে এই ছবিটি আঁকা হয়। সে সময় পুরো ভিয়েনা তে বইছিল পরিবর্তনের হাওয়া। এই স্বর্ণ দিয়ে কি সেই স্বর্ণ যুগ কে সিম্বোলাইজ করেছেন শিল্পী? করতেই পারেন, কারন Gustav Klimt ছিলেন Symbolist পেইন্টার। এই ছবি আঁকার আগে তিনি ভেনিস আর রাভেনা তে বেড়াতে গিয়েছিলেন। সেখানকার চার্চ গুলো তে করা বাইজেন্টাইন আমলের পেইন্টিং আর মোজাইকে স্বর্ণের ব্যবহার তাকে অনেক প্রভাবিত করে নিজের ছবিতে স্বর্ণ ব্যবহার করতে। এই ছবি তে ব্যাকগ্রাউন্ড আর মুল সাব্জেক্ট এর মধ্যে পার্থক্য খুব কম। থ্রি ডি ব্যাপার টা অনুপস্থিত। এটা ইন্টেনশনালি ই করা যাতে সাব্জেক্ট কে তার পরিবেশ থেকে আলাদা কিছু মনে না করা হয়। ফ্ল্যাট এবং পারস্পেক্টিভ ছাড়া ব্যাকগ্রাউন্ড বরং স্বর্ণের সৌন্দর্য কে আরো ভিজিবল করে তোলে দর্শক এর কাছে ।

Klimt ছবিটি একেছেন বর্গাকার ফ্রেম এ। যেখানে সাব্জেক্ট এর মাথা উপরের দিকে ফ্রেম এর প্রায় কাছাকাছি। এটাকে গতানুগুতিক ওয়েস্টার্ন স্টাইল (যেখানে পোরট্রেইট এর অনেক হেড স্পেস থাকে) থেকে ইচ্ছাকৃত ভাবে দূরে সরে জাপানিজ প্রিন্ট স্টাইল এর প্রভাব আয়ত্ত করার নিদর্শন বলা যায়।

ছবিতে লাইন এর বেলায় কিউবিজম এর মত একদম স্কেল দিয়ে টানা ডিসিপ্লিন্ড লাইন এর বদলে ফ্রি ফ্লোয়িং আকানো বাকানো লাইন এর ব্যবহার দেখা যায়। এটা তৎকালীন Art Nouveau মুভমেন্ট এর একটা অন্যতম বৈশিষ্ট্য। Art Nouveau মুভমেন্ট হলো যেখানে শিল্পিরা একাডেমিক ডিসিপ্লিন্ড আঁকা আকি থেকে বেরিয়ে এসে প্রকৃতির মত ফ্রি ফ্লোয়িং লাইন্স আর প্যাটার্ন তাদের সৃষ্টিকর্মের ভিতর ঢুকিয়ে দিচ্ছিলেন। যা পরবর্তি তে Modernism মুভমেন্ট এর জন্ম দ্যায়।

ছবির মুল সাব্জেক্ট নিয়ে লিখতে আমার এক্টু হাত কাঁপছে। কারন আমি জানি না ঠিক ঠাক মত লিখতে পারবো কিনা। একটা যুগল আটকা পরে গেছে এক চুম্বনে। যেখানে কোন অশ্লিলতা নেই শুধু সীমাহীন মায়া আছে। ছেলেটার হাত মুল্যবান কিছু ধরার মত ধরে আছে মেয়েটার মাথা আর চিবুক। আর মেয়েটা চরম নির্ভরতায় এক হাতে জরিয়ে আছে ছেলেটার মাথার চারপাশে আর একটা হাতে আলতো করে স্পর্শ করে আছে ছেলেটার আরেকটা হাত। তারা দুজনেই এক টা ফুলে ফুলে ছাওয়া প্রান্তরের উপর। অনেক্ষন তাকিয়ে থাকলে যেটাকে পাহাড়ের ক্লিফ মনে হয় একটা।

ছেলেটাকে Klimt সাজিয়েছেন রেক্টাঙ্গেল দিয়ে আর মেয়েটাকে সারকেলস দিয়ে। যেখানে রেকাংগেল এর শার্প কর্নার গুলো রিপ্রেজেন্ট করে পৌরুষ এর আর সারকেল গুলো নারীসুলভ নমনীয়তার। এটি একটি ক্লাসিক Symbolism এর উদাহরন।

ছেলেটার মাথায় যেখানে পাতার মুকুট সেখানে মেয়েটার অঙ্গে অঙ্গে জরানো ফুলের গহনা। যে সোনালি গয়না পোশাক ছাড়িয়ে চলে গেছে পায়ের পাতার বাইরে। Klimt সেটাকে সোনালু লতার আদলে জড়িয়ে দিয়েছেন পায়ে , নুপুরের মত।

The Kiss এর প্রভাব যে কত টাইমলেস তা ছবিটার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলেই অনুভব করা যায়। সমাজের , প্রকৃতির সাথে মিশে থেকেও শুধু দু’জনের জন্য দু’জনের মধ্যে মগ্নতার সেই প্রাচীন অনুভূতি টুকু আটকা পরে গেছে এই ছবি তে।

আধুনিক কিছু আর্টিস্ট এর The Kiss কে দেওয়া হোমেজ এর ছবি দিয়ে আজকের লেখা শেষ করি। নিচের ছবিটা একটা Google Doodle এর । যা Gustav Klimt এর ১৫০ তম জন্মদিন, ১৪ জুলাই ২০১২ তে Google তাদের হোম্পেজ এ দিয়েছিল।

আর ২০১৩ এর এই ছবিটা সিরিয়ায় জন্ম নেয়া আর্টিস্ট Tammam Azzam এর। এটি সিরিয়ার একটি যুদ্ধ বিদ্ধস্ত বাড়ির উপর ডিজিটালি সুপার ইম্পোজ করা The Kiss এর ছবি, যার নাম শিল্পি দিয়েছেন Freedom Graffiti.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *