লেখার তারিখঃ অক্টোবর ০৭ , ২০১৫
ছোটদের ফটোগ্রাফি শিক্ষা ৬
ফটোগ্রাফি তে দুইটা দিক আসে। একটা হইল এর টেকনিক্যাল(Technical ) দিক। যেইখানে ফটোগ্রাফির বেসিক, টেকনিক্স, কারিগরি ইত্যাদি ব্যাপার স্যাপার গুলা আছে। আরেকটা দিন হইল এর এসথেটিকস (Aesthetics) দিক। এসথেটিকস বাংলা করলে হয় নন্দনতত্ত্ব। আমরা আগের ৫ টা লেখায় অনেক টেকনিকাল ব্যাপার নিইয়া আলোচনা করসি। আজকে এক্টূ টাইম দেই অগুলারে মাথায় সিঙ্ক ইন করতে। আর আমরা এসথেটিকস নিয়া কথা কই।
একটা জিনিস সুন্দর লাগে, ক্যান সুন্দর লাগে। ক্যান একটা ছবি ভালল্লাগে ক্যান একটা ছবি ভাল্লাগে না। এই গুলাই নন্দনত্তত্ব। এই জিনিষ্টা মানুষ থেকে মানুষে চেঞ্জ হয়। আপনার কাছে যেইটা সুন্দর সেইটা আরেকজন এর কাছে হয় তো সাধারন। এইটা সব সময় ই ছিল , সব সময় ই থাকবে।
কিন্তু মাথায় রাখতে হবে ফটোগ্রাফি তে যত টা না আপনি কি দেখেন তার চেয়ে অনেক বেশি “দেখানো”। যেমন আকাশ ভর্তি অনন্ত নক্ষত্র মালা। দেইখা আপ্নের ভিত্রে কি জানি নইড়া চইড়া গেল। আপনি আপনার দুই মেগা পিক্সেল এর চাইনিজ মোবাইল বাইর কইরা আকাশের দিকে তাক কইরা ফ্ল্যাশ অন কইরা দিলেন টিপ। মোবাইল রে ধন্য কইরা ঘন কাল নয়েজ এ ভরপুর কালা পর্দা উঠলো একটা। আপনি নিচে লিখে দিলেন , আমার ছবি তে মিল্কি ওয়ে। ফটো টেকেন বাই মি। কপিরাইট বাই মি। ছবির কুনায় লিখলেন (c) কুদ্দুছ+জুলেখা ফটোগ্রাফি। তাইলে কি যা দেখলেন তা দেখানি হইল? আপনি যা ফিল করলেন তা ফিল করাইতে পারলেন ছবি দিয়া?
আমরা ফটোগ্রাফি টা সময় নিয়া আগ্রহ নিয়া শিখি এই কারনেই। যাতে আমার এসথেটিকস সেন্স আর আমার হাতের ক্যামেরার তোলা ছবির মধ্যে গ্যাপ টা যতটা পারা যায় কমায় আনা যায়। যাতে যা তুলতে চাইতেসি তা তুলতে পারি। যাতে যা দেখাইতে চাইতেসি তার তুলার জন্য কি করতে হবে সেইটা জানি, যাতে ক্যামেরার উপর , আলোর উপর আরো কন্ট্রোল আসে।
এই যে আমরা প্রতিদিন কতকিসু দেখি, এই দেখা জিনিষটা কি আসলে সবার একরকম? না । এক এক জন এক ভাবে একটা বিষয়রে দেখে, দেখতে পছন্দ করে । রাস্তার জ্যাম যখন আমরা বুঝাইতে চাই তাইলে যে ছবিটা আসে তা হইলো একটা এরিয়াল ভিউ, উপর থেইকা দেখা একটা লম্বা গাড়ি/রিকশা/বাসের সারি। আবার র্বষার ফুল বুঝাইতে চাইলে আমরা কিন্তু উপর থেইকা তোলা কদমগাছের ফটুক দেইনা, বরং অনেক কাছ থেইকা তোলা ২টা কদমফুলের ছবি দেই। কারন আমরা এমনেই দেখতে পছন্দ করি।
টেকনিকাল বেপার গুলার বাধা টা পার হয়া আসার পর আমাদের যেই দিক্টায় পুরা মনোযোগ দিতে হয় তা হইল ছবির কম্পোজিশন। মানে আমার ছবির ফ্রেমে যা যা আসে সেগুলারে আমি কিভাবে সাজামু সেই টা।
সুজা কইরা কইতে গেলে কম্পোজিশন মানে হইলো সাজানো। আপনার মনের চোখ যা দেখে সেইটা কিভাবে একটা ছবিতে দেখাইবেন আর সে জন্য ছবির উপাদান গুলারে কেমনে সাজাইবেন সেইটাই ফটোগ্রাফিতে কয় কম্পোজিশন। যেহেতু আপনার দেখার চেয়ে ক্যামেরা একটু ভিন্ন ভাবে দেখে, তাই কম্পোজিশনের টেকনিক গুলা জানা থাকলে, ক্যামেরারেও আপনার মতোই দেখাইতে পারবেন।
কম্পোজিশনের কয়েকটা নিয়ম নিয়া এখন কথা বলি । কিন্তু এই গুলাই শেষ না। এইগুলা হইসে কয়েকটা রং পেনসিল মাত্র, যে গুলা দিয়া ছবি বানানোর দায়িত্ব আপনার। আরও অনেক রং এর পেনসিল আসে যে গুলা যত ছবি দেখবেন, ছবি তুলবেন তত বুঝতে পারবেন। আমি আমার স্টুডেন্ট দের বলি, কম্পোজিশন এর কোন নিয়ম নাই শুধু কিছু এলিমেন্ট আছে। এগুলার এক বা একাধিক এলিমেন্ট ব্যাবহার কইরা আমরা একটা ছবি কম্পোজ করি।
১) ছবির সাবজেক্ট ঠিক করা
সিরিয়াসলি ছবি তুলার প্রথম প্রথম আমরা সবাই যেটা করি সেটা হইল একটা কিছু পছন্দ হইলেই সেটার সামনে ক্যামেরা নিয়াই ক্লিক। কিন্তু পরে ছবিটা দেখলে নিজের কাছেই আর ভাল্লাগেনা, মনে হ্য় এউটা ক্যান তুলসিলাম হুদাই…তাই সবার আগে দরকার একটু চিন্তা করা, আপনি ঠিক কি দেখাইতে চাইতেসেন ছবিতে? আমি নিজে যা করি তা হইসে, ছবি তোলার আগে যদি আমার মনে হয় আমি যেমনটা দেখাইতে চাইতেসি সেইটা আমার চোখে দেখা সম্ভব হইলেও ছবিতে আনা সম্ভব কি না? না হইলে আর তুলি না। কি দরকার? সব ছবি তুলতে হবে এমন তো কনো কথা নাই। নিজেরে এইটুক স্বাধীনতা উপভোগ করতে দিয়েন, নাইলে আমি অনেকেরে দেখসি অনেক তাড়াতাড়ি হতাশ হইয়া পরতে।
একটা উদাহারন দেই, ধরেন আপনি চান বিস্তির্ন পর্বতমালার ছবি তুলতে কিন্তু আপনার কাছে পুরাটা ফ্রেমে আনার মতো ক্যামেরা/লেন্স নাই, শুধু একটা পয়েন্ট এন্ড শুট অথবা মোবাইলের ক্যামেরা আছে। আপনি যদি হোটেলের সামনে থেকে সেই পর্বতমালার দিকে ক্যামেরা তাক করে শাটার টিপে দেন তাহলে যে ছবিটা উঠবে, সেইটার কি আসলেই কোন দরকার আছে আপনার? কি উঠবে সেই ছবিতে? হয়তো অনেক শার্প কিছু গাছপালা আর দুরে প্রায় দেখাই যায় না এমন কিছু একটা যেটাকে আপনাকে ফেসবুকে ট্যাগ কইরা বুঝায় দিতে হবে যে “ইহা পর্বত”।
আমার মুল পয়েন্টটা হইলো কি আসলে তুলতে চান (মানে ছবির সাবজেক্ট), সেইটা আগে ঠিক করেন তারপর দেখেন আপনার ক্যামেরা আদৌ সেইটা তোলার ক্ষমতা রাখে কিনা।
২) ফোকাল পয়েন্টকে একা করে দেন (Isolate the Focal Point)
কিছু কিছু ছবি তে এইটা বেশ কাজে দ্যায়। বিশেষ কইরা নতুন নতুন ফটোগ্রাফি শুরু করলে আমরা অনেক বেশি জুম ইন করি। যতই দিন যায় আমাদের ফ্রেম ওয়াইড হয় আস্তে আস্তে। কিন্তু টাইটেল পইড়াই গ্রুপ ছবি তে সবাইরে আলাদা করা শুরু কইরেন না।
ছবি তোলার সময়, সাবজেক্ট ঠিক করার পর চেষ্টা করেন সাবজেক্টটাকে ছবিতে সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ন কইরা তুলতে। সেইটা করতে হইলে আপনারে সাবজেক্টকে রাখতে হবে ফোকাল পয়েন্টে। জিগান ফোকাল পয়েন্ট কি? সহজ ভাষায় লেন্সের সামনের যেই পয়েন্ট থেইকা আলো আইসা লেন্সের পিছনে সবচেয়ে স্পষ্ট রিফ্লেকশন তৈরি করে সেই পয়েন্টটা।
ফোকাল পয়েন্টে যা থাকবো, সেইটা ছবিতে সবচেয়ে বেশি শার্প আসবো। আর আশেপাশের গুলা তাদের অবস্থান অনুসারে কম শার্প আসবো। অনেক সময় সাবজেক্টকে গুরুত্ব দেয়ার জন্য আশে পাশে বা সামনে পিছনে কিছু আনশার্প এলিমেন্ট রাইখা দেয়া হয়।
ছবিতে যদি অনেক বেশি ফোকাল পয়েন্ট থাকে তাইলেও অনেকে কনফিউজড হয় যে আসলে ছবিটাতে কি বুঝানো হইসে। তাই চেষ্টা করেন ছবিতে ফোকাল পয়েন্ট যতটা কম রাখা যায়…অবশ্য এই নিয়মটাও ভাঙা হয় কিছু কিছু ক্ষেত্রে, যেমন গ্রুপ ফটো আর ল্যান্ স্কেপ। যে পর্বতের ছবিটার কথা বল্লাম শুরু তে, সেইটার এমন ঝাপসা ফটো না তুইলা সুর্যাস্ত পর্যন্ত অপেক্ষা করেন, এরপর পাহারের একটা সিলুয়েট তুলেন, যেইটা যে কোন ক্যামেরায় সম্ভব।
৩) রুল অফ থার্ডস
এইটা অনেক বার শুনতে হবে আপনার ফটোগ্রাফি লাইফ এ। যে কিছুই পারে না, সেও রুল অফ থার্ড পারে। তাই এইটা আপ্নের জানা উচিত।
নতুন নতুন ছবি তোলার উৎসাহে অনেকেই খেয়াল করেনা যে ভিউফাইন্ডারে/ক্যামেরার স্ক্রিনে কি দেখা যাচ্ছে। রুল অফ থার্ডস এই সব ফটোতে ব্যালেন্স আনতে অনেক সাহায্য করে। যদিও ৩য় স্থানে লিখতেসি কিন্তু আমি মনে করি এইটা ফটোগ্রাফির অন্যতম মুল্যবান একটা কম্পোজিশন এলিমেন্ট।
এইটা মনে রাখাও অনেক সহজ। ছবির ফ্রেমে “#” এইরকম চারটা লাইনের একটা গ্রিড চিন্তা করেন। লাইন গুলা যেখানে ক্রস করে সেইগুলাকে বলে “গোল্ডেন সেকশন”। চেষ্টা করেন আপনার সাবজেক্টকে গোল্ডেন সেকশন ৪টার যে কোন একটাতে রাখতে।
আপনি যদি এই নিয়মগুলা মাথায় রাইখা কিছু ভাল ছবি দেখেন, দেখবেন ৭৫% ফটোগ্রাফার এই নিয়মটা অনুসরন কইরা ছবি তুলসে। প্র্যাকটিস করলে এই নিয়মটা অনেকটা ইনটুইশনের মতো মাথায় ঢুইকা যায়। এইটা ফলো করেন, দেখেন আপনার ছবির কোয়ালিটি ভাল হয় কি না।
আপাতত এইটুকুই থাক… কম্পোজিশন নিয়া আরো কথা বার্তা আছে। কিন্তু প্রথম কিস্তি এই পর্যন্তই। আমরা টেকনিক্যাল দিক দিয়া আরেকটু আগায় নেই। তারপর আবার কম্পোজিশন এর আলোচনায় ফেরত আসবো।