লেখার তারিখঃ সেপ্টেম্বর ৩০ , ২০১৫
আহমেদ ছফার “সূর্য তুমি সাথী” শেষ করলাম আজকে। অফিস থেইকা ফিরসি তাড়াতাড়ি। তখনো বাইরে বিকেলের আলো ছিল। আমার বই পড়া হচ্ছে না এই গিলটি ফিলিং থেকে মুক্তি পাবার জন্য ভাবলাম মাত্র তিন চ্যাপ্টার পড়সি, আজকে যখন সময় আছে হাতে, ডুব দেয়া যাক। সুর্য যতক্ষণ সাথি ছিল সুর্যের আলোয় পড়লাম। কমতে কমতে যখন কম আলো তে আর চোখ ছোট ছোট করা যাচ্ছিল না তখন লাইট জ্বালিয়ে বাকিটা শেষ করলাম। একটা ভাল উপন্যাস শেষ করার অনুভূতি টা ঘাম দিয়ে জর ছাড়ার মত। জর টাতে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছিলাম। এখন কেমন কি যান নেই নেই লাগছে।
“সূর্য তুমি সাথী” উপন্যাস টা লেখা হয় ১৯৬৭ সালে। আহমেদ ছফার প্রথম উপন্যাস। আমি পড়া শুরু করি কোরবানি ঈদ এর দিন আর শেষ করলাম আজকে। মানে পাঁচ দিন লাগলো শেষ করতে। অনেক গুলা অনুভূতি এক সাথে হচ্ছে। সব চেয়ে বেশি যেটা হচ্ছে তা হচ্ছে, আরেকবার পড়লে হয়তো আরও অনেক ডিটেইল চোখে পড়বে।
প্লট হিসাবে “সূর্য তুমি সাথী” তুমি উপন্যাস এ নতুন কিছু নেই। শ্রেণী বৈষম্যের হাতে নিপীড়িত মানুষের দুঃখ গাঁথা, এক হবার বাসনা। ১৯৩৬ সালে প্রকাশিত হওয়া মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় এর পদ্মা নদীর মাঝি তেও একই রকম পটভূমি আমরা দেখতে পাই। কিন্তু সাধারণ জিনিশের মধ্য থেকেও অদেখা অসাধারণ কে বের করে আনা একজন জাদুকর এর দায়িত্ব এবং আহমেদ ছফা একজন জাদুকর।
উপন্যাসের প্রত্যেকটা দৃশ্য শুরু হবার আগে লেখক যেভাবে বিস্তারিত ভাবে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ডিটেইল এর প্রতি লক্ষ রেখে তার পরিবেশটা তৈরি করেছেন তা খুব কম লেখকের মধ্যেই পেয়েছি আমি। এখানে সংলাপ এর চেয়ে সংস্পর্শ বা পাঠকের সাথে চরিত্র গুলার যে কানেকশন তৈরির প্রতি নজর ছিল লেখকের তা খুব ভাল ভাবেই বোঝা যায়।
কিছু কিছু দৃশ্যে রক্ত এমন গরম হয়ে ওঠে যে মনে হয় এখনো ড্রাগনের মত আগুন বের হবে নাক দিয়ে। সেই ১৯৬৭ সালে বসে যিনি রেসিজম এর বিপক্ষে লিখতে পারেন, তিনি কি রকম আধুনিক ছিলেন কল্পনা করা যায়?
ও আজকে আরেকটা কাজ করসি। এই যে নোট গুলা লিখি প্রতিদিন , এগুলো কে এক জায়গায় ছাপার অক্ষরে দেখতে কেমন লাগবে তা ভাবতেসিলাম। মনে হয় জনতা কি বলে জানা দরকার। তাই ফেসবুক বাসীর কাছে আবেদন জানাইসিলাম যে তারা বই হিসাবে পাওয়ার ইচ্ছা আছে কিনা। সবার কমেন্টে ভাইসা যাওয়ার মত অবস্থা হইসে এত এত কমেন্ট আসছে। সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা তাদের মতামত দেয়ার জন্য।
বই বাইর করবো কিনা আমি এখনো ঠিক করি নাই। আগে ৩৬৫ প্রজেক্ট তো শেষ হোক।