২০৭/৩৬৫

লেখার তারিখঃ সেপ্টেম্বর ২২, ২০১৫ | ১২.৫১ পি এম

 

সিনেমাঃ বাংলাদেশে

 

“দি লাস্ট কিস”। বাংলাদেশের ভু খন্ডে নির্মিত প্রথম সিনেমা। বাংলাদেশের ভু খন্ড বললাম এবং এই লেখায় বেশ কয়েকবার এই টার্ম টা ব্যবহার করবো, কারন যখন কার কথা বলছি তখন ১৯৩১ সাল। স্বাধীন বাংলাদেশের জন্ম হয় নাই। সিনেমাটা ঢাকার তৎকালীন “মুকুল” সিনেমাহলে প্রথম প্রদর্শিত হয়। এর আগে “সুকুমারী” নামের একটা এক্সপেরিমেন্টাল সিনেমা বানানোর কথা অবশ্য পড়লাম এক জায়গায়। কিন্তু সেইটা আলোর মুখ দেখে নাই।

 

নবাব পরিবারের কতিপয় উৎসাহী তরুণ ক্রীড়াবিদদের সহযোগিতায়, ঢাকার জগন্নাথ কলেজের ফিজিক্যাল ইন্সট্রাক্টর তরুণ নাট্য-পরিচালক অম্বুজ গুপ্ত, “দি লাস্ট কিস” নির্মাণ করেন । ছবির চিত্রগ্রহণের স্থান ছিল দিলখুশা গার্ডেন, শাহবাগ, নীলক্ষেত বাগিচা এবং মতিঝিল। ছবির নায়িকা লোলিতাকে আনা হয়েছিল বাদামতলীর পতিতালয় থেকে। কারণ অন্য মেয়েদের চার দেয়ালের বাইরে আসা নিষেধ ছিল। শুটিং শেষে লোলিতা তার পূর্ব পেশায় ফিরে যায়।

 

“দি লাস্ট কিস” সিনেমার সম্পূর্ন কাহিনী জানতে পারি নাই। যারা ফিল্ম নিয়ে পড়ালেখা করেন তারা হয়তো ভাল বলতে পারবেন। আমার রিসার্চ এর দৌড় কিছু বই, ফিল্ম সোসাইটির জার্নাল আর ইন্টারনেট।  চুরাশি বছর আগের এই সিনেমার কোণ নেগেটিভ বা প্রিন্ট বাংলাদেশে নাই। ছবির কোন দর্শকও আজ বেঁচে নেই। যতটুকু কাহিনী জানতে পেরেছি তা হলো, “ এক রাতে নায়ক আজমল তার স্ত্রী লোলিতাকে নিয়ে যাত্রা দেখতে যাবার পথে জমিদার খাজা নসুরুল্লাহর লোকজন দ্বারা অপহৃত হয়। বহু খোঁজাখুঁজির পর লোলিতাকে জমিদারের ঘরে পাওয়া যায়। সেখানে উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। নায়ক-নায়িকা ঘটনার অনিবার্য পরিণতিতে মারা যায়”। “দি লাস্ট কিস” ছিল নির্বাক চলচ্চিত্র।

 

এরপরে বাংলাদেশে বানানো সিনেমা অনেক খুঁজেও আর পাই নাই। পাওয়া গেল ১৯৪৬ সালে। ওবায়দুল হক এর নির্মিত সিনেমা “দুঃখে যাদের জীবন গড়া” । ২য় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তিতে এই অঞ্চলে যে ভয়াভয় দুর্ভিক্ষ দেখা দ্যায়, তার প্রেক্ষাপটে নির্মিত হয় এই সিনেমা। ১৯৪৬ সালে কলকাতায় মুক্তি পায় এটি। তারপর আর এ দেশে আনা হয় নাই এই সিনেমা।

 

যতদূর দেখলাম ব্রিটিশ-ভারতে শিল্প সাহিত্য ছিল মূলত কলকাতা মুখি। ঢাকায় সিনেমা বানানোর কোন প্রতিষ্ঠান এই কারণে গড়ে উঠেনি। ১৯৪৭ থেকে ১৯৫৫ সাল এর মধ্যে বাংলাদেশের ভূ খন্ডে কোন সিনেমা বানানো হয় নি। তবে কিছু প্রামাণ্য চিত্র নির্মিত হয়েছিল। জিন্নাহর পুর্ব পাকিস্তান সফর, মন্ত্রীদের ফিতা কাটা ইত্যাদি। ১৯৫৫ সালে নাজির আহমেদের পরিচালনায় “সালামত” নামে একটা প্রামাণ্য চিত্র নির্মিত হয়। বিষয় ছিল ডেভলপিং ঢাকা, এর নির্মান কাজ।

 

১৯৫৬ সালে “মুখ ও মুখোশ” দিয়ে সত্যিকার অর্থে বাংলাদেশের ভূখণ্ডে সবাক চলচিত্রের যাত্রা শুরু হয়। কাহিনী এবং পরিচালনা আবদুল জব্বার খান। এর আগে তার সিনেমা নির্মানের অভিজ্ঞতা বলতে ছিল বন্যার উপর একটি প্রামান্য চিত্র। পরিচালক আব্দুল জব্বার খান ফরিদপুরের একটি ডাকাতির সংবাদ কে কেন্দ্র করে ১৯৫৩ সালে “ডাকাত” নাটক লেখেন এবং এই নাটক টিই পরে “মুখ ও মুখোশ” চলচ্চিত্রে পরিণত হয়। এই ছবির মোট খরচ হয়ে ছিল ১ লক্ষ পাঁচ হাজার টাকা।

 

১৯৫৬ সালের ৩ আগস্ট ঢাকার “রূপমহল” সিনেমা হলে মুখ ও মুখোশ” মুক্তি পায়। ছবিটির উদ্বোধন করেছিলেন তৎকালীন গভরনর শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক। “মুখ ও মুখোশ” সিনেমার শুটিং ঢাকায় হলেও ফ্লিম প্রসেসিং, এডিটিং করা হয়েছিল লাহোরের বারী স্টুডিও তে। কারন তখন ঢাকায় কোন ফ্যাসিলিটি ছিল না। “মুখ ও মুখোস” সিনেমার চিত্রগ্রহণ করেছিলেন কিউ এম জামান। সংগীত পরিচালনায় ছিলেন সমর দাশ। কণ্ঠ সঙ্গীতে মাহবুবা হাসনাত ও আব্দুল আলীম। ছবির নায়ক ছিলেন পরিচালক নিজেই অর্থাৎ আবদুল জব্বার খান এবং নায়িকা পুর্নিমা সেনগুপ্তা।

 

১৯৫৭ সালের জুলাই তে ঢাকায় এফ, ডি, সি গঠিত হয়। তার পরে চলচিত্র জগতে একটা বিপ্লব আসে। কিন্তু সেই গল্প আরেকদিন বলবো।

 

 

 

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *