লেখার তারিখঃ সেপ্টেম্বর ১৫, ২০১৫ | ১১.০৩ পি এম
পৃথিবী তে দুই ধরনের মানুষ আছে। এক, সেই ধরনের মানুষ যারা যা শুরু করে তারা তা শেষ করে। আর দুই, …
আই ওয়ান্ডার আমি কোণ টাইপ এর (খিক খিক)। জীবনে যে কত গুলা আন ফিনিশড প্রজেক্ট আছে, তা ভাবলে কেমন জানি অস্থির লাগে। এগুলা শেষ করা দরকার। কিন্তু কবে শেষ করব জানিনা। এগুলা মাঝে মাঝে আবার বাইচা থাকার প্রেরণাও দ্যায়। মনে হয়, কত কিছু করা বাকি, জীবন তো এখনো শুরুই করলাম না।
যেমন ধরা যাক প্রজেক্ট ৩৬৫ এর কথা। এই লেখা লেখা প্রজেক্ট ৩৬৫ শুরু করার আগে আমি ছবি দিয়া একটা প্রজেক্ট শুরু করসিলাম। প্রতিদিন একটা ছবি তুলতাম স্কয়ার ফরমেট এ, আর বিশাল গিয়ান গর্ভ ক্যাপশন লিখতাম ওগুলার। ভালাই লাগতো, প্রতিদিন ভিজুয়াল খুঁজার একটা টান কাজ করত ভিত্রে। সেই প্রজেক্ট এর ১৫০ + সাম্থিং পর্যন্ত করার পর আমি বান্দরবন যাই বেড়াইতে। ওই খানে তো নেট নাই। তাই পোস্ট ও করতে পারি নাই। সেই যে গ্যাপ পরলো। আর তো শেষ করলাম না প্রজেক্ট টা।
কত গুলা লেখা লেখির প্রজেক্ট শুরু করসিলাম তারপর। ফটোগ্রাফির বেসিক্স নিয়া লেখা “ফটোগ্রাফির প্রথম পাঠ”, “ফটোগ্রাফির দ্বিতীয় পাঠ”… এই রকম “ফটোগ্রাফির নবম পাঠ” পর্যন্ত। তারপর ১০, ১১ লেখা হইসে আলাদা ভাবে, পাবলিশ ও হইসিল গ্রাস হপার্স এর স্কুল এর পেজ এ, কিন্তু এক সাথে আর করা হয় নাই সব গুলা পর্ব।
বাংলায় এভিয়েশন এর ইতিহাস কোথাউ নাই। শুরু করসিলাম “উড়তে শেখা” সিরিজ টা। চার পর্ব পর্যন্ত লিখসি। এই ফেসবুক এর নোট এই, তারপর আর লেখা হয় নাই। প্রায় ই মনে করি, আবার শুরু করি। মাথায় কিছুক্ষণ খেলা করে জিনিশ টা। তারপর আবার ফিরা যাই রেগুলার কাজ এ।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ইতিহাস নিয়া লেখা শুরু করসিলাম। তাও আবার কোন ব্লগ বা নোট এ না। স্ট্যাটাসে। সেগুলাও আর লেখা হয় নাই। কত মজার মজার জিনিষ পরসিলাম। কত ছবি, কত গল্প। পড়তে পড়তে এই ঘটনার সাথে ওই ঘটনার কানেকশন বাইর কইরা উত্তেজিত হয়া যাইতাম। কিন্তু আর লেখা হয় নাই। সেই উত্তেজনা টা মিস করি প্রায় ই।
“কিলো ফ্লাইট”। মুক্তি যুদ্ধের ইতিহাসের একটা কত এক্সাইটিং আর অসাধারণ ব্যাপার। সেইটার ইতিহাস বাংলায় লেখা শুরু করসিলাম এই নোট এই। বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর গঠন হওয়ার ইতিহাস থেইকা শুরু কইরা এলুয়েট হেলিকপ্টার এর প্রথম মিশন ওরফে “কিলো ফ্লাইট” এর প্রথম মিশন পর্যন্ত লিখসিলাম। ওটার বিমান এর মিশন গুলা নিয়া লেখা বাকি। বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান এর গল্প লেখা বাকি। কবে লিখবো এগুলা আই হ্যাভ নো আইডিয়া। কিন্তু লেইখা যাইতে চাই অবশ্যই। পিপল নিডস টু নো।
পিয়ানো শিখা শুরু করসি সেই কবে এ এ থেইকা। প্রথমে রোমেল ভাই (ওয়ারফেজ) এর কাছে ৩ মাস শিখলাম। অফিস কইরা প্র্যাকটিস করা হইত না ঠিক মত আর উনার সামনে গিয়া এক্সকিউজ দেখাইতে লজ্জা লাগতো। তাই আস্তে আস্তে ছাইরাই দিলাম যাওয়া। ২০১৪ এ আইসা আবার মনে হইসিল নাহ পিয়ানো শিখা আবার শুরু করতে হবে। ভর্তি হইলাম সাউন্ড অফ মিউজিক এ। ছয়মাস শিখা লেভেল ওয়ান পাশ দিসি আমি। আমার লন্ডন কলেজ অফ মিউজিক এর সার্টিফিকেট আসে ডিস্টিংশন মার্ক্স ওয়ালা। ভাবসিলাম অনেক দূর যামু। কিন্তু তারপর অফিসে কাজের ব্যাস্ততা বাড়লো, আর গুলশান এক গিয়া গিয়া ক্লাস করা হইল না। ইদানীং হাত পা আবার কাম্রাইতাসে, ইচ্ছা করতাসে আবার গিয়া শুরু করি।
আঁকা আঁকি শেখার স্বপ্ন টা তো এখন স্বপনই রয়া গেল। আমি ঘুমাই ই থাকলাম। আমার কাছে যেই পরিমাণ আঁকা আঁকি শিখার বই আসে, একটা ছোট খাট লাইব্রেরি বানায় ফেলা যাইব। কিন্তু আঁকা আঁকি কি শিখতে পারসি? নাহ। পেন্সিল হাতে নিলে ভয় লাগে কাগজে আঁক দিতে। একদিন পারবো নিশচই।
গিটার টা আরো শিখা বাকি। রাশার মত এরকম ওস্তাদ গিটারিস্ট বন্ধু রাইখা আমি কত অশিক্ষিত থাকলাম।
কত উৎসাহ নিয়া হারমোনিকা শেখা শুরু করসিলাম, ডায়াটোনিক, ক্রোমাটিক হারমোনিকাও ছিল। কিন্তু কিছুদূর আগায়া তারপর উকুলেলে কিনার পর আর হারমোনিকা বাজানোই হয় না। চারুকলার সামনে থেইকা কেনা বাশিটা মাঝে মাঝে হাতে নেই। সব গুলা ছিদ্র বন্ধ কইরা ফু দেই, আওয়াজ বাইর করতে পারি। তারপর আবার রাইখা দেই। হয়তো একদিন পারবো ।
বুকশেলফের না পড়া বই গুলা মনে হয় হাসি তামাশা করে আমারে নিয়া। কত বই পড়া বাকি। হার্ডডিস্ক এ কত গিগা গিগা মুভি দেখা বাকি। কত ইন্টারেস্টিং ইন্টারেস্টিং বাছাই করা ই বুক নামাইসি এক সময়। সব চোখে পড়লেই অপরাধী লাগে নিজেরে। এগুলা কবে পইড়া শেষ করব?
আমি কলেজে থাকতে অনেক ভাল চিঠি লিখতাম। পোলাপান দূর দূরান্ত থেইকা আসতো আমার কাছে তাদের গার্লফ্রেন্ড এর কাছে চিঠি লিখা দেওয়ার জন্য। এখন আর চিঠি লিখতে ইচ্ছা করলেও প্রাপক এর ঠিকানা নাই, প্রাপক ই নাই, তাই লেখা হয় না।
এই যে লোকজন জানে আমি প্লেন এর ছবি তুলি। ২০১২ এর তোলা আগস্ট এ তোলা ছবির পর আমি আর কোন ছবি ই পাবলিশ করি নাই। অথচ কত কত ফোল্ডার ভর্তি করা ছবি। মাঝে মাঝে ভাবি একটা এসিস্ট্যান্ট নিমু। তারে শিখায় দিমু, সে খালি ছবি প্রসেস করবে। টেকা টুকাও দিমু। কিন্তু পরে মনে হয়, হুর, কে করবে এই কাজ। তাই ছবি শুধু জমছেই।
এই অতৃপ্তি টা অদ্ভুত। এই অস্থিরতা টা কাইন্ড অফ বেশি বেশি। আমার মাথার ভিতরের ইনার ভয়েস আমারে ধমক দ্যায়, আরে ব্যাটা যা যা করতে চাস, কইরা লাইলেই তো হয়। এত ঘ্যান ঘ্যান করছ কেলা। কথা সত্য। কিন্তু তবু যা করছি, তার চেয়ে যা করি নাই তার হিসাব নিতে নিতেই জীবন শেষ হয়া যাইতাসে।