লেখার তারিখঃ সেপ্টেম্বর ৫, ২০১৫ । ১২.০০ এ এম
আমাদের ধৈর্য খুব কম। এইটা আমি সব জায়গায় দেখি। ঘুরায় ফিরায় অনেক কিছুর কারন আমার এইটাই মনে হয়। আমাদের তাড়াহুড়া শুধু বেশি না। অত্যাধিক বেশি। আমরা সব কিছু এখন ই চাই। রাইট নাউ। পরের টা পরে।
একটা গাড়ি ব্যাক করতাসে, পিছে দিয়া এক মিলিমিটার জায়গা থাকা পর্যন্ত রিকশা সাইকেল মানুষ যাইতেই থাকবে। কারন ওইটুক যায়গা দিয়া না গেলে আর জীবনেও যাওয়া যাবে না। ওইটা দুনিয়ার শেষ উইন্ডো।
একটা সি এন জি বা একটা গাড়ির স্টার্ট বন্ধ হয়া গেসে রাস্তার মধ্যে। ড্রাইভার ঘামতে ঘামতে ইগিনিশন দিতাসে বার বার। ক্যার ক্যার করতাসে কিন্তু স্টার্ট নিতাসে না। আর যায় কই। পিছনে থাকা গাড়ি টা হর্ন এর বন্যা বহায় দিবে। যত জোরে পারা যায়, যত বার পারা যায় হর্ন দিতেই থাকবে। আমি ভাবার ট্রাই করি যেখানে দেখতাসে যে স্টার্ট বন্ধ হয়া গেসে, সেইখানে হর্ন দেয়ার দরকার কি। পজিটিভলি ভাবার ট্রাই করি। মনে করি, হর্ন দিয়া আসলে পিছনের গাড়ি হেল্প করতে চাইতাসে। হর্ন এর আওয়াজে হয়তো ইগ্নিশন প্লাগ এর রাগ উইঠা যাবে। আর জলে উঠবে আপন শক্তি তে।
বেচারা সি এন জি বা গাড়ির ড্রাইভার হয়তো নাইমা আইসা ঠেইলা গাড়ি টারে সাইডে নেওয়ার ট্রাই করবে। কিন্তু তাতেও হর্ন বাজানো থামবে না। পাশে দিয়া যাওয়ার সময় বইলা যাবে, ওই শালা, নষ্ট গাড়ি নিয়া রাস্তায় নামস ক্যান। খালি দৌড় দিয়া আয়া পরস ঢাকা শহর ! কইততে যে আহে এডি।
শুধু রাস্তায় না রাস্তার বাইরেও আমাদের ধৈর্য কম। আমরা লাইন এ দাড়ায়া বাস এর জন্য অপেক্ষা করি কিন্তু বাস এ উঠার সময় আর লাইন থাকে না। শিক্ষা ব্যাবস্থার এই অবস্থার জন্য আমরা সরকার কে কত গালি দেই। কিন্তু আমরা কি করি? বাবা মার ধৈর্য হয় না ছোট ছেলেমেয়েরে নিয়া পড়াইতে বসার। তাই কোচিং এ ঠেইলা দেই। মাস্টার রাখি। সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তরের জন্য গাইড বই, প্রাইভেট টিউশন। জিনিশ টা অনেক টা ম্যানুয়াল পইড়া বুঝার জন্য সাথে একটা ছোট ম্যানুয়াল দিয়া দেওয়ার মত লাগে আমার কাছে।
কোক পানি কিনাই ফার্স্ট এ গলার প্লাস্টিক টা ছিরা ফালায় দেই। কই ফালাইলাম দেখার দরকার ই নাই। আর খাওয়ার পর বটল টা রাস্তায় ফালাইতে তো আমাদের সেই মজা লাগে। ডাস্টবিন এর জন্য ট্রেশ সাথে নিয়া ঘুরুম? এত টাইম আসে কার।
আর আমরা ক্রমাগত শর্ট টার্ম এন্টারটেইনমেন্ট এ অভ্যস্ত হয়া যাচ্ছি। ফেসবুক এর নিউজ ফিড, হয় তো একটা মজার ভিডিও, একটা অনেক ইন্সপাইরেশনাল কথা বার্তা লেখা ইমেজ, ফিল্মি গিয়ান নামক পেজ এর কিছু সংগৃহীত ছবি শেয়ার দেওয়া, গান শোনা , সিনেমা দেখা এগুলা আমাদের কাছে এখন বেশি প্রিয়। আমাদের ধৈর্য কম তাই আমাদের বই পড়া কমে যাচ্ছে। সব কিছু তে আমরা লিঙ্ক চাই। একজন যদিও বলেও যে অমুক বই টা পড়সি, খুব ভাল্লাগসে, একজন থাকবেই যে কমেন্ট করবে নিচে, ভাই লিঙ্ক টা দ্যান।
আমরা কবিতা পড়ি না। কবিতা বুঝতে টাইম লাগে। এত টাইম কই। ফুড কম খাই, ফাস্ট ফুড বেশি খাই। যে কোন রকমের সারকাস্টিক ফাইযলামি আমাদের বড়ই অপছন্দ। আরে এত কিছু বোঝার টাইম আছে নাকি। যা বলবি সরাসরি বল। শুনব, বুঝলে হাসবো, না বুঝলে এইটা ব্যাড জোক। তুই ফাউল।
প্রেম ভালবাসা তেও আমাদের কোন ধৈর্য নাই। একটু মেয়েটারে বুঝি আগে। তার সাথে নিজের কেমিস্ট্রি টা দেখি। ছেলেটারে আগে দেখি শো অফ নাকি আসলেই ভিতরে কিছু আছে। আমরা দ্রুত যেমন ভাবতে চাই তা ভাইবা নেই। আর ধরা খাই। সবচেয়ে কমন সার্কেল অফ রিলেশনশিপ এখন প্রোফাইল ছবি দেখলাম, ভাল লাগলো আর প্রেম করার জন্য পাগল হয়া গেলাম। ইউ ভেরি কিউট লুকিং টাইপ ভুল ভাল ইংরাজি কপচাইয়া ইনবক্স ভইরা ফালানো তেই আমাদের রোমান্টিকতা শুরু হইল। তারপর হোয়াটস এপ এর নাম্বার চাওয়ার বাহানায় ফোন নাম্বার পাওয়া। ফোন দিয়া ত্যাক্ত করা। অপরপক্ষ তার বিপুল অভিজ্ঞতায় বুইঝা যায় যে ঘটনা আসলে কোন দিকে যাইতাসে। তারপর ব্লক মারা, দুখখের স্ট্যাটাস, আবার আরেকজন এর প্রোফাইল ছবির প্রেম এ পড়া। এই ভাবে কোনদিন ভালবাসা হয়?
আল্লাহ আমাদের ধৈর্য বাড়ানোর প্র্যাকটিস করার তৌফিক দিন। একদিন এ এই জিনিশ পালটাইবো না।