১৭৭/৩৬৫

লেখার তারিখঃ আগস্ট ২৩, ২০১৫ । ১০.০৩ পি এম

 

মাঝে মাঝে মনে হয় বলে দেই সব। যাকে ভাল লাগে তাকেও বলে দেই। যাকে ভাল লাগে না তাকেও। তারপর বসে বসে দেখি কিভাবে পৃথিবী ধ্বংস হয়। আমি কিভাবে বদলে যাই সবার চোখে। কিভাবে আমাকে নিয়ে কথা হয়। এই অনুভূতি খুব বাজে। যা মনে আসে করতে পারি না। যা করতে হয় তা করি। কেমন ভণ্ড লাগে নিজেকে। উপরে এক ভিতরে আরেক। উপরে মুক ও বধির সন্ন্যাসী আর ভিতরে কাউকে কাউকে খুন করে লাশ পুতে ফেলাও শেষ।

গুড নিউজ হলো অভ্যাস হয়ে গেছে। আমি পৃথিবীর সবচেয়ে নিরীহ প্রাণী হয়ে বাকি জীবন টা কাটানোর রাস্তা টা চিনে গেছি। চুপ থাকো এবং কেয়ার করা বন্ধ কর। ব্যাস, আমার চেয়ে সুখি আর কেউ নেই। কথা বললেই সমস্যার চাকা ঘোরা শুরু করবে। আর কেয়ার করলেই কষ্ট পাওয়ার ট্রেন পেয়ে যাবে সবুজ বাতি। নীল ধোয়া ছারতে ছারতে এসে পিশে রেখে যাবে আমাকে। আমার ছিন্ন হওয়া অর্ধেক টা তখনো হাসি মুখে বলবে , ঠিক আছে… ব্যাপার না… অসুবিধা নাই।

একটা মানুষের মরে যাওয়ার আগে কিছু কাজ আছে। যেগুলো তার অবশ্যই করে যাওয়া উচিত। জীবনে অন্তত একটা গাছ লাগানো উচিত, এক জন কে লিখতে পড়তে শেখানো উচিত, একটা বাদ্যযন্ত্র বাজানো শেখা উচিত আর তার জীবনের শিক্ষা টা সাথে করে নিয়ে না গিয়ে রেখে যাওয়া উচিত। আমার সব গুলাই করা শেষ। শুধু শেষের টা করে যাওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছি। অনেক ভাল হবে যদি তিনশ পঁয়ষট্টি নম্বর লেখাটা লিখে যাওয়ার পর খাতা জমা দিয়ে বের হয়ে হয়ে যাতে পারতাম এই পরীক্ষার হল থেকে।

আমি আজকে ঢাকা আসছি। যখন পাবনা থেকে রওনা দেই তখন শেষ রাত। রাত চারটা দশ এ বাস টা দৌড়ানো শুরু করলো। আর দৌড়াতে দৌড়াতে এই কোন দিকে তাকানোর সময় নেই শহরে এসে যখন থামলো তখন সবাই দৌরাচ্ছে অলরেডি। বাস থেকে নেমে আমিও দৌড়ানো শুরু করলাম। অফিসে আসলাম। অফিস করলাম। ডেস্ক এ বসে দৌড়ালাম আরো অনেক গুলা মানুষের সাথে। ফোনে, ই মেইলে, কথায়। একটা সময় মনে হলো কেমন মাতাল লাগছে। কলিগ আপু বললো, বাসায় গিয়ে ঘুমাও। আমার অযুহাতপ্রিয় মন তাতেই হাততালি দিয়ে হাটা শুরু করলো বাসার দিকে। তাকে অনেক কশটে টেনে তুনে শরীর এ রাখলাম পৌনে পাঁচটা পর্যন্ত। তারপর রিটায়ার্ড হার্ট ব্যাটসম্যান এর মত লজ্জা লজ্জা মুখ করে বাসায় চলে আসলাম। কথা ছিল আমি তামীম ভাই বনানী যাব ঘুরতে। কিন্তু ক্লান্তির চেয়ে বেশি ছিল অবসাদ। তাই আর বের হওয়া হয়নি।

আমার জন্য হতাশা চর্চা করা টা একটু কঠিন। আমি জানি আমাকে দেখে দেখে অনেকে ইন্সপায়ারড হয়। ভাব নেওয়ার জন্য বলছি না। আসল, সত্যিকার এর, জলজ্যান্ত মানুষ আমাকে বলেছে , “আপনাকে দেখে আমি ইন্সপায়ার হই”। এইটা এই জীবনের অনেক বড় পাওয়া। অফিসে গদি তে বসা মহাজনেরা যখন ইন্সপাইরেশন নিয়া বড় বড় বুলি আউরায় আর কাজের বেলায় বসে ঘণ্টা বাজায় তখন আমি আমার এই অর্জন এর কথা ভাবি। ইচ্ছা করে ওদের বলি, আপনার থেকে যদি এই ডেজিগনেশনটা আর অফিসটা মাইনাস করি, তাহলে আর কি থাকে? একটা স্বার্থপর কুৎসিত প্রতিভাহীন মানুষ ছাড়া?

কিন্তু আমি আমার হতাশা লুকিয়ে রাখলে যেটা হবে তা হল নিজের সাথে বেইমানি। আমার কাছে জীবন টাকে একটা বিশাল লাল সুইচ মনে হচ্ছে। যেই সুইচ টা আমাকে কে জানি ধরিয়ে দিয়ে কেটে পরেছে। সুইচ এর উপর লেখা ডু নট প্রেস। চাইলে সারা জীবন সুইচ টা ইগ্নোর করে কাটায় দেওয়া যায়। যত্ন করে রাখলাম, ধুলা টুলা ঝাড়লাম মাঝে মাঝেই, আগের দিন এর টিভির কাভার এর মত একটা কাভার দিয়াও রাখতে পারি। সুইচ টা টিপ দিলে যে কি হবে, তা কেউ বলতে পারে নাই। কিন্তু ভাল কিছু হবে না এইটা শিওর। নাইলে তো উপরে ডু নট প্রেস লিখে রাখতো না। কত দিন পারব জানি না। একদিন হয় তো লাল সুইচ টা টিপ দিয়ে ধ্বংস দেখার অপেক্ষা করবো। তাও তো ভাল। আমি জানবো যে, আই ট্রাইড টু সি হোয়াটস অন দি আদার সাইড।

কি যে লিখলাম এগুলা। মনের ভিতর থেইকা আওয়াজ আসতাসে,

” বাইয়া, এট্টু বুজাইয়া কওউ। ”

 

 

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *