লেখার তারিখঃ আগস্ট ১১, ২০১৫ । ১১.৫৫ পি এম
আজকে সারাদিন সাইট এ সাইট এ ছিলাম। সকাল বেলা বাইর হইসি আর সন্ধ্যা বেলা বাসাবো বাসায় ঢুকসি। আমার যেই কাজ করতে হয় তার মধ্যে সাইট এ যাওয়া খুব কম লাগে। গেলেও ভেন্ডররা যায় বা জুনিয়র রা যায়। কিন্তু আমার অনেক ভাল্লাগে সাইট এ যাইতে। কিছু শিখতাসি মনে হয়। সাইট এ গিয়া আমার কাজ তেমন কিছু না। একটা নতুন ছাদ এ যখন বিটিএস বসে তখন আমাদের আসে পাসের কোন একটা সাইট এর সাথে নতুন টার একটা লিঙ্ক করা লাগে। এই লিঙ্ক টারে বলে ট্রান্সমিশন লিঙ্ক। এই লিঙ্ক টা অনেক কিছু দিয়া হইতে পারে। ফাইবার দিয়া হইতে পারে, মাইক্রোওয়েভ দিয়া হইতে পারে, নন লাইসেন্সড ব্যান্ড যার আরেক নাম আই,এস,এম ব্যান্ড সেই টা দিয়া হইতে পারে। এই ট্রান্সমিশন কেমনে হইব, কত হাইটে কি যন্ত্রপাতি বইব, বহনের পর কুন পোর্ট এ আয়া তার তুর জুরা লাগবো এই কাম গুলা যে প্ল্যান কইরা দ্যায় তার নাম ট্রান্সমিশন প্ল্যানার। আমি একজন ট্রান্সমিশন প্ল্যানার। খুব ভাল মানের প্ল্যানার না। কিন্তু প্ল্যানার।
যেহেতু নতুন সাইট সেহেতু আমাদের সাথে অন্যান্য ডিপার্টমেন্ট এর লোকজনও যায়। যেমন সিভিল ইঞ্জিনিয়ার একজন যায় স্ট্রাকচার রিলেটেড প্ল্যান গুলা উনারা করে, একজন রেডিও প্ল্যানার যায় যিনি জিএসএম আর ত্রিজি নেটওয়ার্ক এর জন্য এন্টেনা গুলা কোন কোন দিকে মুখ কইরা বইব তা প্ল্যান করে। সাইট একিউজিশন এর একজন যায় যিনি বাড়িওয়ালার সাথে কন্ট্রাক্ট , ভাড়া ইত্যাদি নিয়া কথা বার্তা বলেন। আমরা সাইটে দাঁড়াইয়া ইনিশিয়াল প্ল্যান টা করি, পরে অফিসে আইসা আরো ডীটেইল এ কাজ করা লাগে। যখন সাইট এ যাই না তখন অন্য কেউ এই সব ইনিশিয়াল প্ল্যান টা আমাদের দ্যায় আমরা বাকি ডিটেইল যোগ করি। সব কিছু ঠিক হইলে পরে রোল আউট এর লোকজন এর কাজ শুরু হয় আমাদের প্ল্যান দেইখা দেইখা।
মজা হয় যে এই টা বাংলাদেশ বইলা বাড়ির মালিক রা অনেক খাতির যত্ন করে। আজকে যেমন এক বাসায় বাড়িওয়ালা ছাদে যতক্ষণ ছিলাম সেভেন আপ আনাইয়া খাওয়াইসে। আমি সোডা এভয়েড করতাসি এই মাস থেইকা তাই খাই নাই। আরেকজন আবার কাজ শেষে জোর কইরা বাসায় ধইরা নিয়া চা, বিস্কুট খাওয়াইসে। শেষ যে বাসার ছাদে গেসি ঐ বাসার বাড়ীওয়ালা তো রাত্রে না খায়া আস্তেই দিবে না। অনেক বুঝায় টুঝায় পরে আস্তে হইসে।
আমাদের সরাসরি কাস্টমারের সাথে ইন্টারেকশন হয় না বইলা এই সব সময় মজা লাগে অনেক। একবার একটা মজা হইসে। অফিস করতাসি হঠাত নানুবাড়ি থেইকা একটা ফোন আসলো। এক নানা ফোন করসে। আমি তো সালাম টালাম দিয়া অস্থির। উনি খুবি প্রভাবশালী আমাদের এলাকায়। সামনেই ইলেকশন এ দাঁড়াবেন। প্রাথমিক কুশলাদি বিনিময় এর পর উনি বললেন, শুন ইথার, আমার জমিতে গ্রামীণ এর একটা টাওয়ার বসায় দাও। যত টাকা লাগে আমি দিব। যত লোক লাগে সব আমি দিব। তুমি খালি টাওয়ার টা পাঠায় দাও।
আমি তো পুরাই, ইয়ে মানে, না মানে, নানা, আমি তো টাওয়ার বসাই না। আপনার ক্যান টাওয়ার লাগবে? নানা প্রথমে বলতে চায় না। তারপর চাইপা ধরার পর বলল, উনার যে প্রতিদ্বন্দ্বী আছে গ্রামে সম্প্রতি সেই লোক এর জমিতে বাংলালিক একটা টাওয়ার বসাইসে। এখন গ্রাম এ নাকি উনার সম্মান সেই জন্য অনেকে বাইরা গেসে। উনার নামের আগে লোকজন টাওয়ার বসাইয়া “টাওয়ার অমুক” ডাকা শুরু করসে। এইটা দেইখা আমার সেই নানার আর সহ্য হইতাসে না। এখন ইজ্জত রক্ষার্থে উনার জমিতে একটা টাওয়ার লাগবই।
আমি উনারে একটু বুঝানির ট্রাই করলাম যে, দেখেন টাওয়ার এ তো আরো অনেক ডিপার্টমেন্ট এর যন্ত্রপাতি থাকে। আমি একলা চাইলে তো হবে না। উনি বললেন, কিচ্ছু লাগবো না। কত টেকা কারে খাওয়ানই লাগবো কউ খালি। বিদ্যুতের খাম্বার মত খালি একটা টাওয়ার বহায় দিবা। এইডাতে নেটোয়ার্ক পরে লাগাইও। তুমি খালি একদিন গ্রামে আইসা আমারে দিয়া ফিতা কাটায়া টাওয়ার উদ্বোধন করাইবা , ব্যাস। তুমার কাম শ্যাস।
আমি জি জি অবশ্যই, আমি ব্যবস্থা করতাসি বইলা ফোন রাইখা দিসিলাম । এরপর অনেক বার ফোন দিসে আমি ধরি নাই। আম্মারে বলসি বলতে আমি দেশে নাই, ঢাকা টু অস্ট্রেলিয়া মাইক্রোওয়েভ লিঙ্ক করতে আমেরিকা গেসি গা।