১৫৯/৩৬৫

লেখার তারিখঃ আগস্ট ০৫, ২০১৫ । ১১.৪৯ পি এম

 

আজকে মাসের পাঁচ তারিখ। এই পাঁচ দিনে আমি ২৫ কিলোমিটার হাটসি। আমার কাছে এইটা বিরাট একটা ব্যাপার। ২৫ কিলোমিটার মানে গুলিস্তান জিরো পয়েন্ট থেইকা সোনারগাঁও পর্যন্ত দূরত্ব। হাইটা গেলে ৫ দিনে সোনারগাঁও পৌছায় যাইতাম। ইশা খাঁ বাইচ্চা থাকলে আজকে কত খুশি হইতেন।

জিনিশ টা একটা নিজেকে দেওয়া নিজেরই চ্যালেঞ্জ। দেখি না পারি কিনা, পারবো না ক্যান। মাত্র পাঁচ কিলোমিটার ই তো প্রতিদিন। এই ভাবে হাটতে থাকলে ২০ তারিখ এ গিয়া ১০০ কিলো মিটার হবে। কি দারুণ ব্যাপার একটা। ১০০ কি মি হাইটা ফালাইসি বলতে পারবো।

আমি এই টা শুরু করার আগে ভাবসি অনেক। আমি যদি আলাদা কইরা টাইম বাইর কইরা এই কাজ করতে যাইতাম তাইলে দুই দিন করার পর আমার মনে হইত না থাক, আজকে বাদ দেই, সময় নাই। ভাবসিলাম অফিসে আসা যাওয়া করলেই পাঁচ কিলোমিটার হয়া যাইব। কিন্তু পরে ওই প্ল্যান টা কেন্সেল করতে হইসে কারণ , এক, মাঝখানে অফিস করার গ্যাপ পরবে।আমারে আইলসামি পায়া বসবে। আর দুই, অফিসের পর আমার যদি টায়ার্ড লাগে তাইলে দেখা যাবে ওই দিন রিকশা নিসি অথবা আসার সময় যদি লেট হয় কোনদিন তখন আমি হাইটা না গিয়া রিকশা নিব। আর গেল অই দিন এর হাটা।

আমার এই স্বভাব আমি জানি। কিছু না করার এক্সিউজ তৈরি করার ক্ষেত্রে আমি সারাজীবনই ওস্তাদ আসিলাম। তাই ঠিক করসি আলাদা কইরা কিছু করুম না, লাইফস্টাইল এর সাথে এডপ্ট করা যায় এরম কিছু করা লাগবো। আমি হাটার সময় কোন টি শার্ট, ট্রাউজার, রানিং সুজ ইত্যাদি পরি না। হাটার আগে স্ট্রেচিং, হাটার পরে কুলিং অফ ইত্যাদি করি না। অফিস থেইকা বাইর হই। জিপি হাউজের সামনে দাঁড়াইয়া একটু ওয়েইট করি। আমার এন্ডোমোন্ডো এপ এর জিপিএস টা লক হওয়া পর্যন্ত দাঁড়াইয়া থাকি। লক হওয়া মাত্র স্টার্ট বাটনে ক্লিক কইরা হাটা শুরু করি।

পাঁচ কিলোমিটার হাটতে আমার এক ঘণ্টার মত লাগে। আমি খুবি হেলতে দুলতে আসে পাসের তামশা দেখতে দেখতে হাটি। কোন তাড়াহুড়া করি না। অনেকে জগিং এর সময় গান শোনে। আমার হেডফোন নেপাল থেইকা ফিরার সময় রাশার কাছে রয়া গেসে। তাই গান শুনার উপায় ও নাই। তাই রাস্তার একশোটা মানুষ যেভাবে হাইটা যাইতাসে আমি ওই ভাবেই খুব উদ্দেশ্য আছে হাটার ভাব নিয়া হাটতে থাকি। পার্থক্য শুধু অদের যাওয়ার অনেক জায়গা আর আমার কোথাও যাওয়ার নাই।

হাটতে হাটতে বিভিন্ন ফিলোসফিকাল চিইন্তা ভাবনা আস্তে থাকে মাথায়। আর আমি সব চিন্তা গুলারেই পাত্তা দিয়া চিন্তা করতে করতে হাটি। আমার হাটার এরিয়ায় ফুটপাথ গুলার অবস্থা কিছু কিছু যায়গায় খুবি করুন। কিন্তু অভারল আমার মনে হইসে, হাটার পরিবেশ ভাল। বসুন্ধরার ভিতরে যে সব খালি প্লট আছে ওই গুলায় সন্ধ্যার পর জোনাকি পোকা দেখা যায়। আমি হাটতে হাটতে দাঁড়ায় যাই দেখার জন্য। জোনাকি পোকা কি সুন্দর একটা জিনিশ। অন্ধকারে মিট মিট করে মনে হয় গিয়া শুইয়া পরি ওই খানেই আর চোখের উপর উড়ুক। একটা জিনিশ খেয়াল করসি যে সব ঝোপ ঝাড় আলোর মধ্যে ওই খানে জোনাকি পোকা থাকে না। থাকে, জংলা মত অন্ধকার জায়গায়। বসুন্ধরার সব রাস্তায় যে এখনো লাইট বসায় নাই এই জন্য আলহামদুলিল্লাহ।

আজকে হাটতে হাটতে একটা গর্ত দেখসি বসুন্ধরার মেইন রোড। ইয়াব্বড় গর্ত। পইরা গেলে পুরাডাই ঢুইকা যামু এক্কেরে এমন বড়। আমি পাশে দিয়া যাইতে যাইতে ভাবসি যদি কোনদিন খেয়াল না করি আর পইড়া যাই তাইলে কি মানুষ বুঝবে? নাকি গর্তের ভিতর থেইকা আমি “এই যে হেলো, আমি পইড়া গেসি” বললে ভয়ে দৌড় দিবে।

কালকে খিলগাঁও থেইকা সুভাস্তু হাইটা আসছি। ভালাই লাগসে। একদম সুজা হাটতে হাটতে আইসা পরসি। কুন ডাইনে বামে নাই। সারাক্ষণ ফুটপাথেই ছিলাম। মেইন রোডের ফুটপাথের সবচেয়ে গা জ্বালাকর ব্যাপার হইল জ্যাম এর সময় যখন মটর সাইকেল ওলারা ফুটপাথে উঠায় দ্যায়। আচ্ছা দিসে ভাল, তারাতারি যাওয়া দরকার হয়তো তার। কিন্তু ফুটপাথ উঠা বাইক যদি পিছে আইসা হর্ন দিতেই থাকে তাইলে কেমন মেজাজ খারাপ হয়? এদের লাইথ্যায়া লাইথ্যায়া রাস্তায় নামায় দেওয়া প্রত্যেক নাগরিক এর পবিত্র দায়িত্ব।

২৫ কিলোমিটার হাইটা আমার শিক্ষা হইল, শেষ কিলোমিটার টা সবচেয়ে কঠিন। মনে হয় যেন শেষ ই হইতে চায় না, পায়ে ব্যথা লাগে, মাথা ঘুরানতিস লাগে। কিন্তু যদি এগুলা পাত্তা না দিয়া সামনের দিকে হাটতে থাকি তাইলে সবকিছুই সম্ভব।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *