লেখার তারিখঃ আগস্ট ০৪, ২০১৫ । ১১.৫৭ পি এম
আজকের সকাল টা শুরু হয় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর লেখা সর্বশেষ কবিতা পড়া দিয়া। এই কবিতা টা কবি মৃত্যুর ৭ দিন আগে লেখেন। উনার লেখার মত অবস্থা ছিল না। উনি বলেন আরেকজন শ্রুতিলিখন করেন। কেমন একটা আচ্ছন্ন হয়া ছিলাম অনেক্ষন কবিতা টা পড়ার পর। খুব যে আবেগে আপ্লুত হয়া গেসিলাম তা না। আমি শুধু মৃত্যু শয্যায় একজন কবির কথা ভাবতেসিলাম। যার কাছে তখন প্রতিটা কবিতাই শেষ কবিতা। আমি হইলে কিসের কথা বলতাম তখন?
নিজের জীবন কত সুখে কাটসে, আল্লায় কত ভাল রাখসে, সবাইকে ধন্যবাদ এইটাইপ আবর্জনা কিছু লিখতাম হয় তো। কিন্তু উনি তো সাধারণ ছিলেন না। শেষ সময় আইসাও তিনি স্রষ্টা আর মানুষের উদ্দেশ্যে তার জীবন থেইকা পাওয়া শিক্ষা পাস অন কইরা দিয়া যাইতে সচেষ্ট ছিলেন। কবিতা টা একবার লিখি এইখানে, তাইলে বুঝতে সুবিধা হইব কুন লাইনে ট্রেন চলতাসে। যেহেতু শ্রুতিলিখন এ লেখা কবিতা তাই কবি এই কবিতার কোন নাম দিয়া যান নাই।
তোমার সৃষ্টির পথ রেখেছ আকীর্ণ করি
বিচিত্র ছলনাজালে,
হে ছলনাময়ী I
মিথ্যা বিশ্বাসের ফাঁদ পেতেছ নিপুণ হাতে
সরল জীবনে I
এই প্রবঞ্চনা নিয়ে মহত্ত্বেরে করেছ চিহ্নিত;
তার তরে রাখনি গোপন রাত্রি I
তোমার জ্যোতিষ্ক তারে
যে-পথ দেখায়
সে যে তার অন্তরের পথ
সে যে চিরস্বচ্ছ,
সহজ বিশ্বাসে সে যে
করে তারে চিরসমুজ্জ্বল I
বাহিরে কুটিল হোক অন্তরে সে ঋজু,
এই নিয়ে তাহার গৌরব I
লোকে তারে বলে বিড়ম্বিত I
সত্যেরে সে পায়
আপন আলোকে ধৌত অন্তরে অন্তরে I
কিছুতে পারে না তারে প্রবঞ্চিতে,
শেষ পুরস্কার নিয়ে যায় সে যে
আপন ভান্ডারে I
অনায়াসে যে পেরেছে ছলনা সহিতে
সে পায় তোমার হাতে
শান্তির অক্ষয় অধিকার I
এই কবিতা পইড়া আমি যা বুঝসি তা একটু সুজা কইরা বুঝানির চেষ্টা করি। কবিতা টার প্রথম ৪ লাইন হইল
তোমার সৃষ্টির পথ রেখেছ আকীর্ণ করি
বিচিত্র ছলনাজালে,
হে ছলনাময়ী I
মিথ্যা বিশ্বাসের ফাঁদ পেতেছ নিপুণ হাতে
সরল জীবনে I
এই ৪ লাইন এই কবিতার সবচেয়ে হতাশাবাদী লাইন। এই খানে প্রথমের সৃষ্টি করতারে ছলনাময়ী বইলা কবি বলসেন, তুমি তো যা সৃষ্টি করসো, তা বুঝার রাস্তা টা ছড়াইয়া ছিটায় রাখসো সারা দুনিয়াতেই । মানুষের জীবন প্রথমে সহজ সরল ই ছিল, তারপর সৃষ্টিকর্তা আস্তে আস্তে ট্রাস্ট নামের একটা ইলিউশন তৈরি কইরা আমাদের সরল জীবনে ইঞ্জেক্ট কইরা দিলেন আর সব প্যাচ পুঁচ লাইজ্ঞা গেল।
তার পরের কয়েকটা লাইনে আবার কবি এই কনফিউশন দূর করার জন্য লিখলেন।
এই প্রবঞ্চনা নিয়ে মহত্ত্বেরে করেছ চিহ্নিত;
তার তরে রাখনি গোপন রাত্রি I
তোমার জ্যোতিষ্ক তারে
যে-পথ দেখায়
সে যে তার অন্তরের পথ
সে যে চিরস্বচ্ছ,.
সহজ বিশ্বাসে সে যে
করে তারে চিরসমুজ্জ্বল I
কবি কইতে চাইতাসেন যে, এই যে মানুষের লগে চিটিং, এইটা দিয়াই কে মহৎ আর কে শয়তান তা বুঝা যায়। এই মহৎ মানুষ এর জীবনে কোন কাল রাত্রি নাই, সব ই সকাল। যে নিজের কাছে অনেস্ট, তর মন সবসময় স্বচ্ছ জলের মত ট্রান্সপারেন্ট থাকে। রেজাল্ট এ গিয়া যতই ধাক্কা খাক, যতই কষ্ট পাক, মানুষ কে অনেক সহজে বিশ্বাস করতে পারি , এই বিশ্বাস টাই তারে জীবনে সবার কাছে জল জল কইরা জ্বলতে সাহায্য করে।
পড়ের লাইন গুলায় কবি কিছু এক্সেপশনাল মানুষের বর্ননা দিসেন। এইটা আমার কাছে অনেকটা এগজামপল সেট করার মত মনে হইসে। কবি লিখসেন,
বাহিরে কুটিল হোক অন্তরে সে ঋজু,
এই নিয়ে তাহার গৌরব I
লোকে তারে বলে বিড়ম্বিত I
সত্যেরে সে পায়
আপন আলোকে ধৌত অন্তরে অন্তরে I
বাইরে দিয়া হয়তো লোকটারে অনেক ঝামেলা ওয়ালা মনে হইতে পারে। কিন্তু ভিতরে ভিতরে সে অনেক সোজা। এইটা তার গর্বের একটা বস্তু। লোকজন তারে ডিস্টারবড বললেও আসলে সে এইটা নিয়াও কেয়ার করে না বেশি। সে নিজের মন কে বুঝাইতে বুঝাইতে সেই পর্যায়ে নিয়া যাইতে পারে যেখানে তার কাছে সত্য ছাড়া আর কিছু গ্রহন করার মত থাকে না।
কিছুতে পারে না তারে প্রবঞ্চিতে,
শেষ পুরস্কার নিয়ে যায় সে যে
আপন ভান্ডারে I
অনায়াসে যে পেরেছে ছলনা সহিতে
সে পায় তোমার হাতে
শান্তির অক্ষয় অধিকার I
তারে কেউ ই ঠকাইতে পারে না। কারণ তার কাছে ঠকানোর সংজ্ঞাটাই অন্য। মানুষ কে বিশ্বাস কইরা যে ঠকতে হবে, আর সবাই যে খালি চিটীং বা ছলনাই করবে এইটা সে আগেই জানে। তাই এই সব সহ্য করা তার কাছে কোন ব্যাপার ই না। শেষ হাসি টা , শেষ পুরসকার টা সেই পায় । আর সেই পুরশকার হইল মনের শান্তি।
একটা কবিতা লাইন বাই লাইন এর লিটারেলি অর্থ বাইর করা খুবি গর্হিত কাজ। আমি কারো চিন্তা ভাবনা কে এই লেখায় যা বলসি তার মধ্যে সীমাবদ্ধ কইরা দিতে চাই না। তবু কবিতাটা পইড়া যে অর্থ টা মনে হইসে তাই লিখলাম। আগামীকাল আজকের থেকে একটু বেশি জ্ঞানী হবো। তখন হয়তো অন্য কোন অর্থ যোগ হবে। আবারো।