লেখার তারিখঃ আগস্ট ০১, ২০১৫ । ১০.০১ পি এম
দিনের প্রথম ভাল কাজ টা হইল, আজকে আমি ৫.২৪ কিলোমিটার হাটসি। এইটা একটা নতুন প্রজেক্ট। প্রতিদিন ৫ কিলোমিটার কইরা হাটবো ঠিক করসি। আমার সুভাস্তুর বাসা থেইকা বসুন্ধরার অফিস মুটামুটি ৩ কিলোমিটার এর মত। আমি যদি প্রত্যেকদিন হাইটা যাওয়া আসা শুরু করি তাইলে এই টার্গেট পুরন হওয়া খুব কঠিন কিছু হওয়ার কথা না। সাথে দুই টা এডিশনাল জিনিশ যোগ হবে, অফিসের লিফট ব্যাবহার করা বাদ দিতাসি (আমি বসি লেভেল ৬ এ) আর চিনি দেওয়া খাবার যত টা পারা যায় খাওয়া কমায় দিতাসি (যেমন কোক জাতীয় ড্রিঙ্কস, চা, কফি ইত্যাদি)। আমি জানি এইভাবে ওজন কমে। আমি এর আগে এই ভাবে ওজন কমাইসি। ৮৯ কেজি থেইকা ৮৩ কেজি করসিলাম ১ মাস এ। তখন ৫ কিলোমিটার সাইকেল চালাইতাম। এইবার করতাসি হাটা হাটি।
হাটতে ভাল্লাগসে আজকে। রোদ ছিল না। মেঘ মেঘ আকাশ। আর অনেক বাতাস। আমি আকাশের মেঘের যাওয়ার ডিরেকশন দেখতেসিলাম আর বাতাসের ডিরেকশন বুঝার ট্রাই করতাসিলাম। যদ্দুর বুঝলাম ইট ওয়াজ গোয়িং ফ্রম ইস্ট টু ওয়েস্ট। তাইলে রানওয়ের উপর জোরালো ক্রস উইন্ড থাকার কথা। নর্থ এর দিকে যখন হাটতে সিলাম তখন বেশ কয়েকটা টেক অফ দেখসি। এয়ার এরাবিয়া আজকে শার্ক্লেট ওয়ালা ত্রি টুয়েন্টি পাঠাইসিলো ।
হাটতে হাটতে অনেক গুলা গল্প ঘটতে দেখলাম। একটা জায়গায় দেখলাম একটা রিকশা আইসা থামলো, ছেলেটা রিকশা থেইকা নাইমা গেল, মেয়েটা বাই বইলা হুট টা উঠায় দিয়া চইলা গেল, দুই জন দুই দিকে আর কেউ কারো দিকে ফিরাও তাকাইলো না। কত লক্ষবার এই দৃশ্য হইতাসে এই শহরে না? কতবার নিজেই ছিলাম ছেলেটার জায়গায়। আমার একবার মনে হইল, ছেলেটারে ডাইকা বলি, আরে বেকুব, হুড টা লাগসে কিনা চেক করেন, আর রিকশা ওয়ালা রে বলেন, সাবধানে নিয়া যাইতে, (ফাইজলামি কইরা বলতে পারেন মামা রুগী মানুষ আস্তে চালায়েন, তাইলে হাটার চাইতেও আস্তে চালাবে :p )। একটু না হয় দাঁড়াইয়াই থাকেন যতক্ষণ দেখা যায় রিকশা টা। রিকশা থেইকা নামলেই আজকের মত ভালবাসাবাসি শেষ হয়া যায় না, বেক্কল পোলাপান।
যমুনা ফিউচার পার্ক খুলসে দেখলাম। একটা লোক রে দেখলাম দুই পিচ্চির হাত ধইরা হাসি হাসি মুখ কইরা রোলার কোস্টার এর দিকে আগাইতাসে। পিচ্চি দুইটার হাসির চেয়ে উনার হাসির ব্যাসার্ধ বেশি। মার্কেটের ঢুকার গেটের ঠিক বাম পাশেই একটা ফুচকার দোকানে দেখলাম একজন পানির বোতল হাতে নিয়া ঝাল এ হু হা হু হা করতাসে । তারে দেইখা মনে হইতাসিল হু হা করাটাই উনার বেশি মজা লাগতাসে, পানি খাইয়া হু হা এর মজা নষ্ট করতে চায় না।
আসার পথে শাহজাদপুর বাস স্ট্যান্ড এ দুই রিকশাওয়ালার ধুম ধাম মাইর পাইট লাইগা গেল। আমার তখন এন্ডোমন্ডো তে ৪.৮ কিলোমিটার চলতাসে তাই থামার উপায় ছিল না। নাইলে দাঁড়ায় দাঁড়ায় তামশা দেখতাম কিছুক্ষণ। কেন মারা মারি লাগসে বুঝতে পারি নাই। তবে দুই জন এরই দুই জন এর লুঙ্গি টাইনা খুইলা ফালানো তে ব্যাপক উৎসাহ দেখা গেসে। একজন রে নিজের লুঙ্গি সামলাইতে সামলাইতে বলতে শুনসি খালি, ওই আমি তরে কি করসি? ওই আমি তরে কি করসি?
বাসায় ঢুকার আগে একজন ফোন দিল। উনি আমাকে ফেসবুক থেইকা চিনেন। ঢাকা ইউনিভার্সিটির ওমেন এন্ড জেন্ডার স্টাটিজ এর লেকচারার। সুভাস্তুর নিচে আইসা দেখা কইরা গেলেন আমার সাথে। আমার জন্য জেট এয়ারওয়েজ এর দুইটা সেফটি কার্ড আর একটা বুমির ব্যাগ নিয়া আসছেন। আমি এত খুশি হইসি আর এত লজ্জা পাইসি যে উনার দিকে তাকানির বদলে খালি সেফটি কার্ড আর বুমির ব্যাগ এর দিকেই তাকাইয়া আসিলাম। এত একাডেমিক একজন লোক বলসেন উনি নাকি আমার লেখার ভক্ত আর নিয়মিত পড়েন। আমি লইজ্জায় দাঁত কেলানি ছাড়া আর কিছুই করতে পারি নাই। সিরিয়াসলি কেউ প্রশংসা করলে আসলে কি করতে হয়? আমি ত বিগলিত হওয়া ছাড়া আর কিছু পারি না।
বাসায় আইসা এসি ছাইরা চেগায়া শুয়া ঠাণ্ডা হয়া তারপর বই গুছানির কাজ টা কিছু দূর আগাইসি। আমার বই এর সংখ্যা মাশাল্লা অনেক। দুই বুক সেলফ ঠাসা ঠাসি কইরা ভরা। এখন বই গুলারে একটু সুন্দর কইরা গুছাইয়া রাখুম বইলা মনস্থির করসি। একটা বুকশেলফ গুছানি শেষ। এখন ২য় টা ধরসি। সব বই আপাতত আনলোড কইরা মাটিতে নামায়া প্রাথমিক সর্টিং শেষ হইসে। এরপর বুক শেলফ টারে ঠেইলা উলটা পাশে নিয়া আসুম। তারপর আবার সেইটায় বই লোডিং শুরু হবে। একা থাকার সুবিধা হইল এই কাজ টাই কয়েক দিন ধইরা করা যায়। আপাতত পুরা বাসার ফ্লোর ভর্তি খালি বই আর বই। আমার যত বই আছে আমি পড়সি তার ৩০ ভাগ মাত্র। আর ৭০ ভাগ বই পড়া বাকি। কি আনন্দময় একটা ব্যাপার।
যেই বইটা পড়া শুরু করসিলাম, Stars: A Very Short Introduction ওইটা আরো কিছুদূর আগাইসি। এখন পেজ ২০ এ। আজকে পড়সি গ্র্যাভিটি নিয়া। গ্র্যাভিটি বা মাধ্যাকর্ষণ শক্তি একটা শক্তি হিসাবে অন্যান্য শক্তির মত অত শক্তিশালী না। অপেক্ষাকৃত দুর্বল শক্তি কিন্তু এর মুল বইশিষ্ট হইল এইটা এক মুখি শক্তি।ইলেকট্রিকাল শক্তির ক্ষেত্রে কি হয়? একি রকম চার্জ হইলে এক অন্যরে বিকর্ষণ করে , আর বিপরীত হইলে আকর্ষণ করে তাইনা?
গ্রাভিটির এই ঝামেলা নাই। সে খুবি ভাল আর লক্ষ্মী। সে সবাইরে খালি আকর্ষণ ই করে। নাইলে তো হের নাম মাধ্যাবিকর্শন শক্তিই হয়া যাইত। এই আকর্ষণ দুইটা বস্তুর ভর এর গুনফল এর সমানুপাতিক। সুজা কইরা বল্লে, দুইটা এক কেজি এক কেজি জিনিশের মধ্যে যেই মাধ্যাকর্ষণ (১ গুন ১ = ১), তার চেয়ে, একটা দুই কেজি আরেকটা তিন কেজি ওজনের জিনিষের মধ্যে মাধ্যাকর্ষণ (২ গুন ৩ = ৬) বেশি হইব।
আবার যত দূরে থাক রবে আমারই, ওয়ারফেজ এর এই গানেরও ফ্যান হইল গ্রাভিটি। মানে দূরত্ব বাড়ার লগে গ্রাভিটির বাড়নের কমনের একটা ব্যাপার আসে। এই ব্যাপার টা পাওয়া যাইব যদি দুরত্ব রে স্কয়ার কইরা তারে উল্ডাই তাইলে। সুজা কইরা বললে, দুইডা জিনিষের ওজন যতই হোক, যদি এগো মধ্যে দূরত্ব এখন কার থিকা দিগুণ বাড়াই তাইলে গ্রাভিটি কমব ৪ (২ এর স্কয়ার ৪) গুন। আর যদি দূরত্ব তিন গুন বাড়াই তাইলে গ্রাভিটি কমব ৯ (৩ এর স্কয়ার ৯) গুন। দূরত্ব যত বাড়বো দুইডা জিনিষের মধ্যে গ্রাভিটি তত কমব। এইডারে ইংরাজি তে কয় ইনভারসলি প্রোপরশনাল।
আমাদের অতি প্রিয় তারা, মহান সূর্য লওয়াও অনেক কিছু পড়সি, তয় অগুলা আজকে আর না লিখি। মুঞ্ছাইলে কালকে লিখুম নে।