১৫৪/৩৬৫

লেখার তারিখঃ আগস্ট ০১, ২০১৫ । ১২.০৮ এ এম

 

আজকে আমি আর কারিব ভাই সুষম ভাই এর সাথে দুপুর আড়াইটা থেইকা শুরু কইরা বিকাল সাড়ে পাঁচ টা পর্যন্ত তিন ঘণ্টা আড্ডা দিসি। এর মধ্যে ব্যাপক খানা দানা হইসে, আধা ঘণ্টা মনে হয় ফটোগ্রাফি, ওয়েডিং ফটোগ্রাফি এর ভূত ও ভবিষ্যৎ , গ্রুপ চ্যাট এ ভূত এর আসর ইত্যাদি নিয়া আলাপ হইসে আর বাকি পুরা টা টাইম আলাপ হইসে এভিয়েশন নিয়া। সাথের যারা ছিল তারা ওয়াজ টু নাইস টু বি বিরক্ত নাইলে চেইতা গিয়া বাইন্ধা থুইত আমগো রে। এই আলাপ এরি শেষের দিকে সুষম ভাই উঠাইল “অপারেশন অপেরা” এর কথা । আমি এত এক্সাইটেড হইসি উনার মুখে গল্প শুইনা যে বাসায় আইসা এইটা নিয়া অল্প স্বল্প রিসার্চ করলাম গুগল এ। আমার কাছে মনে হইসে এই গল্প টা বাংলায় লিখা রাখা দরকার।

চুম্বক অংশ বা মুল কথা বা আসলে ঘটনা কি হইসিলঃ

১৯৮১ সালের ৭ ই জুন, ইজরাইল বিমান আক্রমণ চালাইয়া ইরাক এর একটা নিউক্লিয়ার রিয়েক্টর ধ্বংস কইরা দ্যায়। এই অপারেশন এর নাম ই ছিল “অপারেশন অপেরা”

ক্যান আমি এইটা নিয়া এইটা নিয়া এত এক্সাইটেডঃ

কারন যেমনে পুরা অপারেশন টা পরিচালনা করা হইসিল তার পিছনে ছিল ব্রিলিয়েন্ট একটা প্ল্যানিং। আর পড়তে পড়তে আমি বুঝসি যে ইরান যতই ইসলামি রাষ্ট্রের ভাব সাব মারুক, স্বার্থের প্রশ্নে সে ইসরাইল এর সাথে হাত মিলাইতেও দ্বিধা করে নাই।

ব্যাকগ্রাউন্ডঃ

ইরাক তার পরমাণু কর্মসুচি আনুষ্ঠানিক ভাবে শুরু করে ১৯৬০ সালের দিকে। ১৯৭০ সালে আইসা দেশটা ভাবতাসিল এক্সপানশন দরকার। তাই তারা একটা নিউক্লিয়ার রিয়েক্টর কেনার চিন্তা ভাবনা শুরু করে। তারা ফ্রান্স আর ইটালির কাছে রিয়েক্টর কিনতে চায়, কিন্তু দুই দেশ ই ইরাক এর কাছে বড় মাপের রিয়েক্টর বেচতে অস্বীকার করে। কিন্তু ফ্রান্স শেষ মেষ ইরাকের কাছে “অসিরিস (Osiris)” ক্লাস এর একটা রিসার্চ রিয়েক্টর বিক্রি করতে রাজি হয় ৩০০ মিলিয়ন ইউ এস ডলার এর বিনিময়ে।

১৯৭৫ এ এই বেপারে ইরাক আর ফ্রান্স এর মধ্যে চুক্তি হয় আর ১৯৭৯ এ ইরাক বাগদাদ এর অদূরে আল তুওআইথা নিউক্লিয়ার সেন্টার এ রিয়েক্টর বানানোর কাজ শুরু করে।

আমেরিকা, ইরান আর ইসরাইল এর বিরোধিতাঃ

শুরু থেইকাই আমেরিকা আর ইসরাইল ইরাকের পরমানু কর্মসুচির বিরোধিতা কইরা আস্তেসিল। রিয়েক্টর কেনার ঘটনায় তারা আরো নইরা চইরা বসে। আমেরিকার গোয়েন্দা সংস্থা STRATFOR রিপোর্ট দ্যায় যে, এই রিয়েক্টর পরমাণু অস্ত্র বানানোর কাজে ব্যবহার হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা আছে। অথচ ইসরাইল এই রিয়েক্টর ধ্বংস কইরা যাওয়ার পর হাভার্ড ইউনিভার্সিটির Richard Wilson সেই ধ্বংসস্তূপ পরিদর্শন এ যান এবং সব কিছু দেইখা অফিশিয়াল বিবৃতি তে বলেন যে, এই রিয়েক্টর এতই ছোট যে এইটা থেইকা পরমাণু অস্ত্র বানাইতে ইরাকের কয়েক বছর না, কয়েক যুগ লাগতো।

১৯৭৭ সালে Menachem Begin ইসরাইল এর প্রধানমন্ত্রি হওয়ার পর, মোসাড এর সহায়তায় এই রিয়েক্টর ধ্বংসের প্ল্যানিং শুরু করেন। তিনি একটা ফুল স্কেল মডেল ও বানানোর নির্দেশ দ্যান যার উপর ইসরাইলি বিমান বাহিনী প্র্যাকটিস করতে পারে। ফ্রান্স যখন ইরাকে তাদের রিয়েক্টর এর যন্ত্রপাতি পাঠানো মাত্র শুরু করতে যাবে, তখন মোসাড এর এজেন্ট রা ১৯৭৯ সালে ফ্রান্স এর বন্দরে প্রথম শিপমেন্ট টা বোমা বিস্ফোরণ ঘটায়া ধ্বংস কইরা দ্যায়। ফ্রান্স আবার পাঠায় পরে শিপমেন্ট। ১৯৮০ সালে মোসাড Yehia El Mashad নামে এক ইজিপশিয়ান পরমাণু বিজ্ঞানী যিনি এই প্রজেক্ট এ কাজ করতেন ইরাক এর সাথে, তাকে তার হোটেল রুমে খুন করে।

পাশের দেশ ইরানও ইরাক এর পরমাণু কর্মসুচি নিয়া টেনশন এ ছিল । যদিও ইসরায়েল তাদের নীতিগত ভাবে শত্রু, কিন্তু ইরাকের বিরুদ্ধে সাপোর্ট পাওয়ার আসায় ইরান ইসরায়েল এরও নির্দেশ মানা শুরু করে। ইসরাইল এর উস্কানি তে ১৯৮০ সালের ৩০ শে সেপ্টেম্বর ইরান দুইটা F-4 Phantom বিমান নিয়া এই রিয়েক্টর এ আক্রমণ চালায়। কিন্তু বেশি ক্ষয়ক্ষতি করতে পারে নাই।

প্ল্যানিং:

১৯৮০ সালের দিকে আমেরিকার কাছে KH-11 Kennan স্যাটেলাইট ছিল। পইড়া যদুর বুঝলাম এইটা হাবল টেলিস্কোপ এর মত একটা স্যাটেলাইট যেইটা কিনা সেট করা পৃথিবীর দিকে মুখ কইরা। এইটা দিয়া আমেরিকা অই রিয়েক্টর এর তার আশে পাশের এলাকার ছবি তুইলা ইস্রাইল রে হেলপ করসিল জায়গা টা রেকি করতে।

১৯৮০ সালের দিকে ইসরাইল তাদের A-4 Skyhawk দিয়া কিছু বিমান আক্রমণ শুরু করে । আপাতত এইটা বিচ্ছিন্ন আক্রমণ মনে হইলেও আসলে ইসরাইল এর উদ্দ্যেশ্য ছিল ইরাক এর এয়ার পাওয়ার কেমন আইডিয়া পাওয়ার জন্য। এই আক্রমণ এ একটা লাভ হইল, ইসরাইলি রা ইরাক এর এয়ার স্পেস এ একটা ব্লাইন্ড স্পট পাইল যেইখানে রাডার ধরতে পারে না। এইটা ছিল সৌদি বর্ডার এর দিকে। যেহেতু সৌদি-ইরাকি ভাই ভাই, তাই ইরাক ওই দিক থেইকা কোন আক্রমণ আসার আশঙ্কা করতেসিল না।

প্ল্যান হইল যে ইসরাইলি বিমান গুলা এই পথে প্রবেশ করবে ইরাকে । কিন্তু সমস্যা হইল আসার আগে তাদের প্রায় ১৬০০ কিলোমিটার আকাশ পথ পারি দিয়া আস্তে হবে সৌদি আরব আর জর্ডান এর উপর দিয়া যারা কেউ ই তাদের এয়ারস্পেস এ ইসরাইল এর বিমান এলাউ করবে না। এই সমস্যা তারা এত ব্রিলিয়েন্টলি ওভার কাম করসিল যেইটা নিচের সেকশন এ উল্লেখ করলাম।

চূড়ান্ত আক্রমণ:

৭ই জুন, ১৯৮১। স্থানীয় সময় ৩ টা ৫৫ তে ইসরাইল এর ক্যাপচার করা মিশরের Etzion Air Force Base থেইকা আকাশে উড়লো ৮টা F-16 ফাইটার। তাদের এস্কোরট করা জন্য ছিল ছয়টা F-15 বিমান। আর মিশন কন্ট্রোল হিসাবে সারক্ষণ আকাশে ছিল একটা E2C HawkEye. আর ইরাকি বর্ডার এর আশে পাশে সার্চ এন্ড রেস্কিউ টিম হিসাবে ডেপলয় করা হইসিল বেশ কিছু CH-53 Super Stallion হেলিকপ্টার।

প্রথমে তাদের অতিক্রম করতে হইসিল জর্ডান এয়ারস্পেস। F-16 বিমান গুলা তাদের ফরমেশন পালটায়ে সৌদি এয়ার ফোরস যেই ফরমেশন এ যায় সাধারণত সেই ফরমেশন এ চইলা গেল।আর তারা সৌদি একসেন্ট এ জর্ডান এয়ার কন্ট্রোলার এর সাথে কথা বলা শুরু করল। তারা বলল যে তারা একটা সৌদি পেট্রল টিম, হারাইয়া গেসে, এখন তারা সৌদি আরব ফেরত যাইতে চায়, কেমনে কি। তাদের ক্লোজ ফরমেশন এর কারণে রাডার এও তাদের একটা বিমান হিসাবে দেখাইতাসিল। তাই জর্ডান কোন সন্দেহ ই করে নাই।

সোউদি এয়ার স্পেস এ ঢুইকাও তারা সেম টেকনিক ফলো করল। তারা এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলার কে জর্ডান একসেন্ট এ বললও, তারা জর্ডান এর পেট্রোল টিম,হারাইয়া গেসে, এখন বাসায় যাইতাসে। সোউদি রাও কোন সন্দেহ করে নাই।

একটা মজার জিনিষ হইল, যখন তারা গালফ এরিয়া পার হইতাসিল তখন সেইখানে তারা জর্ডান এর রাজার ইয়াট এর উপর দিয়া যায়। জর্ডান এর রাজা কিং হুসেইন ইয়াট এই ছিলেন। তিনি প্লেনে ইসরাইলি মারকিং আর তাদের হেডিং দেইখা সাথে সাথে বুইঝা ফালাইলেন এরা তো নিউক্লিয়ার রিয়েক্টর উড়ায় দিতে যাইতাসে। তিনি সাথে সাথে ফোন দিসিলেন কিন্তু সাদ্দাম হোসেন ফোন ধরেন নাই।

তারপর এর অংশ খুবি সহজ ছিল। কোণ রকম বাধা ছাড়াই F-16 গুলা রিয়েক্টর এ আক্রমণ চালায় আর বেশির ভাগ টাই মিশায় দ্যায় একদম মাটির সাথে। অপারেশন শেষে তারা চল্লিশ হাজার ফুট এ উইঠা যায় আর নিরাপদে ফিরা যায় ইসরায়েল এ।

এই অপারেশন কে তার প্ল্যানিং চমক এর কারণে এয়ার রেইড অপারেশন এর ইতিহাসের অন্যতম সফল অপারেশন হিসাবে গণ্য করা হয়।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *