১৪৪/৩৬৫

লেখার তারিখঃ জুলাই ২২, ২০১৫ । ১.১০ পি.এম

 

[নেট ছিল না গতকাল। তাই গতকাল এর লেখা নোট আজকে পোস্ট করতে হইতাসে]

নাগরকোট এর ২য় দিন আজকে। দা ডে স্টারটেড এট ফাইভ এ এম টুডে। আমি আর রাশা গতকাল অনেক রাত পর্যন্ত উকুলেলে বাজাইসি। তাই ভাবসিলাম আজকে উঠতে দেরি হইব। কিন্তু না। আমি যখন চোখ খুললাম তখন ঘরের মধ্যে ঘুটঘুইট্টা অন্ধকার আর একটা আরাম আরাম ঠান্ডা।

আমার খাট এর পাশেই জানলা। আমি হাত টা বাড়ায়া পর্দা সরায় একটু উকি দিলাম বাইরে। দেখি অনেক নিচের ভ্যালি তে আর পাহাড়ের গায়ের গ্রাম গুলার আলো তখনো নিভে নাই। আমার মনে হইতেসিল, আকাশে তো মেঘ, তারা দেখা যাবে না। তাই আমাদের ক্ষতিপুরণ এর জন্য তারা গুলা নাইমা আসছে মাটিতেই।

ওয়েবসাইট বলসিল সান রাইজ সাড়ে পাচ টায়। আমি ছয়টার দিকে উইঠা আইসা চুপ চাপ বইসা থাকলাম বারান্দায়। খালি পা থাকায় পাথরের ফ্লোর এ পা রাখতে মজা লাগতেসিল। আকাশ আলো হওয়া শুরু হইসে তখন। দেখলাম কিভাবে আকাশের সিলিং এর আলোটা জালায় দিয়া পাহাড়ে দিন আসে। বইসা বইসা ঝিমানি আসতাসিল যখন তখন আমি রুমে গিয়া আবার ঘুমায় গেলাম।

দুই ঘন্টা পর উইঠা একটা এক ঘন্টা ব্যাপি খানা দিলাম। বাফে ব্রেকফাস্ট আসিল। আমি খাওয়া শুরু করার পর বেডারা ভয়ে বাফে অফ কইরা গেসে গা। আফসুস। আগের মত খাইতে পারি না।

খাওয়ার পর বিকট শব্দ কইরা ঢেউক উঠায়া রাশা রে কইলাম, দোস্ত আমরা বেশি আরাম কইরা লাইসি। টাইম টু বার্ন সাম কে’স। ল জাই। আমরা যেই পাহাড় টার উপ্রে আসি ওইটা থিকা নামার একটা ট্রেইল আসে। ওইডা দিয়া অর্ধেক রাস্তা নামনের পর বুঝলাম আর নামলে উইঠা আস্তে পারুম না আজকে। তাই ফিরতি পথ ধরলাম। আমাগো হোটেল পর্যন্ত আইতে আইতে জিব্লা বাইর হয়া গেল। এরুম কষ্ট উফ। ফিটনেস এর অবস্থা এত খারাপ আমার। ঢাকায় আইসা কিছু করতেই হইব এই ব্যাপারে।

লাঞ্চ এর জন্য আমরা পেচাইন্না পেচাইন্না রাস্তা ডা দিয়া নাইমা ছোট লোকালয় টায় আসলাম। চৌরাস্তার মোড় এ একটা ছোট রেস্টুরেন্ট ছিল। পুরা ফ্যামিলি মিল্লা চালায়। নাম “নাগরকোট ফুড হোম”। আমরা ফ্রাইড বাফেলো মমো আর মিক্সড চাউমিন অর্ডার দিয়া বইসা বইসা মানুষ দেখলাম।

এখানে প্রচুর বাইকার কাপল আসে। বৃষ্টির সময়ের জন্য জয়েন্ট রেইনকোট আছে। দুই জন মাথা গলায় দিয়া আরামে চলা ফেরা করা যায়। নাগোরকোট রে আমার বেশ একটা উইকেন্ড এস্কেপ মনে হইসে। কাঠমুন্ডু থেইকা দুই ঘন্টার ডিস্টেন্স। ফুড সস্তা। গ্রেট ভিউ। আমরা রোড সাইড ক্যাফে তে খাইতে খাইতে প্রতি মিনিট এ একটা কইরা বাইকার কাপল দেখসি। মেয়েটা কেমন চিপকায় থাকে ছেলেটার পিঠে। আমার অনেক হিংসা লাগতাসিল। ইচ্ছা করতাসিল দুই এক্টারে ঠেইল্লা রাস্তা থিকা পাহাড়ের ঢালে হালায়া দেই। কিন্তু রাশা বলসে “হপ ব্যাটা”।

লাঞ্চ এ একটা মজা হইসে। আমরা যেখানে খাইতে বসছি সেইখানে মুরগি শেষ হয়া গেসিল। এক মহিলা বাইর হয়া কি জানি কইল। একটা পিচ্চি বাইর হয়া একটা ইয়াব্বরো মোরগ এর পিছে দোউড়ানি শুরু করল। একটু পর আশে পাশের সব পিচ্চি নাইম্মা গেল মোরগ ধরতে। এই দুকান ওই দুকান এর চিপা দিয়া মোরগ দোউড়ায় আর সবাই পিছে পিছে দোউড়ায়। একটু পরে বিজয় অর্জন হইল। মোরগ ধইরা আইনা কাইটা কাউট্টা আমাদের চাউমিন এর লগে রাইন্ধা দিল। মিক্সড চাউমিন টা এত জোস কইরা রান্সে। চাউমিন এর ভাজে ভাজে চিকেন আর বাফেলোর মাংস। আর উপরে ডিম্ভাজি শ্রেড কইরা দিয়া দিসে। সাথে একদম ফ্রেশ টমেটো থেইকা তৈরি ঘরে বানানো টমেটো সস। ভাবতেই এখন মুবাইলের উপর দুই ফোটা লুল পইড়া গেল। স্লারপ্প স্লারপ্প।

খায়া দায়া হোটেল এ ফিরত আইসা আমাদের মনে অনেক রঙ লাগসে। আমরা উকুলেলে নিয়া হোটেল এর টেরেস এর কাঠের বেঞ্চ গুলায় বসছি। তারপর অনেক খন জ্যাম ট্যাম করসি। মুবাইল দিয়া ভিডুও করসি একটা। লাইন ভাল থাকলে আপ্লোডানির ট্রাই করুম।

সন্ধায় রুমে আইসা আর তেমন কিছু করার ছিল না। টিভি দেখার ট্রাই করলাম। নেপালি নাটক হইতাসিল একটা চ্যানেল এ। আমরা নিজেগো মত সেইটার বাংলা কইরা নিসি। নাইকা বলসে, “না কাঞ্চন না, আমি বাট্টু বলে তুমি আমাকে ছেরে ঝেও না” আর নায়ক বলসে ” আমি তোমাকে কোলে পিঠে কোরে মানুষ করতে পারভো না, তাই খুদাপেজ”

ডিনার টা ভাল ছিল আজকে। আমরা নেপালি থালি খাইসি। অনেক কিছু দ্যায়। আবার খাওয়ার পর মিষ্টান্ন এর ব্যাবস্থাও আছে। আমরা সব চাইটা পুইটা খায়া লাইসি। ওদের আর কষ্ট কইরা থালা বাসুন ধুইতে হইব না।

কালকে আমরা কাঠমান্ডু ফেরত যামু। আমাগো ড্রাইভার হারি রে ফুন্দিসিলাম। সে সব কথার শেষে বলে “ইফ ইউ আর হেপি”।

শুনেন কালকে আমাদের নিতে আসবেন।
-ইয়েস স্যার, ইফ ইউ আর হেপি।

ঠিক এগারোটার মধ্যে আশবেন।
– সিউর স্যার, ইফ ইউ আর হেপি।

আর শুনেন কালকে ২০০ রুপি কম নিবেন। আমরা তো পুরান কাস্টমার
– হে হে স্যার, ইফ ইউ আর হেপি, আই হেপি।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *