লেখার তারিখঃ জুলাই ২০, ২০১৫ । ১০.১৩ পি.এম
নাগোরকোট এর হোটেল এর লবি তে বইসা বইসা এই নোট লিখতাসি। এখন রাত নয়টা বাজে। ঢাকার হিসাবে এখন মাত্র সন্ধ্যা শুরু, ঢাকার আমি বাসায় ফিরার কথা একবার ভাইবা আবার নাহ টাইম আসে ভাইবা ঘড়ির কথা ভুইলা গেসি। অথচ এইখানে মনে হইতাসে মধ্য রাত।
বাইরে বৃষ্টি হয় টিপ টিপ। আমরা একটু আগে ডিনার কইরা লবি তে আইসা চেগায়া গেসি। এই হোটেল ইট্টু বড়লোকি হুটেল তো, লবি তে ওয়াই ফাই ফ্রি কিন্তু রুমে ইউজ করলে টেকা দিতে হইব। আম্রাও কি কম চালু। আমরা হুটেল লবির সুফা রে খাট মনে কইরা হুইত্তা পরসি বিসমিল্লাহ বইলা। ফিরি ওয়াই ফাই উশুল কইরা ছারুম। রাশা রে কইসি মুবি ডাউনলোড মার, কি আছে দুনিয়ায় আর কি আছে নেপালে।
আমাদের কাঠমুন্ডু থেইকা রোউনা দেওয়ার কথা ছিল এগারুটায়। ওই ভাবেই গাড়ি ঠিক করা ছিল। আমরা হুটেলের ফিরি ব্রেকফাস্ট খায়া দায়া রুমে আইসা আরেকদফা গইরানির পর ফাইনালি যখন রউনা দিসি তখন ঘড়ি তে বাজে ১২ টা। ড্রাইভার এর নাম হারি। কিন্তু তার কুন কিছু তে কুনু তারা/হারি নাই। আর সে হাড়ির মত মুখ কইরাও রাখে না। কাঠমুন্ডু থিকা বাইর হয়া রাস্তায় একটা জায়গায় জ্যাম এর মত লাগসিল। সে “দেয়ার ইজ এনাদার ওয়ে” বইলা আমাদের আরেক দিক দিয়া ঘুরায় টুরায় নিয়া গেল। এই জন্য এক্সট্রা টেকা টুকা দেওয়া লাগে নাই।
আমার ডেস্টিনেশন এর চেয়ে জার্নি টা বেশি টানে। তাই আমি পুরা রাইড টা অনেক উপভোগ করসি। বাতাস অনেক পরিষ্কার আর আকাশ বেশী নীল। সবুজ রঙ টা আমাদের দেশ এর মতই কিন্তু আমাদের যেমন সবুজের শেড গুলা থোকা থোকা হয়া থাকে দিগন্তের এক এক জায়গায়, এইখানে ওই রকম না। এইখানে বর্ষা কাল বইলা একটা নতুন পাতার চকচকা সবুজ সব জায়গায় আর সেইটা পাহাড়ের ধাপে ধাপে উইঠা গেসে উপরে। যেসব জায়গায় মেঘের ছায়া পরসে অই জায়গা গুলা কেমন কাল তিলের মত হয়া থাকে। আবার তিল টা নরেও। কেমন সবুজ সমুদ্রে কাল ডিঙি লাগে তখন।
আমরা একটা এন্সিয়েন্ট সিটির মধ্যে দিয়া যাইতেসিলাম। জায়গাটার নাম ভক্তপুর। কাঠমুন্ডু তে ভুমিকম্পের তেমন এফেক্ট চোখে পরে নাই। কিন্তু এইখানে ভালই চোখে পরসে। আমার মনে হইতাসিল একটু আগে সিটি করপোরেশন এইখানে উচ্ছেদ অভিজান চালাইসে। এই বিল্ডিং এর একটু ভাংগা, আরেক্টার পুরাই ভাঙা, ইট এর স্রোত থাইমা আছে কোথাউ, এইরকম।
বেশি মজা লাগসে যখন আমরা পেচায় পেচায় পাহাড়ে উঠা শুরু করলাম। কল্পনা করতাসিলাম এইটা একটা ডিজনি মুভির পাহাড় আর আমরা একটা ধুয়া ছারতে ছারতে যাওয়া ট্রেন। সাদা ধুয়া ছারতে ছারতে কোন আইস্ক্রিম এর মত পেচায় পেচায় উঠতাসি। পাহাড়ের ঢালু তে দেখলাম স্টেপ স্টেপ করা আর ওইখানে ধান চাষ করসে লুকজন। রাশা বলসে এইগুলা বলে “টেরেসিং/Terracing”. ধান গাছের জন্য জইমা থাকা পানি লাগে। ঢালু থাকলে তো পানি জম্বে না। গড়ায়া নিচে যাবে গিয়া। সেউ জন্য এই শিষ্টেম। মাইন্সের কত বুদ্দি। পাহাড়, আকাশ, সবুজ আর পাহাড়ি রাস্তায় ইস্পিডে চলা গাড়ি… সব মিলায় আমার এত খুশি লাগতাসিল যে নিজেরে মনে হইতাসিল একটা কুত্তা যে কিনা জানলা দিয়া মাথা বাইর কইরা হা কইরা আসি আর আমার জিব্লা সিনামার নাইকার উড়নার মত উড়তাসে।
নাগোরকোট আইসা খুশি হয়া গেসি। হোটেল টা অনেক জোস। কাঠমুন্ডুর হোটেল এর মত ওইরম ফ্রেন্ডলি না, আর একটু কমার্শিয়াল ভাব সাব বেশি। কিন্তু রুমের বারান্দা দিয়া যত দূর চোখ যায় অনেক নিচে পাহাড় আর পাহাড়। আর মনে হয় হাত বাড়ায়া একটু লারাচারা করলে মেঘে লাইগা হাত ভিজ্জা যাবে।
সাড়ে তিনটার দিকে আমরা বাইর হইলাম আশ পাশ টা রেকি করতে আর সস্তায় খাই দাই করতে। ঢাল বায়া নাইমা একটা বাজার মত যায়গা আসে। ওইখানে খাই দাই আর ফ্রি ওয়াই ফাই আসে। যাইতে ত কিছু লাগে নাই কিন্তু উইঠা আইতে খবর।
রুমে আয়া এরুম ঘুম দিসি উইঠা দেহি আটটা বাজে। আমি আর রাশা ভাব্লাম গিয়া কিছু হাল্কা পাতি খায়া আসি। বাইরয়া দেখি বিষ্টি পরে তখন ও টিপ টিপ। কিন্তু কিছুদুর গিয়া দেখি এমুন ঘুটঘুইট্টা অন্ধকার। কিসসু দেহা যায় না। ডর লাগতাসিল অনেক। তাই আবার হোটেল এ আয়া নিচের কেফে তে হাল্কা খায়া এখন নোট লিখি লবি তে চাগায়া।
রিসিপশন এর বেডায় লুক দিতাসে। উঠায়া দিব কিনা কে জানে। তারাতারি পোস্ট মারি।