১২৫/৩৬৫

লেখার তারিখঃ জুলাই ২, ২০১৫ । ৯.৫৯ পি.এম

আজকে বাসাবো আসছি। বাসাবো আসলে অনেক মজা হয়। খাওয়া খাইদ্য নিয়া চিন্তাই করা লাগে না। টেবিল এ গিয়া বসলেই অটো খাবার দাবার আস্তে থাকে। আর সকাল বেলা ঘুম থেইকা উইঠা দাঁত মাইজা ফেরত আসলেই দেখি অটো বিছানা গুছানো হয়া গেসে। কি ম্যাজিক।

বৃহস্পতিবার সকাল থেইকা মনে হইতে থাকে কখন অফিস ছুটি হবে, কখন বাসায় যাবো। বৃহস্পতিবার আসলে বাবা আর আম্মা আলাদা আলাদা কইরা ফোন দ্যায়। আমার মাঝে মাঝে মনে হয় বলি, একজন রে তো বলসি যে আসতাসি, আবার ফোন ক্যান। তারপর মনে হয়, হুর, পাগল নাকি আমি। এই জিনিশ কয়জন এ পায়?

প্রথমে বাবা ফোন করে। কি খবর?শরীর ভাল? অফিসে? আজকে আসবা? আচ্ছা আইসা পইরো তাড়াতাড়ি। আমার বাবা জীবনেও আমারে সরাসরি কোন ধমক দিতে পারে নাই। এক সাথে খাইতে বসলে আমি যখন সবজি খাই না, তখন ধমকানির বদলে অন্য দিকে তাকায় ভাব বাচ্যে কথা বলে, সবজি খাইলেই তো হয়, সবজি খাওয়া তো ভাল, কত ভিটামিন। আর আম্মা তখন আইসা বলে, খাইবো না মানে? গলায় পারা দিয়া খাওয়ামু।

বাবা ফোন করার এক ঘণ্টা পরে আম্মা ফোন করে। আস্তাসো? না আম্মা, এখন তো অফিসে। আচ্ছা আসো, আসো। এগুলা ভাল্লাগে অনেক। প্রায়ই আমি যাই না, যাইতে পারি না। তখন আবার বাবা অভিমান করে। তুমি যে বলসিলা সোম্বারদিন আসবা? আসলা না যে? শরীর খারাপ? আম্মা শুধু জিজ্ঞেস করে আজকে আসবা? না আম্মা কাজ আছে। আচ্ছা। কালকে আসবা?

এই আরেকটা জিনিশ আমাদের বাসায়। বাবা আম্মা কেউই কোনদিন জিজ্ঞেস করে নাই, আমার মন খারাপ কিনা? হয়তো আমাদের মধ্যে দূরত্ব বেশি ওই জন্য জিজ্ঞেস করতে সংকোচ করে কিনা আমি জানি না । কিন্তু উনাদের কাছে আমার ঘরের এক কোনে মটকা মাইরা পইরা থাকার মানে, হয় আমার শরীর খারাপ, নাইলে আমার খিদা লাগসে। মন খারাপ, সেইটা কি জিনিশ আবার? ছোট মাইনসের আবার মন খারাপ কি?

যাই হোক। আম্মা বাবা তো। ওরা এতই দিসে আমাকে আর আমি এত খালি নিয়াই গেসি যে আমার নিজেকে একটা কুলাঙ্গার সন্তান লাগে। আমার উপর ওদের এক্সপেকটেশন এর শেষ নাই। আর আমিও তার বেশিরভাগটাই পুরন করতে পারি নাই। ক্যান পারি নাই তাও ওদের ব্যাখ্যা কইরা বলতে পারি নাই কোনদিন। এইসব নিয়া খোলাখুলি কখনো আলাপও হয় না। আর হবেও না।

আমার বাবা মার খুব আক্ষেপ আমি তাদের আদর্শ ছেলে না। সেই কাজ আগেই পালন কইরা গেসে আমার বড় ভইন। আসলেই কইরা গেসে। ফাইজলামি না। তাই তাদের সব গর্ব বইন রে নিয়াই। সে মেয়ে হইয়াও যা কইরা গেসে আমি ছেলে হয়া সেগুলা করি নাই। আমি আসি আরকি পিছে দিয়া। জংলি ব্ল্যাকশিপ অফ দা ফ্যামিলি।

আমার বাপ এর খুব আক্ষেপ, আমি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পরি না। উনি উনার তাবলীগের সাথী ভাই দের কাছে এইটা নিয়া খুবি শরমিন্দা থাকে। এই চাহিদা পুরন করসে আমার খালাতো ভাই। পুরাই হুজুর। তাবলীগে যায়, নামাজ পরে, ইসলামি তরিকায় চলে। বাপ আমারে বলসে তার মত হইতে। এখনো হইতে পারি নাই।

কালকে আমার জন্মদিন। আমার ইথার নামটা রাখসিল আম্মা। আর ফয়সাল আকরাম অংশ টা বাবা। আজকে আমি যা কিছু, সবই আমার বাবা আম্মার অবদান। আর আমি যা কিছু না, সবই আমার নিজের কারণে। আমি তো ভাবতেই পারি হয়তো একদিন আমারে নিয়া গর্বিত হইতে পারার মত কিছু খুইজা পাবে ওরা। ততদিন না হয় আমার খিদাই লাগুক আর শরীর খারাপ ই হোক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *