লেখার তারিখঃ জুলাই ১, ২০১৫ । ১০.৫১ পি.এম
আমার বিদেশ ভাল্লাগে না। আই মিন, ইয়া বেড়াইতে যাওয়া ইজ ওকে। কিন্তু বিদেশ গিয়া থাকতে হইব, জীবন যাপন করতে হইব এই রকম ভাবলে কেমন জানি আতঙ্ক লাগে। আমি একলা একলা থাকতে পারি না তা না। একা একা সব কাজ ও করতে পারি। কিন্তু বিদেশ এ গিয়া থাকার কথা যদি ভাবি তাইলেই ডর লাগতে থাকে। মনে হয় একটা চৌরাস্তার মাঝখানে দাড়ায় দাঁড়ায় আম্মু আম্মু বইলা কান্দুম আর সবাই আঙ্গুল উঁচা কইরা আমারে দেখায় দেহায় হাসবো।
আমার অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী ভইন দা পেইন কেঙ্গারু খামারি মইম্যা আমারে ক্রমাগত পেইন দিয়াই যাইতাসে যাওনের লাইগা আর আমি না কইরাই যাইতাসি। আমার অফিসের বেশিরভাগ লুকজন এক পাও অস্ট্রেলিয়ায়, এক পাও কানাডায় দিয়া বইসা আসে। সবারই বেশ একটা এস্কেপ প্ল্যান আছে। আর ব্যাঙ্ক ভর্তি টেকাটুকা। আমার কিছুই নাই। যেদিন অফিস থিকা লাত্তি মাইরা বাইর কইরা দিব ওই দিন মনে হয় চিন্তা করা শুরু করুম, হুমম , হয়াতস নাও।
বিদেশে বেড়াইতে যাওয়া নিয়া আমার কোন আপত্তি নাই। কিন্তু একবারে তল্পি তল্পা লয়া ছেটেল হউনের লাইগা যাওউন টা কেমন জানি লাগে। আরেকটা দেশ রে নিজের দেশ কেমনে মনে করুম। জীবনেও পারুম না। বেড়াইতে যাওয়ার ইচ্ছা আসে অনেক জায়গায়। যেমুন ওয়াশিংটন ডিসি যাইতাম চাই। স্মিথসোনিয়ান এয়ার এন্ড স্পেস মিউজিয়াম। আহা। তারপর মোহাবি ডেজারট এর প্লেন এর গ্রেভিয়ারড টা। উহ। সেইন্ট মারটিন বিমান বন্দর তো দি হেভেন ফর প্লেন স্পটার, ওই খানেও যাইতে ইচ্ছা করে। আরও কই কই জানি যাওয়ার কথা ভাবি। কিন্তু ওই পর্যন্তই।
আমি জীবনে বিদেশ গেসি মাত্র দুইবার। একবার গেসি সিঙ্গাপুর আর আরেকবার কলকাতা। এই শেষ। সিংগাপুর দেখনের অভিজ্ঞতা ছিল অদ্ভুত। যার সাথে গেসি উনি একজন মুরব্বি স্থানীয় মানুষ। উনার উপরে কথা বলার সাহস ছিল না আমার। ভোরবেলা গিয়া নামসি, হোটেলে ব্যাগ রাইখা হাসপাতালে গেসি। সন্ধ্যা বেলা হাসপাতাল থেইকা হোটেল এ ফিরার পর উনারে বলসি, আপনি থাকেন আমি একটু আশ পাশ টা দেইখা আসি। উনি বলসে বাইরে গিয়া কি করবা , অচেনা জায়গা, ঘুমায় থাকো। আমি জি আচ্ছা বইলা ঘুমায় গেসি। পরের দিন আবার ভোর থেইকা সন্ধ্যা পর্যন্ত হাসপাতালে। সন্ধ্যা বেলায় হোটেল এ ফিরা ভাবসি, যাক আজকে তো দেখতে পারুম, সিংগাপুর। উনি বলসেন, আর থাইকা কি হবে, কাজ তো শেষ, চল দেশে জাইগা। আমি জি আচ্ছা বইলা উনার পিছে পিছে এয়ারপোর্ট এ আইসা প্লেনে এ উইঠা দেশে আইসা পরসি। খুব বেড়ানি হইসে।
দ্বিতীয় বার বিদেশ গেসি অফিসের পয়সায়। কলকাতা। যাওয়ার আগে ভাবসি, আহা কলকাতার অলিতে গলিতে ঘুইরা বেড়াবো। কিন্তু অফিসের যেই কাজ লয়া গেসি ওই কাজ শুরু হইত সকালে আর শেষ হইত সন্ধ্যায়। তখন ফিরা আইসা বাইর হইলে দেখতাম সব বন্ধ হয়া যাইতাসে একটা একটা কইরা। ধুরও ছাতা বলা ছাড়া আর কিছু করার ছিল না। এক সপ্তাহ পর এমনেই গেল আর কিছু তো ভাল্লাগে না। খাওয়া অসহ্য লাগে, রাস্তা অসহ্য লাগে। এক বেটির ফটো তুলতে গেসি একদিন, বেডি কয়, নো ফটো , নো ফটো। ওই বেডিরেও অসহ্য লাগসে এর পর থিকা। দেশ থেইকা অফিসের এক বস ফোন দিসে, কি ফয়সাল, কাজ হইতাসে, আরো এক সপ্তাহ এক্সটেন্ড কইরা দেই তোমাদের থাকা? আমি পারলে কাইন্দা দেই ফোন এর মধ্যে। কুন দরকার নাই এক্সটেনশন এর। সকালে উইঠা আয়া পরসি দেশে।
আমি খেয়াল করসি লোকজন কোনমতে একবার বিদেশ গেলে সারাজীবন ধইরা ওই যাওনের রেফারেন্স টানে। ইফতারি খাইতে বসলে বছরের পর বছরের একি গল্প, আমি যখন সৌদি আরব ছিলাম তখন দেখসি ব্লা ব্লা ব্লা কিংবা আরে তোমরা কি পিঁজা পিঁজা কর খালি, সেইবার যখন ইটলি গেলাম, সেইটা ছিল আসল পিজা… এরম আলাপ করতেই থাকে ক্লান্তিবিহিন। আমি চুপ চাপ শুনি। কখনো কাউরে কইনা এই আলাপ আগে আরো একশ বার শুনসি।
এই খানে কাউরে জাজ করতাসি না আমি। ভাল খারাপ ও বলতাসি না। মানুষ জন পারে। আমি পারি না। পারবো কিনা কোনদিন জানিও না। আমার বিদেশ গেলে দেশের মানুষ গুলার কথা চিন্তা কইরা হমানে কান্দা আইতে থাকে আর দেশে থাকতে বিদেশ যাওয়া মানুষ গুলার কথা চিন্তা কইরা হমানে কান্দা আইতে থাকে।
হমানে কান্দা আহন বন্ধ করা দরকার। এক টা পিচ্চি “মা আ আহ” বইলা ডাক দিলেও আমার চৌকখে পানি আহে। আই হেভ এ ওয়াটারিং পব্লেম। কি আজিব সমস্যা। এতু ইমুশুন আহে কইততে।