লেখার তারিখঃ জুন ৮, ২০১৫ । ১১.২১ পি.এম
আজকে একটু প্লেন এর গল্প করি। এত দারুণ সব প্লেন দুনিয়া তে । তাদের কথা কিছু তো সুজা কইরা লেইখা যাওয়া উচিত কারো। আমি কিছু কিছু কইরা ট্রাই করব সামনেও কিছু বিখ্যাত প্লেন এর সাথে পরিচয় করায় দিতে। বইলা রাখা ভাল যে আমি অনেক কিছুই জানি না, কিন্তু যত টুকু জানি তা দিয়া যদি অন্য একজন এর মধ্যে জানার আগুন টা জালায় দিতে পারি, তাইলে এক সময় সে আমার থেইকাও অনেক বেশি জানবে। এই টাই উদ্দ্যেশ্য।
আমি ফিল করসি এই গুলা জানার মধ্যে একটা অন্যরকম আনন্দ আছে। তাই সেই আনন্দময় জগত টারে আরেকজন এর সাথে পরিচয় করায় দিইতে চাইতাসি। সবার যে ভাল্লাগবো এমন কোন কথা নাই। আমি তা আশাও করি না। যার ভাল্লাগবো তার জানার আগ্রহও থাকব শুধু এই টা জানি।
আর একটা কথা বইলা রাখা ভাল যে আমি লেখার সময় প্রথমে মুল ব্যাপার টা বলব তারপর প্রচুর বেসিক টার্ম ব্যাখ্যা করতে করতে যাব। কারন আমি এমনেই পড়সি জিনিশ গুলা। পরা শুরু করসি। একটা নতুন টার্ম আসছে যা জীবনেও হুনি নাই। তখনি ওইটা জানার জন্য ঝাপ দিয়া পরি নাই। প্রথমে মুল ব্যাপার টা বুঝসি, তারপর নতুন টার্ম গুলার ডিটেইল এ ফেরত গেসি। লেখার ট্রাই করতাসি ও এমনেই।
আজকের প্লেন বোয়িং ৭৭৭।
আমি খেয়াল করসি সবাই মোটামুটি বোয়িং, এয়ারবাস এই টার্ম দুইটা জানে। একেবারেই প্লেন নিয়া ইন্টারেস্ট নাই এরম বিদেশ ফেরত মানুষ রে যখন জিজ্ঞেস করসি, কি প্লেন এ আসছেন? তখন অনেকেই জবাব দিসে, বোয়িং। আবার কেউ কেই জবাব দিসে, প্লেন এর সিট গুলা ছোট ছোট ছিল, বাস এর মত, ওইটা মনে হয় এয়ারবাস ছিল। সবার জানা থাকা উচিত যে , বোয়িং আর এয়ারবাস এই দুইটা কোন এয়ারক্র্যাফট এর টাইপ না। প্রস্তুতকারক কোম্পানি। যেমন আপনের দোস্ত যদি জিজ্ঞেস করে দোস্ত নতুন গাড়ি কি কিন্সস শুনলাম? কি গাড়ি কিনলি? আপনে ভেবাচেকা খাইয়া ভাবলেন খাইশে গাড়ির আবার রকম কি। বড় গাড়ি, ছোট গাড়ি, চুখখা গাড়ি, ভুতা গাড়ি এ তো। তার পর আমতা আমতা করতে করতে বন্ধু রে কইলে … আমমমমমম … টয়োটা গাড়ি দোস্ত।
এহন টয়োটা তো পিক আপ ট্রাক ও বানায়। তৈলে যে প্রশ্ন করসে হে কেমনে বুঝব যে এইটা টয়োটা গাড়ি মানে পিক আপ না সেডান না অন্যকিছু? সেই রকম এইডা বোইং বললে বুঝন যাইব না এইডা আসলে কি প্লেন। বোয়িং এরও অনেক মডেল এর প্লেন আসে। তার মদ্যে সর্বাধিক বিক্রিত মডেল হইল বোয়িং ৭৭৭।
বোয়িং ৭৭৭ রে অনেকে আদর কইরা আরেকটা নামে ডাকে। ট্রিপল সেভেন বা টি সেভেন। একটা বিমান ব্যখ্যা করতে তার ফিচার গুলা বলা লাগে। আর যেহেতু এখন সেই ফিচার গুলা বলব , তাই তার আগে কুনটার মানে কি বইলা নেয়া ভাল।
রেঞ্জঃ প্লেন এর ক্ষেত্রে রেঞ্জ হইল এই প্লেন এক বারে কত টুক যাইতে পারে উইদাউট এনি রিফুয়েলিং। বিভিন্ন রেঞ্জ এর প্লেন আসে। শর্ট রেঞ্জ, লঙ রেঞ্জ, এক্সটেন্ডেড রেঞ্জ এরম। বোয়িং ৭৭৭ এর রেঞ্জ হইল ৯৬৯৫ থেইকা ১৭৩৭২ কিলো মিটার। এই জন্য ট্রিপল সেভেন রে লঙ রেঞ্জ/ এক্সটেন্ডেড রেঞ্জ এয়ারক্রাফট হয়।
ওয়াইড বডিঃ যেই বিমান গুলায় এক এর অধিক আইল (সিট গুলার পাশে দিয়া হাটার রাস্তা) থাকে তাদের কে বলে ওয়াইড বডি এয়ারক্রাফট। টি৭৭৭ একটা ওয়াইড বডি এয়ারক্রাফট। একটা টি৭৭৭ প্রায় ৪৫১ জন পর্যন্ত যাত্রী নিয়া ফ্লাই করতে পারে।
টুইন ইঞ্জিন জেট প্লেনঃ টুইন ইঞ্জিন মানে হইল গিয়া এই পেলেন এ দুই খান ইঞ্জিন আসে আর এই ইঞ্জিন দুইটাই জেট ইঞ্জিন। সেই হিসাবে টি সেভেন একটা টুইন ইঞ্জিন জেট প্লেন। টি সেভেন এর ইঞ্জিন এর বেপারটা মজার।
ট্রিপল সেভেন ৩০০ইআর এ ব্যাবহার করা হয় জিই ৯০ ইঞ্জিন। এই ইঞ্জিন এর মুখটা এত বড় যে এইটা দিয়া আরেকটা বোয়িং ৭৩৭ এর ফিউজালাজ (পেলেন এর বডি রে বলে ফিউজালাজ) ঢুইকা যাইতে পারে। আর ট্রিপল সেভেন এর ইঞ্জিন এর (জিই ৯০) এর সাউন্ড টা এত ইউনিক যে অফিসে যখন আকাশ এর দিকে তাকাইতে পারি না, তখনো জিপি হাউজের উপর দিয়া ট্রিপল সেভেন গেলে বুঝতে পারি ট্রিপল সেভেন যাইতাসে।
তারমানে দাড়াইল গিয়া ট্রিপল সেভেন একটা লঙ রেঞ্জ, ওয়াইড বডি, টুইন ইঞ্জিন জেট প্লেন। এখন মনে হয় টার্ম গুলা বুঝতে অসুবিধা হয় নাই। এই ভাবে সব এয়ার ক্রাফট কে এই টার্ম গুলা দিয়া ব্যখ্যা করা যায়। খালি সংখ্যার কম বেশি হইব।
ট্রিপল সেভেন হইল বোয়িং এর প্রথম “ফ্লাই বাই ওয়ার – Fly By Wire” প্লেন। ফ্লাই বাই ওয়ার কি? এর আগে প্লেন চালানো হইত মেকানিকালি। পেলেন এর স্টিয়ারিং বা প্লেন এর ক্ষেত্রে যেইটার নাম কন্ট্রোল কলাম, তা ধইরা টান দিলে সেইটার সাথে লাগানো মেকানিকাল জিনিষ গুলা কাজ কইরা একটা কিছু করত (রাডার, এলেরন নাড়াইতো, যা ডানার আর লেজ এর মধ্যে থাকে, আর প্লেন কে উপরে উঠতে আর নিচে নামতে আর ডাইনে বামে কাইত হয়া যাইতে হেল্প করে)। ফ্লাই বাই ওয়ার এ সব টাচ স্ক্রিন টাইপ ফিচার চইলা আসলো। গাড়ির পাওয়ার স্টিয়ারিং টাইপ এর।
এই সিস্টেম এ বিমান এর স্টেয়ারিং ধইরা টান দিলেই বিমান লারা চারা শুরু করে না। আগে কম্পিউটার এর কাছে খবর পৌছায় যে টান দেওয়া হইসে, তখন কম্পিতার ডিসিশন ন্যায়, কোন অংশে এই বার্তা পৌঁছাইতে হবে।
ট্রিপল সেভেন এখন পর্যন্ত ওয়াইড বডি দের মধ্যে সব চেয়ে বেশি সেল হওয়া এয়ার ক্র্যাফট। ডিসেম্বর ২০১৪ পর্যন্ত বোইং এর কাছে মোট ১৮২৭ টা অর্ডার প্লেস করা হইসে। তার মধ্যে বোয়িং সফল ভাবে ডেলিভারি করতে পারসে ১২৬৩ টা। এর মধ্যে আবার সব চেয়ে বড় ক্রেতা হইল অ্যামিরেটস। ইনাদের মোট ১৩৮ টা বোউইং ৭৭৭ আছে।
বাংলাদেশ ও কিন্তু পিছায় নাই। আমাদের মোট ৬টা ট্রিপল সেভেন আসে। এর মধ্যে ৪ টা একেবারেই আমাদের কেনা ৭৭৭-৩০০ইআর। আর দুইটা ইজিপ্ট এয়ার থেইকা ধার নেওয়া ৭৭৭-২০০। এই দুইশ আর তিনশ মানে কি তা এখন ব্যাখ্যা করার ট্রাই করুম।
ট্রিপল সেভেন এর ভেরিয়েন্টঃ
ভেরিয়েন্ট মানে হইল গিয়া একটা বিশেষ মডেল এর বিমান এর প্রকারভেদ। যেমন কোরবানির গরু যদি মেইন মডেল হয়, তাইলে তার ভেরিয়েন্ট হইল গিয়া কালা গরু, সাদা গরু, লাল গরু, হাল্কা গুলাপি গরু ইত্যাদি। আইফোন যদি মেইন মডেল হয়, তাইলে তার ভেরিয়েন্ট হইল আইফোন টু , ত্রিজি, ফোর এস ইত্যাদি। এরম ট্রিপল সেভেন এরও ভেরিয়েন্ট আছে।
একদম প্রথমে রিলিজ পাইল Boeing 777-200, যা অপারেশন এ আসছিল ১৯৯৫ সালে।
১৯৯৭ তে অপারেশন এ আসল Boeing 777-200ER।ই আর মানে হইল এক্সটেন্ডেড রেঞ্জ। মানে এই টা আগের টার চেয়ে বেশি দূর যাইতে পারতো।
১৯৯৮ সালে ট্রিপল সেভেন লম্বায় আরেকটু বাইরা গেল আর বাজারে আসল Boeing 777-300
২০০৯ এ ট্রিপল সেভেন এর কারগো ভার্শন রিলিজ পায় যার নাম Boeing 777F. এইখানে F স্ট্যান্ডস ফর Freighter. সাধারণ জনগণ যারে কারগো বলে ট্রান্সপোর্ট ওয়ার্ল্ড এ সেইটার নাম ফ্রেইটার।
২০১৩ তে Boeing 777-200ER এর রেঞ্জ আরো বাড়ায়া আনা হইল Boeing 777-200LR
২০১৩ তে বোয়িং কোম্পানি দুইটা ভেরিয়েশন এর ঘোষণা দ্যায় যারা কিনা ২০২০ সালে বাজারে আসবে, এগুলা হইল 777-8X আর -9X। যেগুলারে এক লগে Boeing 777X বইলা বুঝানো হয়।
২০০৪ তে Boeing 777-300 এর রেঞ্জ বাড়ায়া রিলিজ পাইল Boeing 777-300ER. এইটা বর্তমানে সব চেয়ে জনপ্রিয় ট্রিপল সেভেন ভেরিয়েন্ট।
এছাড়া আরো দুই রকম ভেরিয়েশন আসে ট্রিপল সেভেন এর। ট্রিপল সেভেন এর বিজনেস জেট ভার্সন, যা কিনা ভি আই পি দের জন্য কনফিগার কইরা দেওয়া Boeing 777-300ER আর Boeing 777-200LR।
আরেকটা ভেরিয়েন্ট হইল Boeing 777 Tanker বা KC-777 যা কিনা অখনও অপারেশন এ আসে নাই। এইডা ইউ এস এয়ার ফোরস তাদের এয়ার টু এয়ার রিফুয়েলিং এর কাজে ব্যবহার করবে।
এই হইল ট্রিপল সেভেন এর কাহিনী। আমি খুবি সংক্ষেপে লিখসি। আর অনেক ডিটেইলও বাদ দিসি। আগ্রহী রা একটু নেট ঘাটাঘাটি কইরা আনন্দ খুইজা নিবেন বইলা ধইরা নিতাসি।