৯২/৩৬৫

লেখার তারিখঃ এপ্রিল ৩০, ২০১৫ । ১০.৫২ পি.এম

অইভ্যার বড়ভাই এর নাম সুমন ভাইয়া। সুমন ভাইয়া আমাগো খালাতো ভাই বোন দের মধ্যে সবচেয়ে বড়। তাই সবার ব্যাপক প্রিয়। উনি আমারে স্কুল এর পড়ার সময় পড়াইত। আমি সারা বছর উনার বকা ঝকা সহ্য করতাম আর বার্ষিক পরীক্ষার পর যখন অইভ্যার লগে দেখা হইত তখন বিচার দিতাম, তোর ভাই আমারে এই কইসে, তর ভাই আমারে এই করসে তুই এর একটা বিহিত কর। আর হে খুব সান্ত্বনা দিত আমারে। এখনি ব্যবস্থা নিতাসি, উনি বেশি বার বারসে, আজকেই শিক্ষা দিমু এই সেই। কামের কান কিছুই করত না, কিন্তু আমার ভাল্লাগতো ভাবতে যে আহা জাস্টিস ইজ স্টিল হেয়ার।

একবার হইসে কি আমরা তখন ৫/৬ এ পরি আর ভইন দা পেইন মইম্যা পরে কেলাস টেন এ। অভিও কি জন্য জানি ঢাকায়। মইম্যা এই খুশি তে অর ভিকারুন্নিসা ইশকুল এর কেমিস্ট্রি ল্যাব থিকা এক বোতল সালফিউরিক এসিড চুরি কইরা আইনা আমাগো দিসিল।

আমি আর অভি বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক গবেষণা করতাম তো লাইক হারপিক আর শ্যাম্প্যু মিশাইয়া তার লগে হাল্কা কোক মিলাইয়া তার মধ্যে দুই চিমটি ডিটারজেন্ট ছাইরা দিলে সেইটা অনেক উইয়ারড একটা স্মেল হয় , এই ধরনের কাল জয়ী সব গবেষণা।

তো সালফিউরিক এসিড নিয়া গবেষণা কইরা আমরা বাইর করলাম যে এইডা র মধ্যে এক ফোটা পানি দিলে কি জোরদার রিয়েকশন হয়। একটু বেশি জোরদার হোয়াতে ফ্লোর এ অনেক খানি এসিড পইড়া গেসিল আমি আসে পাশে কিছু না পায়া সুমন ভাই এর জাইঙ্গা দিয়া ওই এসিড মুইছা আমার সুন্দর জায়গা মত থুইয়া দিসি।

রাত্রে বেলা আমি আর অভি খেলতাসি এমন সময় আম্মা দুইজন রেই কান ধইরা আইন্না নিয়া গেল দেখি সুমন ভাই উনার সেই অন্তর বস্ত্র হাতে নিয়া দাঁড়াইয়া আসেন । কোন এক অজানা (!) কারণে অন্দর বস্ত্র খানার গায়ে অদ্ভুত সব ফুটা তৈরি হইসে। আম্মা খামাকাই চর মাইরা কইল এই সব এক্সপেরিমেন্ট আর না করতে। আমার এত গায়ে লাগলো ব্যাপার টা। বিজ্ঞান এর পথে বাধা সুমন ভাই বিচার দিল আম্মার কাছে? উনারে কে বলসি এই সব বৈজ্ঞানিক গবেষণার জায়গার পাশে অন্দর বস্ত্র রাখতে।

পরের দিক এই গায়ে লাগা বেপারটা দানা বাধতে বাধতে ক্ষোভ এর পর্যায়ে গেল গাঁ। আমি অভি রে ডাইকা বললাম, শোন সুমন ভাই রে একটা উচিত শিক্ষা দিতে হবে। তুই খালি দরজার কাসে পাহারায় থাকবি। আমি যা করার করুম। অইভ্যা তো আমি যাই কই তাতেই রাজি। শুরু হইল অপারেশন রিভেঞ্জ।

সুমন ভাই লুকায় লুকায় সিগারেট খাইত। আব্বা আম্মা সিগারেট খাওয়ার ঘোর বিরোধী তাই সবাই ঘুমায় গেলে বারান্দায় গিয়া খাইত। আমি করলাম কি , মইম্যার বায়োলজি প্রেক্টিকাল সেট থেইকা একটা টুইজারস চুরি করলাম। আমি জানতাম সুমন ভাই কোথায় সিগারেট এর প্যাকেট লুকায় রাখে। টুইজারস দিয়া খুব সাবধানে সিগারেট গুলার অর্ধেক তামাক বাইর করলাম। শবে বরাত এর বাইচা যাওয়া তারাবাতি থেইকা তারাবাতির মশলা গুলা আলাদা করসিলাম আগেই। প্রত্যেকটা সিগারেট এর ভিতর দুই দানা কইরা তারাবাতির মশলা ভরলাম। তার আগে টাইমিং হিসাব কইরা নিসিলাম যে প্রত্যেক টান এ কত খানি সিগারেট পুরে আর ওই তারাবাতির দানা পর্যন্ত আসতে কত খন সময় লাগে। তারপর তারাবাতির মশলার উপর আবার বাইর করা তামাক গুলা দিয়া হাত দিয়া সাবধানে সিগারেট এর শলা গুলারে স্মুথ বানায় দিলাম যাতে দেখলে বুঝা না যায় যে কিছু টেম্পারিং করা হইসে এগুলায়। পুরা বেপারটা তে দরজায় পাহারায় ছিল অভি আর প্লেনিং আর এক্সিইকিউশন এ আমি।

রাত হইল, পড়া থেইকা ছুটি পাওয়া গেল। আস্তে আস্তে বাসার সবাই ঘুমায় গেল। আমি আর অভি মটকা মাইরা পইরা থাকলাম। অইভ্যা হালায় বেশি রিয়েকশন দেখাইতে গিয়া নাক ডাকাও শুরু করসিল। আমি ওরে ফিসফিস কইরা কইলাম, আব্বে চুপ থাক , অন্য দিন তো ডাকস না এত। ধরা খাবি। একটু পরেই নারা চারা শুইনা টের পাইলাম সুমন ভাই বারান্দায় যাইতাসেন। আমরা চিতা বাঘের মত নিঃশব্দে পিছু নিলাম। সিগারেট ধরানো হইল। লাল আলোটার উঠানামা শুধু দেখতাসিলাম আর মনে মনে হিসাব করতাসিলাম। আর ৫ বার টান, আর ২ বার , আর ১ বার।

হুশষশশ। বারান্দা আলো কইরা দিয়া জইলা উঠলো সাদা তারাবাতির মসলা টা । সুমন ভাই কেউ টাইপ একটা কি জানি আওইয়াজ কইরা সেগারেট টা হাত থেইকা ছাইরা দিল আর আমাদের প্রতিশোধ এর অস্ত্র পূর্ণ জেল্লায় তারাবাতি ছড়াইতে ছড়াইতে বিল্ডিং এর নিচে হারাইয়া গেল। অইভ্যা বেক্কল ডা ওই দিন ঠা ঠা ঠা কইরা হাইসা না উঠলে জীবনেও বুঝতো না এই তারা মার্কা সিগারেট এর কাহিনী ডা কি।

এই ব্যক্কল আবার এখন পি, এইচ, ডি করে আম্রিকায়। আজকে আইসিল দেখা করতে বাসার নিচে। আমরা হাল্কা ঘুরা ঘুরি করসি গুলশান ডি সি সি মার্কেট এ। অইভ্যার একটা ১.৫ বছরের ছেলে পিচ্চিও আছে। নাম টা এত সুন্দর পিচ্চিরঃ আর্য অনুরণন
। আমি তো দেখি নাই অর পিচ্চি, তাই অরে জিগাইলাম , কিরে তোর পিচ্চি কত বড় হইসে? এই বেকুব হালায় আমারে হাত দিয়া দেখায়, এই যে এএএতত বড়। এত টুক সাইজ। এত কেজি। পরে বয়স কত জিগানো তে বুঝসে।

অভির সবচেয়ে বড় গুন হইল ও হিন্দি কম বুঝে আর যা বুঝে এরুম উলটা পালটা বুঝে। যেমন অর মতে “মুঝে ছোর দো” মানে হইল গিয়া “আমার মুজা ছাইরা দাও”। একবার বুয়েটের ফ্রেন্ড রা মিল্লা ইন্ডীয়া কই জানি ঘুরতে গেসে। যেখানে ইন্ডিয়ান দের টিকেটের দাম এক রকম আর বিদেশি দের প্রায় ডাবল। অর ফ্রেন্ড রা অরে অনেক বুঝায় সুঝায় নিসে যে তুই কুন কথা কবি না। যা বলার আমরাই বলব। তাইলে অরা বুঝবে না যে আমরা ইন্ডিয়ান না। কিন্তু মহান অভি আশে পাশের এত হিন্দি বলা দেইখা উত্তেজিত হইয়া গেল। ভাবল , না এই বার কিছু একটা কইরা দেখাইতেই হবে। হে বাইছা বাইছা সব থুইয়া এক ইন্ডিয়ান মহিলা পুলিশের লগে ফ্লারট করতে গেল। হে গিয়া কইসে, “তুম হারা নাম কাহা হ্যাঁয়” । আর পুলিশ আনটি তো , কি? নাম কাহা হ্যাঁয়? খারা তরে খাইসি, কইততে আইসস মফিজ কুনহাঙ্কার ইত্যাদি হিন্দি চিল্লা চিল্লি । অভির ফ্রেন্ড রা ওই দিন পারলে অরে ফালায়া থুইয়া আয়া পরে। খালি ভোঁটকায় কানবো বইলা কিছু কয় নাই।

এই মহান ভোঁটকা সোমবারে আম্রিকা ফেরত যাইব গা। হুদাই। আম্রিকা আবিষ্কার হউনের কুন দরকার আসিল? অভি, ভালা হয়া থাকিস । দেশের নাম ডুবাইস না। সাদা বেডি দেখলে হা কইরা তাকায় থাকিস না। ছেলের যত্ন নিস। মনে রাখিস হি ইজ নট এ টয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *