লেখার তারিখঃ মে ২৬, ২০১৫ । ১১.৩৪ পি.এম
আমার একটা খালাত ভাই আছে। তারিক ইকবাল অভি। আম্রিকায় পি এইচ ডি করে এহন। আমার এক বছরের ছোট। কিন্তু সার্টিফিকেটে আমার চেয়ে বড়। আমি আর ও একই ক্লাস এ পড়তাম, কিন্তু আলাদা স্কুল এ। ও বড় হইসে নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ এ। আমি ঢাকায়। ছোট বেলায় ও ছিল আমার বেস্ট ফ্রেন্ড। আমি চিঠি লিখখা পোস্ট কইরা খালার অফিসের ঠিকানায় পাঠাইতাম। অইভ্যা আবার সেই চিঠির জবাব দিত ( আমরা তখন “মেইল” এর “রিপ্লাই” দেওয়া টার্ম গুলাই জানতাম না, আমরা জবাব দিতাম, রিপ্লাই না)। মোহনগঞ্জে জাফর ইকবাল এর নতুন বই পাওয়া যাইত না বইলা আমি “জারুল চৌধুরীর মানিক জোড়” বই টা প্রায় অর্ধেক টা অর কাছে চিঠি তে লিখা পাঠাইসিলাম। বার্ষিক পরীক্ষা শেষ হইলে ও ঢাকা আসতো নাইলে আমি যাইতাম মোহনগঞ্জ। হে আসিল বিরাট ভাল স্টুডেন্ট। জীবনে সেকেন্ড হয় নাই এরম। আর আমি মিডীওকার। আমার আম্মার কাছে প্রায়ই শুনা লাগতো “অভি কি পুলাউ কুরমা খায়? আর তুই ভাত খাস? তাইলে ও ফার্স্ট হয় আর তুই পারস না ক্যান?”
এস এস সি এর পর আমরা কেমনে কেমনে জানি দুইজন ই নটরডেম এ চান্স পায়া গেলাম। আমরা তখন মাত্রই বাসাবো তে মুভ করসি। আমার বাপ চাইত্তালা বাড়ী কিনসে একটা বাসাবো তে। আমরা থাকতাম তিন তালায়। বাবা কইল, তোমাদের পাঁচ তালায় ছাদের এক পাশে একটা রুম কইরা দেই, দুই জন এ থাকো, পড়ালেখা কর, নিচে তো গেঞ্জাম, মেহমান আসে খালি। উপরে থাকো নিরিবিলি। আমরা তো পারলে বাপ এর সামনেই ঢেন্স শুরু কইরা দেই। কিন্তু মুখ খুবি গম্ভীর কইরা বললাম, জি, আপনি যা ভাল মনে করেন। তারপর আবার দুইজন মনে মনে হাই ফাইভ করলাম।
নটরডেম এ থাকার টাইম টা ওয়াজ দি বেস্ট একাডেমিক লাইফ আই এভার হ্যাড। ইভেন দো আমি জীবনেও ফাটাফাটি ভালছাত্র ছিলাম না। কিন্তু নটরডেম এর মত মজা আমি ভার্সিটি তেও পাই নাই। আমি আর অভি পাঁচতালায় থাকা শুরু করলাম। ক্লাস এ যাই, আসি , সব স্যার এর বাসা আমাদের কমন , খালি বায়োলজি বাদ এ। কারন অইভ্যার বাপ অরে মেডিকেল এ পড়াইবই আর আমি বায়োলজি ভয় পাইতাম, কারন আমি ছবি আঁকতে পারি না। তাই কম্পিউটার নিসিলাম।
পাঁচতালায় থাকতে যে কত মজা হইসে সেইটা এই নোট এ লিখা শেষ করন যাইব না। কিছু কাহিনী কই তাইলে হয়ত কিছু টা আন্দাজ করন যাইব।
আমাদের ঠিক নিচের তালায় মানে চার তালায় একটা ছোট ফ্যামিলি থাকতো। জামাই বই দুই জন ই চাকরি করে। খায়াদায়া রাইত সাড়ে দশটা বাজতেই গভীর রাত ওদের। আর আমাদের তখন পারটি শুরু হউনের টাইম হইসে। ওদের বাসায় টি এন টি ফোন ছিল। আর লাইন টা গেসিল, ঠিক আমাদের পাঁচ তালার জানালার সামনে দিয়া। আমরা করলাম কি, একটা ফোন সেট কিনলাম। তামার তার কিনলাম কয়েক গজ। তারপর এক রাতে ওই তার টারে কাইটা আবার জুরা লাগাইয়া রাখলাম।
প্রত্যেক দিন আমরা ওয়েট করতাম চার তালার ফ্যামিলি ঘুমাইসে কিনা। ঘুমাইলেই ওদের লাইন ডিস্কানেক্ট কইরা আমাদের রুম এ নিয়া আসতাম লাইন। তার পর এর ফোন ওরে ফোন। অইভ্যার এখন বউ, তখনকার গারলফ্রেন্ড থাকতো ময়মনসিংহ। আমরা ময়মনসিংহ এন ডাব্লিউ ডি কলও করসি। হোস্টেল এ ফোন কইয়া খুব জরুরি দরকার বইলা , অইভ্যা আলাপ করত, ভাত খাইস? কিদ্দিয়া খাইস? মশা বেশি? তোমাদের ওইখানে কয়টা বাজে এখন? তারপর সারা বাংলাদেশে যত পরিচিত অপরিচিত আছে সবাইরে ফোন কইরা তোমাদের ওই খানে গরম কেমন টাইপ আলাপ সালাপ চলতো।
পরের মাস এ আমরা নিচে গেসি ভাত খাইতে দেখি চাইর তালার আনটি আম্মার সাথে আলাপ করতাসে দরজায় দাঁড়ায়া, “বুঝসেন ভাবি, কি যে ভুতুড়ে বিল আসা শুরু করসে, আমরা তো বাসায় ই থাকি না। আমরা নাকি সারা বাংলাদেশে ফোন করি” । আমি আর অভি একে অন্যের দিকে তাকায় ও নাই, যদি বুইঝা যায় ওই চিন্তা কইরা।
আমাদের পাঁচ তালার ছাদ থেইকা সামনের বাসার ড্রইং রুম দেখা যাইত। ওই খানে একটা মেয়েও দেখা যাইত। যার নাম আমরা জানতাম না। আমাদের খুব শখ হইল, ওই মেয়ের নাম জানতে হবে। অভি আবার দুই দিন এর মাথায় অই বাসার টি এন টি নাম্বার যোগার কইরা ফালাইল।
ঈদের দিন আগের দিন রাতে আমরা ছাদে বইসা ফোন দিলাম ওই বাসায়। দেখলাম মেয়েটার মা ধরল ফোন। আমি বললাম, আমরা একুশে টিভি থেকে বলছি। আমাদের নতুন অনুষ্ঠান এর নাম হেলো হেলো ক্রিং ক্রিং। আমরা আপনাকে তিনটা প্রশ্ন করব, যদি পারেন তো এরোমেটিক কস্মেটিক্স এর সৌজন্যে আপনার জন্য রয়েছে আকর্ষণীয় পুরস্কার। বইসা বইসা দেখলাম ওই বাসায় দৌড়া দৌড়ি পইড়া গেসে। ওই তোর বাপেরে ডাক। ওই সাউন্ড কমা টিভির এই সব শোনা যাইতাসে।
ফোন এ আসল ওই মেয়েটা আর বলল, জি আমরা রেডি বলেন বলেন। এই বার অভি বলল, টাইটানিক এর পরিচালকের নাম কি? মেয়েটা চাষি নজরুল ইসলাম টাইপ কি জানি একটা বলল। অভি তো সাথেই সাথেই হ্যাঁ হ্যাঁ উত্তর সঠিক হয়েছে। এবার ২য় প্রশ্ন, বাংলাদশের জাতীয় পশু কি? মেয়েটা গরু, খাসি, কাচ্চি, বোরহানি কি কি জানি বলসিল, অভি আরো উৎসাহ নিয়া বিলকুল সঠিক হয়েছে , দুর্দান্ত জবাব। এইবার ৩য় প্রশ্ন, সোডিয়াম বেঞ্জয়েট এর রাসায়নিক সূত্র কি? আমি তো অভীর দিকে হুয়াদ্দাফাক লুক দিলাম। এইডা কি জিগাইসস হালা। অইভ্যা দেখি নির্লিপ্ত, কয় আরে সুজা তো NaC7H5O2 । আমি ফিসফিস কইরা কইলাম, আব্বে হালা সবাই কি তোর মত বিজ্ঞানী নাকি? অয় কইল দেখনা মজাডা।
আমরা দেখলাম ওইদিকে আবারো দৌড়া দৌড়ি শুরু হয়া গেসে, ওই কেমিস্ট্রি বই আন, ওই খুঁজ তারাতারি এইসব চলতাসে। অভি আবার কইল, আমাদের সময় বেশি নেই, আর এক মিনিট। ওই মেয়েটা হাঁপাইতে হাঁপাইতে ভাই একটু একটু, তারপর ABCDEFG টাইপ কি জানি একটা কইল। অভি শেষ হওয়ার আগেই, উত্তর সঠিক, আমাদের আজকের বিজয়ীর নাম… (কি নাম বলসিল আজকে আর মনে নাই… ধরি নাম ছিল ব্লা ব্লা)। মেয়েটা বলল ব্লা ব্লা। হ্যাঁ দর্শক মণ্ডলী আমাদের আজকের বিজয়ীর নাম ব্লা ব্লা। আপনার ঠিকানায় পৌঁছে যাবে আকর্ষণীয় পুরশকার। তারপর লাইন কাইটটা দিলাম। তার পর আমরা ওদের বাসার ঠিকানায় এক্টা সুন্দর কইরা লেখা চিঠি আর একটা ইকোণো ডি এক্স কলম পাঠাইসিলাম, কলম এ কালি ছিল না, ইউজড। চিঠি তে লিখসিলাম যে আমরা আসলে ভুয়া কিন্তু আপনার গলা সুন্দর, জীবনে উন্নতি করবেন যদি সাধারণ গিয়ান বাড়ান আরেট্টু।
আরেকটা ছোট ঘটনা দিয়া এই অইভ্যা বিষয়ক সৃতি চারণ থামাই আজকের মত। আমি আর অভি ফিরতাসিলাম নটরডেম থেইকা রিকশায়, আমাদের রিকশা অলা বেশ জোয়ান, ইয়ং পোলা ছিল একটা। হঠাত পাশে দিয়া আরেকটা রিকশা গেল। রিকশায় ভিকারুন্নিসা কলেজের তিনটা মেয়ে। খিল খিল কইরা হাসতে হাসতে পাশে দিয়া গেল গা। ওদের রিকশা ওয়ালা ছিল বুইড়া এক বেডা। অইভ্যা আমাদের রিকশা ওলা রে বলল, হুর মিয়া তুমি জোয়ান হয়া আমাদের দুই জন রে নিয়া পারো না, আর ওই বেটা বুইড়া তোমার আগে গেল গা। রিকশা ওলা কিচ্ছু কইল না তখন। বাসায় আসলাম। নামলাম। ভাড়া দিলাম। যাওয়ার সময় রিকশা ওয়ালা গম্ভীর মুখে বলল,
“ওই তিন জন হইলে আমিও পারতাম”