৮৪/৩৬৫

লেখার তারিখঃ মে ২২, ২০১৫ । ১১.৪৮ পি.এম

এইটারে আমার লিরিসিস্ট হউনের এর ইতিহাস এর ২য় পর্ব বলা যাইতে পারে। আগের লেখায় বলসিলাম নটরডেম এর ফার্স্ট ইয়ার এ আমার সাথে পরিচয় হইসিল ঋজুর। এস এস এসি এর পর আমি আর পিয়াস বাফার গিটার টিচার সনেট ভাই এর কাছে গিটার শিখা শুরু করসিলাম। নটরডেম এ পিয়াস আর ঋজু ছিল একি গ্রুপ এ। গ্রুপ ওয়ান এ। আমি ক্লাস এর ব্রেক এ পিয়াস এর সাথে দেখা করতে গেসি তখন ক্লাস এর সামনে পিয়াস পরিচয় করায় দিল এই যে এইটা ঋজু , ও অনেক ভাল গিটার বাজায়। আমি চোখ বড় বড় কইরা ভাল গীটার বাজাইন্যা ঋজু রে দেখলাম। তারপর থেইকাই আমাদের বকুল তলার আড্ডা গুলা শুরু হইল।

বকুল তলায় গিটারাড্ডা গুলায় একদিন আসলো তিয়াশ ভাই। তিয়াশ ভাই দুর্দান্ত গিটার বাজাইত আর আমি হা কইরা তাকায় থাকতাম। এই আড্ডায় প্রায় ই আসতো ঋজুর ইশকুলের ফ্রেন্ড হিমেল । ওরা দুইজন গভমেন্ট ল্যাব এ একসাথে পড়ত। হিমেল এর গানের গলা বেশ ভালো ছিল আর ও গিটার ও বাজাইতো। এখনকার পোলাপান যেমন স্বপ্ন দ্যাখে ডি এস এল আর কিনার তখন আমাদের কাছে গিটার বেশ কুল ব্যাপার স্যাপার ছিল। তাই দেখা গেসে সবাই কোন না সময় গিটার শিখা শুরু করসিল।

এর মধ্যে ঋজু দের বাসায় প্রায় ই যাইতাম। ওরা থাকতো পল্টনে আর নটরডেম থেইকা যাওয়া অনেক ইজি ছিল। প্রায় ই আমার বিজ্ঞানী কাজিন অভি রে সার এর বাসায় পড়তে পাঠায় দিয়া আমি ঋজুর বাসায় গিয়া বইসা থাকতাম । নিজেদের কয়েকটা গান ও হইল। বিশাল আবেগে ভরপুর সব লিরিক্স লিখতাম আর ঋজু এত মেলোডি আনতো সব গানে। ওই সময় মানে ১৯৯৯ তে লেখা কিছু লিরিক্স ছিল এমন,

“ প্রিয়তমা, শোন গল্প এক
যখন আকাশ ডেকে বলে স্বপ্ন দ্যাখ
তুমি কাঁদবে বলে তাই
এই চোখ ঢেকে যায়
মেঘের রঙ”

অথবা

“ এখনো হয়নি যে সময়
আধারে কান্না এখনো বাজে
এখনো কষ্টের দিন কাল
সবাই ভোলায় চেনে রূপকথা দিয়ে
অশান্ত মন যুদ্ধের সাজ সাজে
আমার হৃদয়ে নীল কান্না বাজে”

ঋজু আর হিমেল এর করা একটা গান আমার অনেক প্রিয় ছিল তখন যার কোরাস টা ছিল,

“আর জীবন যদি শূন্য লাগে তবে ডেকো আমাকে
আর মন টা যদি ব্যারথ লাগে তবে ডেকো আমাকে”

আমরা কিছু গান বানাইতাম। অগুলা তিয়াস ভাই শুনতো আর গিটারে কোন জায়গায় কি হবে সাজেস্ট করতো। এইটা দেওয়া ঠিক হবে, ওই টা হবে না এই সব নিয়া ঋজুর সাথে তর্ক চলতো। তিয়াশ ভাই এর একটা ক্লাস ফ্রেন্ড ছিল আকিক। কি বোর্ড বাজাইত। কি বোর্ড তো ইলেকট্রিক জিনিশ, কলেজে নিয়া আসা যাইত না। একদিন আকিক, তিয়াশ ভাই, হিমেল, ঋজু আমার বাসাবো বাসায় আসলো।

তখন আমি পাঁচ তালায় থাকতাম আর আম্মারা তিন তালায়। কত রকম মজা যে হইসে পাঁচ তালায় কিন্তু সেই গল্প আরেকদিন। আকিক কি বোর্ড নিয়া আসছিল। প্রথম বার এর মত সবাই সেদিন এক সাথে জ্যাম করা হইল। কথায় কথায় উইঠা আসলো যে আমাদের একটা ব্যান্ড ফর্ম করা উচিত যেহেতু সবাই এক সাথে মিউজিক করতাসি ই। আমি লিরিক্স, ঋজু গিটার আর ভোকাল, হিমেল গিটার আর ভোকাল, তিয়াশ ভাই গিটারস আর আকিক কি বোর্ড । তাইলে ড্রামার? ড্রামস কে বাজাবে? তিয়াশ ভাই বলল উনার পরিচিত একটা ছেলে আছে, নাম জনাথন, ওরে বললে ও বাজাবে। ব্যাস হয়া গেল ব্যান্ড। কিন্তু একটা নাম যে দরকার। তিন দিন চিন্তা কইরা ঋজু একটা নাম নিয়া আসল। X দের ব্যান্ড। The X’s .

নীল খেত এর আই সি এম এ এর অডিটরিয়াম এ তখন নিয়মিত আন্ডার গ্রাউন্ড কন্সার্ট, ব্যাচ ইউনিয়ন গুলার কন্সার্ট হইত। এইরকম একটা কন্সার্ট এ X’s এর প্রথম শো হইল। আমি বাসায় এক হাজার টা মিথ্যা কথা বইলা সন্ধ্যা ৬ টা থেইকা রাত ৮ টা পর্যন্ত কন্সার্ট দেইখা এক টা অদ্ভুত অনুভূতি নিয়া বাসায় ফিরলাম।

আমার বার বার ই মনে হইতাসিল, আমার বারান্দায় বইসা লেখা গান, আমার ঋজুর রুমের ফ্লোরে চিত হয়া শুয়া লেখা গান , আমার ওয়াক ম্যান এ রেকর্ড কইরা আইনা ঋজুর করা সুর শুনতে শুনতে পদার্থ বিজ্ঞান প্রথম পত্র খাতার চিপায় মোমবাতির আলো তে লেখা গান আজকে কয়েক শ ছেলে মেয়ে গাইসে একটা অডিটোরিয়াম এ, আমাদের ব্যান্ড এর সাথে সাথে। আমি এখন আর শুধু কলেজের ফার্স্ট ইয়ার এ পড়া একটা কনফিউজড টিনেজার না, আমি একটা ব্যান্ড এর লিরিসিস্ট। কি অদ্ভুত ব্যাপার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *