৮২/৩৬৫

লেখার তারিখঃ মে ২০, ২০১৫ । ৮.৫২ পি.এম

ঢাকা শহরের বাইরে বইসা লেখা ৩৬৫ সিরিজের প্রথম নোট। এখন সাভার আসি। ব্র্যাক সিডিএমএ তে। অপিশের ট্রেইনিং ২ দিনের। কাইলকা ঢাকা ফিরুম। আজকের মত ট্রেনিং শেষ হইসে, রুম এ আইলাম একটু আগে। ডিনার দিব ৯ টায়। খায়া টায়া পরে ঘুম আয়া পরতে পারে, আবার ভুত এর ডর টরও আসে। দুই রুম পরের সুন্দরী আপায় যদি ভয় পায়া আমাগো রুম এ আয়া পরে, তখন তারে বসাইয়া রাইখা নোট লিখতে বসা টা কত বিয়াদ্দপি হইব না? তাই অখনি লিখতে বইসি। এসি মেসি ছাইরা নরম বিছানায় শইল্ডা হান্দায়া দিয়া গদ্দি লাগানি খাট এর রেলিং এ হেলান দিয়া আবসা আবসা আলোয় কোলের উপরে ল্যাপটপ রাইখা লিখা লিখি করতাসি। নিজেরে খুবি বড়লুক বড়লুক লাগতাসে।

এক সপ্তাহ আগে কারিব ভাই আমারে একটা বই পড়তে দিসে। বইটার নাম Boeing : The Complete Story . ইতিহাস এর বই আর আই লাআআআভ ইতিহাস। বিশেষ কইরা এভিয়েশন রিলেটেড ইতিহাস। এই বইটা লিখসেন Alain Pelletier। ২৫৮ পৃষ্ঠার। খুব বেশি পুরানা বই না। ২০১০ সালে প্রকাশিত Heynes Publishing থেইকা। বইটা এখনো শেষ হয় নাই পড়া। মাত্রই দুই দিন হইল শুরু করসি। কিন্তু মনে হইল পইড়া যা যা মজা লাগতাসে ভুইলা যাওয়ার আগে লিখা রাখা উচিত নিজের জন্যই।

বোয়িং কোম্পানি কেমনে শুরু হইল এই কাহিনী টা অনেক মজার। William Edward Boeing (যাকে আমি এই লেখায় মিস্টার বোয়িং বলব) এর জন্ম ১৮৮১ সালের ১লা অক্টোবর আমেরিকার মিশিগান এর ডেট্রয়েট এ। মা অস্ট্রিয়ান আর বাবা জার্মান। আট বছর বয়েসে বাবা মারা যাওয়ার পর মিস্টার বোয়িং এর মা তাকে সুইটজারল্যান্ড এ পাঠায় দেন। নানা বাড়ির পাশের ইশকুলে ভর্তি করায় দেওয়ার মত বেপার আরকি 😛 । মিস্টার বোয়িং আমেরিকায় ফিরত আসেন ১৯০০ সালে। ১৯০৩ সালে তিনি বাপের মতই কাঠের ব্যাবসা শুরু করেন।

চিন্তা করতে কেমন লাগে, বোয়িং কোম্পানির মালিক গাছের গুড়ির গায়ে বিদেশি পানের পিক মুছতে মুছতে কইতাসে, আব্বে ওই জামাইল্লা, গুড়িডা আজকে টেরাকে তুইলা ফালা, পাট্টী আইবো নিতে। কিন্তু আল্লায় বাচাইসে এরম কিছু হয় নাই। তাইলে আমরা জীবনেও 747 জাম্বো জেট এ উঠতে পারতাম না। পৃথিবীর কোটি কোটী এভিয়েশন এন্থুসিয়াস্ট এর শুরু টা যেমন হয়, অমনে মিস্টার বোয়িং রেও পেলেন পোকায় কামড়াইল ২৯ বছর বয়সে।

সময় টা জানুয়ারি ১৯১০। মিস্টার বোয়িং লস এঞ্জেলেস এ আসলেন এয়ার শো দেখতে। দি ফাস্ট বিগ আমেরিকান এয়ার শো। তখন চলতাসে বাই প্লেন এর যুগ। ডাবল পাখা ওলা আর একদম ই বেসিক ইঞ্জিন ওলা প্লেন গুলা দেইখা মিস্টার বোয়িং এর মাথা মুথা খারাপ হয়া গেল। আপনি যদি পেলেন পাগলা হন আপনি বুঝতে পারবেন দ্যাট ফিলিং। প্লেন্স ওয়ার এমেজিং দেন, প্লেন্স আর এমেজিং নাও।

মিস্টার বোয়িং ভীর ঠেইলা এয়ার শো এর এক পাইলট এর কাছে গিয়া আবদার করলেন তারে যেন একবার একটু প্লেন এ উঠানো হয়। Farman Biplane এর পাইলট Louis Paulhan এই ২৯ বছর এর ব্যাডার আবদার শুইনা বেশি পাত্তা পুত্তা দিলেন না। অনেক অনেক মন খারাপ নিয়া সিয়াটল এ ফিরা গেলেন মিস্টার বোয়িং।

উনি যদি সাধারণ কেউ হইতেন তাইলে কয়দিন পর মন খারাপ টা ভুইলা যাইতেন। কিন্তু লিজেন্ড রা মন খারাপ করা মানে পৃথিবী নতুন কিছু একটা পাইতে যাইতাসে। মিস্টার বোয়িং এরোনেটিক্স নিয়া পড়া শুনা শুরু করলেন। সিয়াটল ইউনিভারসিটি ক্লাব এ মিস্টার বোয়িং এর সাথে পরিচয় হইল আরেক পেলেন পাগলার। ইনি MIT থেইকা এরোনেটিক্স এ পাশ কইরা আসছেন আর সদ্যই ইউ এস নেভি তে যোগ দিসেন। ইনার নাম Conrad Westervelt । পেলেন নিয়া আড্ডা দিতে দিতে দুই জন এর মধ্যে খুব দোস্তি হইল।

১৯১৪ সালে Terah Meruni নামে এক পাইলট একটা Curtis Seaplane নিয়া লেক ওয়াশিংটন এ আসলেন স্বাধীনতা দিবসের উৎসবে যোগ দিতে। পেলেন দেইখা তো মিস্টার বোয়িং এর ১৯১০ সালের সেই পুরানা দুখখ আবার চাগার দিয়া উঠল । তিনি ভয়ে ভয়ে গিয়া জিগাইলেন, বাই, আপনের পেলেনে এট্টূ উটতে দিবাইন? এই পাইলট ভাল ছিল। তিনি প্রথমে মিস্টার বোয়িং রে নিয়া একবার উড়লেন। তারপর তার দোস্ত মিস্টার Westervelt নিয়াও উড়লেন। এই বোয়িং লোক টা কি পরিমান কুল ছিল চিন্তা করেন, এত ঝামেলা কইরা ৪ বছর অপেক্ষা কইরা প্লেনে জীবনে প্রথমবার উইঠা আসার পরও তার বন্ধু মিস্টার Westervelt রে বললেন, “মেহ, এইডা কিছু হইল। এই পেলেন বেশী সুবিধার না। তুই আর আমি মিল্লা এর চেয়ে ভালা পেলেন বানাইতে পারুম না?” মিস্টার Westervelt বললেন অবশ্যই পারুম। শুরু হইল দি গ্রেট বোয়িং এডভেঞ্চার। তারা একটা প্লেন বানানই শুরু করলেন যার নাম এই দুই দোস্ত এর নাম এর ইনিশিয়াল দিয়া রাখসিলেন, B & W.

কিন্তু এজ ইউ জুয়াল বাধা আসল। ১৯১৫ সালে মিস্টার Westervelt রে ইউ এস নেভি বদলি কইরা দিল অন্য জায়গায়। মিস্টার বোয়িং কি তাতে থাইমা গেলেন? না। তিনি একলা চল রে গান টা না শুইনাই এইটাতে বিশ্বাসী ছিলেন।

১৯১৬ সালের জুন মাসে B & W বানানি শেষ হইল। মিস্টার বোয়িং একটা পাইলট খুইজা বাইর করলেন যে কিনা তার হয়া প্লেন টারে টেস্ট কইরা দিব। পাইলট এর নাম Herb Munter. ঠিক হইল ১৫ই জুন, ১৯১৬, এক মহান শুভ দিনে এই প্লেন টেস্ট করা হবে।

১৫ই জুন, ১৯১৬। মিস্টার বোয়িং লেক ওয়াশিংটন এর পাশে দাঁড়ায় আসেন তো আসেন ই। পাইলট মিয়ার আর খবর নাই। বিরক্ত হয়া মিস্টার বোয়িং ভাবলেন ধুত্তুরিকা, পাইলট এর মায়েরে বাপ। আমি নিজেই চালামু পেলেন। কারন তিনি ১৯১৫ সালে শিখসেন অলরেডি পেলেন চালানি। পাইলট চান্দু যখন বিদেশি লুঙ্গির গিট্টু সুজা করতে করতে লেকের পারে আইল, সে দেখল যে মিস্টার বোয়িং প্লেন নিয়া অলরেডি টেক অফ এর জন্য চলা শুরু করসেন। B & W আকাশে উড়ল এবং সফল ভাবে নাইমাও আসল।
তারপর আর যাত্রা থামে নাই। মিস্টার বোয়িং এর সেকেন্ড প্রজেক্ট ছিল একটা C-4 বিমান। সেইটাও সফল ভাবে শেষ হয়। ১৯১৭ সালে তিনি কোম্পানির নাম চেঞ্জ কইরা The Boeing Company রাখেন আর ৯০ ডলার মাস বেতন এ ইউনিভারসিটি অফ ওয়াশিংটন এর থিকা পাস করা দুইজন ইঞ্জিনিয়ার নেন। Claimont L Claire আর Philip G Johnson নামের এই দুই জন ইঞ্জিনিয়ার কে বোয়িং কোম্পানির পিলার বলা হয় যারা পরে বোয়িং এর চেয়ারম্যান হইসিলেন।

প্লেনে উঠতে না পাইরা ১৯১০ সালে মন খারাপ হইসিল যে ছেলেটার, হি এন্ডেড আপ ডিজাইনিং হিজ ওন প্লেন আর আলটিমেটলি স্টারটিং আপ দি বিগেস্ট কোম্পানি ইন দি হিস্টোরি অফ এভিয়েশন। পরের বার মন খারাপ হইলে এইটা একটু মনে কইরেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *