লেখার তারিখঃ মে ১৯, ২০১৫ । ১১.১৯ পি.এম
ইদানীং স্কেল মডেলিং নিয়া পড়াশুনা শুরু করসি আর বেপারটা বিরাট ইন্টারেস্টিং লাগতাসে। স্কেল মডেল জিনিশ টা হইল মুল জিনিশ টার একটা ছোট স্কেল এর রেপ্লিকা। এই রেপ্লিকা যত হুবুহু হবে, স্কেল মডেল তত সুন্দর হবে। যে কোন কিছুর স্কেল মডেল হইতে পারে। আরকিটেক্ট রা ডিজাইন এর পর যে মডেল বানায়, সেইটাও একটা স্কেল মডেল। মুল স্থাপনা টার ছোট আকারের প্রতিকৃতি। কিন্তু আমরা যারা আর্কিটেকচার পড়ি নাই তাদের কি উপায় হবে? আমাদের মত শখ আসে এমন কনজিউমার দের জন্য এই ক্ষেত্রে আগায়া আসছে Airfix, Revell এর মত কোম্পানি গুলা। ইনারা করসে কি, বিভিন্ন স্কেল মডেল কিট বাজারে ছারসে। এই কিট এর মধ্যে থাকে যেই জিনিষের মডেল কিট তার ছোট ছোট পার্টস, রঙ, ডিক্যাল, ইন্সট্রাকশন ম্যানুয়াল । এই গুলার ব্যাপারে একটু আলাদা আলাদা কই।
মডেল পার্টস আর ইন্সট্রাকশন ম্যানুয়াল
ধরেন এইটা একটা প্লেন এর স্কেল মডেল কিট। তাইলে এই মডেল কিট এ প্লেন টার ককপিট, ডানা, বডি (যাকে আমরা বলি ফিউজালাজ / Fuselage ), ল্যান্ডিং গিয়ার ইত্যাদি বিভিন্ন রকম পার্টস। প্লাস্টিক মডেল কিট এ এগুলা প্লাস্টিক এর থাকে আর মেটাল মডেল কিট হইলে মেটাল এর। এই গুলা সব একসাথে লাগানো থাকে সেট এর মত যেগুলা বানানো আগে ছুটাইয়া নিতে হয় আলাদা আলাদা কইরা। কিভাবে কোন টার পর জোড়া লাগাইতে হবে তার নির্দেশনা দেওয়া থাকে ইন্সট্রাকশন ম্যানুয়াল এ। ইন্সট্রাকশন ম্যানুয়াল এ আরো থাকে কোন যায়গায় কি রঙ বসবে আর কি ডিক্যাল বসবে । রঙ আর ডিক্যাল এর বেপারে একটু পরেই বিস্তারিত বলতাসি।
মনে রাখতে হবে যে এই ভাবে ইন্সট্রাকশন মাইনা পার্টস একটার পর একটা জোড়া লাগানো শেষ করলেই সেটা স্কেল মডেল হয়া যায় না। কারন পার্টস গুলা সাধারণত এক রঙ এর থাকে। যেমন সব সাদা অথবা সব নীল বা সবুজ এমন। বানানোর পর জিনিষ টা দেখলে মনে হবে মাত্র ফ্যাক্টরি থেইকা বানায়া বের করা হইসে, এখনও রঙ করা হয় নাই। আসল জিনিশ টার সাথে মিলাইয়া ঠিক ঠিক জায়গা মত ঠিক শেড এর রঙ দেওয়া এবং সকল রকম সাইন, ফ্ল্যাগ, মারকিং ইত্যাদি ঠিক ঠাক মত বসাইলেই সেইটা একটা স্কেল মডেল হয়া উঠে।
রঙ আর ডিক্যাল
রঙ আর ডিক্যাল ব্যাপার দুইটা স্কেল মডেল এর অনেক ইম্পরট্যান্ট একটা বিষয়। পার্টস জুড়া লাগাউয়া মডেল বানাইতে যত সময় লাগে রঙ আর ডিক্যাল এর পিছনে তার চেয়ে চারগুন বেশি সময় দিতে হয়। যে জিনিশটার স্কেল মডেল বানানো হইতাসে শুরুতেই সেইটার যত বেশি সংখ্ক ছবি আর ডিটেইল খেয়াল করা যায় স্কেল মডেল তত ভাল হয়। অরিজিনাল টায় যেইখানে যেই রঙ ব্যাবহার করা হইসে সেই রঙ এর শেড ব্যবহার না করলে ওইটা একটা ভুয়া স্কেল মডেল ছাড়া কিছু হয় না। আমাদের চোখ অনেক সেনসিটিভ। আমরা এক নজর দেখলেই একটা ভাল স্কেল মডেল আর আর একটা বাজে স্কেল মডেল এর পার্থক্য ধইরা ফালাইতে পারি।
রঙ ঠিক ঠাক করার পর আসে ডিক্যাল এর ব্যাপার । ডিক্যাল হইল আমরা যাকে স্টিকার নামে চিনি ওইরকম একটা জিনিষ। কিন্তু এইটার পিছনে আঠা থাকে। না। মডেল কিট এর সাথে যেই ডিক্যাল গুলা আসে অগুলা পানি এক্টিভিটেড। অর্থাৎ পানি তে ভিজাইয়া গ্লু লাগাইয়া জায়গামত বসাইতে হয়। তারপর ঘসা দিলে নিচের সাদা অংস উইঠা আসে আর স্টিকার এর মত ডিক্যাল টা জায়গা মত লাইগা যায়। স্কেল মডেল এর গায়ে লোগো, সাইন, লেটার বা নাম্বার মারকিং ইত্যাদি ফন্ট, সাইজ, কালার ঠিক রাইখা দেখাইতে হইলে ডিক্যাল এর বিকল্প নাই। কারণ এগুলা হাতে আঁকতে গেলে জীবনেও অরিজিনালটার মত ভাল হইব না, উনিশ বিশ হইবই। ইভেন অরিজিনাল জিনিষ টাতেও অনেক জায়গায় কম্পুটার ডিজাইন্ড ডিক্যাল ব্যাবহার করা হইসে।
রঙ আর ডিক্যাল সফল ভাবে বসানোর পর আমার মত বিগিনার মডেল প্লেন হবিইস্ট রা ইয়েই পারসিইই, পোস্ট, পোস্ট, অখনি ফেসবুকে পোস্ট করলেও, ওস্তাদ মডেলার রা আবার এই জিনিষ এর উপর ওয়েদারিং করেন। তাতে জিনিষ টা আরো রিয়ালেস্টিক হয়। যেমন আমি যদি কন দিন তুরাগ বাস এর স্কেল মডেল বানাই তাইলে বাস বানানো আর রঙ করা শেষ কইরা তুরাগ পরিবহন যাত্রাবাড়ি-আব্দুল্লাহপুর লেখা ডিক্যাল টা লাগায় দিয়াই বগল বাজাইতে বাজাইতে ফেস বুকে পোস্ট দিতাম। কিন্তু ওস্তাদ মডেলার রা এইটার গায়ে ঘইসা ঘইসা আসল তুরাগ বাস এর মত দাগ বানাইতে। ওয়েদারিং কইরা জায়গায় জায়গায় রঙ এর জইলা যাওয়া দেখাইত, হয়ত রিয়ার ভিউ মিরর দুইটা প্রথমেই ভাইঙ্গা ফালায় দিত। সব মিলায় ইট অন্ট বি আ প্রিটি মডেল, বাট ইট উড বি এ অসামলি রিয়ালিস্টক মডেল।
স্কেল মডেল বানানোর পূর্ব প্রস্ততি
একজন সিরিয়াস স্কেল মডেলার এর কাছে অনেক কিছু থাকে। একটা ডেস্ক থাকে, অনেক গুলা রঙ এর ডিব্বা থাকে, গ্লু থাকে, একটা মডেল বানানির স্কেল আঁকা সবুজ রঙ এর বোর্ড থাকে। একটা সুন্দর ডেস্ক থাকে যার সাথে ম্যাগ্নিফাইয়িং গ্লাস আর টেবিল ল্যাম্প থাকে। ম্যাগ্নিফাইং গ্লাস টা রঙ করার সময় সুক্ষ যায়গা গুলাও ঠিক ঠাক রঙ করতে হেল্প করে। রঙ গুলা আলাদা কইরা কিনা রাখে মডেলার রা কারন মডেল কিট এর সাথে যেগুলা ডিফল্ট কালার হিসাবে আসে সেগুলা অনেক সময় ই ইনাদের পছন্দ হয় না। আরো রিয়ালেস্টিক কালার এর জন্য ইনারা তিন চার রকম কালার মিক্স কইরা পারফেক্ট শেড ও তৈরি করে।
কিছু টুলস লাগে। যেমন কাটা কুটির জন্য হবি নাইফ, ঘসা ঘসির জন্য সেন্ড পেপার, জুরা জুরির জন্য গ্লু। কিন্তু খুবি বেসিক এগুলা। যে কোন ষ্টেশনারী দোকান এ পাওয়া যায়। মুল চ্যালেঞ্জ টা হইল স্কেল মডেল কিট যোগার করা। বাইরে থেইকা আনাইতে পারলে সবচেয়ে ভাল। বাংলাদেশে শুধু মাত্র বসুন্ধরা সিটির মোস্তফা মারট এ পাওয়া যায় দেখসি আমি। আর কোথাউ যায় কিনা জানি না। তবে দাম বেশি। অবশ্য কোন শখ এর জিনিষটার দাম বেশি না। টাকার মূল্যমান এ দাম এর কোথা বলি নাই। কষ্ট আর ধৈর্য এর দাম দেওয়া লাগে অনেক
এইটা লেগো সেট দিয়া বানানো জিনিশ না। লেগো আরেকটা অসাম দুনিয়া যেইটা নিয়া হয়তো আরেকদিন লিখব। স্কেল মডেল বানানো কোন খেলা না। এইটা একটা আন্তর্জাতিক লেভেলের শখ আর এইটা ১২ বছর এর পিচচি থেইকা শুরু কইরা ৮০ বছরের মানুষ টাও করে। তাই কেউ যদি বলে “আরে আপনি এত বড় হয়া গেসেন, আপনের কি এগুলা নিয়া খেলার বয়স আসে নাকি” তাইলে আপনার রাগ করার পূর্ণ অধিকার আছে। যদিও রাগ প্রকাশ করার দরকার নাই। শুধু তারে বলবেন,
প্যাকেট এর গায়ে লেখা আছে মিনিমাম এজ লিমিট ১০+। কোন ম্যাক্সিমাম এজ লিমিট নাই। আই এম ১০+।