লেখার তারিখঃ মে ১০, ২০১৫ । ১০.৪৮ পি.এম
– আম্মা, কই তুমি?
: আমি তো রাস্তায়, আশতাসি
– আচ্ছা আশো। আইশা ফোন দিও
: হ্যালো ইথার, আমি তো আইসা পরসি এপলো তে। তুই আসতে পারবি?
– হ পারবো তো। আশতাসি
: দেখিস, অফিসে ঝামেলা হইব না তো? নাইলে থাক, আমি একলাই পারুম রিপোর্ট দেখাইতে
– আরে না, অলরেডি তো সাড়ে চাট্টা বাজেই। আশতাসি। চিন্তা কইর না
: তারাহুরার দরকার নাই বাবা, আস্তে আস্তে আয়
– আম্মা, আসছি।
: তোর বস বকব না?
– আরে না হুর। কিসু হইব না। তুমি নাম লেখাইস?
: হ বলসি তো কেয়া দিদির কাসে। তুই গিয়া দেইখা আয় তবু কয়জন বাকি
– কেয়া দিদি আবার কেডা?
: আরে ওইজে রিসিপশন এর মেয়েটা। গিয়া বল্লেই হবে। আমারে চিনে।
– তুমি তো যেখানেই যাও সব ফ্রেন্ড বানায় ফালাও। বস, আমি খোজ নিয়া আসি
: এই কাগজ নিয়া যা, দেখাইলেই বুঝবে। আই ডি দেয়া আসে।
– দেইখা আসছি আম্মা। দেরি আসে, বিশাল সিরিয়াল। খাবা কিছু? নরথ এন্ড কফি শপ খুলসে দেখস? কফি খাবা?
: নারে বাবা, খামাখা টাকা খরচ করিস না। আম্রার বাংলা চা ই ভাল। তুই ওই যে চা মেশিনের পাশে যে মেয়ে টা, অর নাম বিথি। ওরে গিয়া বল্লেই দুইটা নেস টি দিবে। যা নিয়া আয়।
– চা মেশিনের মেয়েরেও চিন? তুমি তো ব্যপক। এই যে আনসি। গরম কিন্তু, রাইখা নাও ইক্টু।
: তোর কাপ দে, ফু দিয়া দেই
– আরে না না, কি কর, লজ্জা লাগে। আমি ফু দিতে পারি তো। খাবা কিছু?
: হ, আম্রা এখন খাওয়া শুরু করি আর ডাক্তার ডাকুক আর আমরা চাবাইতে চাবাইতে ডাক্তার এর সাম্নে যাই? তুই এত বেক্কল ক্যান? খাইতে হইলে ডাক্তার দেখার পর খাব নে
– ইয়ে মানে, আচ্ছা আসো ডাক্তাসে। আমাদের সিরিয়াল আসছে।
: এই মেয়ে কি নাম জানি তোমার? মালতি না কি জানি? সব ফুলের নামে নাম। মনেও থাকে না। তোমার বাচ্চাটা ভাল আসে? না। আজকে তোমার আংকেল আসে নাই। এইটা আমার ছেলে। ওরে আজকে অফিস থেইকা ধইরা নিয়া আসছি। সালাম ডাক্তার ভাই।
– আম্মা, শেষ তো দেখানি। চল কোথাউ খাইতে যাই
: ক্যান, কি দরকার, শুধু শুধু টাকা খরচ।
– আরে তোমারে টাকার কথা কে ভাবতে বলসে আচ্ছা চল মেহেদি মারট এ যাই।
: অইখানে কি আসে?
– সুপার শপ। অইযে আগোরা, স্বপ্ন অই টাইপ আরকি। চল রিকশা দিয়া ঘুইরা আগে তোমারে বসুন্ধরা দেখাই। দেখসো রাস্তা গুলা কত আরাম এর? এই যে আইসা পরসি মেহেদি মারট।
: এইটা কিনবো? না থাক। ওইটা? না থাক, কত দাআম!!
– কি শুরু করলা আম্মা। দাম দেখ ক্যান। খালি পছন্দ কর। নিজের জন্য কিছু নাও। কি নিতাসো এগুলা।
: এই যে নিসি তো। দ্যাখ কত কিসু নিয়া ফালাইসি।
– আলু বোখারা, জয়ত্রি, এরোসোল, সার্ফ এক্সেল এগুলা নিজের জন্য? এগুলা তো বাসার জন্য।
: আরে তোরা তো কেউ থাকস না। বাসা মানেই আমি। বাসার জন্য নেওয়া মানেই আমার জন্য নেওয়া। আচ্ছা দেখ এই যে নিজের জন্য নিলাম। হইসে?
– পেস্ট? নিজের জন্য পেস্ট? এইডা নিজের জন্য কিছু?
: আরে আমার তো সাদা পেস্ট দেখলে বুমি আসে, তাই জেল পেস্ট নিসি। নিজের জন্য হইল না?
– আচ্ছা বুঝসি। চল ছাদে যাই
: ছাদে ক্যান? চল বাসায় যাইগা, কিনাকাটি লাগতো না আর। তর কত্ত টাকা খরচ করায় লাইসি।
– আরে চল না। খিদা লাগসে
: এই তর বাপ রে ফোন লাগায় দে। এই শুনেন, ইথার আমাকে খাওয়াইতে আন্সে। এই তোর খালা রে ফোন লাগায় দে। কিরে কি করস, আমি তো ইথারের সাথে খাইতে আসছি। এই তোর বইন রে ফোন লাগা অস্ট্রেলিয়ায়। হেলো মা, কি কর? ওহি মিহি কি করে? এই তো ইথার আমাকে খাওয়াইতে আনসে, পরে কথা বলি।
– আম্মা আরেক্টু খাও না। পরে কথা বইল। ভাই আমাদের বিল টা দিয়েন
: বাবা তোমার নাম কি? দেশের বাড়ি কই? এই হোটেলে কয়দিন ধইরা কাজ কর? আমার ছেলে আমারে খাওয়াইতে নিয়া আসছে। আমাদের এক্টা ছবি তুইলা দাও তো। আমারে কম দেখাইও ছবি তে। আমি দেখতে সুন্দর না তো। ছবি ভাল আসে না।
– আম্মা, কি যে বল এগুলা তুমি। চল। সব বিল দেওয়া শেষ। ব্যাগ গুলা আমি নিতাসি। সি এন জি ঠিক করসি। চল বাসায় যাই।
: তুই আবার এতদুর বাসাবো যাবি? তুই সুভাস্তু নাইম্মা যা। আমি যাইতে পারবো
– এত ব্যাগ বুগ নিয়া তোমারে এক্লা এক্লা ছারবো নাকি। কিছু হবে না। কাল্কে অফিসে আইসা পরব বাসাবো থেইকা।
: আমার ছেলেটা বড় হয়া গেসে। আমার কত গর্ব লাগে
– দুরু আম্মা। চুপ কর তো। চশমাটা ঝাপ্সা হয়া গেসে পাল্টানো দরকার…