৬৮/৩৬৫

লেখার তারিখঃ মে ৬, ২০১৫ । ১০.১৬ পি.এম

মুক্তিযুদ্ধে প্লেন রিলেটেড জিনিশ গুলা ঘাইটা বাইর করতে আমার দুর্দান্ত উত্তেজনা লাগে। মনে হয় সাগরে ডুব দিয়া মনি মুক্তা তুলতাসি। আর আহা কি সাইজ সেই সব মনি মুক্তার। নিজের একটা পবিত্র দায়িত্ব মনে হয় এই সব লিখা যাওয়ার। এইটা পইড়া যদি একজন মানুষ ও ইন্সপায়ার হয়, মনে করে আরে উনি দেশের জন্য এত অসুবিধার মধ্যেও এত কিছু কইরা ফালাইল আর আমি তো স্বাধীন দেশে থাকি। আমি পারুম না ক্যান। তাতেই অনেক।

আমাদের মনে রাখতে হবে যে আমরা একটা জয়ী জাতি। আমরা যুদ্ধ কইরা জিতসি, আম্পায়ার এর পারশিয়াল্টি দিয়া না। আমাদের যতই বাক্সে রাখা হোক আমাদের ভিতরের আগুন জ্বালাইয়া দেয়ার জন্য একজন এর জইলা উঠাই যথেস্ট। আমাদের মাটিতে পুঁইতা ফালায় ওরা। ভুইলা যায় আমরা বীজ। আমরা মাথা উঁচা কইরা দাঁড়াইলে ওদেরকেও ছাড়ায়া যাবো।

আজকে দুই জন মানুষের গল্প বলব। এদের নিয়া কোথাউ কোন গল্প উপন্যাস, নাটক, গান লেখা হয় নাই। এরা অগীত (Unsung e এর বাংলা কি জানিনা, তাই নিজেই একটা বানায় নিসি), অজ্ঞাত বীর। এরা সম্মুখ সমরে যোগ দেন নাই কিন্তু দেশের জন্য তার চেয়ে কম কিছুও করেন নাই।

প্রথম জন একজন সামরিক লোক। উনার নাম জাফর মাসুদ। উনি ছিলেন ১৯৭১ সালে পাকিস্তান বিমান বাহিনীর ঢাকা বেস এর বেস কমান্ডার এবং একজন এয়ার কমডোর। বেস এ সবাই তাকে ডাকতো মিঠঠি মাসুদ। ইনি এক মাত্র সামরিক অফিসার যিনি ঢাকার মাটিতে ইয়াহিয়া খান এর চোখে চোখ রেখে সরাসরি তার পরিকল্পনা কে ভুল বলে উচ্চারণ করার সাহস করেন। সেই ঘটনা টা একটু বলি।

আগের লেখা গুলাতেও বলসি ১৫ মার্চ পাকিস্তান এর সামরিক শাসক প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ঢাকা আসেন শেখ মুজিবুর রহমান এর সাথে পাকিস্তান এর ক্ষমতা হস্তান্তর নিয়া তৈরি হওয়া ডেড লক সিচুয়েশন নিয়া মিটিং করতে। বিমান বন্দর থেইকা তিনি প্রেসিডেন্ট হাউজ (বর্তমানে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন সুগন্ধা) এ যান । সেইখানে সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী এবং বিমান বাহিনীর ঊর্ধ্বতন অফিসার রা উপস্থিত ছিলেন। বিমান বাহিনীর বেস কমান্ডার হিসাবে জাফর মাসুদ ও সেখানে ছিলেন। ইয়াহিয়া তাদের সাথে মিটিং এ যা বলেন তা বাংলায় লিখলে দাড়ায়

“চিন্তা করো না। মুজিবকে আগামীকাল আমি সোজা করে ছাড়ব। আমার ধারনাও খানিকটা তাকে দেব। তার প্রতি আমার শীতল মনোভাবও পৌঁছে দেব এবং দুপুরে খাবার জন্যও তাকে আমন্ত্রণ জানাবো না। তারপর পরশু দিন তার সাথে দেখা করবো এবং দেখবো তার প্রতিক্রিয়া কি। যদি তার আচরণ না বদলায় তাহলে তার উত্তরও আমার জানা আছে। ”

সবাই নিশ্চুপ । কারো কিছু বলার সাহসও নাই। এমন সময় লম্বা, জিম করা ফিট শরীরের একজন অফিসার এটেশন হয়া দাঁড়াইয়া কিছু বলার পারমিশন চাইলেন। ইয়াহিয়া অনুমতি দিলে এই অফিসার বললেন , “স্যার সিচুয়েশন খুবি সেন্সেটিভ। এই সাবজেক্ট টা একটা পলিটিকাল সাবজেক্ট আর পলিটিকালি ই এইটা সল্ভ হওয়া উচিত। আদারওয়াইজ থাউজেন্ডস অফ ম্যান, উইমেন এন্ড চিলড্রেন উইল বি এক্সটিঙ্কট।“

ইয়াহিয়া এরকম সরাসরি কনফ্রন্টেশন এর জন্য প্রস্তুত ছিলেন না। তিনি শুধু বললেন,

“আমি জানি, আমি জানি”

সেদিনের এই সাহসী অফিসার ই জাফর মাসুদ। ২৭শে মার্চ তিনি বেজ এর সব বাঙ্গালি অফিসার দের ডাকলেন । অফিসার রা তার কাছে তাদের নিরাপত্তা নিয়া টেনশন এর কথা বলল। তিনি ওইদিন বলসিলেন

“No One will Touch My Men or Officers Before They Kill Me”

এইটা শুধু কথার কথা ছিল না। তার ঠিক দুই দিন পর ২৯ শে মার্চ, ১৯৭১। চট্টগ্রামের কালুর ঘাট বেতার কেন্দ্রে বিমান হামলা চালানোর জন্য লিউট্যানেন্ট জেনারেল টিক্কা খান বিমান বাহিনীর সাহায্য চেয়ে পাঠান। এয়ার কমোডোর জাফর মাসুদ সাহায্য দিতে অস্বীকার করেন। তিনি রিপ্লাই পাঠান

“This is a civilian area and my pilots cannot pick up military targets”

৩০শে মার্চ তিনি বেজ এর সবাইকে ডাইকা বলেন ,

“তোমরা জান যে সেনাবাহিনী তৎপরতা চালাচ্ছে। আমি এয়ার সাপোর্ট দিতে অস্বীকার করেছি। কিন্তু এটা কতদিন ঠেকিয়ে রাখতে পারবো জানি না। সকল বাঙ্গালী পাইলট কে সব মিশনে যাওয়া থেকে অব্যাহতি দিচ্ছি এবং যে সমস্ত বাঙালি টেকনেশিয়ান এ সমস্ত বিমানে কাজ করতে চায় না তারা অনিদ্রিস্ট কালের জন্য ছুটিতে যেতে পারে।“

এপ্লিলের ৩/৪ তারিখে প্রথম বিমান হামলা চালানো হয় পাবনার আশে পাশে। কিন্তু এয়ার কমোডোর এর নির্দেশ ছিল কোথাও যদি লোক জমায়েত দেখা যায় প্রথমে যেন ওয়ার্নিং শট ফায়ার করা হয় যাতে জনতা ছত্রভঙ্গ হওয়ার সুযোগ পায়। এই ভাবে উনি হাজার হাজার মানুষের প্রান বাঁচান।

এ সবের জন্য ইয়াহিয়া খান এর বিশেষ নির্দেশে এয়ার কমোডোর জাফর মাসুদকে বদলী করে পশ্চিম পাকিস্তানে পাঠিয়ে দেওয়া হয় এবং পরে চাকরী থেকে বরখাস্ত করা হয়।

আজকে এই পর্যন্ত থাক। আমি মুক্তিযুদ্ধের সময়কার আরেকজন বেসামরিক পাইলট এর ব্যাপারেও ইনফরমেশন যোগার করসি। উনার বীরত্ব নিয়াও আজকে লিখব ভাবসিলাম। কিন্তু লেখা টা বড় হয়া যাবে তাই লিখলাম না। পরের কোন লেখায় লিখব নে।

তথ্যসূত্রঃ

বইঃ

বাংলাদশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলীল পত্র, ৯ম খন্ডে এয়ার ভাইস মার্শাল মোহাম্মদ খাদেমুল বাসার এর সাক্ষাতকার
Witness to Surrender by Sidduqe Salik, University Press Ltd.
বিহঙ্গের ডানা – মেজর কামরুল হাসান ভূঁইয়া

ইন্টারনেট

আজকে ইন্টারনেট ঘাটতে পারি নাই। কিউবির ব্যালেন্স শ্যাষ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *