লেখার তারিখঃ এপ্রিল ২৭, ২০১৫ । ১১.০০ পি.এম
আজকে আমি দুইটা অপারেশন নিয়া পড়সি। ১) অপারেশন ব্লিটজ (Operation Blitz ) ২) অপারেশন সার্চ লাইট (Operation Searchlight)। ২য় টার কথা আগে শুনলেও ১ম টার কথা আগে জানতাম না। ১৯৭১ এর ২৫ শে মার্চ এর রাত্রে পাকিস্তান সেনাবাহিনী যেই গন হত্যা চালায় এই দেশে, সেইটাই অপারেশন সার্চ লাইট। আর এই অপারেশন সার্চ লাইট ছিল অপারেশন ব্লিটজ এর সিকুয়েল। আজকের লেখাটা এই অপারেশন ব্লিটজ নিয়াই।
অপারেশন ব্লিটজ এর উদ্দেশ্য ছিল এই দেশে সামরিক আইন পুনঃ প্রতিষ্ঠা করা আর অপারেশন সার্চ লাইট এর উদ্দ্যেশ্য ছিল সামরিক ক্ষমতা প্রয়োগ কইরা এদেশের মানুষ রে জন্মের মত সুজা কইরা দেওয়া। আফসুস, আমরা সরল হইলেও বোকা না। আমাদের সুজা করতে আইসা নিজেরাই ব্যাকা হয়া ফেরত গেসে। এই লেখার সব তথ্যের সূত্র লেখার শেষে দিয়া দিসি।
১৯৬৯, ১৯৭০ আর ১৯৭১ এই তিনটা সাল মুক্তিযুদ্ধের কথা বলতে গেলে আসবেই। ১৯৬৯ এ সামরিক শাসক ইয়াহিয়া খান ক্ষমতায় আসেন। তিনি জনগণ রে মুখে বলেন নির্বাচন হবে, গণতন্ত্র আসবে। কিন্তু তলে তলে নিজের জেনারেল দের ঠিক ই বলেন, “Gentlemen, we must be prepared to rule this unfortunate country for the next 14 years or so.”। ইয়াহিয়া খান নির্বাচন এর ঘোষণা দেন। এইটা উনি অনেক মহান ওই জন্য না। তার গোয়েন্দারা তারে রিপোর্ট দিসিল, “নির্বাচনে কোন পক্ষই সরকার গঠনের মত অবস্থায় থাকবেনা যার কারনে জাতীয় পরিষদের অধিবেশন ডাকলেও তারা ১২০ দিনের নির্ধারিত সময়ে একটি সর্বসম্মত সংবিধানের ব্যাপারে সম্মত হতে পারবেননা। যেই ব্যর্থতার দায়ে নতুন নির্বাচনের দিকে দেশ এগিয়ে যাবে এবং ক্ষমতাও সেনাবাহিনীর কাছেই কুক্ষিগত থাকবে।” এই ভরসায় বয়স আমার বাড়ে না গাইতে গাইতে তাই ইয়াহিয়া খাল ইলেকশন এর ডাক দিলেন।
কিন্তু ১৯৭০ এর ৭ ই ডিসেম্বর এর নির্বাচন এর ফলাফল তার সব হিসাব উলটা পালটা কইরা দ্যায়। তিনি ভাবতেও পারেন নাই শেখ মুজিবুর রহমান এর দল এমন নিরংকুশ মেজরিটি পায়া যাবে। শুরু হয় বাংগালিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর নিয়া টালটি বালটি।
অপারেশন ব্লিটজ নিয়া বলার আগে একটা ঘূর্ণিঝড় এর গল্প বলি। ১১ই নভেম্বর ১৯৭০ মাঝরাতের ইতিহাস এর সবচেয়ে প্রলয়ংকারি ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানে দেশের উপকূলীয় জেলা গুলো তে। পরদিন কেবল তিনটি নেভাল বোট এবং একটি হসপিটাল শিপ হাতিয়া, সন্দীপ এবং অন্যান্য এলাকার উদ্দেশ্যে উদ্ধার কাজে গমন করে। প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান নভেম্বরের ১৬ তারিখ চীনে রাষ্ট্রীয় সফর স্থগিত করে পূর্ব পাকিস্তানে এসে দূর্গত এলাকার উপর দিয়ে বিমান থেকে উড়ে উড়ে দেখে যান। তিনি দূর্গতদের উদ্ধারে ঘোষনা দেন, “no effort to be spared”। তিনি সকল জায়গায় রাষ্ট্রীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখার নির্দেশ দিলেন, সেই সাথে শোক দিবস পালনের ঘোষনা দিলেন ২১ শে নভেম্বর। সাইক্লোন আঘাত হানার ৭ দিন পর!!
প্রায় ৪০ টি দেশের উদ্ধারকারী দল এদেশে এসে পৌছায় সাইক্লোনের ২ সপ্তাহের মধ্যে, জাপানী পার্লামেন্টে সমালোচনা হয় যথাযথ সাহায্য না পাঠাবার জন্য। যে কারনে আবারো জাপানী উদ্ধারকারী দল ত্রান এবং বিমান সহ এদেশে এসে পৌছায় ২ সপ্তাহের মধ্যেই। কিন্তু পাকিস্তানী বিমান বাহিনীর কোন বিমান প্রথম ত্রান কাজের জন্য উড্ড্যন করে সাইক্লোনের তিন সপ্তাহ পার হবার পর!!এজন্য বলা হয়, এটা বিশ্বের ইতিহাসের প্রথম সাইক্লোন যেটা একটা দেশের স্বাধীনতার আন্দোলনে স্ফুলিঙ্গের মত কাজ করেছিলো।
এই ঝড় এর পর দেশে পাকিস্তানি সামরিক আইন শিথিল ছিল। কিন্তু এদিকে ক্ষমতা হস্তান্তর নিয়া টাল বাহানায় জনগণ এর ক্ষোভ দিন দিন বাড়তেসিল। পাকিস্তানি জেনারেল রা এইটা উপলব্ধি করতে পারতাসিলেন যে শেখ মুজিব কে ক্ষমতা না দিয়া পার পাওয়া যাবে না।
ইয়াহিয়া খান সামরিক বাহিনীর সিনিয়র অফিসারদের নিয়া ২২শে ফেব্রুয়ারী Generel Head Quarter (GHQ) , রাওয়াল পিণ্ডি তে এক সভা ডাকেন। সেইখানে তিনি বলেন, “Kill three million of them and the rest will eat out of our hands.” এই সভাতেই ডিসিশন হয়, পূর্ব পাকিস্তানে আওয়ামী লীগ এর জায়গায় পাকিস্তান কেন্দ্রীয় সরকার এর নিয়ন্ত্রণ ফিরায় আনতে হবে এবং এই কাজ করবে সেনাবাহিনী। এই সব নীতিগত সিদ্ধান্তের উপর ভিত্তি কইরা দেওয়া নির্দেশ অনুসারে ঢাকার হেডকোয়ার্টার ১৮ ডিভিশন একটা অপারেশন প্ল্যান করে, যার নাম দেওয়া হয় “অপারেশন ব্লিটজ (Operation Blitz )”। এই প্ল্যান এ বলা হয় , যদি শেখ মুজিবুর রহমান এর সাথে সমস্যা নিরসন না করা যায় তাহলে কিভাবে কিভাবে সামরিক শক্তি প্রয়োগ কইরা পুরা দেশে সামরিক আইন এর প্রতিষ্ঠা করা হবে।
পাকিস্তান সেনাবাহিনী অপারেশন ব্লিটজ কে “ইন এফেক্টিভ” স্টেট এ আনার সময় আর পান নাই। ঘটনা এত দ্রুত আগাইতে থাকে যে এর চেয়ে কয়েক গুন ভয়ংকর অপারেশন সার্চ লাইট এর প্ল্যান করা হয়া যায়। অপারেশন সার্চ লাইট এর ডিটেইল প্ল্যানটা একটা সোর্স থেইকা পাইসি। ইনশাল্লাহ আগামী একটা লেখা এইটা নিয়া লিখত হইব।
তথ্য সূত্রঃ
বইঃ
উইটনেস টু সারেন্ডার – সিদ্দিক সালিক
বিহঙ্গের ডানা – মেজর কামরুল হাসান ভুঁইয়া
বিট্রেয়াল অফ ইস্ট পাকিস্তান – এ এ কে নিয়াজী
ইন্টারনেট এবং ব্লগঃ
http://en.wikipedia.org/wiki/Operation_Blitz
http://www.somewhereinblog.net/blog/snatcher/30024621
http://en.wikipedia.org/wiki/Operation_Searchlight