লেখার তারিখঃ এপ্রিল ২০, ২০১৫ । ১১.৩৫ পি.এম
আমি মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস পড়তে পড়তে এতই এক্সাইটেড যে আমার ইচ্ছা করতাসে এত গুলা পিচচি রে সামনে নিয়া ওদের এই সব গল্প শুনাই। বড় রা বাদ। বড় রা একটু পড়ে হাই তুলবে। বলবে এহ জানি এই সব। একি প্যান প্যানানি। ছোটদের ওই রিস্ক নাই। ওরা মজা পাইলেই হইল। সময় নষ্টের হিসাব করে না। যদি সত্যি সত্যি কিছু পোলাপাইন এর মুক্তিযুদ্ধ ১০১ ক্লাস নিতে পারতাম, তাইলে এরকম কিছু হইত হয়ত।
: ১৯৭১ সালে কি হইসিল বলতো?
–যুদ্ধোওওওওওওও।
: কি যুদ্ধ কে বলতে পারবে?
–মুক্তিযুদ্ধোওওওওও, আমি আগে বলসিইইই সার।
: হ্যাঁএএ , তুমি ফার্স্ট। আচ্ছা বলতো তার আগের বছর কি হইসিল?
–আগের বছর মানে?
: মানে ১৯৭০ সালে কি হইসিল
— অ। কি হইসিল? ঈদ? হি হি হি
: হ্যাঁ , ঈদ তো হইসিলোই, আরেকটা জিনিষ হইসিল?
— কি? কি?
: ১৯৭০ সালে ইলেকশন হইসিল
— তখনো ইলেকশন হইত?
: হ্যাঁ, হইতো তো
— কে জিতসিল? হাসিনা? নাকি খালেদা জিয়া? না এরশাদ? হি হি হি
: না না, তখন তো উনারা ছিলই না
— তাইলে কি হইসিল স্যার?
: আমারে স্যার বলবানা। ইথার ভাই বলতে পারো।
— হি হি এত বড় ব্যাডা রে ভাই বলব? হি হি। আঙ্কেল বলি?
: আচ্ছা বল
— ইলেকশন এ কি হইসিল আংকেল? কে জিতসিল?
: তখন তো দুইটা পাকিস্তান ছিল। পূর্ব পাকিস্তানে ইলেকশন এ জিতসিল শেখ মুজিবুর রহমান এর আওয়ামী লীগ আর পশ্চিম পাকিস্তানে জিতসিল জুলফিকার আলীর ভুট্টো এর পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি)
— আয় হায়, দুইজন জিতসিল? তাইলে মারামারি লাগে নাই?
: লাগসিল তো, মারা মারি ই তো লাগসিল। ওই মারা মারি তেই তো ১৯৭১ এর মুক্তি যুদ্ধ হইল।
— কেমনে মারামারি হইসিল ইথার আঙ্কেল? রেস্লিং এর মত? শেখ মুজিব আর ভুট্টোর মধ্যে রেস্লিং?
: হ, সেরম হইলে তো কত মানুষ বাইচা যাইত। কিন্তু না। পশ্চিম পাকিস্তান চায় নাই পূর্ব পাকিস্তান দেশ চালাক। তখন তো সংসদ ছিলনা। ছিল জাতীয় পরিষদ। এই পার্লামেন্ট এ মোট সিট ছিল ৩০০ টা। কয়টা?
— তিন শ টা সাআআআর, থুক্কু ৩০০ টা আংকেএএএল
: গুড। এই তিনশটার মধ্যে পূর্ব পাকিস্তানের সিট ১৬২ টা আর পশ্চিম পাকিস্তান এর সিট ১৩৮ টা। তাইলে মুট কয়টা হইল?
— এই কাম সারসে। অংক। এ এ এ আট আর দুই দশ, হাতে থাকলো এক… এ এ এ স্যার, মুট ৩০০ হয় স্যার।
: আবার স্যার! আচ্ছা যাই হোক। এই ১৬২ এর মধ্যে আওয়ামি লীগ পাইসে ১৬০ সিট আর ১৩৮ এর মধ্যে পিপিপি পাইসে ৮১ টা সিট।
— আংকেল একটা প্রশ্ন?
: হ্যাঁ হ্যাঁ, বল কি প্রশ্ন?
— আমি আংকেল আপনি বলার লগে লগে যোগ কইরা ফালাইসি। ১৬০ আর ৮১ যোগ করলে হয় ২৮১। সিট তো ৩০০, তাইলে বাকি গুলা কারা? মহিলা, শিশু ও প্রতিবন্ধী কোটা?
: হি হি ভাল প্রশ্ন করসো তো? আমি খুব খুশি হইসি। বাকিরা ছিল অন্যান্য দল আর সতন্ত্র । এখন বুঝসো?
— বুঝসি সাআআ… থুক্কু। আংকেএএল । তার পর কি হইল?
: ৩০০ এর মধ্যে ১৬০ ই আওয়ামী লীগ এর। তাইলে নিয়ম অনুসারে এরাই গভমেন্ট বানাইবো। কিন্তু কেরফা লাগাইলো ভুট্টো।
— ভুট্টো জানি কে?
: ভুট্টো হইল পিপিপি এর চেয়ারম্যান । পশ্চিম পাকিস্তান এর লোক
— এই লোক ক্যান কেরফা লাগাইল?
: বাংলাদেশ মানে তখন কার পূর্ব পাকিস্তান রে ছোট চোখে দেখা পশ্চিম পাকিস্তানের রক্তে মিশা গেসিল। ওদের শিখানোই হইসে অমনে যে পূর্ব পাকিস্তান মানে নিচু জাত। ভুট্টো ভাবলো, নিচু জাত আমাদের গভমেন্ট হবে? আমাদের শাসন করবে? কভি নেহি।
— কিরম হিংসুইট্যা লোক ভুট্টো । আমরা জিতছি আর আমাগো দিব না? এই হিংসুইট্যা কইল আর সবাই তার কথায় নাচলো?
: নাহ, খালি পশ্চিম পাকিস্তানী নেতারা আর সামরিক বাহিনী লোকেরাই নাচসিল।
— কি হইল তারপর?
: আওয়ামী লীগ এর “৬ দফা দাবী” বইলা একটা জিনিষ ছিল। তারা বলসিল তারা এই “৬ দফা”য় যা যা আসে তার উপর বেজ কইরাই দেশ চালাবে। আর ভুট্টো বলসিল, “৬ দফা” য় পশ্চিম পাকিস্তান রে কোন বেইল দেওয়া হয় নাই। তাই এই ৬ দফা লওয়া পুরা দেশ চালানির কথা ভাবলে, শেখ মুজিব কে ক্ষমতা দেওয়া হবে না
— এহ ক্ষমতা দিবে না মানে। এইটা কি ওর আব্বুর টাই যে দিবে না
: সেটাই তো । আর চিন্তা কর এতদিন পশ্চিম পাকিস্তানে বইসা উনারা পূর্ব পাকিস্তান চালাইসেন, তখন কিন্তু এই সব যুক্তি বলে নাই কিছু। এখন যেই ক্ষমতা নিয়া টান পরসে তখন এই সব ভুং ভাঙ বলতাসে।
— জি ইথার আংকেল ঠিক বলসেন। ক্ষমতা লওয়া চুদুর বুদুর শুরু করসে ভুট্টো।
: হ। ঠিক। কিন্তু এই সব ব্যাপার তো আর গলার জোরে হয় না। তাই অনেক অনেক চেষ্টা চললো মীমাংসা করার। প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান দুই দল এর সাথে অনেক বার আলোচনায় বসলেন। কিন্তু কোণ সমাধান আসলো না।
— ছার, ইয়াহিয়া খান ক্যাডা? শাহরুখ খান এর দাদা?
: না না
— শাহরুখ খান এর নানা?
: আরে না ব্যাডা, হপ । শুন আগে। ইলেকশন এর আগের বছর মানে ১৯৬৯ সালের ২৫ শে মার্চ আইয়ুব খান রে সরাইয়া ইয়াহিয়া খান আসছিল ক্ষমতায়। উনি আইসা দেশে মিলিটারি শাসন চালু করসিল। কিন্তু বলসিল মিলিটারি শাসন স্থায়ী কিছু না। সামনে নির্বাচন হবে। তারপর জনগণের প্রতিনিধি দের কাছে ক্ষমতা বুঝায় দিয়া উনি বিদায় লইবেন।
— ওহ, আংকেল, এডি শুইন্ন্যা যুইত পাইতাসি না। যুদ্ধের গল্প কন
: আজকে এক্টু যুদ্ধ লাগার আগের গল্পটা বলি। আরেকদিন যুদ্ধের সময়ের গল্প বলব নে।
— হয় হয়। কন। আপনের যেমনে সুবিধা। আমরা তো এম্নেও ইমাজিনারি ইস্টুডেন্টস। তারপর কি?
: ভুট্টো বিভিন্ন টালটি বালটি করতাসিল যাতে পার্লামেন্ট এর অধিবেশন না বসতে পারে। কারণ বসলেই তো হের লস। বিরোধী দলীয় নেতা হইতে হবে। ইয়াহিয়া খান ও আলোচনা কইরা যে কোন সুবিধা করতে পারতাসে না এই টা পশ্চিম পাকিস্তান এর সামরিক শাসক রা ঠিকই বুঝতাসিলেন। তাই তারা নিজেরা নিজেরা পূর্ব পাকিস্তানের মানুষ দের মিলিটারি দিয়া ক্যামনে টাইট দেওয়া যায় তার প্ল্যান ফাইনাল করার কাজ শুরু করলেন।
এর পরে যেদিন মুক্তিযুদ্ধ নিয়া লিখবো সেদিন দুইটা মিলিটারি অপারেশন এর প্ল্যানিং এর কথা বলব। দুইটাই পাকিস্তান আর্মির করা। একটা হইল Operarion-Blitz যেইটার প্ল্যান ফাইনাল করা হইসিল ২২শে ফেব্রুয়ারি, ১৯৭১ আর ইতিহাসের অন্যতম গণহত্যার পরিকল্পনা ওরফে Operation-Search Light যেইটার প্ল্যান ফাইনাল হইসিল ২০শে মার্চ, ১৯৭১।
আজকে এই পর্যন্তই থাক। তোমরা বাসায় যাও গিয়া। আমি কিছু করতে বলতাসি না তোমাদের। নো হোম ওয়ার্ক। যদি এগুলা সত্যি ই বুকের ভিতর আগুন ধরায় তাইলে এর পর থেইকা দেশ কে বুকের মধ্যেই অনুভব করতে পারবা, এত কষ্টে পাওয়া দেশ এমনি এমনি অন্যদের হাতে তুইলা দিবা না, দেশ নিয়া আর ডিপ্রেশন এ ভুগবা না আর জাতীয় সংগীত শুনলে এমনেই দাঁড়াইয়া যাবা। কারোর জন্য অপেক্ষা করা লাগবে না।