৪৬/৩৬৫

লেখার তারিখঃ এপ্রিল ১৪, ২০১৫ । ৮.৩৯ পি.এম

শেষ হইল। কারো পহেলা বৈশাখ, কারো ১লা বৈশাখ। তবু আসা করতাসি দুই দল এরই দিন শেষে মাথার উপর ছাদ আছে, পেটে ভরপেট খাবার আছে, নিউজফিড ভরতি লুকজন এর ছবি আছে।

আমি সারাদিন বাসাবো বাসায় খাটের এক কুনায় বালিশ দিয়া এক্টা পাহাড় বানায়া পাহাড়ে হেলান দিয়া ছিলাম। ফেসবুক নামের জানালা টায় উকি দিসি। লোকজন দেখসি। বেড়াইতে বাইর হইসে, ঘুম থেইকা উঠসে, কুন্টা আসল নববর্ষ জানানোর সময় তা নিয়া গিয়ান বিতরন করতাসে, কষ্টের স্টেটাস, আনন্দের স্ট্যাটাস।

আমার যেই বন্ধুর প্ল্যান কেন্সেল হইসে বইলা মন খারাপ ছিল তাদের দেখলাম দুপুরের পর আবার ঠিক ঠাক হয়া গেল, ওরা এখন লজ্জা লজ্জা মুখে ঘুরাঘুরি করতে বাইর হইসে সন্ধ্যাবেলা।

আমি মুক্তিযুদ্ধ নিয়া পড়া শুরু করসি। সারাদিন অইটাই পড়সি। আমাদের কাছে মুক্তিযুদ্ধ ব্যাপারটা কচলাইতে কচলাইতে এত বোরিং বানায় ফেলা হইসে। আমরা সবাই মোটামুটি জানি মুক্তিযুদ্ধে কি হইসিল। কিন্তু এর আগে এবং পরে যে কত এক্সাইটিং সব ডিটেইল আছে, অগুলা আমাদের জানানোই হয় নাই।

আমি মাত্র ৩য় অধ্যায়ে আসি বইটার (বিহঙ্গের ডানা-মুক্তিযুদ্ধে বিমান বাহিনীর ইতিহাস) কিন্তু তাতেই এক্টু পর পর রক্ত গরম হয়া যাইতাসে। আমি জানতাম না ৭ই মার্চ এর ভাষনে বার বার আলোচিত লাইন গুলা ছাড়াও আরো অনেক এক্সাইটিং লাইন আছে, যেমন বংগবন্ধু পাকিস্তানী শাসক দের নীতি নিয়া বলসেন, “আমরা গুলি খাই, দোষ আমাদের, আমরা বুলেট খাই, দোষ আমাদের”

আমি জানতাম না ১৯৭১ এর ১৪ই মার্চ শেখ মুজিব দেশের শাষন ভার নিজ হাতে তুইলা ন্যান। বহুত হইসে, পাকিস্তান মুরি খাউ, আমাদের দেশ আমরাই চালাবো এই এটিচিউড নিয়া উনি ৩৫ টা স্পেসিফিক নির্দেশ দ্যান। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কি করবে, ব্যাংক কি করবে, বন্দর কি করবে, পুলিশ রা কি করবে, এইরকম ৩৫ টা আদেশ। বংগবন্ধু কে এগুলা প্রনয়োন করে দেন তাজউদ্দিন আহমেদ। আর এইটা নিয়া কোন আজাইরা ফাপর কেউ ন্যায় নাই। সবাই এক হয়া মাইনা নিসিলেন।

আমি জানতাম না, তখন বলা হইসিল পাকিস্তান সরকার কে আমরা কোন ট্যাক্স দিব না। দেশ এর এক টাকাও আর পাকিস্তান এ যাবে না। এমন কি বিদেশি প্রতিষ্ঠান গুলাকে বলা হইসিল, সরি, ইউ আরন্ড ইট হেয়ার, ইউ উইল স্পেন্ড ইট হেয়ার। ( এই বাক্যটা আমি বানায় লিখসি, আসলে বলা হইসিল, বিদেশি প্রতিষ্ঠান এর আয়কৃত অর্থ বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা রাখতে হবে)

যদি সুযোগ থাকতো আমি মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ে এক্টা মাস্টার্স কোর্স এ ভর্তি হয়া যাইতাম। কিন্তু আমাদের মুক্তিযুদ্ধ নিয়া কোন সাব্জেক্ট ই নাই কোথাউ।

পুরা ইতিহাস টাকে গেম এর মত লেভেল এ ভাগ কইরা ফালানো যাইতো। প্রত্যেক লেভেল এর পর এক্টা পরীক্ষা আর পাস করলে পরের লেভেল এ পড়ার সুযোগ।

আর এইটা অবশ্যই একাডেমিক শিক্ষার বাইরে থাকবে। যার ইচ্ছা হবে পড়বে, ইচ্ছা না হইলেও ব্যাপার না। কিন্তু পাশের বন্ধু যখন মুক্তিযুদ্ধ লেভেল টেন কোয়ালিফাইড ব্যাজ লাগায় ঘুরবে তখন নিজেই গিয়া চুপি চুপি ভর্তি হয়া আসবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *