৩৭/৩৬৫

লেখার তারিখঃ এপ্রিল ৫, ২০১৫ । ১১.৪৮ পি.এম

আসেন একটা গল্প শুনি। একটা সত্যি ঘটনা। একটা প্লেন হাইজ্যাক এর কাহিনী। এই টা কোন সাধারন হাইজ্যাক না। এইটা একটা বিশাল বড় ফ্যাক্টর ছিল আমাদের মুক্তিযুদ্ধে। সব তথ্য এক জায়গায় ছিল না। তথ্য সূত্র গুলো লেখার শেষে দিয়ে দিলাম।

৩১ শে জানুয়ারি, ১৯৭১। ভারত অধ্যুশিত কাশ্মীর এর শ্রীনগর থেকে টেক অফ করে ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্স এর একটি এফ-২৭ ফকার ফ্রেন্ডশীপ বিমান (Fokker F27 Friendship)। বিমান টার নাম ছিল “গঙ্গা” রেজিস্ট্রেশন VT-DMA ।  গন্তব্য জম্মু। মোট যাত্রী ছিলেন ২৮ জন আর বিমান এর পাইলট সহ ক্রু ৪ জন।

যাত্রী দের মধ্যে ছিলেন বি এস এফ সদস্য হাসীম কোরেইশি এবং তার কাজিন আশরাফ ভাট। উড্ডয়নের এর কিছুক্ষণ এর মধ্যেই ইনারা একটি পিস্তল এবং একটি গ্রেনেড এর সাহায্যে বিমানটির দখল ন্যান এবং পাইলট কে বাধ্য করেন বিমান টি কে পাকিস্তান এর দিকে উড়িয়ে নিতে।

হাইজ্যাকার দের কথা মত পাইলট বিমানটি কে লাহোর আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে অবতরন করান। হাইজ্যাকারদয় নিজেদের কে Jammu and Kashmir Liberation Front (JKLF) এর সদস্য বলে পরিচয় দ্যায় এবং কাশ্মীর এ বন্দি এই সংগঠনের ৩৬ জন সদস্য কে মুক্তি না দেওয়া পর্যন্ত সকল যাত্রী কে জিম্মি করে রাখার ঘোষণা দ্যায়।

কিছুক্ষণের মধ্যে লাহোর বিমানবন্দরে আসেন তৎকালীন সেনা শাসক ইয়াহিয়া খান এর পররাষ্ট্র মন্ত্রি জুলফিকার আলী ভুট্টো। তিনি সংবাদ সম্মেলন করে হাইজ্যাকার দুজন কে “জাতীয় বীর” হিসেবে ঘোসনা করেন। তারপর তিনি রাওয়ালপিন্ডি চলে যান এবং ২রা ফেব্রুয়ারী এসে হাইজ্যাকার দুজন এর সাথে এক বৈঠক এ মিলিত হন। বৈঠক এর পর তারা সকল যাত্রী এবং ক্রু দের মুক্তি দ্যান কিন্তু বিমান টিকে নিজেদের দখল এ রেখে দ্যান। সকল যাত্রী এবং ক্রু কে বাই রোড এ অমৃতসর নিয়ে যাওয়া হয়।

তারা নিরাপদে পৌছেছেন খবর আসার পর, ঐ রাতেই হাইজ্যাকার দুজন “ভারত তাদের দাবী অনুযায়ী বন্দী দের মুক্তি দ্যায় নি” এই ঘোষনা দিয়ে টিভি ক্যামেরার সামনে আনুষ্ঠানিক ভাবে বিমান টিতে অগ্নি সংযোগ করে এবং বিস্ফোরক দিয়ে বিমানের মাঝ বরাবর উড়িয়ে দ্যায়।

 

এই সময় পাকিস্তানী নিরাপত্তা রক্ষি দের ভূমিকা সারা বিশ্ব কে বিস্মিত করে।  জুলফিকার আলী ভুট্টো সহ বেশ কয়েকজন পশ্চিম পাকিস্তানী নেতা এই ঘটনা কে সমর্থন করে বিবৃতি দান করেন।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান ৩রা ফেব্রুয়ারি সংবাদপত্রে বিবৃতির মাধ্যমে বলেন,

“ লাহোরে ভারতীয় বিমানটি বিস্ফোরক দিয়ে উড়িয়ে দেয়া হয়েছে শুনে আমি বিস্মিত হয়েছি। বিমানটি অপহরন হয়তোবা একটি ঘটনা প্রবাহের পরিণতি, কিন্তু পরবর্তী পর্যায়ে বিমানটিকে উড়িয়ে দেয়ার ঘটনা আসলেই নিন্দনীয়। “

ভারত এই ঘটনায় তিব্র ভাবে নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করে । ৩রা ফেব্রুয়ারি ভারত তার আকাশ সীমার উপর দিয়ে পাকিস্তানি সামরিক বিমান চলাচল এবং পরের দিন ৪ ঠা ফেব্রুয়ারি থেকে সামরিক এবং বেসামরিক সব ধরনের পাকিস্তানি বিমান চলাচল নিষিদ্ধ ঘোষণা করে।

এই নিষেধাজ্ঞা সমগ্র মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময় পর্যন্ত বলবত ছিল। ফলে পাকিস্তানি সকল বিমান কে শ্রীলঙ্কা হয়ে ঘুরে আস্তে হতো। যা একটা যুদ্ধ কালীন সময়ে খুবি গুরুত্ব পূর্ণ ফ্যাক্টর। মুক্তিযুদ্ধে আকাশ পথের যুদ্ধে এই হাইজ্যাক এর ঘটনা তাই একটি মোড় ঘুরিয়ে দেওয়া ঘটনা বলে বিবেচিত হতেই পারে।

এই ছিল কাহিনী। এই পর্যন্ত ঘাটা ঘাটি কইরা থাইমা গেলেই হইত। কিন্তু আমি এট্টূ বেশি বুজি তো তাই মনে হইল আরেকটু ডিটেইল জানা দরকার। ঘাটতে গিয়া কিছু আক্কেল গুরুম করা তথ্য পাই যা নিচে দেওয়া হইলঃ

১। VT-DMA (যে বিমান টা হাইজ্যাকড হইসিল) কে সারভিস থিকা অবসর এ পাঠানো হইসিল । কিন্তু হাইজ্যাক এর ঘটনার কয়েকদিন আগে একে আবার সারভিস এ আনা হয় এবং এই রুট এ দেওয়া হয়।

২। আশরাফ ভাট নামে যে হাইজ্যাকার ছিল সে ছিল ইন্ডিয়ান বি এস এফ এর সদস্য। কেন বিএসএফ এর সদস্য বিমান ছিনতাই এর মত ঘটনায় জড়িত হইল তার জবাব এ তৎকালীন ডেপুটি ইন্সপেক্টর জেনারেল অফ বিএসএফ (জম্মু) বলেন, আশরাফ ভাট এর বি এস এফ এর যোগদান নিয়া তার অব্জেকশন ছিল কিন্তু “ঊর্ধ্বতন গোয়েন্দা সংস্থা” এর সুপারিশে তাকে নেওয়া হয়।

৩। পাকিস্তান এই দুই হাইজ্যাকার কে “জাতীয় বীর” ঘোষণা করলেও পরবরতিতে মিডিয়ার ফোকাস কমে যাওয়ার পর তাদের কে “ইন্ডিয়ান স্পাই” হিসাবে গ্রেফতার করা হয়। এবং বন্দি বিনিময় চুক্তি তে তাদের ভারত এ ফেরত পাঠানো হয়।

৪। তারা ভারত এ ফেরত আসার পর ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা তাদের জিজ্ঞাসাবাদ এর জন্য গ্রেফতার করে এবং তার পর তাদের কোন হদিস আমি ইন্টারনেট ঘাইটা পাই নাই।

 

তথ্য সুত্রঃ

বইঃ

বিহঙ্গের ডানা – মেজর কামরুল হাসান ভুইয়া, ২০১২

My Years With IAF – Former Indian Air Chief Marshal Pratap Chandra Lal, 1986

ইন্টারনেটঃ

1971 Indian Airlines hijacking

http://en.wikipedia.org/wiki/1971_Indian_Airlines_hijacking

Looking beyond the obvious

http://sandywriter.blogspot.com/2009/12/looking-back-at-history-hijack-of.html

Chronology of aviation terrorism: 1968-2004

http://www.skyjack.co.il/chronology/

 

ছবি কৃতজ্ঞতা

Qaiser Ansari : History of PIA

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *