১৫/৩৬৫

লেখার তারিখঃ মার্চ ১৪, ২০১৫

 

“Out beyond ideas of wrongdoing

and rightdoing there is a field.

I’ll meet you there.

When the soul lies down in that grass

the world is too full to talk about.”

 

— Rumi

 

Somewhere over the rainbow way up high

There’s a land that I heard of once in a lullaby

Somewhere over the rainbow skies are blue

And the dreams that you dare to dream really do come true

 

— Cole Porter, Harold Arlen, E. Harburg

 

If all these poets are not trying to sell luxury real estate, then there has to be some place beyond this miserable life where everyone is happy. Pardon me, but I don’t want to live where everyone is happy. Because that will be, another replica of this very world.

 

আজকে আমি হিন্দি সিনেমা “রকস্টার” দেখসি। অনেক ফিল্মি অনেক ড্রামা এজ ইউজুয়াল। যদিও আমরা কখনোই রকস্টার টাইপ এর নেম এন্ড ফেম এর মধ্যে দিয়া যাই নাই। কিন্তু ছোট্ট এই জীবনে যতটুকুর স্বাদ পাইসি, তা চিন্তা কইরাই বাকি জীবন কাটায় দেওয়া যায়।

 

রিজুর সাথে আমার পরিচয় হয় ১৯৯৯ সালে। নটরডেম কলেজ এ। রিজু ছিল পিয়াস এর ক্লাসে। পিয়াস আর আমি এস এস এসির পর কিছুদিন গিটার শিখসিলাম শুইনা ও আগ্রহ নিয়া কথা বলতে আসে। তারপর বাইর হয় ও আরো ওস্তাদ গিটার বাজায়। শুরু হয় নটর ড্যাম এর বকুল তলায় সময় পাইলেই গিটার নিয়া বইসা পড়া। খাতায় কর্ড লিখা নিয়া আসা আর বাসায় আইসা ওগুলা বাজানোর চেস্টা কইরা গুজ বাম্প হওয়া। আমরা একটা ব্যান্ড ও বানাইসিলাম তখন। নাম X’s । X দের ব্যান্ড। তখন X men বইলা কিছু চিনতাম না আমরা। নাইলে হয়তো ওই নাম ই দিতাম। গান ও যে লেখা যায় আর সেইটাতে সুর দিলে বেশ একটা উত্তেজনা হয় সেইটা মাত্র শিখসি তখন। কবিতা লিখতাম তো আগেই। তাই কবির হঠাত ইচ্ছা হইল এইবার কবিতায় সুর বসুক।

 

X’s প্রথম শো করে নিলখেত এর আই,সি,এম,এ অডিটোরিয়াম এ। তাও সেই শো নিয়া কত কাহিনী। রিজুর সাথে গ্যাঞ্জাম অনেক পোলাপান এর। শো এর পর ওরা তারে পিডাইব আগেই থ্রেট দিয়া রাখসে। আমরা কি এডি ডরাই তখন? আমরা তখন নিজেই নিজেরে ভাইবা নেওয়া রকস্টার ।

 

আমি জীবনে প্রথম রেকর্ডিং স্টুডিও দেখি এইচ এস এসি পরীক্ষার পর পর। ২০০১ সালে। তখন এরকম ঘরে ঘরে স্টুডিও করার মত প্রযুক্তি আসে নাই বাংলাদেশ এ। আমাদের কারোর ই দামী কম্পিউটার, সাউন্ড কার্ড ছিল না। তাই গান রেকর্ড করতে হইলে রেকর্ডিং স্টুডিও ছাড়া গতি নাই। রেকর্ডিং হইতো টেপ এ। ডিজিটাল তখনো আসে নাই। সব ই ম্যানুয়াল কনসোল স্টুডিও।

 

সবাই তখন বুয়েট, মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা নিয়া ব্যাস্ত। আমি আর রিজু ব্যাস্ত গান বানাইতে। একটা ফোক গান লিখসিলাম, “তোমায় দেখিয়া”। X’s এর শো গুলাতে চরম হিট ওই গান। আমরা গাওয়া শুরু করলে ওডিয়েন্স সাথে সাথে গায়। ততদিন এ আমি আই,ইউ,টি তে শো করসি, টি, এস, সি তে শো করসি। লালমাটিয়া তে শো করসি। বাসায় কিছু জানে না। ফেসবুক নাই, তাই ফ্রেন্ড রাও কিছু জানে না।

 

রিজু বল্ল চল “তোমায় দেখিয়া” টা রেকর্ডিং কইরা ফালাই। আমি ভাব্লাম কেসেট প্লেয়ার এর লাল বাটন এ টিপ মাইরা রেকর্ড করবে। স্টুডিও তে ঢুকার পর বুঝলাম, আমি কত বেকুব।

 

আমরা গেসিলাম মগবাজার এর মিউজিক ম্যান স্টুডিও তে। মাত্র কলেজ পাশ দিসি। নাকের নিচে হাল্কা হাল্কা মুস উঠসে। কিন্তু তাতেও কেউ তখনও গোনার মধ্যে ধরার মত কিছু মনে করে না। দলছুট মাত্র তাদের “হৃদয়পুর” এল্বাম রিলিজ করসে। বাপ্পা আর সঞ্জিব্দা ব্যাপক হিট। আর আমরাও তখন ফোক ছাড়া মিউজিক ইন্ড্রাস্টির গতি নাই এই মন্ত্রে বিশ্বাস করা শুরু করসি।

 

স্টুডিও তে ঢুইকা দেখি বাপ্পা দা বইসা আসে। আমাদের দেইখা চারু ভাই (ত্রি রত্নের খ্যাপা) বল্ল, কি চাই? রিজু বলল, ভাইয়া আমি ফোন করেছিলাম। অমুক এর রেফারেন্স এ আসছিলাম। চারু ভাই বলল, ও আচ্ছা আচ্ছা। বাপ্পা দা এরা একটা গান করতে চায়। জীবনের প্রথম রেকর্ডিং।

 

বাপ্পা দা বলল, বাহ, বেশ বেশ, শোনাও তো। রিজু একস্টিক গিটার টা ভয়ে ভয়ে কোলে নিয়া প্রথম ভারস টা গাইল। বাপ্পা দা কোরাসের সময় থামায় দিয়া বলল, ভাল, চর্চা করতে থাকো। আমার দিকে তাকায় বলল, তুমি কি বাজাও? আমি নারভাস হয়া সাদা হয়া গেলাম আর কোন মতে বললাম, না দাদা, মানে দাদা, আমি লিখি, এই গান্টা আমার লেখা। বাপ্পা দা নির্লিপ্ত চেহারাতেই বলল, চমৎকার লিরিক্স। আরো দুটো অন্তরা লাগবে। লিখে ফেলো। আমি থান্ডারস্ট্রাক হয়া বইসা থাকলাম।

 

বাপ্পা দা চইলা যাওয়ার পর চারুদার সাথে আলোচনা অনেকটাই মিউজিক রিলেটেড হয়া গেল। ড্রামস টেক, স্যামপ্লিং, ট্র্যাক বানানো এই সব নিয়া আলোচনা হইল। উনার পুরাই আকাশ থেইকা পড়ার অবস্থা যখন শুনলো যে আমাদের কোন ড্রামার নাই, কি বোরডিস্ট নাই ইভেন ইলেক্ট্রিক গিটারও নাই। আর আমরা একটা একোস্টিক গিটার নিয়া গান রেকর্ডিং করতে আইসা পড়সি।

 

আমি ভাবসিলাম ঘার  ধাক্কা দিয়া বাইর কইরা দিবে। কিন্তু না। উনি আমাদের স্টুডিও সেশন আর্টিস্ট যোগার কইরা দিলেন, ড্রামার, কি বোরডিস্ট সবই যোগার হইল। গিটার আর ভোকাল রিজু কাভার করবে। আমি কিছু বাজাবো না। স্টুডিও রেকর্ডিং তো ফাইজলামি না, ভুল ভাল বাজাই যদি? তাই আমি অফ গেলাম।

 

কথা হইল, ড্রামার ট্র্যাক তৈরি কইরা রাখবে, আমরা কালকে আইসা গিটার আর ভোকাল টেক দিয়া যাব। কি বোরডিস্ট পরে পুরাটা বুইঝা, বাজায় দিয়া মিক্সিং মাস্টারিং কইরা দিবে।

 

পরের দিন আবার দৌড় দৌড় স্টুডিও তে। কিন্তু ড্রামার যেই ট্র্যাক বানাইসে তাতে আক্কেল গুরুম অবস্থা। মনে হইতাসে এখনি ডলি সায়ন্তনি গান গাওয়া শুরু করবে। কাসার ঠাস ঠাস, ডিজিটাল ড্রামস এর কাঠ কাঠ আওয়াজ। পুরাই ডিজেস্টার অবস্থা। রিজু দেখি এইটাতেই রাজি হয়া যাচ্ছিল। জীবনে প্রথম বারের মত আমি সাহস কইরা বললাম, দোস্ত, আমরা যে রকম চাইতাসি এইটা সেই রকম না। এরকম আগলি পপ ড্রামস এ তুই গান ডা করিস না। রিজু সাথে সাথে মাইনা নিল। ও নিজেও আসলে বুঝসিল এইটা, কিন্তু ড্রামার আবার কি মনে করে তাই কিছু বলে নাই।

 

আমরা আধা ঘন্টা ধইরা ড্রামার রে বুঝাইলাম যে আমরা গান্টা তে একটা একোস্টিক ড্রামস এর ফিল চাচ্ছি। এই রকম ডিজিটাল ডিষ্টিং ডিষ্টিং না। ড্রামার খুবি প্রফেশনাল ছিল। সে ঘন্টা দুই এর মধ্যে চরম একটা ড্রামস ট্র্যাক বানাইলো যেইটা শুনলে আসলেই বুঝার উপায় নাই যে এইটা একোস্টিক ড্রামস না। কি বোরড বাজাইসিল তখনকার চাইমস ব্যান্ড এর কি বোরডিস্ট (উনার নাম ভুইলা গেসি) । সন্ধায় আমাদের রেকর্ডিং শুরু হইসিল আর শেষ হইসিল রাত ৩ টায়। তৈরি হইল, “তোমায় দেখিয়া”। এই গান টা আমরা কোন এল্বাম এ দেই নাই। এইটা ছিল পুরাপুরি ই নিজেদের শোনার জন্য নিজেদের গান।

 

 

বাসায় অনেক ভুং ভাং হাবিজাবি বইলা বাইরে থাকার পারমিশন যোগার কইরা, ভর্তি পরীক্ষার টেনশন বাদ্দিয়া, রেকর্ডিং কইরা রাত ৩ টায় আমরা যখন মগবাজার থেইকা রিজুদের গ্রিন রোড এর বাসায় ফিরতাসিলাম তখন মনে হইতাসিল, কেউ জানবেনা কিন্তু আমরা আজকে নিজেদের থেকেও বড় কিছু একটা কইরা ফালাইসি।

 

এই ফিলিংস টা এরপর আরও অনেক বার আসছে। আইকন্স এর এল্বাম রেকর্ডিং জীবন পাল্টায়া দেওয়ার মত একটা ঘটনা ছিল। কিন্তু সেই গল্প আরেকদিন ।

One Reply to “১৫/৩৬৫”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *