১১/৩৬৫

লেখার তারিখঃ মার্চ ১০, ২০১৫

আমাদের অনেক বিজয় বাকি ছিল। বিজয় এর প্রস্তুতি নেয়া ছিল। অনেক শব্দ, অনেক বাক্য, অনেক আলো তৈরি করা ছিল। কথা ছিল বিজয় আসলেই সব নিয়ে রাস্তায় নেমে যাওয়া হবে। তারপর সবাইকে দেখানো হবে জিতে গেলে আমরা কত খুশি হই।

 

আমরা হেরে গেছি বার বার। কিন্তু চোখ মুছে বলেছি, না। পরাজয় আমাদের হলেও, পরাজিত আমরা হইনি। শুধু বন্ধুকে “দোস্ত জিতে গেছি” বলে জড়িয়ে ধরাটা পিছিয়ে গেছে। ছোট মেয়েটার লাল সবুক ফ্রক টা ইস্ত্রি ভেঙ্গে আর বের করা হয় নি। অফিসের বস রা হাসি হাসি মুখে বলেনি, কি, বাংলাদেশ তো জিতে গেল, মিষ্টি গুলা কি দোকানেই থাকবে?

 

আমরা প্রতিনিয়তই ঘরে বাইরে হেরে যাই। কিন্তু আমাদের বিজয় মিছিলের রিহার্সাল থামে নি তাতে একবারো।

 

তাই সত্যি সত্যি যখন জেতা টা আসে, আমাদের সব জমানো আনন্দ কল কল করে বের হয়ে আসে। কারো মুখ দিয়ে, কারো উদ্দাম নৃত্য দিয়ে, কারো লেখা দিয়ে, কারো শুন্যে ছুড়ে দেয়া মুঠো করা হাত দিয়ে, আর কারো শুধুই চোখের নোনতা আনন্দাশ্রু দিয়ে। বিদেশিরা ভুরু কুচকে তাকিয়ে ভাবে, এরা এমন করছে কেন? হাউ খ্যাত।  “ক্লাস গেলো, ক্লাস গেলো, বলে, একি আজিব কারখানা” শুরু হয়। রমিজ রাজা রা তাদের চড় খাওয়া মুখ নিয়ে মিনমিন করে বলার চেষ্টা করে, “লাইক পাকি”স্তনি” পিপল, বাংলাদেশি পিপল লাভস টু সেলিব্রেট দেয়ার ক্রিকেট”। আর আমরা “পাকিভাড় এর মুখে গুপ্তকেশ এর অভাব” দেখে হেসে রুম ফাটাই।

 

আমাদের এসব দেখার টাইম আছে তখন? আমাদের তখন পায়ের নিচে মাটি আর বুকের ভেতর মাটি মাটি গন্ধ। বিদেশের মাঠকে আমরা বর্ষাকাল এর উঠোন বানিয়ে কাঁদা জলে গড়াগড়ি খাই। চেনে না জানে না, নামাজ পড়তে গেলে অপমান করে, তবু জাতীয় দল এর একজন প্লেয়ার গ্যালারি তে দৌড়ে গিয়ে শুধু আমার দেশ এর ভাই বলে আরেক বাংলাদেশি দর্শক কে জড়িয়ে ধরে। হয়তো কানে কানে বলে দেয়, জিতে গেছি ভাই, মাকে বলিস, জিতে গেছি।

 

বাংলাদেশ ক্রিকেট দল কে আমাদের স্বপ্ন পূরণের জন্য অভিনন্দন, আমাদের বিজয়ী বানানোর জন্য অভিনন্দন।

 

এই ১১ নম্বর নোট এ সেই ১১ জন এর জন্য লিখতে পেরে গর্বিত বোধ করছি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *