৩০১/৩৬৫

লেখার তারিখঃ মে ১০, ২০১৮, ৫:৫৪ পি এম

এই লেখাটা বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট নিয়ে। সরকারি মালিকানাধীন এবং জনগণের টাকায় বসানো প্রথম স্যাটেলাইট। আমি জানি অনেক বড় লেখা দেখলে আমাদের অনেকের লেখার আগ্রহ মরে যায়। ফেসবুক এর কল্যাণে আমরা এখন মাইক্রো কন্টেন্ট ছাড়া কিছু পড়তে চাই না। তাদের জন্য শুধু এই লেখার মূল কথা অংশ টা পড়লেই চলবে। ৩য় প্যারাগ্রাফ থেকে আমি যতটুকু সম্ভব খুঁটিনাটি বিষয় গুলো ডিটেইলে লেখার চেষ্টা করবো। লেখার সব তথ্য সূত্র লেখার শেষেই দেয়া আছে। আশা করছি আমি যে অসম্ভব আনন্দ নিয়ে বিষয় গুলো জেনেছি সেগুলো সহজ ভাবে লিখতে পারলে পাঠক ও সেই আনন্দের ভাগ পাবেন। আমি মহাকাশ বিজ্ঞানী নই। যা কিছু জেনেছি, বুঝেছি সব এই সম্পর্কে তীব্র আগ্রহ থেকেই। তাই যারা এই লেখাটাকে আরও তথ্য দিয়ে সম্বৃদ্ধ করতে আগ্রহী হবেন তারা অনুগ্রহ করে কমেন্ট এ বললে তা এই লেখার সাথে সশ্রদ্ধায় সংযোজিত করা হবে।

মূল কথাঃ

সব কিছু ঠিক থাকলে নতুন সম্ভাব্য সময় অনুযায়ী (স্পেস মিশনে এটাকে বলে New Estimated Time, NET) এই বছরে অর্থাৎ ২০১৮ এর মে এর ১১ তারিখ রাত ২ টা ১২ তে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রন কমিশন (Bangladesh Telecommunication Regulatory Commission – BTRC) এর মালিকানাধিন ৩.৫ মেট্রিক টন (৩৫০০ কেজি) ওজনের বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট টি বাংলাদেশের প্রথম জিওস্ট্যাশোনারি (Geo stationnary) যোগাযোগ উপগ্রহ হিসেবে ইলন মাস্ক (Elon Musk) এর স্পেস এক্স (SpaceX)কম্পানির একটি ফ্যালকন ৯ (Falcon 9) রকেট এর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের কেনেডি স্পেস সেন্টার এর লঞ্চ সাইট LC-39A থেকে যাত্রা শুরু করবে তার অরবিট (Orbit) এর দিকে। ২০১৫ সালের নভেম্বর এর ১১ তারিখে ওর্ডার করা এই স্যাটেলাইট টি তৈরি করেছেন ফ্রান্স-ইটালির কোম্পানি থেলেস আলেনিয়া (Thales Alenia )।টার্ন কি সিস্টেম এ প্রজেক্টটির প্রাইম কন্ট্রাক্টর থেলেস আলেনিয়া এর দায়িত্ব এর মধ্যে আছে ডিজাইন, প্রোডাকশন, টেস্টিং এবং অরবিট এ স্যাটেলাইটটি ডেলিভারি। এছাড়া থেলেস আলেনিয়া বাংলাদেশে দুইটি গ্রাউন্ড স্টেশন এ স্যাটেলাইট কন্ট্রোল এবং নেটওয়ার্ক অপারেশন সেন্টার নির্মান এবং পরিচালনা উপযোগী করার কাজও করবে। বাংলাদেশে গ্রাউন্ড স্টেশন টির সিভিল ওয়ার্ক্স এর কাজ পেয়েছে থেলাস এলানিয়ার বাংলাদেশের পার্টনার স্পেক্ট্রা ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড। ২৪৮ মিলিওন ইউ এস ডলার অর্থাৎ ১৯.৫১ বিলিয়ন টাকা মূল্যের বঙ্গবন্ধু-১ এর জিওস্টেশোনারি অক্ষাংশ (Longitude)হবে ১১১.৯ ডিগ্রি পূর্ব (119.1° East) । ১৬০০ মেগাহার্জ কেপাসিটির বঙ্গবন্ধু-১ এর ভেতর থাকছে মোট ৪০ টি ট্রান্সপন্ডার (Transponder) যার মধ্যে ২৬টি কে ইউ ব্যান্ড (Ku Band) ট্রান্সপন্ডার এবং ১৪টি সি ব্যান্ড (C Band) ট্রান্সপন্ডার। বঙ্গবন্ধু-১ এর কাভারেজ এরিয়া হবে বাংলাদেশ, বে অফ বেংগল, ভারত, নেপাল, ভুটান, শ্রীলংকা , ফিলিপিনস এবং ইন্দোনেশিয়া এবং এর লাইফ টাইম হবে ১৫ বছর।

বঙ্গবন্ধু-১ এর টাইমলাইনঃ

নভেম্বর ১১, ২০১৫ – আন্তর্জাতিক দরপত্র শেষে থেলেস এলেনিয়া এবং বিটিআরসি এর মধ্যে বঙ্গবন্ধু-১ বিষয়ক চুক্তি সম্পাদন

নভেম্বর, ২০১৬ – বঙ্গবন্ধু-১ এর ডিজাইন সম্পন্ন এবং বিশেষজ্ঞ কমিটির ডিজাইন রিভিউ শুরু
জানুয়ারি ১০, ২০১৭ – বঙ্গবন্ধু-১ এর ডিজাইন রিভিউ পাস

জানুয়ারি, ২০১৭ – প্রডাকশন ফেইজ এর শুরু। ফ্রান্স এর Toulouse এ কমিনিকেশন মডিউল এবং Cannes এ সার্ভিস মডিউল তৈরী শুরু ।

মার্চ, ২০১৭ – কমিনিকেশন মডিউল এবং সার্ভিস মডিউল একসাথে করা হয় এবং পূর্নাংগ স্যাটেলাইট এর নির্মান কাজ শুরু

মার্চ ২৮, ২০১৮ – Thales Alenia Space কোম্পানির ফ্রান্স এর Cannes প্ল্যান্ট থেকে যুক্ত্ররাষ্ট্রের কেপ কার্নিভাল এর উদ্দ্যেশ্যে যাত্রা শুরু।

মার্চ ২৯, ২০১৮ – যুক্তরাষ্ট্রের Boston এ যাত্রা বিরতি

মার্চ ৩০, ২০১৮ – বঙ্গবন্ধু-১ কে বহনকারি Antonov An-124 (Registration UR-82072) বিমান টি যুক্তরাষ্ট্রের Cape Carnival এ অবতরন। এখান থেকেই নিয়ে যাওয়া হয় লঞ্চ সাইট এ।

অরবিট (Orbit) কি?

অরবিট (Orbit) এর বাংলা কক্ষপথ। মহাশূন্যে একটা বস্তু তা সেটা প্রাকৃতিক হোক বা কৃত্তিম, যখন আরেকটা বস্তুর চারপাশে একটা স্পেসিফিক রাস্তা ফোলো করে স্পেসিফিক সময় ব্যয় করে বার বার ঘুরতে থাকে তখন সেই রাস্তাটাকে আমরা বলবো তার অরবিট (Orbit) আর পুরো রাস্তাটা ঘুরে আবার আগের জায়গায় আসতে তার যে সময় লাগে তাকে আমরা বলবো অরবিটাল পিরিয়ড (Orbital Period) । যেমন আমরা জানি সূর্যের চারপাশে পৃথিবী একটা অরবিট এ ঘুরছে। তাই পৃথিবীর অরবিটাল পিরিয়ড ১ বছর বা ৩৬৫ দিন। এভাবে সব গুলো গ্রহের অরবিট আছে, অরবিটাল পিরিয়ড আছে। গ্রহগুলোর যদি নিজস্ব উপগ্রহ থাকে যেমন পৃথিবীর আছে চাঁদ, সেগুলোও গ্রহ কে কেন্দ্র করে তাদের অরবিট এ ঘুরছে, তাদেরও অরবিটাল পিরিয়ড আছে, এক একটার এক এক অরবিটাল পিরিয়ড।উদাহরণ হিসাবে বলা যায়, চাঁদ এর অরবিটাল পিরিয়ড ২৭ দিন ৭ ঘন্টা ৪৩ মিনিট ১১.৫ সেকেন্ড।

প্রশ্ন হলো এই গ্রহ বা উপগ্রহ এত বাধ্য কেন যে অরবিট এ থাকে? কেন অরবিট থেকে উইইইই বলে বের হয়ে যায় না? উত্তর বুঝতে হলে মনে মনে একটা পরীক্ষা করতে হবে। ধরেন মাঠ এর মধ্যে একটা খুটি গাথলেন। এবার খুটির সাথে ১ মিটার লম্বা একটা দড়ি লাগালেন। দড়ি টা এমন ভাবে খুটী তে লাগানো যে টান টান করে খুটীর চারপাশে ঘুরলে খুটী তে পেচাবে না, বরং যেদিকে টানবেন সেদিকে ঘুরে যাবে। এবার একটা মোটকা দেখে ছাগল* এনে দড়ির আরেক মাথায় বাধলেন। ছাগল যদি আমার মত হয় তাহলে চুপচাপ বসে বসে পাতা চিবাবে আর যদি বিয়াদ্দপ হয় তাহলে প্রথম সুযোগেই দৌড় লাগাবে। কিন্তু দড়িটা যখন টান টান হয়ে যাবে তখন আর সোজা সরল রেখায় দৌড়াতে পারবে না । দড়ির টানের কারনে খুটির দিকে একটু বাকবে। কিন্তু ছাগল তো আমার মত না যে খুটির বশ্যতা স্বীকার করে নেবে। তাই সে যতক্ষন পারে সোজা দৌড়াতে চাবে আর খুটি তে বাধা থাকার কারনে তার দৌড়ানোর রাস্তা বার বার বাকবে।

একটু যদি চিন্তা করেন তাহলে ছাগলের উপর এইখানে দুইটা বল (Force) কাজ করছে। একটা হোল তার নিজের ফোর্স যা দিয়ে সে সোজা দৌড়াতে চাচ্ছে। আর ২য় হোলো দড়ির টান যার দিয়ে খুটি তাকে নিজের দিকে টানছে। এই দুই ফোর্স এর টানাটানি তে ছাগল বেচারার দৌড়ানোর রাস্তা সোজা না হয়ে হয়ে গেছে বৃত্তাকার। এইবার পরীক্ষার শেষ ধাপ চিন্তা করেন। মনে করেন পৃথিবী একটা খুটি আর তার পাশে ঘুরতে থাকে কৃত্তিম উপগ্রহ একটা ছাগল। মাধ্যাকর্ষন শক্তি হলো দড়ির টান আর কৃত্তিম উপগ্রহ কে রকেট এর মাধ্যমে দেয়া গতি হলো ছাগলের দৌড়ানোর চেষ্টা। যদি দড়ির টান বেশি হয় তাহলে উপগ্রহ পৃথিবী তে আছড়ে পড়বে আর যদি অনেক পাওয়ারফুল রকেট দিয়ে বুস্ট দেয়া যায় তাহলে সেই উপগ্রহ দড়ির টান বা মাধ্যাকর্ষন শক্তি কে জয় করে অরবিট ছেড়ে বেরিয়ে গিয়ে রউনা দিতে পারবে অসিম মহাশূন্যে। আর যদি এই দড়ির টান আর নিজের শক্তির টানাটানি তে যখন একটা সমান সমান অবস্থায় পৌছাবে তখনই তৈরী হবে অরবিট এর।

* নো ছাগল ওয়াজ হার্মড ডিউরিং দিস মেন্টাল এক্সপেরিমেন্ট।

আমরা এখন জানি যে মহাশূন্যে সকল অরবিট ইলিপ্স (ellipse) এর মত শেপ এর। অরবিট যদি গোল বৃত্তের মত শেপ এর হতো তাহলে অরবিট এর কেন্দ্র থেকে অরবিট এ থাকা স্যাটেলাইট এর দুরত্ব সবসময় সমান হতো। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেছে সব স্যাটেলাইট পৃথিবী চারপাশে ঘুরতে ঘুরতে কখনো পৃথিবী থেকে অনেক দূরে থাকে, আবার কখনো পৃথিবীর অনেক কাছে থাকে।স্যাটেলাইট অরবিট এ তাহলে আমরা দুইটা পয়েন্ট মার্ক করতে পারি। একটা পয়েন্ট এ স্যাটেলাইট টি পৃথিবী থেকে সবচেয়ে দূরে থাকে। এই পয়েন্ট টার নাম অ্যাপোজি (Apogee)। আর একটা পয়েন্টে স্যাটেলাইট টি পৃথিবী এর সবচেয়ে কাছে চলে আসে। এই পয়েন্ট টার নাম পেরিজি (Perigee)। পেরিজিতে মাধ্যাকর্ষন শক্তির টান সবচেয়ে বেশি থাকে।

পৃথিবীর নিজেরও কিন্তু সূর্যের চারিদিকে ঘোরার একটা অরবিট আছে। এই অরবিট এ যেখানে পৃথিবী সূর্য থেকে সব চেয়ে দূরে থাকে সেই পয়েন্টটা কে বলে পেরিহেলিওন (Perihelion)।

একটা স্যাটেলাইট পৃথিবীর সারফেস বা ভূপৃষ্ঠ থেকে কত উচুতে আছে তার মাপ টাকে বলে অরবিট অল্টিটিউড (Orbit Altitude) । এটা কিলোমিটার এ মাপা হয়। এই অরবিট অল্টিটিউড এর উপর নির্ভর করে কৃত্তিম উপগ্রহের অরবিট গুলো কে মূলত দুই ভাগে ভাগ করা যায়। এক হলো লো আর্থ অরবিট (Low Earth Orbit) বা সংক্ষেপে লিও (LEO) । আরেক হলো জিওসিংক্রোনাস আর্থ অরবিট (Geosynchronous Earth Orbit) বা সংক্ষেপে জিও (GEO)।

কেউ যদি ভূপৃষ্ঠ থেকে মোটামুটি ১০০ কিলোমিটার (৩ লক্ষ ২৮ হাজার ৮৪ ফিট) উপরে যায় তাকে বলা যায় মহাশূন্যের দ্বারপ্রান্তে পৌছে গেছে। এই ১০০ কিলোমিটার উপরের জায়গাটার একটা নাম ও আছে, কারমান লাইন (Kármán line) । কারমান লাইনে মাধ্যাকর্ষন শক্তির পরিমান বেশি এবং এটমোস্ফিয়ার গ্যাস এর ঘনত্ব ও অনেক বেশি । এইখানে স্যাটেলাইট রাখতে হলে যে পরিমান জ্বালানী খরচ হবে তার উপযোগী স্যাটেলাইট তৈরি এবং পরিচালনা করা লং টার্ম এর জন্য অসম্ভব একটা ব্যাপার। হয়তো যদি আমরা কোনদিন নবায়ন যোগ্য জ্বালানী তে আরো উন্নত হই তাহলে সম্ভব হবে। এই কারমান লাইনের যদি আরো উপরে যাওয়া যায় , ধরা যাক ২০০ কিলোমিটার তাহলে মাধ্যাকর্ষন এর টান আরো কমে যাবে এবং এখানে কোন স্যাটেলাইট কে যদি রকেট এর মাধ্যমে বুস্ট দেয়া যায় তাহলে স্যাটেলাইটটির পক্ষে মাধ্যাকর্ষন শক্তিকে কিছুটা অতিক্রম করে পৃথিবীর চারপাশে ঘুরতে থাকার মত অরবিট তৈরি করা সম্ভব। এই ২০০ কিলোমিটার থেকে ১২০০ কিলোমিটার অরবিটাল অল্টিটিউড মানে পৃথিবী পৃষ্ঠ থেকে ২০০ থেকে ১২০০ কিলোমিটার এর উচ্চতায় যে সব স্যাটেলাইট ঘুরছে তাদের কে আমরা বলি লিও স্যাটেলাইট বা Low Earth Orbit Satellite । LEO এর উদাহরণ খুব পরিচিত দুটো নাম দিয়ে দেয়া যায়। ইন্টারন্যাশনার স্পেস স্টেশন (International Space Station) LEO তে ঘুরছে। ব্র্যাক এর অন্বেশা LEO তে ঘুরছে।

LEO যেহেতু পৃথিবীর অনেক কাছাকাছি তাই এর চারপাশে ঘুরে আস্তেও এই অরবিট এর স্যাটেলাইট গুলোর খুব অল্প সময় যেমন গড়ে ৯০ মিনিট এর মত লাগে। ISS এর লাগে ৯২.৪৯ মিনিট। কাছাকাছি হওয়াতে সিগ্ন্যাল এর যাওয়া আসার সময় (Round Trip Time – RTT) ও কম লাগে । তাই এই অরবিট টা স্যাটেলাইট কমিউনিকেশন এ খুব ব্যবহার হয়। ইরিডিয়াম একটা কোম্পানি আছে। স্যাটেলাইট ফোন এর ব্যবসা করে। ওদের সব স্যাটেলাইট LEO তে।

বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট যাবে এই LEO এর আরো উপরের অরবিট এ। যার নাম জিওসিংক্রোনাস আর্থ অরবিট (Geosynchronous Earth Orbit) বা GEO।

জিওসিংক্রোনাস / জিওস্টেশনারী স্যাটেলাইট কি?

জিওসিংক্রোনাস স্যাটেলাইটঃ

ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৩৫৭৯০ কিলোমিটার উপড়ে থাকে। পুরো পৃথিবী কে ঘুরে আসতে সময় লাগে ১ দিন। কিন্তু পৃথিবী যেদিকে ঘুরছে মানে পশ্চিম থেকে পূর্বে , সেই বরাবর নাও ঘুরতে পারে। তাই পৃথিবী থেকে দেখলে এই ধরনের স্যাটেলাইট কে চলমান মনে হবে

জিওস্টেশনারী স্যাটেলাইটঃ

ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৩৫৭৯০ কিলোমিটার উপড়ে থাকে। পুরো পৃথিবী কে ঘুরে আসতে সময় লাগে ১ দিন। পৃথিবী যেদিকে ঘুরছে ঠিক সেই বরাবর ঘুরতে থাকে। একই গতিতে থাকার কারনে পৃথিবীর যে কোন একটি নির্দিষ্ট পয়েন্ট থেকে দেখলে মনে হতে পারে সেই পয়েন্ট এর উপর স্যাটেলাইট টি স্থীর হয়ে আছে। তাই এর নাম জিও (অরবিট এর নাম)স্টেশনারি।

ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় এর অন্বেশা এবং বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট এর মধ্যে পার্থক্য কি?

ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় এর অন্বেশা একটি কিউব স্যাটেলাইট। কিউব স্যাটেলাইট হলো খুবই ছোট আকারের (১০ সেমি x ১০ সেমি x ১০ সেমি) এবং হাল্কা (১.৩৩ কেজি) স্যাটেলাইট। কিউব স্যাটেলাইট স্থাপন করা হয় LEO অরবিট এ। LEO অরবিট কি তা উপরে আলোচনা করেছি একবার তাই আর বললাম না। ব্র্যাক এর অন্বেশা ৩রা জুন, ২০১৭ তে লঞ্ছ করা হয় Falcon 9 রকেট দিয়েই। ব্র্যাক এর অন্বেশা ছবি তুলতে পারে। এর মেমরি তে পৃথিবী থেকে ডাটা আপলোড এবং ডাউনলোড করা যায়। Kyushu Institute of Technology এর Birds-1 প্রোগ্রাম এর আন্ডারে এটি মহাকাশ এ প্রেরন করা হয়। এই প্রোগ্রাম টি হলো যে সব দেশের কখনো কোন স্যাটেলাইট ছিল না তাদের কেও মহাকাশে স্যাটেলাইট স্থাপনে সাহায্য করার একটি প্রজেক্ট। ব্র্যাক অন্বেশা এর গ্রাউন্ড স্টেশন আছে বাংলাদেশ এ ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় এর উপরে, থাইল্যান্ড এ এবং তাইওয়ান এ। এটির মূল্য ৪ কোটি ১৫ লাখ টাকা ।

অপর দিকে বঙ্গবন্ধু–১ একটি GEO অর্বিট এর স্যাটেলাইট এবং অন্বেশার থেকে আকার, ওজন এবং কর্ম ক্ষমতায় অনেক গুন বড় যার বর্ননা ইতমধ্যে উপরের লেখা গুলোয় আমি দিয়েছি।

বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট দিয়া আমাদের লাভ কি?

আমি খুব মোটা দাগ এর তিনটা লাভ এর কথা বলি।

১। মহাকাশ এ পদার্পন এর শুরু টা হচ্ছে সরকারি ভাবে। এরপর মহাকাশ আর বড়লোক দেশের জিনিষ বলে থাকলো না।


২। ধরেন একটা দেশি টিভি চ্যানেল ইন্দোনেশিয়া বা শ্রীলংকায় তার চ্যানেল দেখাইতে চায়। তাইলে তার কি করতে হবে। তার চ্যানেল এর সিগ্ন্যাল বিদেশি একটা স্যাটেলাইট এ আপ লিঙ্ক করতে হবে। বিদেশের কোন ক্যাবেল টিভি কম্পানি তার ডিশ এন্টেনা ব্যাবহার কইরা সেই সিগ্ন্যাল ডাউনলিংক কইরা নামাবে তারপর কেবল দিয়া ঘরে ঘরে দিবে। অথবা গ্রাহক নিজেই সেট টপ বক্স এবং ভিস্যাট বসায়া নামায় নিবে। এই আপলিঙ্ক এর জন্য টিভি চ্যানেল গুলার বর্তমানে বছরে ১২৫-১৩০ কোটি টাকা খরচ হয়। বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট এর সাথে আপলিঙ্ক করলে এই খরচ টা কম হবে। আর আরো বড় কথা হইল দেশের টাকা দেশের প্রতিষ্ঠান ই পাবে।

৩। আমাদের নিজশ্ব স্যাটেলাইট এক্সপার্ট তৈরি হবে। আমরা যখন মহাকাশ গবেষনা শুরু করব NASA কিংবা ইন্ডিয়ার মত নিজেদের রকেট থাকবে আমাদের, তখন এদের কাজে লাগবে। আমাদের শিশুরা এই স্বপ্ন টা দেখে বড় হতে পারবে। আমরা যখন ছোট বেলায় ইউরি গ্যগারিন, নীল আর্মস্ট্রং এর গল্প পড়সি, স্পুটনিক-১ এর ছবি দেইখা ওয়াও বলসি তখন কি চিন্তাও করতে পারসি কোনদিন যে আমাদেরও নিজেদের স্যাটেলাইট হবে।

আমি প্রচন্ড রকম দেশ পাগল মানুষ। আমার দেশের সব কিছু নিয়া গর্ব লাগে। আমার প্রিয় এয়ারলাইন্স বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। তাই আমার দেশের নিজেদের প্রথম স্যাটেলাইট নিয়া আমার উৎসাহের কোন সীমা পরিসীমা নাই। ঈদ ঈদ লাগতাসে। আমি যা কিছু পড়সি, জানসি তা সব ই এই ভাল লাগা থেইকা। ভুল ভাল কিছু থাকলে নিজ গুনে ক্ষমা করে দিয়েন আর কমেন্ট এ জানায়েন।

তথ্য সূত্র সমূহঃ

http://www.radio-electronics.com/info/satellite/satellite-orbits/satellites-orbit-definitions.php

https://www.thalesgroup.com/en/worldwide/space/news/bangabandhu-satellite-1-program-passes-success-critical-design-review

https://www.thalesgroup.com/en/worldwide/space/news/first-telecommunications-satellite-bangladesh-will-be-built-thales-alenia-space

https://www.thalesgroup.com/en/worldwide/space/press-release/thales-alenia-space-build-bangabandhu-telecommunication-satellite

https://searchmobilecomputing.techtarget.com/definition/geostationary-satellite

https://spaceflight101.com/events/falcon-9-bangabandhu-1/

https://en.wikipedia.org/wiki/Bangabandhu-1

http://www.spacex.com/missions

https://www.thalesgroup.com/en/worldwide/space/news/bangabandhu-satellite-1-cape-canaveral

http://www.radio-electronics.com/info/satellite/satellite-orbits/satellites-orbit-definitions.php

https://www.nasa.gov/audience/forstudents/5-8/features/nasa-knows/what-is-orbit-58.html

https://en.wikipedia.org/wiki/Moon

https://en.wikipedia.org/wiki/K%C3%A1rm%C3%A1n_line

https://en.wikipedia.org/wiki/CubeSat

https://en.wikipedia.org/wiki/BRAC_Onnesha

৩০০/৩৬৫

লেখার তারিখঃ মার্চ ৩, ২০১৮, ৩:৩৯ পি এম

বই এর রিভিউ
পদ্ম বলে, এসো – রাফিউজ্জামান সিফাত

আমার কোন উপন্যাস তখনি ভাল লাগে যখন আমি এর চরিত্র গুলো কে বুঝতে শুরু করি। সব চরিত্র যে বুঝতে হবে এমন না। কিন্তু পড়তে পড়তে চরিত্র গুলা যখন চেনা হয়ে যায়, যখন প্রত্যাশিত ডায়লগ বলে, অপ্রত্যাশিত কিছু করে বসে, তখন সেই উপন্যাস টা জমে যায়। বই রেখে উঠে পরা অসম্ভব হয়ে যায়। পদ্ম বলে এসো তে যখন আমার এই অনভূতি টা হয়েছে অনেক দিন পর। মনে হয়েছে চরিত্র গুলো আমার খুব পরিচিত কেউ, আসে পাশেরই মানুষ। যখন বই রেখে উঠে যেতে হয়েছে সমাজের ডাকে তখন নিজেকে মনে হয়েছে পদ্ম বলে, এসো তেই আছি এখনো। চারপাশে যা ঘটছে তা পদ্ম বলে, এসো এরই অন্য কোন ঘটনা। লেখক সিফাত এই ইলিউশনটা পাঠকের ভেতর ঢুকিয়ে দিতে সফল হয়েছেন।

ইলিউশন এমনি এমনি তৈরী হয় না। প্রথমে ভিক্টিম এর বিশ্বাস অর্জন করতে হয়, তারপর বাস্তবের সাথে পরাবাস্তব মিশাতে হয় ধীরে ধীরে। একসময় ভিক্টিম পার্থক্য করতে পারে না কোনটা বাস্তব না আর কোনটা মায়া। লেখক সিফাত এর পদ্ম বলে, এসো উপন্যাস এর প্রধানত তম বৈশিষ্ট্য এবং শক্তি হলো এর গল্প টা প্রচন্ড রকম আট পৌরে গল্প। এখানে বিত্তের ঝলক নেই, নায়োকোচিত বীরত্ব নেই, এমন কি কোন উচ্চমার্গিয় সারকাজম করে নিজেকে খুব ফানি বা উইটি প্রমান করার চেষ্টাও নেই। এখানে আছে নিউমার্কেট এর ভিড় এ অপু কে খোজা রেনু, আছে রাস্তার জ্যাম এ বিলাসবহুল গাড়িতে বসে থাকা দুর্নীতিবাজ রাশেদ , ছাদে বাতাবিলেবুর গাছ আছে, অসুস্থ লুতফার জন্য কিনে আনা রঙ্গিন ম্যাক্সি আছে। যে পাতা তেই যাই মনে হবে একটা মধ্যবিত্ত পরিবারে ঢুকে গেছি , যার আনন্দ বেদনা অভিমান গুলো আমার খুব চেনা।

লেখক সিফাত এর ২য় উপন্যাস “সুয়া উড়িলো উড়িলো জীবেরও জীবন” এর পটভূমি ছিল মফঃস্বল শহর আর এখানে একেবারেই রাজধানী শহর। তাই দৃশ্য গুলো মিলিয়ে নেয়া যায় সহজেই। তবে সেই উপন্যাস এর লেখক সিফাত কে যদি এই উপন্যাস এ খুজতে গেলে ধাক্কা খেতে হবে নিশ্চিত। বাস্তবের সাধাসিধে সিফাত কিভাবে উপন্যাস এ গল্পের প্রয়োজনে এত নির্দয় নিষ্ঠুর হয়ে গেলেন তা এক আশ্চর্য ব্যাপার।

আমি পড়তে পড়তে কখনো অপু হয়ে যাই। কখনো শাফকাত হব কিনা ভাবি। “জাগরন” বলে যে অরাজনৈতিক সংগঠন টির কথা আছে তা আমাকে প্রচন্ড ইন্সপায়ার করে এবং একই সাথে আফসোস করায়, আহা এরকম একটা সংগঠন যদি বাস্তবে থাকতো, অসম্ভব তো না। তখনই মনে হয় উপন্যাস হিসেবে পদ্ম বলে, এসো এর সফলতা টা এখানেই। শহুরে জীবনের বাস্তবতা কে পরাবাস্তব না বানিয়ে অতিবাস্তব পর্যায়ে নিয়ে যাওয়াতেই।

এবারের বই মেলা থেকে কিনেছিলাম বইটা। রকমারি তেও পাওয়া যায়ঃ
https://www.rokomari.com/book/156335/%E0%A6%AA%E0%A6%A6%E0%A7%8D%E0%A6%AE-%E0%A6%AC%E0%A6%B2%E0%A7%87,-%E0%A6%8F%E0%A6%B8%E0%A7%8B

২৯৯/৩৬৫

লেখার তারিখঃ সেপ্টেম্বর ১৫, ২০১৭, ১১:২৪ এ এম

ভুড়ি রে তুড়ি মাইরা বিদায় প্রকল্প, লগ ১

নিজের সাথে যুদ্ধে জয়ী হওয়াটা সহজ না। শতকরা পঁচাশি ভাগ মানুষ যখন যা চায় তা করতে পারে না তখন পারিপার্শিকতার দোহাই দিয়ে হার মেনে নেয়। যেমন কেউ চিন্তা করলো গিটার শিখবে। হুলুস্তুল করে সব কিনে আনলো। একস্টিক গিটার, ইলেক্ট্রিক গিটার, টিউনার, গিটার কেস, হাবি জাবি ইত্যাদি। গ্রামার, রিদম, লিড সব একসাথে শিখার চেষ্টা। কয়দিন বাজানোর পর দেখা গেল আঙ্গুল এর মাথায় ব্যাথা করে। তাই আস্তে আস্তে ছেড়ে দিল। নিজেকে বোঝালো আমার আংগুল ওস্তাদদের মত শক্ত না, আমাকে দিয়া হবে না, থাক। এই যে, হেরে গেলো কিন্তু।

আমি যখন ঠিক করলাম ভুড়ি কমাইতে হবে, আমার মনে হইল আগে কত অসংখ্য বার উদ্যোগ নিসি কিন্তু কিসু হয় নাই, এইবারও কি একই জিনিষ হবে? তারপর চিন্তা করলাম আগে কি ভুল করসি আর এখন কি ঠিক করবো। আমার মূল সমস্যা যেটা ছিল আমি সব একবারে শুরু করসিলাম। এক্সারসাইজ, হেলদি ফুড, জিম সব একসাথে। তাতে যেইটা হইল আমার শরীর ভাবলো একি রে বাবা, কই আইলাম, প্রত্যেকদিন এ কেমন অইত্যাসার। তাই সে বিদ্রোহ শুরু করল। জোশ এর চোটে কয়দিন কাটানোর পর যেখন দেখলাম খালি খিদা লাগে তখন আস্তে আস্তে হেলদি ফুড অনলি বেপার টা গেলো, নিজেরে বললাম, আরে না খাইলে জিম করার শক্তি পামু কইত্তে। অই এক হাফ কাচ্চি আর একটা ঠান্ডা কুক ল। তারপর মনে হইল জিম কইরা এনার্জি বেশি খরচ হইতাসে সকালে হাটার শক্তি পাই না, থাক। জিম এ গেলে এমনেও মাইন্সের মাসল দেইখা নিজের চর্বি লুকানির জায়গা পাই না লজ্জায়, থাক। হেলদি ফুড আর জিম গেল। তারপর একদিন সকালে মনে হইল , খালি হাটা হাটি কইরা কি আর ভুড়ি কমে। জিম করি না, হেলদি খাই না। খালি হাটাহাটি কইরা আর কি হইব, থাক। আরেকটু ঘুমাই। গেল সব।

এইবার তাই যা করতাসি, তা হইল শরীর রে অভ্যস্ত করতাসি। বাইচ্চা কালে আমরা যেমন ইস্কুল এ যাইতে ঘ্যান ঘ্যান করতাম, তারপর বড় হইলে নিজে নিজেই রেডি হয়া যাইতাম, এরকম। আমি শরীর রে শিখাইতাসি সপ্তাহে ৫ দিন ভোর এ উঠতে হবে, নামাজের পর এক ঘন্টা হাটতে বা দৌড়াইতে হবে। তা রোদ ই থাকুক আর বৃষ্টি। মোটামুটি রুটীন এর মধ্যে আসছে বেপারটা। এই মাস টা লাগবে পুরাপুরি ভুলতে যে আমি এর আগে জীবনে সকালে হাটাহাটি করি নাই।

আমি কিন্তু এখন ১০০% ডায়েট এ চইলা যাই নাই। সব ই খাইতাসি, তয় কার্ব আর সুগার এর ইনটেক কমায় দিসি। ভাত, খিচুড়ি, পুলাও খাওয়ার সময় ভাতের চামচ এর এক চামচ খাই আর বাকি টাইম বোল এর দিকে পাপি আইজ কইরা তাকায় থাকি। কোক জাতীয় সোডা খাওয়া বাদ দিসি ৯৮% ক্ষেত্রে। কফি খাই, তয় আস্তে আস্তে ব্ল্যাক এর দিকে যাইতাসি। আগে গ্যালন গ্যালন মোকা খাইতাম, এহম লাতে উইথ ওয়ান সুগার খাই, এরপর কেপাচিনো তে যামু, তারপর আল্টিমেটলি এমিরাকানো উইথ নো সুগার।

এই মাস টা তাই আমার স্টেমিনা অর্জন এর মাস। আগস্ট এ ওজন ছিল ১০০ কেজি। এখন ৯৬ কেজি। আগামি মাস এ ফুড হেবিট এর প্রতি নজর দিমু। অবশ্যই ডায়েটেশিয়ান এর সাথে পরামর্শ কইরা তারপরে। আমি জানি আই উইল গেট দেয়ার। শুধু তাড়াহুরা করলে আর সব একবারে করতে চাইলে বেশি দূর যাইতে পারুম না।

২৯৮/৩৬৫

লেখার তারিখঃ জানুয়ারি ১২, ২০১৭, ২:৩৪ পিএম

দা ব্যাটেল অফ বয়রা ( মুক্তিযুদ্ধের প্রথম আকাশ যুদ্ধ ), পর্ব ৪

২২শে নভেম্বর, ১৯৭১। ভোরের সূর্য ধীরে ধীরে আলোকিত করছিল দমদম বিমানবন্দর কে যেখানে 22 Squadron এলার্ট অবস্থায় ছিল জরুরী অবস্থার জন্য। যে কোন সময় আস্তে পারে ডাক, বেজে উঠতে পারে স্ক্র্যাম্বেল করার এলার্ম বেল। সকাল ৮ টার দিকে তাই ঘটে যায়, সকালের স্নিগ্ধ নিস্তব্ধতা ভেঙ্গে বেজে উঠে স্ক্র্যাম্বেল এলার্ট এর বেল। পাকি এয়ারফোর্স (আমি জীবনেও পাক বাহিনী বলব না, পাকি/পাইক্যা বলব, তবু আমাদের যেভাবে শিখানো হইসে স্কুল এ সেইরকম পাক বাহিনী বলব না) এসে পরেছে বয়রায় মুক্তিবাহিনী কে সাহায্যের জন্য অগ্রসররত ইন্ডিয়ান সেনাদের উপর হামলার জন্য। এক মূহুর্ত ও নষ্ট না করে আকাশে উঠে যায় ইন্ডিয়ান এয়ারফোর্স এর চারটি Gnat বিমান।

চারটি বিমান “ফরমেশন ফ্লাইং” করে ধাবমান হয় বয়রার আকাশের দিকে। ফরমেশন ফ্লাইং হলো দুই বা ততোধিক বিমান এর একসাথে উড়ে যাওয়া যেখানে একজন ফরমেশন লিডার থাকে আর বাকি রা তার কমান্ড অনুসারে ফরমেশন এ থেকে ফ্লাই করে অথবা ফরমেশন ভেঙ্গে শত্রু বিমান কে আক্রমন করতে ছুটে যায়। ফরমেশন লিডার এর অনুমুতি না নিয়ে শত্রু বিমান কে আক্রমন করতে যাওয়া কোন কোন ক্ষেত্রে অপরাধ হিসাবে গন্য হয়। ফরমেশন ফ্লাইং করলে ফুয়েলও কম খরচ হয়। “ড্র্যাগ কমে, লিফট বারে, ফুয়েল তাই কম খরচ হয়” এই সব আলোচনায় গেলে এখন এরোডাইনামিক্স এর কথা বার্তা বলতে হবে। তাই আপাতত মূল লেখায় থাকার চেষ্টা করি।

ইন্ডিয়ান এয়ারফোর্স এর যেই চারটি বিমান এর ফরমেশন ধাবিত হচ্ছিল বয়রার দিকে তার কমান্ডিং অফিসার বা CO ছিলেন Wing Commander Sikand, যার অধীনে ছিলেন Flying Officer Don Lazarus, Flight Lieutenant Roy Massey এবং Flight Lieutenant M.A Ganapathy.

এদিকে পাকিস্তান এয়ারফোর্স এরও চারটি Sabre বিমান ধাবিত হচ্ছিল বয়রার অদ্যরে গরীবপুর এর দিকে। তেজগাঁও বিমান বন্দর থেকে ছেড়ে আসা 14 Squadron এর চারটি বিমান এর ফরমেশন এর লিডার ছিল Squadron Leader Dilawar Hussain.

কোন রকম বাধা ছাড়াই তারা গরীবপুর এর ইন্ডিয়ান আর্মি এর অবস্থান গুলোতে আক্রমন করে। এই আক্রমন এ গরীবপুর এর কাছের জালাঙ্গি নদীর উপর একটি ফেরি ধ্বংস হয় এবং কিছু লোকজন আহত হয়।

যদিও ব্যারাকপুর এর 254 Signal Unit থেকে ইন্ডিয়ান এয়ারফোর্স এর Gnat গুলোকে যশোর এরিয়ার উপর দিয়ে উড়ে যেতে বলা হয়েছিল কিন্তু তারা পাকিস্তান এয়ারফোর্স এর Sabre গুলোর কোন দেখা না পেয়ে আবার দমদম বিমানবন্দর এ ফিরে যান।

রুটিন মাফিক পাকিস্তান এয়ারফোর্স সেদিন দুপুরে আবারো একটি মিশন চালায়। ইন্ডিয়ান এয়ার ডিফেন্স কোন্ট্রল রাডার এ Sabre গুলোর আগ্রাসন ধরাও পরে। দমদম বিমানবন্দরে স্ক্র্যাম্বেল এলার্ম বাজার কিছুক্ষন এর মধ্যেই Wing Commander Sikand এবং তার সংগী আগের তিনজন পাইলট টেক অফ করেন।

এবার যখন রাডার কন্ট্রোল এর দিক নির্দেশনা অনুযায়ী Gnat গুলো যুদ্ধ এলাকায় পৌছায় তখন Flight Lieutenant Ganapathy ঘোলাটে আকাশেও একটি Sabre বিমান খুজে পান এবং Sabre টিকে আক্রমন করার জন্য রেডিও ফ্রিকুএন্সিতে ফরমেশন লিডার এবং কমান্ডার Sikand এর অনুমুতি চান।কিন্তু কোন এক রহস্যজনক কারনে Sikand নিরব থাকেন। Ganapathy কয়েকবার চেষ্টা করেও Sikand এর সাথে যোগাযোগ করতে ব্যার্থ হন। Sabre গুলোর লোকেশন এর ব্যাপারে রাডার কন্ট্রোলার থেকে বার বার বলা হলেও Sikand কোন রকম জবাব বা আক্রমন করা থেকে বিরত থাকেন।

মাটিতে Sabre গুলোর আক্রমন এর শিকার ইন্ডিয়ান আর্মি থেকেও ইন্ডিয়ান এয়ারফোর্স এর Gnat গুলোর সাথে যোগাযোগ এর চেষ্টা করা হয়। এই সময় ইন্ডিয়ান আর্মির 4 Sikh Battalion এর সাথে Forward Air Controller হিসাবে ছিলেন Flying Officer S.Y. Savur । Forward Air Controller হলো এয়ারফোর্স এর একজন গ্রাউন্ড প্রতিনিধি যিনি বিমান আক্রমন এর সময় মাটি থেকে বিমান কে টার্গেট আইডেন্টিফাই করতে সাহায্য করেন। Flying Officer S.Y.Savur তার VHF রেডিও থেকে ডেস্পারেট ভাবে চেষ্টা করে যান Gnat গুলোকে Sabre গুলোর দিকে ডিরেকশন দিয়ে নিয়ে যাওয়ার। কিন্ত তারা শুধু দেখতে পান Gnat গুলো Sabre গুলোকে আক্রমন এর কোন উদ্যোগ ই নিলনা। ইন্ডিয়ার আর্মি এর মধ্যেও হতাশা ছড়িয়ে পরে। তারা আর কাউকে না পেয়ে Flying Officer Savur এর উপর তাদের যত ক্ষোভ সব ঝাড়া শুরু করে।

দুপুরের ব্যার্থ ফ্লাইং শেষে দম দম বিমান বন্দর এ ফিরে যাওয়ার পর Gnat গুলোর সুযোগ পেয়েও আক্রমন না করার কারন অনুসন্ধান করা হয়। দেখা যায় কমান্ডার Sikand তার রেডিও তে কারো কল ই রিসিভ করতে পারছিলেন না। যিনি প্রথম Sabre বিমান দেখে আক্রমন এর অনুমুতি চাইছিলেন সেই Ganapathy এতে এতই হতাশ এবং কমান্ডার Sikand এর উপর রাগান্বিত ছিলেন যে তাকে শান্ত করতে Flight Lieutenant Roy Massey কে অনেক কষ্ট করতে হয়েছিল। অবস্থা দেখে সকাল এবং দুপুর এর Scramble এর অধিনায়ক Sikand সেদিনকার মত আর ফ্লাই না করার সিদ্ধান্ত নেন। তার স্থলাভিষিক্ত হন Flying Officer Soars । মনে আছে আগের পর্বে Soars এর কথা বলেছিলাম ? যিনি দম দম এ এসেছিলেন রিপ্লেসমেন্ট Gnat এর পাইলট হিসাবে, আর এতদিন ছিলেন স্ট্যান্ডবাই পাইলট হিসাবে।

সিদ্ধান্ত হয় সেদিন মানে ২২শে নভেম্বর, ১৯৭১ এর বিকেলে যদি আরো কোন Scramble হয় তাহলে তার নেতৃত্ব দেবেন Massey এবং তার তার No.2 থাকবেন Soars । Scramble এর ২য় সেকশন এর নেতৃত্ব দেবেন Ganapathy এবং তার উইংম্যান হিসাবে থাকবেন Lazarus.

আগামী পর্বেই ইনশাল্লাহ আমরা Battle of Boyra এর মূল বিমান যুদ্ধের ডিটেইল বর্ননায় ঢুকে যাবো আর দেখবো Massey, Soars, Ganapathy এবং Lazarus এর সাথে বিমান যুদ্ধে কিভাবে পাকি এয়ারফোর্স এর

২৯৭/৩৬৫

লেখার তারিখঃ জানুয়ারি ৯, ২০১৭, ০৯:১৯ এ এম

দা ব্যাটেল অফ বয়রা ( মুক্তিযুদ্ধের প্রথম আকাশ যুদ্ধ ), পর্ব ৩

আগের পর্ব শেষ করেছিলাম ২১শে নভেম্বর, ১৯৭১ এ। এই দিন দুই বার কলকাতার দমদম বিমানবন্দর থেকে ইন্ডিয়ান এয়ারফোর্স এর Gnat বিমান গুলো কে Scramble (কোন জরুরী অবস্থায় মিলিটারি এয়ারক্র্যাফট দ্রুত এয়ারবোর্ন হওয়া) করা হয় কিন্তু দুই বার ই তারা পাকিস্তান এয়ারফোর্স এর Sabre বিমান কে পাল্টা আক্রমন করতে না পেরে ফিরে আসে। উল্লেখ্য যে প্রতিবার Scramble এ চারটি করে ইন্ডিয়ান এয়ারফোর্স এর Gnat বিমান অংশ ন্যায়।

২য় বার এর Scramble এর একজন পাইলট ছিলেন ফ্লাইং অফিসার P.K. Tayal । কোন কারনে তায়াল এর G-Suite রয়ে গিয়েছিল Kalaikunda এয়ারফোর্স বেজ এ। তাই Tayal সেদিন তার কলিগ P.M Velankar এর G-Suit পরেই মিশন এ অংশ নিয়েছিলেন।

এখন একটু জেনে নেই G-Suit কি? যুদ্ধ বিমান চালানোর সময় পাইলট রা গতি জনিত ত্বরন বা G Force এর চাপ কে সামলানোর জন্য এক বিশেষ ধরনের পোশাক পরেন। এই পোশাক পাইলট এর শরীরের রক্ত কে হাই স্পিড এ বিমান চালনার সময় রক্তকে শরীরের নিচের অংশে ফ্লো করতে দ্যায় না। শরীরের নিচের অংশে রক্ত হঠাৎ চলে গেলে মস্তিষ্ক রক্তশূন্যতায় পরতে পারে, ফলে পাইলট অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে। G-Suit এই কাজটাই করে। পাইলট এর শরীরে আটোসাটো হয়ে বসে রক্ত কে শরীরের নিচের অংশে হঠাত চলে যাওয়া থেকে আটকায়। কমার্শিয়াল এয়ারলাইন্স এর পাইলট রা G-Suit পরেন না কারন তাদের অনেক স্পিড এর কোন ম্যানুভার করতে হয় না যেখানে জি ফোর্স এর প্রেসার বেশি থাকে। মিলিটারি এয়ারক্র্যাফট বা এক্সপেরিমেন্টাল এয়ারক্রাফট এর পাইলট রাই G-Suit এর প্রধান ইউজার।

image

Gnat বিমান এর সাথে G-Suit পরিহিত Indian Air Force এর পাইলট। ছবি সুত্রঃ www.bharat-rakshak.com

আবার মূল লেখায় ফিরে আসি। Tayal যার G-Suit পরে বিমান চালাচ্ছিলেন সেই Velankar ছিলেন Tayal এর চেয়ে ফুট খানেক ছোট। তাই Tayal এর কাছে Velankar এর G-Suit খুবি ডিসকম্ফোর্টেবল লাগছিল। Tayal জানতেন সেদিন সন্ধ্যায় Kalaikunda বেইজ থেকে স্পেয়ার, সাপ্লাই এবং রিপ্লেসমেন্ট পাইলট রা আসবেন। তাই তিনি Kalaikunda তে ফোন করে তার কোর্স মেইট Don Lazarus কে দমদম বেইজগামি Otter বিমানে তার G-Suit টি পাঠিয়ে দিতে বললেন। কিন্তু Lazarus অনেক খুজেও Tayal এর G-Suit কোথাও পেলেন না। Tayal এর স্বভাব Lazarus জানতেন ভালভাবেই, তাই তিনি দমদমগামী বিমান এ চরে বসলেন। Lazarus এর ধারনা ঠিক ছিল। G-Suit পাওয়া যায়নি এই খবর জানার পর Tayal আর কোন মিশনে ফ্লাই না করার স্বিদ্ধান্ত নেন। Kalaikunda বেইজ থেকে তার আরেক কোর্সমেট ফ্লাইং অফিসার Sunith “Sue” Soars আসছিল । Tayal এই সুযোগে Soars এর আনা রিপ্লেস্মেন্ট Gnat টি নিয়ে Kalaikunda বেইজ এ ফেরত চলে যান।

দিনের বাকি সময় আর কোন উত্তেজনা ছাড়াই কেটে যায়। Tayal তখনো জানতেন না সামান্য G-Suit এর কারনে তিনি কি হারালেন যেমন রিপ্লেসমেন্ট হিসাবে আসা Lazarus এবং Soars জানতেন না তারা কিভাবে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের প্রথম আকাশ যুদ্ধ Battle of Boyra এর অংশ হতে যাচ্ছেন।

মূল এয়ার ব্যাটেল এর ঘটনায় আসতে আমার আরো একটা পর্ব লাগবে। পরের পর্বে আমি মূল ঘটনার আরো কাছাকাছি যাওয়ার চেষ্টা করব।

এখন পর্যন্ত লেখা তিনটা পর্ব ধৈর্য নিয়ে পড়ার জন্য ধন্যবাদ 🙂

২৯৬/৩৬৫

লেখার তারিখঃ জানুয়ারি ৩, ২০১৭, ১১:৫৭ এ এম

দা ব্যাটেল অফ বয়রা ( মুক্তিযুদ্ধের প্রথম আকাশ যুদ্ধ ), পর্ব ২

আগের পর্বে একটা সার সংক্ষেপ দেয়ার চেষ্টা করেছিলাম। এই পর্ব থেকে যতটুকু পারি বিস্তারিত লেখা শুরু করলাম।

নভেম্বর মাস, ১৯৭১। স্বাধিনতার জন্য আমাদের বিক্ষিপ্ত যুদ্ধ গুলো তখন অনেক গোছানো হয়ে এসেছে। পাকি সেনারা (আমাদের পাঠ্য বই এ পড়ানো হইত পাক সেনা, আমি এইসব নাপাক দের পাক সেনা বলতে চাই না) বুঝতে পেরেছে আমরা তাদের ভয় পাই না। তাদের আরো কোনঠাসা করতে বাংলাদেশ ভারত সীমান্ত দিয়ে ইন্ডিয়ান আর্মিও ঢুক্তে শুরু করেছে। আমাদের আজকের কাহিনী এই সীমান্ত এলাকারই একটি জায়গা “বয়রা” নিয়ে।

“বয়রা” ভারতের সীমান্তবর্তি একটা এলাকা যা মুক্তিবাহিনী এবং ইন্ডিয়ান আর্মি মুক্তিযুদ্ধের সময় একটি “এন্ট্রি পয়েন্ট” বা “ইনগ্রেস পয়েন্ট” হিসাবে ব্যবহার করা শুরু করে। ভৌগলিক ভাবে বয়রার কিছু সুবিধা ছিল। এই জায়গাটা কলকাতা থেকে প্রায় ৮০ কিলোমিটার আর যশোর শহর থেকে মাত্র ১৭ কিলোমিটার। ভালো ভাবে বোঝার সুবিধার জন্য নিচে একটা ম্যাপ দেয়া হইলঃ

image

১২ নভেম্বর, ১৯৭১। ভারতের গরীবপুর, বাংলাদেশ এর চৌগাছা এবং যশোর শহর পাকি বাহিনীর হাত থেকে মুক্ত করার লক্ষে ইন্ডিয়ার আর্মির 350th Infantry Brigade of 9 Division অপারেশন শুরু করে। কোন রকম বাধা ছাড়াই তারা গরীবপুর পর্যন্ত পৌছায়। ১৮ই নভেম্বর, ১৯৭১ এ 42nd Infantry Brigade যোগ দ্যায় তাদের সাথে।

পাকি ছাগল বাহিনীর এতদিনে গিয়া হুশ হয় যে কিছু একটা করা দরকার। তারা ১৯শে নভেম্বর, ১৯৭১ ইন্ডিয়ান আর্মি কে আক্রমন করার জন্য এয়ার স্ট্রাইক (বিমান আক্রমন) কল করে। ২২শে নভেম্বর, পাকি বাহিনী ইন্ডিয়ান আর্মির উপর তাদের গ্রাউন্ড ট্রুপ এবং M-24 Chaffe Tank নিয়ে ঝাপিয়ে পরে। সাথে পাকি এয়ারফোর্স এর আক্রমন ও অব্যাহত থাকে। কিন্তু পাকিস্তান এয়ারফোর্স এর Sabre বিমান গুলার আক্রমন অনেকটাই রুটিন বাধা ছিল। সেই সময় এর ভারত এর এয়ার মার্শাল শারদ ইয়েশওয়ান্ত সাভুর এর ভাষ্য মতে,

“পাকিস্তান এয়ার ফোর্স অনেকটা রুটিন মাফিক ৩৫০ ব্রিগেড এর উপর আক্রমন করতো। প্রথম আক্রমন টা হতো সকাল ৯ টার দিকে। তারপর ২য় আক্রমন আসতো বেলা ৩ টায়। খুব কদাচিত তারা দুপুর ১২ টার দিকে একটা আক্রমন করতো, সেই ক্ষেত্রে বেলা ৩ টার স্ট্রাইক আর হতো না সেদিন। দুই বা চারটা PAF এর বিমান আসতো, রেসকোর্স প্যাটার্ন এর সার্কিট এ ঘুরতো, তারপর একে একে ডাইভ করতো এবং আক্রমন করে ধীরে সুস্থে ফিরে যেতো”

image

পাকিস্তানি M-24 Chaffe Tank

image

পাকিস্তানি Canadair Sabre Mk6


২১শে নভেম্বর, ইন্ডিয়ান এয়ারফোর্স এর চার টা Gnat বিমান কে Scramble করা হয়। Wikipedia তে Scramble এর সংজ্ঞা হিসাবে বলা আছে, কোন জরুরী অবস্থায় মিলিটারি এয়ারক্র্যাফট কে দ্রুত এয়ারবোর্ন (শুন্যে উড়ানো) করা। সাধারন্ত জরুরী অবস্থা বলতে এখানে শত্রু বিমানের আগ্রাসন কেই বোঝানো হয়েছে। কলকাতার দম দম এয়ারপোর্ট (বর্তমান নাম নেতাজী সুভাস চন্দ্র বোস আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর) থেকে সকালে উড্ডয়ন করে ইন্ডিয়ান এয়ার ফোর্স এর Gnat বিমান গুলো কিন্তু PAF কোন বিমান এর দেখা পাওয়া ছাড়াই সীমান্ত থেকে আবার ফিরে আসে। বিকালে বিমান গুলো কে আবারো Scramble করা হয় কিন্তু এবারো একি অবস্থা হয়। Gnat বিমান গুলো পৌছানোর আগেই Sabre বিমান গুলো পালিয়ে যায়। :

image

ইন্ডিয়ান এয়ারফোর্স এর HAL Folland Gnats বিমান

আগামি পর্বে আমরা দেখবো একটা সামান্য “জী স্যুট” কিভাবে কারো জীবন বদলে দ্যায়।

তথ্য সূত্রঃ

বইঃ Eagles Over Bangladesh. Written by: P.V.S Jagan Mohan and Samir Chopra

image

ইন্টারনেটঃ

বয়রার ম্যাপ ( https://www.google.com/maps/place/B…)
Battle of Garibpur (https://en.wikipedia.org/wiki/Battl…)
Battle of Boyra (https://en.wikipedia.org/wiki/Battl…)

ছবি সূত্রঃ

Mostly Google Image search and various Defence Forums

২৯৫/৩৬৫

লেখার তারিখঃ জানুয়ারি ১, ২০১৭, ১০:২২ এ এম

দা ব্যাটেল অফ বয়রা ( মুক্তিযুদ্ধের প্রথম আকাশ যুদ্ধ ), পর্ব ১

যাদের “অভ্যাস নাই” তাই “অনেক লেখা” পড়তে কষ্ট লাগে (ইন্টেশনালি ই পচাইসি, পড়ার অভ্যাস নাই ক্যান? হুর মিয়া -_- ) , তাদের জন্য সার সংক্ষেপঃ

বয়রা কি?

বয়রা একটা আঞ্চলিক শব্দ। কেউ কানে কম শুনলে তাকে আমরা বয়রা বলি। কিন্তু এইখানে বয়রা বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া সীমান্তের একটা জায়গা। এইটা ইন্ডিয়ার ভিতরে পরসে। এই জায়গাটা কলকাতা থেকে প্রায় ৮০ কিলোমিটার আর যশোর শহর থেকে মাত্র ১৭ কিলোমিটার। নিচে ম্যাপ দেইয়া হইলঃ

image

ব্যাটেল অফ বয়রা কি?

২২শে নভেম্বর ১৯৭১

বয়রার ভৌগলিক সুবিধার কারনে মুক্তিযুদ্ধের সময় ইন্ডিয়ান আর্মি বাংলাদেশ এ যখন ঢুকতে শুরু করে, তখন এই জায়গাটা তাদের ইনফেন্ট্রি ব্রিগেড এর জন্য একটা এন্ট্রি পয়েন্ট হিসাবে ব্যাবহার করে। বাংলাদেশ সীমান্তের ভিতরে “গরীবপুর” নামক জায়গায় ইন্ডিয়ান আর্মি, বাংলাদেশ মুক্তিবাহিনী এবং পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর মধ্যে প্রবল যুদ্ধ শুরু হয় যা “ব্যাটেল অফ গরীবপুর” নামে ইতিহাসের পাতায় লিপিবদ্ধ আছে। এই যুদ্ধে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী এয়ার স্ট্রাইক (বিমান আক্রমন) কল করে। “ব্যাটেল অফ গরীবপুর” এ বিমান আক্রমন শেষে ওভার কনফিডেন্ট পাকিস্তানি বিমানগুলো ঢুকে পরে ইন্ডিয়ান সীমান্তের ভিতর। ইন্ডিয়ান এয়ারফোর্স ও ছুটে যায় এই অনুপ্রবেশ ঠেকাতে।

দুই বাহিনীর মধ্যে বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া সীমান্তের এয়ার স্পেস এ বয়রার আকাশে শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধের প্রথম আকাশ যুদ্ধ। এই যুদ্ধ কেই বলা হয় “দি ব্যাটেল অফ বয়রা”।

ব্যাটেল অফ বয়রা তে কি কি বিমান অংশ নিয়েছিল ?

ইন্ডিয়ান সাইড এ ৪ টা HAL Folland Gnat বিমান। HAL Folland Gnat দেখতে এরকমঃ

image
image
image

পাকিস্তানি সাইড এ ৩টা Canadair Sabre Mk6 বিমান। Canadair Sabre Mk6 দেখতে এরকমঃ

image
image
image

এই দুই টাইপ এর বিমান ই যদি সামনা সামনি দেখতে চান তাহলে আগারগাও আই ডি বি ভবনের সামনে যে বাংলাদেশ এয়ার ফোর্স এর মিউজিয়াম আছে সেখান থেইকা ঘুইরা আসতে পারেন।

ব্যাটেল অফ বয়রা এর ক্যাজুয়ালিটিঃ

ইন্ডিয়ান সাইড এ কোন ক্যাজুয়ালিটি হয় নাই। পাকিস্তানি সাইড এ ৩ টার মধ্যে ২টা Sabre কে ভূপাতিত করে ইন্ডিয়ান এয়ারফোর্স। এই ২টা বিমান এর পাইলট রা ইজেক্ট করে কিন্তু ল্যান্ড করে ইন্ডিয়ান সীমান্তের ভিতরে, বয়রা তে। ইন্ডিয়ান আর্মি তাদের কে গ্রেফতার করে এবং বড় অফিসার আসার আগে আগে ভালই উত্তম মধ্যম দ্যায়। অফিসার না আসলে মনে হয় মাইরাই ফালাইত কিলায়া। আরেকটা Sabre বিমান বেশ খারাপ ভাবে ড্যামেজড হয়ে ঢাকার তেজগাঁও এর ঘাটি তে ফেরত যায়। এই পাকি পাইলট দাবি করে সে একটা Gnat বিমান ধবংস করে আসছে। কিন্তু কিছুক্ষণ পর যখন খবর আসে ৪টা Gnat ই নিরাপদে ল্যান্ড করসে কলকাতার দমদম এয়ারপোর্ট এ, তখন এই পাইক্যা হালার চেহারাটা কি হইসিল তা দেখার খুব শখ হইতাসে আমার।

এই ছিল মুটামুটি সার সংক্ষেপ। বিস্তারিত পরবর্তি লেখায় ইনশাল্লাহ।

আজকের লেখার তথ্য সূত্রঃ

বইঃ Eagles Over Bangladesh. Written by: P.V.S Jagan Mohan and Samir Chopra

image

ইন্টারনেটঃ
বয়রার ম্যাপ ( https://www.google.com/maps/place/Boyra,+West+Bengal,+India/@23.1860444,88.9557591,12z/data=!4m5!3m4!1s0x39ff2520d01741e1:0x68af8d43afebae9!8m2!3d23.2152947!4d88.9772855)
Battle of Garibpur (https://en.wikipedia.org/wiki/Battle_of_Garibpur)
Battle of Boyra (https://en.wikipedia.org/wiki/Battle_of_Boyra)

২৯৪/৩৬৫

লেখার তারিখঃ অগাস্ট ২৯, ২০১৬, ১০:৫৩ পি এম

আমি অবাক হয়ে দেখি মেয়েটা কত মিশে গেসে আমাদের বাসার সাথে। কেউ বলতেই পারবে না আমরা একসাথে থাকা শুরু করসি মাত্র ১৭ দিন। আমি অফিস থেইকা ফিরি যখন দেখি মেয়েটা ভিতরের রুম এর খাট এ পা উঠায় বইসা আড্ডা দিতাসে সবার সাথে। কখনো সবার মধ্যে বইসা জলজল করে, কখন জলজ লতা হয়া আমার বড় বোন এর গা জরায় বইসা থাকে। সবসময় মধ্যমনি না কিন্তু মনি তাতে কোন সন্দেহ নাই।

আমি কত টেনশন করতাম। অয় যদি মানাইতে না পারে। মানায় নেয়া ব্যাপারটার মধ্যে দুই পক্ষেরই তো এফোর্ট লাগে। বাসার লোকজন এর যদি সেই এফোর্ট টাই দিতে ইচ্ছা না করে। আমি কত দেখসি বউটা শ্বশুর বাড়ি তে আইসা কেমন বন্দি বন্দি ফিল করে। শশুর বাড়ির লোকজন বউটার সবকিছু নিয়া কত সমালোচনা করে। সেরম যদি হয়?

কিন্তু কিয়ের কি। আমার কত প্রাউড লাগে আমার বাসার লোকজন রে নিয়া। কি সুন্দর কইরা মেয়েটারে পরিবারের একজন কইরা ফালাইলো। আমার চেয়ে মনে হয় ওর আদর ই বেশি এখন। আর মেয়েটাও কত এমেজিং। কেমন বাড়ির বউ না হয়া বাড়ীর মেয়ে হয়া গেলো। আমাদের বাসার কথা যখন কাউকে বলে , কখনো বলে না ইথারদের বাসা, বলে আমাদের বাসা, আমাদের সিড়ি, আমাদের ছাদ। আমি শুইনা খুশি তে জরানি দিতে যাই আমার আমারে পাত্তাই দ্যায় না [কত দুক্কু 🙁 ]

টাকা পয়সা নিয়াও অনেক টেনশন এ ছিলাম। আমি জীবনেও বুইঝা শুইনা খরচ করি নাই। যখন যা শখ হইসে কিন্না লাইসি। তাই জমাইন্না টেকা টুকাও ছিলনা খুব একটা। অথচ বিয়ার অনুষ্ঠান, কত খরচাপাতি। কেম্নে সাম্লামু সব। আল্লাহর রহমতে সব সাম্লায়া কিছু সেভিংস ও হইসে। আমি তো কই ওর উসিলায় আল্লাহ বরকত দিসে। আমি অবাক হয়া দেখি প্রেম করার সময় যেই মেয়েটা লজ্জা লজ্জা চোখ কইরা কফি কাপ এর উলটা পাশ থেইকা লুকায় লুকায় তাকায় থাক্তো, সেই এখন কোমরে ওরনা জরায় বাসা গুছায়, ভাগ্নি গুলার সাথে গেমস খেলে, আম্মার সামনে আমি হাত ধরতে গেলে থতমত খায়া জিহবায় কামর দ্যায়। যখন মেয়ে তখন মেয়ে, যখন বউ তখন বউ। ক্যাম্নে পারে। কই শিখসে এগুলা। আমি তো ওদের বাসায় গেলে এখনো কেমন শক্ত শক্ত হয়া থাকি।

বউ রে নিয়া এত উচ্ছাস, এত আদেখলাপনা দেইখা হয়ত অনেকে ভুরু মুরু কুচকায় ফালাইসে এতক্ষণে। কিন্তু আমি শুধু দুঃখী দুঃখী নোট লিখব তা তো না। সুখের সময় গুলা যদি ফিল ই না করি তাইলে তো আল্লাহ বেজার হবেন। আমার দুনিয়া অনেক উত্তপ্ত ছিল। অস্থির ছিল। বউ আসার পর দুনিয়া ঠান্ডা হইসে। চারিদিকে কেমন সুখ সুখ মোমেন্ট দেখি।

দিন শেষে আমার বউ টার চাহিদা খুবি কম। অল্পতেই অনেক খুশি হয়। তাই বউটারে খুশি রাখার চেষ্টা করতাসি যত টা পারি। বউ খুশি। দুনিয়া ঠান্ডা। আলহামদুলিল্লাহ।

২৯৩/৩৬৫

লেখার তারিখঃ অগাস্ট ৯, ২০১৬, ১০:৫২ পি এম

একটা উৎসব হবে। তার জন্য প্রস্তুতি চলছে দুই মাস ধরে। উদ্বোধন হয়ে গেছে, এখন ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন হবে। এই স্থাপন টা যারা করবেন তারা ভিত্তি টা পর্যন্ত করে দিয়ে বাকিটা ছেড়ে দেবেন আমাদের উপর। আমাদের একটা স্বপ্ন কে, একটা জীবন কে দাড় করাতে হবে তাদের করা ভিত্তির উপর।

মোটামুটি প্ল্যানিং আর রিসোর্স এলোকেটিং শেষ। এখন শুধু পর্দা ওঠার অপেক্ষা। আর দুটো দিন, তারপর “গ্রেটেস্ট শো অফ আওয়ার লাইফ সো ফার” শুরু হবে। ভয় লাগছে কোন ঝামেলা লাগবে না তো? টেনশন লাগছে সবাইকে আপ্যায়িত করতে পারবো তো ঠিক মত? আয়জন পছন্দ হবে তো ওদের? আবার অনেক ভালও লাগছে। মনে হচ্ছে আমরা একটা প্লেন। আস্তে আস্তে ট্যাক্সিং করে আগাচ্ছি রানওয়ের দিকে। তারপর চুপচাপ রানওয়েতে উঠে দাঁড়িয়ে থাকবো। টাওয়ার এর অনুমুতি পেলেই, দে ছুট। চল চল উড়ে যাই, হুশশ।

আর দুই দিন। কাল ১০ই আগস্ট। তারপর ১১। তারপর ড্রাম রোল আর চলে আসবে ১২ই আগস্ট। আমার বউটাকে আমরা বরন করে আনতে যাবো সবাইকে নিয়ে।

অদিতি আর আমার ওয়েডিং রিসিপশন। সবার মনের গভীর থেকে করা শুদ্ধতম দোয়া ছাড়া সংসার নাম এর এই “দূর্গম গিড়ি, কান্তার মরু, দুস্তর পারাবার” পারি দেয়ার সাহস আমরা করতে পারি না।

তাই আমরা আপনার কাছে, যিনি এই লেখাটার শেষ পর্যন্ত পড়লেন তার কাছে, দোয়া প্রার্থি আমাদের সামনের দিনগুলোর জন্য।

শুভেচ্ছা সহ
অদিতি এবং ইথার

[এই লেখাটা পাব্লিশ করার কথা ভাবসিলাম আরো পরে, কিন্তু আগামি দুই দিন কারন ছাড়াই হট মাথায় প্যানিকড অবস্থায় পরনের পেন্ট নাইলে লুংগি মাথায় বাইন্ধা দৌড়াদৌড়ি করার চান্স আসে, লেখা লেখির মুড ই যদি না আশে? তাই আজকেই মাইরা দিলাম পোস্ট]

২৯২/৩৬৫

লেখার তারিখঃ জুলাই ১৯, ২০১৬, ১১:১০ এ এম

আমার পেলেন ওয়ালা সিনেমার কালেকশন – ২১ থেকে ৩০
My Aviation Movie Collection – 21 to 30

আমি খুইজা খুইজা পেলেন এর সাথে সম্পর্ক আসে এরকম সিনেমা কালেক্ট করতাসি। এর মধ্যে অনেক দূষ্প্রাপ্য সিনেমাও আছে। প্রতি ১০ টা সিনেমা দেখা শেষ হওয়ার পর একটা পোস্ট করুম ঠিক করসি। এই লিস্ট কোন টপ টেন মার্কা লিস্ট না। জাস্ট আমি যেই সিরিয়ালে সিনেমা গুলা দেখতাসি সেই সিরিয়ালে পোস্ট করা হইল। This list is not in any particular order, just the sequence in which I am watching them

21. United 93 (2006)

image

22. Piece of Cake (1988)

image

23. Dark Blue World (2001)

image

24. Independence Day (1996)

image

25. Operation Crossbow (1965)

image

26. Midway (1976)

image

27. Flight 93 (2006)

image

28. The Best Years of Our Lives (1946)

image

29. The Legend of Pancho Barnes and the Happy Bottom Riding Club (2009)

image

30. Porco Rosso (1992)

image

১-১০ 1-10 : https://www.facebook.com/notes/faisal-akram-ether/%E0%A7%A8%E0%A7%AE%E0%A7%AE%E0%A7%A9%E0%A7%AC%E0%A7%AB/10153636500386270

১১-২০ 11-20 : https://www.facebook.com/notes/faisal-akram-ether/%E0%A7%A8%E0%A7%AF%E0%A7%A7%E0%A7%A9%E0%A7%AC%E0%A7%AB/10153726755256270