৩০৩/৩৬৫

লেখার তারিখঃ অক্টোবর ০৮, ২০১৮, ৩:৪৮ পি এম

আমরা ছেলেরা কখনোই বুঝবো না একটা মেয়ের তার নিজের বাবা মা এর পাশে দাঁড়ানোর মত স্বাভাবিক ব্যাপারও কত টা কঠিন করে রেখেছে আমাদের সমাজ ব্যবস্থা। আমরা ছেলেরা ক্যারিয়ার চিন্তা কিভাবে করি?

পড়ালেখা করবো,
পাশ করবো,
চাকরি করবো, ব্যবসা করবো,
ইনকাম হবে , সেখান থেকে কিছু টাকা জমাবো, সেই টাকা থেকে বাবা মা এর প্রয়োজনে পাশে দাড়াবো,

সিম্পল।

আর একটা মেয়ের জন্য এই রকম স্ট্রেইট লাইনে চিন্তা করাও হাস্যকর লাগবে তার কাছে।

পড়ালেখা করব – বিয়েটা করে ফেল,
পাশ করব – পাশ তো করসই, এখন বিয়ে কর,
চাকরি করব – আগে বিয়ে কর,
বিয়ে করার পর চাকরি করব – শশুরবাড়ি থেকে দিতেও পারে, নাও দিতে পারে।
ইনকাম করব – মেয়ে বলে অফিস ঠকাবে বেতন আর সুযোগ সুবিধায়।
বেতন পাব – ছেলে মেয়ের জন্য খরচ কর, জামাই এর একাই ইনকাম এ তো এই জামানায় চলে না তাই সংসারে খরচ কর, ভাই বোন দের আবদার, ফ্রেন্ড দের আবদার রক্ষা কর।

আর শুধু টাকা পয়সার চ্যালেঞ্জ না। পারিবারিক চ্যালেঞ্জ ও সীমাহীন। অপদার্থ বড়ভাই বাবা মা এর জন্য কিছু করতে পারবেনা আবার মেয়ে বলে তাকে জায়গা টা ছেড়েও দেবে না। পরিবার এর বাইরের সবাই ভেবেই নেবে ছেলেটাই সব করে, মেয়েটার আর কি, শশুর বাড়ি তেই তো জীবন এখন।

তারপরও কোন এক ম্যাজিক দিয়ে একটা মেয়ে কিছু কিছু করে জমায় তার বাবা মার জন্য। আমি জানি না কিভাবে পারে। আমার কাছে কেমন অবিশ্বাস্য লাগে। আমি শুধু আমার বড় বোন রে দেখসি। আম্মার যখন ক্যান্সার টা প্রথম ধরা পড়ল, আমার বোন তার সারাজীবন এর জমানো টাকা, গয়না সব বিক্রি করে ফেলসে, ২য় বার কিছু ভাবে নাই। আমি হইলে হয়তো ভাবতেই ভাবতেই চিকিতসার টাইম যাইতো গা। আমার বোন প্রথমেই ফাইনেন্সিয়াল ব্যাপার টা সল্ভ করসে, তারপর ক্যান্সার কে বলসে, আসো খেলি।

আমি তার ধারে কাছেও কিছু করতে পারি নাই। আমি আর আমার বাবা মা কাউকে কখনো সামর্থের অভাবে বিদেশ নিয়ে যাইতে পারি নাই। আর ও দুই জন কে অস্ট্রেলিয়া নিসে, চিকিতসার ব্যাবস্থা করসে যখন ওর তখন কোন চাকরি ও নাই। দুলাভাই ও আর ও মাত্র পি আর নিয়া গেসে, দুইটা ছোট ছোট মেয়ে সাথে। একটা নতুন দেশের সামান্য পি এইচ ডি স্টুডেন্ট। অস্ট্রেলিয়া তেই আম্মার ক্যান্সার টা প্রথম ধরা পরে। দেশে থাকলে আমি হয়তো একটা সাধারন হাসপাতালে দিন এর পর দিন দেখায় ই যাইতাম আর আম্মা এই অসুধ অই অসুধ খাইতে খাইতেই চলে যাইত।

আমার বাবা মা তাদের প্রথম সন্তান দিয়াই স্টান্ডার্ড টা এত হাই করে ফেলসে যে আমি সারাজীবন ট্রাই করলেও সেই স্ট্রান্ডার্ড মিট করতে পারবো না। আমার একসময় খুব রাগ লাগতো কিন্তু এখন আমি চাই, মন থেকে চাই, আমার বাবা আম্মাকে সবাই মমর আম্মা, মমর আব্বা হিসাবেই চিনুক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *