লেখার তারিখঃ এপ্রিল ৪ ২০১৬, ০৬:০৩ পি এম
স্পেশ শাটল এর আদ্যপান্ত্য – ১
আমার স্পেস শাটল খুব ভাল্লাগে। কি সুন্দর একটা প্লেন এর মত জিনিষ। আমি এইটারে প্লেন ই ভাবতাম। কিন্তু একদিন জানতে পারলাম আমার ধারনা ভুল। তারপর আগ্রহ আরো বাইরা গেল। মনে হইল এই জিনিষ টা সম্পর্কে জানতে হবে। আমি কিছু কিছু পড়ালেখা করতাসি নেট থেইকা আর সামনে আরো করবো। একবারে বেশি পড়তে পারি না। মাথায় কুলায় না। আর তা ছাড়া অফিসের ব্যাস্ততাও থাকে। তাই ভাবলাম যা যা পড়তেসি তা সাথে সাথে লিখে রাখি। তাইলে আমার পড়াটাও ভাল হবে।
এই পর্ব টা স্পেস শাটল নিয়া একজন মানুষ যে কিছুই জানে না স্পেস শাটল নিয়া তাকে একটা মোটামুটি ধারনা দেয়া হবে। তারপর আস্তে আস্তে আমি ভিতরে ঢুকবো। আমার কাছে যে কোণ নতুন কিছু শেখার পদ্ধতি এটাই। প্রথমে পুরোটা সম্পর্কে একটা অভারওল ধারনা। তারপর শাখা প্রশাখায় ঢোকা। নাহলে গলি পথেই কেটে যাবে সারা জীবন, গন্তব্যে আর পৌছানো হবে না। এই লেখায় আমি মূলত আমেরিকান স্পেস প্রোগ্রাম এর রেফারেন্স এই কথা বলবো। সময় পাইলে এবং পড়ালেখা করতে পারলে রাশিয়ান স্পেস প্রোগ্রাম নিয়াও লিখবো কখনো। তাহলে শুরু করা যাক?
স্পেস শাটল বলতেই আমাদের সামনে একটা সাদা কালো প্লেন এর মত জিনিষ এর ছবি ভাসে। কিন্তু স্পেস শাটল মানেই এই প্লেন এর মত জিনিষ টা না। স্পেস শাটল কয়েকটা জিনিষ এর সমন্বয়ে তৈরি একটা সিস্টেম। এই সিস্টেম এ কি কি জিনিষ থাকে তাতে যাওয়ার আগে এর ইতিহাস টা একটু জানি।
১৯৬৯ সাল। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট তখন রিচার্ড নিক্সন। রাশিয়ার সাথে স্পেস রেস তখন তুঙ্গে। অল্রেডি তাদের ইউরি গেগারিন স্পেস এ ঘুরে আসছেন। তাই আমেরিকার নেক্সট টার্গেট চাঁদে মানুষ পাঠানো। এই লক্ষ্যে নাসা এর এপলো প্রোগ্রাম ও চলছে পুর্ন গতিতে। কিন্তু এপলো প্রোগ্রাম এর একটা বড় সীমাবদ্ধতা ছিল। এতে ব্যবহার করা রকেট পরের মিশনে ব্যবহার এর কোন উপায় ছিল না। ওয়ান টাইম ইউজ টাইপ এর। এত টাকা দিয়া একটা জিনিষ বানায়া একবার ব্যবহার করলেই শেষ, এইডা কিছু হইল?
তাই প্রেসিডেন্ট নিক্সন এর আদেশে ভাইস প্রেসিডেন্ট স্পাইরো এগ্নিউ (Spiro Agnew) রে প্রধান কইরা একটা টাস্কফোর্স গঠন করা হইল। এদের কাজ হইল এরা বার বার ব্যবহার করা যায় এরম সিস্টেম প্রপোজ করবে। এই টাস্ক ফোর্স ১৯৬৯ সালের সেপ্টেম্বর এ নিচের কয়টা জিনিষ প্রস্তাব করলো
১। একটা পারমানেন্ট স্পেস স্টেশন সিস্টেম( মনে রাখতে হবে সাল টা ১৯৬৯। তখনো মির বা ইণ্টারনেশনাল স্পেস স্টেশন কোন টাই বানানো হয় নাই )
২। একটা লো আর্থ অরবিট (পৃথিবী থেকে ১০০ থেকে ২০০ নটিকাল মাইল / ১৯০ থেকে ৫০০ কিলোমিটার উপরে কাজ করবে এরকম) স্পেস শাটল সিস্টেম।
৩। একটা স্পেস টাগ সিস্টেম (মাল গাড়ী আরকি) যা কিনা পৃথিবী থেইকা চাঁদ এর অরবিট এ যাতায়াত করবে।
৪। একটা নিউক্লিয়ার পাওয়ারড স্পেস ভেহিকল।
এই টাস্ক ফোর্স যখন এই সব প্রস্তাবনা বানাইতাসিল সেই সময় জুলাই,১৯৬৯ সালে এপলো এগারো চাঁদ এ অবতরন কইরা সারা পৃথিবী তে একটা তোলপাড় ফালায় দ্যায়। আমেরিকার প্রসাশন মনে করে তাদের উদ্দ্যেশ্য সফল হইসে। তাই প্রেসিডেন্ট নিক্সন এই টাস্ক ফোর্স এর দেওয়া প্রায় সব প্রস্তাবনাই নাকচ কইরা দ্যান। শুধু ২ নাম্বার টা অর্থাৎ স্পেস শাটল প্রোগ্রামে সরকারি ফান্ডিং দেওয়ার ব্যাপারটা অনুমোদন করেন। শুরু হয় স্পেস শাটল প্রোগ্রাম যার অফিশিয়াল নাম হয় STS ( Space Transportation System)
১৯৬৯ সালে শুরু হইলেও স্পেস শাটল এর প্রথম টেস্ট ফ্লাইট হয় ১৯৮১ সালে। আর ১৯৮২ সাল থেইকা পুর্নাংগ ফ্লাইট শুরু হয়। ১৯৮১ সাল থেইকা ২০১১ পর্যন্ত ফ্লোরিডার কেনেডি স্পেস সেন্টার থেইকা স্পেস শাটল দিয়া মোট ১৩৫ টা মিশন লঞ্ছ করা হয়। এই সব মিশনে স্পেস শাটল মহাশুন্যে অনেক স্যাটেলাইট, আন্ত গ্রহ প্রোব, হাবল টেলিস্কোপ নিয়া যায়, মহাকাশে বিভিন্ন সাইন্টিফিক এক্সপেরিমেন্ট করে আর ইণ্টারনেশনাল স্পেস স্টেশন এর তৈরি এবং মেরামত এ সাহায্য করে। স্পেস শাটল ফ্লিট এর মোট মিশন টাইম ১৩২২ দিন, ১৯ ঘণ্টা, ২১ মিনিট আর ২৩ সেকেন্ড।
একটা স্পেস শাটল এর তিনটা পার্টঃ
১। একটা ওরবিটার ভেহিকল ( Orbital Vehicle বা OV)
২। এক জোড়া সলিড রকিট বুস্টার (Solid Rocket Booster বা SRB)
৩। একটা বুইত্তা মারা এক্সটারনাল ট্যাঙ্ক (External Tank বা ET)
স্পেস শাটল কে লম্বা লম্বি ভাবে লঞ্চ করা হয়। লঞ্চ এর সময় SRB দুইটা আর OV এর তিনটা মেইন ইঞ্জিন এক সাথে কাজ করে। এরা ফুয়েল পায় ET থেইকা যার ভিতরে থাকে লিকুইড হাইড্রোজেন আর লিকুইড অক্সিজেন। অরবিট এর পৌছানোর আগে SRB দুইটা মুল সিস্টেম থেইকা খইসা পরে। আর অরবিট এর ঢুকার ঠিক আগ মুহুর্তে ET ও খইসা পরে। এরপর অরবিটার তার দুইটা ইঞ্জিন যারে বলে অরবিটাল মেনুভারিং সিস্টেম(Orbital Maneuvering System -OMS) গুলা ব্যাবহার কইরা অরবিট এ ঘুরা ফিরা করে। এই গুলা ইউজ কইরাই অরবিটার টা পৃথিবীর এটমোসফিয়ার এ ঢুকে আর গ্লাইড কইরা আইসা ল্যান্ড করে।
ল্যান্ড করনের পর সবাই নাইম্মা গেলে এইটা রে একটা বিশেষ ভাবে মডিফাইড Boeing 747 দিয়া আবার কেনেডি স্পেস সেন্টার এ নিয়া যাওয়া হয় পরবর্তি মিশন এর জন্য ব্যবহার করার জন্য।
অরবিটার গুলার আবার নাম আসে। প্রথম বানানো অরবিটার এর নাম ছিল Enterprise. এইটা খালি এপ্রোচ আর ল্যান্ডিং টেস্ট করার জন্য বানানো হইসিল, এইটা অরবিট এ ঘুরা ফিরা করতে পারতো না। তারপর চার টা ফুল ফাংশনাল অরবিটার বানানো হইসিল যাদের নাম যথাক্রমে, Columbia, Challenger, Discovery আর Atlantis । এর মধ্যে দুইটা ওরবিটার এক্সিডেন্ট এ ধ্বংস হয়া যায়ঃ ১৯৮৬ সালে Challenger আর ২০০৩ সালে Columbia । ১৯৯১ সালে Challenger কে রিপ্লেস করার জন্য Endeavor নামের পাঁচ নম্বর অরবিটার টা বানানো হয়।
জুলাই এর ২১ তারিখ, ২০১১ সালে Atlantis এর শেষ ফ্লাইট এর মাধ্যমে স্পেস শাটল প্রোগ্রাম এর সমাপ্তি হয়।