লেখার তারিখঃ ফেব্রুয়ারী ২১, ২০১৬, ১২ঃ৩৭ এ এম
মাতৃভাষার প্রতি ভালবাসা জিনিশ টা আমার কাছে খুব সিম্পল লাগে। আমার মা যে ভাষায় কথা বলে আমি সে ভাষা কে ভালবাসি। এই টুক ই। কিন্তু এই টুক শুধু একটা স্ট্যাটাস বা একটা বিশেষ দিন এর মধ্যে আটকায় রাখার মত ছোট না। এর ব্যাপ্তি টা বিশাল। এত বিশাল যে ক্ষুদ্রমনা তার পক্ষে এই অনুভূতিটা ধারন করা সম্ভব না।
জীবনে যদি সত্যিকার এর প্রেম ভালবাসা কইরা থাকেন কেউ তাইলে হয়তো বুঝবেন আমি কোন লাইনে কথা বলতাসি। যাকে ভালবাসেন তাকে শুধু চোইদ্দবার ভালবাসি বলাটাই ভালবাসা না। তাকে একদিন এর জন্য স্পেশাল ফিল করানো মানেই ভালবাসার সিলেবাস শেষ না। তাকে প্রতিনিয়ত বুঝাইতে হবে যে, না তুমি সব চেয়ে আগে, তুমি সবার চেয়ে বেশি জরুরি। এইবার একটু মাতৃভাষা কে এইভাবে ভালবাসি কিনা ভাবি।
ধরেন আপনার মা গান করেন। শুদ্ধ বাংলা গান। পাসের বাসার আন্টিও গান করেন। হিন্দি সিনেমার গান। আপনি সারাক্ষন বাসায় আইসা পাশের বাসার আন্টির গান এর প্রশংসা করেন। আপনার মার গান থামায়া সেই আন্টির গান জোরে জোরে বাজান। পারিবারিক অনুষ্ঠানে আপনার মা কে দেন একটা গান গাইতে আর তার পরের ৯ টা গান ওই আন্টির। জিনিষ্টা কেমন হচ্ছে তাইলে? আপনার মা কি করবে জানেন? আপনার মুখের দিকে তাকায়া সব মাইনা নিবে আর আস্তে আস্তে হয়তো গান ই ছাইড়া দিবে।
আমাদের বাংলা এর সাথে কিন্তু সেম কাজ টাই হচ্ছে। শুরুতে শুধু গান, সিনেমা ছিল। এখন বিজ্ঞাপন আর কার্টুন এও আমরা পাশের বাসার আন্টির গান কেই ফুল ভলিয়ুম দিয়ে রাখসি।
আমার হিন্দি ভাষার প্রতি কোন ব্যাক্তিগত দুশমনি নাই। এইটাও বিদেশি কোন মায়ের ভাষা। কিন্তু ভারতের কালচারের একটা ডমিনেটিং দিক আছে যেটা তারা তাদের মিডিয়া আধিপাত্য কে ব্যবহার কইরা খুব ভাল মত আমাদের ব্রেইন এ সরাসরি ইঞ্জেক্ট করতে পারে। আমি সেই জন্য সচেতন ভাবে হিন্দি গান কে এড়ায়া চলি।
আমার রেডিও তে প্রতি তিনটা গান এর একটা হিন্দি হইলে মেজাজ খারাপ হয়। গায়ে হলুদ এ হিন্দি গান শুনলে মেজাজ খারাপ হয়। পিক্নিক এ হিন্দি গান বাজাইতে বাজাইতে যাওয়া বাস এর দিকে ঢিল মারতে ইচ্ছা করে।
আমরা নিজেদের গান কেও আমরা নষ্ট করতেসি যাতে হিন্দি রা বাজার পায়। সচিন্দেব বর্মন এর নাম না শুনা স্বাভাবিক এমন বয়সের পিচ্চি মেয়েটা রেডিও তে এসেমেস দিয়ে বলে “ফুয়াদের নিটোল পায়ে” গান্টা ছাড়েন। রুদ্র মহাম্মদ শহিদুল্লার ভাল আছি ভাল থেকো হয়ে যায় “কনার ভিতরে বাহিরে”। ঐদিন সোনারগায়ে লোকশিল্প ম্যালা তে গেসিলাম। দেখি জয়নুল যাদুঘর এর পাশে একটা পিক্নিক পার্টি কে জায়গা দেয়া হইসে। তারা কানা ফাটা স্পিকার ফাটা আওয়াজ এ “পিনক লিপ্স” নামক গানের সাথে এক স্বল্পবষনা মহিলার নাচানাচি জুলু জুলু চোখে উপভোগ করতেসিল। দোয়া করসিলাম আল্লাহ আমার হাত অনেক লম্বা বানায় দাও নাইলে আমারে অক্টোপাস বানায়া দাও যাতে সব গুলারে আট হাত পা দিয়া থাব্রাইতে পারি
মাতৃভাষা দিবস পালনের আগে নিজের মাতৃভাষা কে ঠিক ঠাক সম্মান্টা দেয়ার ব্যবস্থা করি।