লেখার তারিখঃ ডিসেম্বর ৩০, ২০১৫, ১২ঃ১৬ এ এম
আমার একটা জিনিষ নিয়া খুব টেনশন হইতাসে কয়দিন ধইরা। আমি অনেক ভাইবাও কোন কুল কিনারা করতে পারতাসি না। জিনিষ টা হইল, আমি কিভাবে আমার সন্তান কে অন্যের সুখে সুখি হইতে শিখাবো? এই একটা জিনিষ, খালি এই একটা জিনিষ যদি সবাই সবার সন্তান দের শিখায় যাইতে পারতো। তাইলে যে ঘরে বাইরে কি পরিবর্তন টা আসতো তা ভাবতেই গায়ে কাটা দ্যায়। কিন্তু আমি জানি না আমাদের রক্তে রক্তে যেভাবে এই জিনিষ টা ঢুকায় দেয়া হইসে এবং ঢুইকা গেসে সেইটা কিভাবে পালটায় ফেলা সম্ভব?
একটু চিন্তা করলে পাওয়া যায়, শুরু টা হয় অনেক ছোট থাক্তেই। বড় বোনের হাতে কিছু একটা দেখলেই ছোট বোন টা টান দিয়া নিয়া ন্যায়। ছোট বোনের হাত থেইকা বড় বোন টা কিছু নিলে ছোট টা কাইন্দা আকুল হয়। আমরা আহা কি কিউট দৃষ্টি নিয়া তাকায় তাকায় দেখি। বড় টা ছোট থেইকাই শিখা যায়, ছোট টার জন্য তারে সেক্রিফাইস করতে হবে। সে হয় তো আরেকজন এর জন্য সুখি হওয়ার প্রথম লেসন টা এইখানেই পায় কিন্তু সাথে সাথে আরেকটা মানুষ কিন্তু শিখলো যে আরেকজন এর থেইকা যেম্নেই হোক জিনিষ কাইরা নিয়া হইলেও তার সুখি হইতে হবে। অন্যের দুঃখ দেখার টাইম নাই, আমার সুখি হইতে হবে, ব্যাস ! এত কিছু তো আর অইটুক বাচ্চা বুঝে না। তার অখন্ডনীয় লজিক হইল, ওর আসে, আমার কেন নাই, আমার থাকতে হবে, ইফ পাইলাম দেন কিছুক্ষন নাইরা চাইরা একটু পরে ইন্টারেস্ট শেষ, এলস যদি না পাইলাম, তাইলে ইনিশিয়েট অপারেশন বিকট শব্দে ভ্যা করা ।
আরেক্টূ বড় হইলে শুরু হয় কম্পারিজন। দেখ অমুক ভাবির পোলায় ফারস্ট হইসে তুই কেন দুই নাম্বার কম পাইসত? আমি যদি আমার পোলা রে মিষ্টি খাওয়াই আর আরেক পোলা ফারস্ট হইসে সেই খুশিতে খুশি হইতে কই, তাইলে কি সবাই আমার দিকে ভুরু কুচকায় তাকাইবো না? আমি জানি এই চিন্তা টা স্বাভাবিক না এবং এই চিন্তা যারা করে তাদের আমরা পাগল-ছাগল এর গোত্রে দ্রুত জাজমেন্ট কইরা ফালায় দেই। কিন্তু এইভাবেই কি শুরু হয় না? এভাবেই কি আমরা ভাবতে শিখি না, সে কেন পাবে? আমি কেন পাব না? এর এফেক্ট টা কি আমরা বড় হইলে দেখি না?
একটু ফারস্ট ফরোয়া্রড করি। এই ভাবে বড় হয়া যে চাকরি তে ঢুক্লো, সে কি রাতারাতি তার চিন্তা ধারা পাল্টায়ে অন্যের সাফল্যে খুশি হইতে পারবে? তার মাথায় থাকবে উপরে উঠতে হবে যেম্নেই হোক । উপরে উঠার এম্বিশন নিয়া আমার কোনোই সমস্যা নাই কিন্তু “যেম্নেই হোক” পার্ট টা তে সমস্যা আ্ছে। আমি আমার নিজের অফিসে একজন খাটি অসৎ লোক কে চিনি। উনি অনেক ধার্মিক। পাচ ওয়াক্ত নামাজ পরেন। কিন্তু উনি প্রতি দুইটা বাক্যে একটা মিথ্যা কথা বলেন। মিথ্যা বইলা ধরা খান না যে তা না। কিন্তু তাতেও তার মধ্যে কোন বিকার আসে না। ইনাকে আমি জিজ্ঞেস করসিলাম আচ্ছা আপনি এই যে এত কিছু করেন, না হয় একটা প্রোমোশন ই পাইবেন, কিন্তু এই যে লোক গুলার মনে যে কষ্ট দিতাসেন এই ভাবে, সেইটার কি কোন দাম নাই আপনার কাছে? উনার উত্তর টা ছিল , এই গুলা আমি আমার পরিবার কে একটা বেটার লাইফ দেয়ার জন্য করতেসি।
দিস ইস স্কেয়ারি। রিয়েলি স্কেয়ারি । আর আমার দ্বিতীয় টেনশন এর জন্ম হয় এই সব কথা থেইকাই। আমি ভাবতে থাকি , আমরা যখন সৎ হই তখন আমাদের কোন কারন লাগে না। শীত বস্ত্র দান করসো ক্যান? এমনি ভাল লাগে তাই। রক্ত দান করস ক্যান? ফিলস গুড তাই। তুমি যে পাশের কলিগ কে হেল্প করলা, তোমার কি স্বার্থ এ টাতে? কোন স্বার্থ নাই, তার বিপদে পরা দেখতে খারাপ লাগতেসিল তাই। এগুলা কোন লজিকের মধ্যে পরে না। তাই ক্যেন আপ্নে সৎ হইলেন? এইটার কোন উত্তর সৎ মানুষ দিতে পারেনা। কিন্তু একজন অসৎ লোক কে জিজ্ঞেস করেন, তার এক্সকিউজের অভাব নাই। পরিবারের জন্য করসি, নিজে বাচার জন্য করসি, একটু করলে কিছু হয় না, সবাই তো করতাসে তাই করসি। এরা এমন একটা পর্যায়ে পৌছায় গেসে যেখানে তারা নিজেরাও জানে না তাদের আসলে টাকার এবং সম্মানের দরকার টা বেশি? না লোভ টা বেশি?
তারা খুব বলে আরে ভাই জান বাচান ফরয। আমার খুব জানতে ইচ্ছা করে এইটা কোন হাদিস বা কোরআন এর কোন আয়াত এ আছে ? আর বলতে ইচ্ছা করে, বুঝলাম জান বাচানো ফরয কিন্তু আপনি কি শিউর এই খানে নিজের জান এর কথা বলা হইসে? হোয়াট ইফ, পুরা বাক্যটা ছিল “অন্যের জান বাচানো ফরজ” অথবা “অন্যের সুখে সুখি হও” আর আমরা যারা ছোট বেলা থেইকা অন্যের সুখে সুখি হওয়া শিখি নাই , তারা কখন জানি “অন্যের” কথা টারেই আমাদের ময়লা হাত দিয়া ঘইসা উঠায় দিসি?