লেখার তারিখঃ নভেম্বর ১৫, ২০১৫, ১১.২০ পি এম
ফোক ফেস্ট এ নর্থ এন্ড এর দুকানের সামনে দাঁড়ায় দাড়ায়া ফ্রি ফ্রি কফির স্মেল নিতাসি এমন সময় একটা তেজি ধরনের ছেলে আইসা বলল, ইথার ভাই, আপনি আমারে চিনবেন না, কিন্তু আমি আপনার লেখা পড়ি। আমি এই ধরনের পরিচয় এ অভ্যস্ত না, কোনদিন হইতেও পারুম না, তাই আমি এক্কেরে বিগলিত হইয়া গেলাম। হে হে , থেংকিউ, হে হে, কষ্ট কইরা পড়সেন, হে হে এই টাইপ এর বেকুব মারকা কাজ কাম ছাড়া কিছুই করতে পারি নাই। ছেলেটা আমারে নাম বলসিল কিন্তু আমি এজ ইউজুয়াল ভুইলা গেসি।
ছেলেটা আমারে বললো আমার কিলো ফ্লাইট নিয়া লেখা গুলা তার সবচেয়ে বেশি ভাল্লাগসে আর কি জানি একটা সমাবেশ এ আমার কিলো ফ্লাইট নিয়া লেখা গুলা পইড়াও শুনাইসে সবাইরে। ও আমারে অনুরোধ করসে কিলো ফ্লাইট নিয়া লেখা গুলা যাতে কন্টিনিউ করি। এই লেখা তার অনুরোধেই।
যতদুর মনে পরে আমি শেষ লিখসিলাম কিলো ফ্লাইট এর বিমান গুলার মিশন গুলা নিয়া। শুরু করসিলাম এলুয়েট-III হেলিকপ্টার এর মিশন গুলা লেখা আর ৩রা ডিসেম্বর নারায়ঙ্গঞ্জের গোদনাইলে তেলের ডিপো কিভাবে উড়ায়া দিসিল তা নিয়া লিখসিলাম। আরো কিছু মিশনের তথ্য পড়সি । সেগুলা এইখানে লিখা রাখি ভুইলা যাওয়ার আগেই।
ছোট্ট কইরা বইলা রাখি, “কিলো ফ্লাইট” হইল একাত্তর এর মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়া বাংলাদেশ বিমান বাহিনির প্রথম এবং একমাত্র ইউনিট। তিনটা বিমান নিয়া এই ইউনিট গঠিত হইসিল। একটা Alouette-III হেলিকপ্টার, একটা DHC-3 Otter বিমান আর একটা DC-3 বিমান নিয়া গঠিত হইসি কিলো ফ্লাইট। এই হেলিকপ্টার টার ৩রা ডিসেম্বর এর মিশন নিয়া আমি এর আগে একটা নোট এ লিখসি। আজকে তার আরো কিছু মিশনের তথ্য লিখব। কোন টাই আমার নিজের বানানো লেখা না। সব সংগৃহীত তথ্য।
৫ই ডিসেম্বর, ১৯৭১
কুলাউড়া এর শমসেরনগরে দুইটি মিশন হয় । এই দুই টা মিশন করেন স্কোয়াড্রন লীডার সুলতান মাহমুদ এবং ফ্লাইং অফিসার বদরুল আলম। মিশন দুইটার বিস্তারিত জানতে পারি নাই।
৬ই ডিসেম্বর, ১৯৭১
১। ফ্লাইং অফিসার বদরুল আলম এবং ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট সিংলা একটি মিশন করেন মৌলভীবাজার
২। ফেঞ্ছুগঞ্জ আর শমসেরনগর এ আর্মড রেকি করা হয় এই হেলিকপ্টার দিয়ে। গ্রুপ ক্যাপ্টেন চন্দন সিংহ এই মিশনে ছিলেন
৩। স্কো লি সুলতান মাহমুদ এবং ক্যাপ্টেন সাহাব মৌলভিবাজার এ পাকিস্তান আর্মির ৩১৩ ব্রিগেড হেডকোয়ার্টার আক্রমন করেন। তারা সাতবার ঘুরে ঘুরে প্রতিবার দুটি করে ১৪টি রকেট ফায়ার করেন। শত্রুর প্রচন্ড গুলিবর্ষনের মধ্যেও তারা রকেট ফায়ারিং অব্যাহত রাখেন। হেলিকপ্টার এর মেশিনগান থেকেও ফায়ার করা হয়।
৪। স্কো লি সুলতান মাহমুদ এবং ক্যাপ্টেন সাহাব শমসেরনগর আক্রমন করেন রকেটের সাহায্য। তারা ২০০ রাউন্ড মেশিনগান এর গুলিও বর্ষণ করেন
৭ই ডিসেম্বর, ১৯৭১
১। ক্যাপ্টেন সাহাব এবং ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট সিংলা গ্রুপ ক্যাপ্টেন চন্দন সিং সকাল ৮.৪০ মিনিটে হেলিকপ্টার নিয়ে সিলেটে আসেন। উদ্দ্যেশ্য সিলেট শত্রু মুক্ত কিনা জানা। ক্যাপ্টেন সাহাব ছিলেন পাকিস্তান ইন্টারনেশনাল এয়ারলাইন্স এর রেগুলার পাইলট। যাত্রিবাহী ফকার এফ টুএন্টি সেভেন নিয়ে তিনি নিয়মিত সিলেট এ আসতেন। তাই তার জন্য সিলেটে ল্যান্ড করাটা একদম মুখস্তি ছিল। কিন্তু এই রুটিন ল্যান্ডিং ও পালটে যায় যুদ্ধের সময়। তারা যখন ফাইনাল এপ্রোচ এ তখনি পাকিস্তান মিলিটারি প্রচন্ড ফায়ারিং শুরু করে তাদের উপর। তারা সাথে সাথে পালটা রকেট ফায়ার করতে থাকেন অনবরত আর সাথে সাথে উপরে উঠতে থাকেন। হেলিকপ্টারে ১৫ টি গুলি লাগে কিন্তু তারা নিরাপদেই ফেরত আসেন।
২। ফ্লাইং অফিসার বদরুল আলম আর ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট সিংলা কুলাউরা, সিলেট এলাকায় ৭ টি মিশন করেন।
৮ই ডিসেম্বর, ১৯৭১
ফ্লাইং অফিসার বদরুল আলম আর ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট সিংলা কুলাউরা, সিলেট এলাকায় ৫ টি মিশন করেন।
৯ই ডিসেম্বর, ১৯৭১
মিশনে যাওয়ার পথে ফ্লাইং অফিসার বদরুল আলম আর ক্যাপ্টেন সাহাব ফ্লাইং এর সময় হঠাত ফুয়েল ওয়ারনিং লাইট জ্বলে ওঠে। তারা তারাতারি কুমিল্লা বিমানবন্দর এর রানওয়েতে নামতে বাধ্য হোন। তাদের সৌভাগ্য যে তখন কুমিল্লা বিমান বন্দর ছিল ভারতীয় সেনা বাহিনীর দখলে। তাদের নামার খবর রাজাকার রা পাকিস্তানিদের জানালে তারা দূর থেকে শেলিং করতে থাকে। তারা বাধ্য হয়ে স্থানীয় লোকজন এর সহায়তায় কেরোসিন সংগ্রহ করে তা দিয়েই হেলিকপ্টার কে সচল করেন এবং কুমিল্লা থেকে ফ্লাই করে আগরতলায় চলে যান।
আর দুই দিন এর মিশনের কথা লেখা বাকি আছে। ১০ই ডিসেম্বর আর ১১ই ডিসেম্বর। আজকে এই পর্যন্তই থাক।