লেখার তারিখঃ নভেম্বর ৪, ২০১৫
অতি প্রাকৃত প্রকৃতি
২
আসগর আলি মোল্লা বাড়িতে ফিরেছেন রাত দশটায়। ঘরে ঢোকার আগে তাকে ইদ্রিসকে মাছ সহ হাতে নাতে ধরার খবর দেয়া হয়েছে। তিনি ইদ্রিস কে গাছ থেকে খুলে বাইরের বাংলা ঘরে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে অন্দর মহলে ঢুকে গেছেন। বাংলা ঘরে কেউ থাকে না। মাঝে মাঝে অতিথি এলে থাকার ব্যবস্থা করা হয়। অন্যান্য সময় এই ঘর ব্যবহার করা হয় শুকনো জ্বালানি আর পাটখরি রাখার জন্যে।
দু ঘন্টা পর তাকে দেখা গেল ইদ্রিস এর সামনে বসে থাকতে। ইদ্রিস এর এক চোখ প্রায় বুজে এসেছে মোল্লা ভাই দের কারো এক জন এর বেমক্কা মার এর কারণে। আরেকটা চোখ দিয়ে সে তাকিয়ে আছে আসগর আলি মোল্লার চোখ এর দিকে।আসগর আলীও চোখ নামিয়ে নেন নি। শুন্য থেকে কোটিপতি হওয়া এই ধুর্ত বৃদ্ধ এই সব দৃষ্টির পরীক্ষা পার করেই এত দূর উঠে আসতে পেরেছেন।
অন্যদিকে আসগর আলী মোল্লা ভাবছিলেন সম্পূর্ন ভিন্ন কথা। তিনি তার পালক ছেলেদের থেকে ইদ্রিস এর মাছ ধরা সম্পর্কে যা শুনেছেন তাতে তার মনে হয়েছিল মোল্লা ভাইয়েরা বলার সময় অনেক রঙ মাখিয়েছে মূল ঘটনার সাথে। গ্রামে খুব বেশি হয় এটা। পানি নেয়ার সময় কলসি ডুবে গেছে এই গল্প মুখে মুখে ঘুরে শেষ মেষ হয়ে যায় পুকুর থেকে অনিন্দ্য সুন্দরি এক কলসি কন্যা উঠে আসে, তারা জলকলী করার সময় গল্পের বক্তা দেখে ফেলায় তারা তারি আবার পানির নিচে ফিরে যায়। কিন্তু ইদ্রিস এর সাথে একটা কোথাও না বলে শুধু চোখের দিকে তাকিয়ে তিনি সাথে সাথে বুঝতে পারেন তার ছেলেরা তাকে বাড়িয়ে বলেনি। তারা যা যা বলেছে এই লোক এর পক্ষে সব ই সম্ভব। তিনি বুঝতে পারলেন তিনি কিছুটা ভয় ও পেয়েছেন।
কিন্তু তা ইদ্রিস কে বুঝতে দেয়া যাবে না কোনভাবেই। তিনি খুবি শান্ত গলায় কিন্তু আদেশ করার সুরে ইদ্রিস এর সাথে কথোপকথোন শুরু করলেন।
– তাইলে তুই ই ইদ্রিস চোরা
>> জি না আমি ইদ্রিস। শুধু ইদ্রিস
– এহ, চুরি করসস আবার ভাব মারাও? আমার বাড়ির মধ্যে ঢুকসস কোন সাহসে?
>> আপনার পোলাপাইন ধরে আনসে। আমি ঢুক্তে চাই নাই
– তা তো আনবেই। কবে থেইকা এই লাইন এ? শুধু দিনের বেলাতেই চুরি করস? না রাতেও?
>> আমি চুরি করি না। আমি চোর না।
– চোপ হারামজাদা। মাছ সহ ধরা খাইসস। আবার বলস চোর না।
এরপর এর উত্তর টা ইদ্রিস খুবি শান্ত গলায় দিল। কিন্তু আসগর আলী মোল্লা বুঝতে পারলেন তার শিরদাড়া বেয়ে কি যেন একটা ঠান্ডা কিছু নেমে গেল। তিনি মনে মনে আয়তুল কুরসি পরে আবার নিজের অবস্থান টাকে আরেকটু শক্ত করার চেষ্টা করলেন।
– তুই কি পাগল না ভং ধরসস? কি বলস এগুলা। মস্করা করলে তোর এমন অবস্থা করব , তখন বুঝবি আমার সাথে রসিকতা করা কত বড় ভুল ছিল। আবার বল কি বলতে চাচ্ছিস?
>> আমি আপনার পুকুর থেকে মাছ চুরি করি নাই। আমি শুধু পুকুর পারে দাড়ায়ে ডাক দিসি, তারপর ওরা নিজেরাই আমার কাছে চলে আসছে।
আসগর আলী মোল্লা জানেন ইদ্রিস যা বলছে তা সত্য । তার ছেলেরা পাশেই ছিল। তারা দেখেছে। কিন্তু এও যদি সত্য বলে মেনে নিতে হয় তাহলে পুরো পৃথিবীর হিসাব নিকাশেই গোলমাল লেগে যাবে। আজগর আলী মোল্লা ঠিক করলেন ইদ্রিস কে হাত ছাড়া করা যাবেনা। ইদ্রিস নিজেও মনে হয় জানে না তার মুল্য কতটুকু।